লাইফস্টাইল

World Liver Day | অ্যালকোহল সেবনের কারণে সবথেকে বেশি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ভারতীয়রাই! জানুন কোন কোন কারণ প্রভাব ফেলে লিভারের স্বাস্থ্যের ওপর!

World Liver Day | অ্যালকোহল সেবনের কারণে সবথেকে বেশি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ভারতীয়রাই! জানুন কোন কোন কারণ প্রভাব ফেলে লিভারের স্বাস্থ্যের ওপর!
Key Highlights

হু-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভারতী লিভার সংক্রান্ত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছায় ২৫৯,৭৪৯। এর পাশাপাশি, অ্যালকোহল ব্যবহারের কারণে লিভার সিরোসিসে আক্রান্তের সংখ্যা সবথেকে বেশি ভারতে।

মানব শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে একটি হল লিভার। কারণ এই অঙ্গটি শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেওয়া থেকে শুরু করে হজমে সাহায্যকারী উৎসেচক তৈরি, বিপাকের হার নিয়ন্ত্রণ সহ একাধিক জটিল কাজ একা হাতে সামলায়। তবে ২০১৭ সালে হু (WHO) এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভারতী লিভার সংক্রান্ত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছায় ২৫৯,৭৪৯। এর পাশাপাশি, অ্যালকোহল ব্যবহারের কারণে লিভার সিরোসিসে আক্রান্তের সংখ্যা সবথেকে বেশি ভারতে (২৩৫৬.৪)। এর পরেই এই তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া। লিভারের যত্ন না নিলেই হতে পারে একাধিক রোগ। ফলে লিভারের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে প্রতি বছর ১৯সে এপ্রিল পালন করা হয় বিশ্ব লিভার দিবস (World Liver Day)।

বিশ্ব লিভার দিবস । World Liver Day :

প্রতি বছর ১৯ সে এপ্রিল পালন করা হয় বিশ্ব লিভার দিবস (Liver Day)। বিশ্বজুড়েই এই দিনটি গুরুত্ব সঙ্গে পালন করা হয়। লিভারের রোগ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মস্তিষ্কের পর শরীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং জটিল অঙ্গ হল লিভার। শরীরের যাবতীয় বিপাক ক্রিয়া চলে এই লিভারের মাধ্যমে। শরীরে যথাযথ পুষ্টি সরবরাহেও ভূমিকা রয়েছে এই লিভারের। লিভার পিত্ত উৎপাদন করে যা চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। রক্ত থেকে টক্সিন দূর করে রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে লিভার। লিভারের মাধ্যমেই রক্তের প্রতি কোষে পুষ্টি সরবরাহ হয়। লিভারে কোনও সমস্যা হলে কোষ তখন আর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। আর তাই লিভারের যত্ন নেওয়া উচিত প্রথম থেকেই। যার জন্য এই অঙ্গের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা প্রচার করতে লিভার দিবস (Liver Day) পালন করা হয়।

লিভার সংক্রান্ত রোগ । Liver Disease :

লিভার শরীরের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। যদি এটি সঠিকভাবে কাজ না করে বা কাজ করা বন্ধ করে দেয় তবে এটি সমগ্র শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। লিভার সম্পর্কিত অনেক রোগ এবং ব্যাধি রয়েছে যা মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠতে পারে। জেনে নিন লিভার সংক্রান্ত সবথেকে সংক্রমিত রোগ সম্পর্কে।

 হেপাটাইটিস । Hepatitis :

হেপাটাইটিস হল লিভারের প্রদাহ। এটি সংক্রামক বা অ-সংক্রামক এজেন্ট দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে। সাধারণ সংক্রামক এজেন্ট হল হেপাটাইটিস ভাইরাস (এ, বি, সি, ডি এবং ই)। হেপাটাইটিসের সংক্রামক কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, ফ্যাটি লিভার, নির্দিষ্ট ওষুধ এবং টক্সিন। হেপাটাইটিস লিভারের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে এবং জ্বর, জন্ডিস, পেটে ব্যথা, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব এবং বমির মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। হেপাটাইটিস এ এবং ই দূষিত খাবার বা জল খাওয়ার কারণে ঘটে। হেপাটাইটিস বি, সি এবং ডি শারীরিক তরল, যেমন রক্তের সংস্পর্শে ছড়িয়ে পড়ে।

ফ্যাটি লিভার । Fatty Liver :

লিভারে চর্বি জমার কারণে ফ্যাটি লিভার রোগ হয়। দুই ধরনের ফ্যাটি লিভার রোগের মধ্যে রয়েছে: অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার ডিজিজ- যা প্রচুর অ্যালকোহল সেবনের কারণে ঘটে এবং নন-অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার ডিজিজ- যা স্থূল, ডায়াবেটিস এবং বিপাকীয় সিন্ড্রোমযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। ফ্যাটি লিভারের তিনটি পর্যায় রয়েছে। গ্রেড ১ ফ্যাটি লিভার (Grade 1 fatty liver), গ্রেড ২ ফ্যাটি লিভার (Grade 2 fatty liver),গ্রেড ৩ ফ্যাটি লিভার (Grade 3 fatty liver)। গ্রেড ১ ফ্যাটি লিভার (Grade 1 fatty liver) এবং গ্রেড ২ ফ্যাটি লিভার হলে অঙ্গে জমে থাকা চর্বির পরিমাণ লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। গ্রেড ৩ ফ্যাটি লিভার ঘটে যখন রোগীরা সচেতনভাবে তাদের জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস সামঞ্জস্য করে না বা সময়মতো চিকিৎসা করে না। গ্রেড ৩ ফ্যাটি লিভার  এই রোগের সমস্ত স্তরের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক। ভারতের সাধারণ জনসংখ্যার প্রায় ২০-৩০% ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত।

লিভার ক্যান্সার । Liver Cancer :

শরীরের যেকোনো স্থানের ক্যান্সার লিভারে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে এবং এইভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সারের মতো অন্যান্য ক্যান্সার লিভারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। লিভারের সবচেয়ে সাধারণ প্রাথমিক ক্যান্সার হল হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা। ক্রনিক লিভার ডিজিজ, ক্রনিক হেপাটাইটিস, অ্যালকোহল এবং টক্সিন লিভার ক্যান্সারের সাধারণ কারণ।

লিভার সিরোসিস । Liver Cirrhosis :

লিভার সিরোসিস হল লিভারের টিস্যুর দাগ যা আঘাতের কারণে দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগে পরিণত হয়। অ্যালকোহল, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি এবং এনএএসএইচ (NASH) হল ভারতে লিভার সিরোসিসের সাধারণ কারণ।লিভারের অস্বাভাবিক কার্যকারিতার ফলে জন্ডিস, রক্তপাতের অস্বাভাবিকতা এবং অঙ্গ ও পেটে তরল জমা হতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে, শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলিও প্রভাবিত হতে পারে যা কিডনি, মস্তিষ্ক, হার্ট এবং ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে।সিরোসিস প্রায়শই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিত্সা এবং ওষুধের মাধ্যমে লক্ষণগুলি পরিচালনা করে চিকিত্সাযোগ্য। কিন্তু যদি সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি পরিচালনা করা না হয় তাহলে এটি মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠতে পারে।

লিভার ব্যর্থতা । Liver Failure :

কোনো কারণে যকৃতের উল্লেখযোগ্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এই অবস্থা লিভার ব্যর্থতা হিসাবে পরিচিত। লিভারের ব্যর্থতা তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তীব্র যকৃতের ব্যর্থতা সাধারণত হেপাটাইটিস এ এবং ই, ওষুধের অতিরিক্ত মাত্রা (প্যারাসিটামল, টিবি-বিরোধী ওষুধ, ইত্যাদি) এবং নির্দিষ্ট টক্সিন দ্বারা সৃষ্ট হয়। দীর্ঘস্থায়ী লিভারের ব্যর্থতার সাধারণ কারণগুলি হল অ্যালকোহল, হেপাটাইটিস বি এবং সি, এনএএসএইচ, ইত্যাদি। লিভারের ব্যর্থতার সাধারণ লক্ষণগুলি হল জন্ডিস, মাড়ি এবং অন্ত্র থেকে রক্তপাত, তন্দ্রা  ইত্যাদি।

যেসব কারণে লিভারের স্বাস্থ্য প্রভাবিত হয় । Causes That Affect Liver Health :

সঠিক খাদ্যাভাসের অভাব, জীবন পরিচালনাতে ত্রুটি , মাদক-সহ নানান কারণে লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। অনেক ক্ষেত্রে অজান্তেই বিশেষ কিছু কাজ বা অভ্যাস লিভারের ক্ষতি করে। পরে সেই সামান্য কারণ পরিণত হয় বড় রোগে। দফলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন অভ্যাস বা কারণের দিকে নজর রাখতে বলেন যা লিভারের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। এই সকল কারণগুলির মধ্যে বিশেষ কয়েকটি হলো-

অতিরিক্ত মাদক বা অ্যালকোহল সেবন : অ্যালকোহল অতিরিক্ত সেবনের ফলে লিভারের রোগ হতে পারে। যার ফলে প্রদাহ, ফ্যাট জমা এবং লিভারের ক্ষতি হতে পারে। এর জন্য অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা এবং অ্যালকোহল আসক্তির জন্য চিকিৎসার সহায়তা চাওয়া উচিত।

 অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস : প্রক্রিয়াজাত খাবার, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং শর্করা সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে স্থূলতা বৃদ্ধি, ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং ফ্যাটি লিভার রোগ হতে পারে। এক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং শর্করা গ্রহণ সীমিত করার সাথে সাথে ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

স্থূলতা : অতিরিক্ত শরীরের ওজন ফ্যাটি লিভার রোগের দিকে পরিচালিত করতে পারে এবং লিভারের প্রদাহ এবং দাগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে ওজন হ্রাস লিভার সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

ভাইরাল হেপাটাইটিস সংক্রমণ : হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসগুলি লিভারে প্রদাহ এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ এবং লিভার ক্যান্সারের দিকে পরিচালিত করে। এক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এবং, কিছু ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য টিকা এটি প্রতিরোধ করতে পারে।

 টক্সিন : রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ, দূষণকারী এবং পরিবেশগত দূষক লিভারের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট করতে পারে।

ধূমপান : তামাকের ধোঁয়ায় ক্ষতিকারক রাসায়নিক রয়েছে যা লিভারের প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং লিভার ক্যান্সারের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

প্রসঙ্গত, অনেক ক্ষেত্রেই লিভারের রোগ জেনেটিক কারণে হয়। জিনগত কারণ, যেমন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত লিভারের রোগ যেমন উইলসন ডিজিজ এবং আলফা-১ অ্যান্টিট্রিপসিনের ঘাটতির মতো রোগ হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, যকৃতের হাল ফেরানোর কাজে সঠিক খাদ্যাভাস ও সঠিক নিয়মে জীবন পরিচালনার পাশাপাশি রসুনের কার্যকারিতা বেশ উল্লেখ্য। মেডিক্যাল নিউজ টুডে জানাচ্ছে, রসুনে হেপাটোপ্রোটেকটিভ কিছু উপাদান রয়েছে। আর এই উপাদান কিন্তু লিভারকে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। শুধু তাই নয়, অ্যালকোহোলিক লিভার ডিজিজের মতো প্রাণঘাতী অসুখ থেকেও সুস্থ করে তুলতে পারে এই ভেষজ। আর সেই কারণেই লিভার রোগে ভুক্তভোগীদের মদ্যপান ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত রসুন সেবন করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।