World Laughter Day | দীর্ঘায়ু পেতে হাসুন মন খুলে! জানুন হাসির স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং হাসির বৈজ্ঞানিক কারণ কী?
কেবল মন নয়, শরীরও নাকি ভালো রাখে হাসি। চিন্তা কমানো থেকে শুরু করে, শরীরের পেশীকে আরাম দেওয়া এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও নাকি সাহায়্য করে প্রাণখোলা হাসি।
প্রচলিত বাক্য অনুযায়ী, 'হাসলে বয়স কমে'। এ কথা কেবল কথাই নয়, আসলেই সত্যি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হাসজারুর মতো যদি হাসতে পারেন, তাহলে অনায়াসে সুস্থ থাকা যায়। কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে পার্থিব জিনিসের পিছনে ছুটতে ছুটতে জীবনকে উপভোগ করতেই ভুলে গিয়েছেন অনেকে। হাসি তো দূর। কারও সঙ্গে কথা বলার সময়টুকুও নেই। এর ফলে মনে জমা হচ্ছে অবসাদ। তবে মানুষকে একত্রিত করতে ও পৃথিবীকে সুখকর জায়গা তৈরির ক্ষমতা রয়েছে এই হাসির। এর জন প্রত্যেক বছর অক্টোবরের প্রথম রবিবার পালন করা হয় বিশ্ব হাসি দিবস (World Laughter Day)।
বিশ্ব হাসি দিবস । World Laughter Day :
কথায় বলে, যে কোনও অসুখের সবচেয়ে ভালো ওষুধ হচ্ছে হাসি। প্রতিবছর মে মাসের প্রথম রবিবার পালন করা হয় বিশ্ব হাসি দিবস (Laughter Day)। কেবল মন নয়, শরীরও নাকি ভালো রাখে হাসি। চিন্তা কমানো থেকে শুরু করে, শরীরের পেশীকে আরাম দেওয়া এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও নাকি সাহায়্য করে প্রাণখোলা হাসি। গোটা বিশ্বে প্রায় সমস্ত জায়গাতেই পালন করা হয় এই দিন দিনটি। বিভিন্ন জায়গায় বার করা হয় র্যালি।
বিশ্ব হাসি দিবসের ইতিহাস:
১৯৬৩ সালে হার্ভি বল প্রথম কিছু ব্যবসায়ীক কারণে তৈরি করেন স্মাইলি বা হাসি-র চিহ্নটি। এরপরেই কোনও কিছু ভালো বোঝাতে বা উৎসাহ দেওয়া জন্য জনপ্রিয় হয়ে যায় এই চিহ্নটি। প্রথম ১৯৯৯ সালে সেই চিহ্নকে সামনে রেখেই পালিত হয় ওয়ার্ল্ড স্মাইল ডে বা বিশ্ব হাসি দিবস (Laughter Day)। ২০০১ সালে হার্ভি প্রয়াত হলে ওয়ার্ল্ড স্মাইল ফাউন্ডেশনের (World Smile Foundation) তরফ থেকে তাঁর শ্রদ্ধায় প্রতি বছর পালন করা হয় এই দিনটি। অন্য আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায়, ড. মদন কাটারিয়ার ১৯৯৮ সালে প্রথম চালু করেন এই বিশ্ব হাসি দিবসের। তিনি যোগাসনে হাসির উপযোগিতাকে তুলে ধরেন। হাসি মানসিকভাবে মানুষকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।
হাসির বৈজ্ঞানিক কারণ । Scientific Reasons for Laughter :
হাসে না, এমন একটাও মানুষ নেই এই গোটা বিশ্বে। নানা কারণে মানুষ হাসে। ভাল লাগলে আমরা হাসি, আনন্দ পেলে হাসি, কেউ মজা করলে হাসি। প্রচণ্ড কষ্টে অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেলেও মানুষে হাসে। কেউ আবার সুড়সুড়ি পেলেও হাসে। এমনকি কেউ কেউ ভয় পেয়ে, স্নায়ু চাপে থাকার ফলেও হাসে। অনেকে বলে হাসি সংক্রামক। একজন হাসতে শুরু করলে অন্যরাও না হেসে পারে না। এমনকি মানা হয় কথা বলার একটি উপায় হল হাসি। প্রাচীনকালে, যখন ভাষা আবিষ্কার হয়নি, তখন-ও মানুষে হাসত। হাসির মধ্যে চলত কথোপকথন। সবকিছু ঠিক থাকলে হাসি দিয়েই সম্মতি জানানো হত। আর এই হাসির নেপথ্যে রয়েছে বড় বৈজ্ঞানিক কারণ।
মানুষ যে সব সময় বুঝে হাসে, তা কিন্তু নয়। যেমন তিন মাস বয়সী শিশুরাও হাসে, কথা বলতে শেখার আগেই। হাজার হাজার হাসির উদাহরণ নিয়ে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, কথোপকথনের ক্ষেত্রে শ্রোতার চেয়ে বক্তার হাসার সম্ভাবনা ৪৬ শতাংশ বেশি। আবার আমেরিকান ফিজিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, দলবেঁধে আড্ডার সময় হাসার সম্ভাবনা ৩০ গুণ বেড়ে যায়। শিশুদের নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আড়াই থেকে চার বছর বয়সী শিশুরা একা একা কার্টুন দেখলে যতটা হাসে, অন্য কোন-ও শিশুর সঙ্গে বসে দেখলে হাসার সম্ভাবনা ৮ গুণ বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হাসির ধরণ থেকে বোঝা যায়, মানুষ কতটা ঘনিষ্ট, তাদের সম্পর্ক কত পুরনো।
হাসি ও স্বাস্থ্য । Laughter and Health :
হাসলে দেহের টিস্যুগুলোর অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি হাসলে এন্ডোরফিন নামে একধরনের রাসায়নিক শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই হরমোন আমাদের খুশি রাখে, কমিয়ে দেয় শরীরের ব্যথা ও দুশ্চিন্তা। হাসার কারণে মস্তিষ্কের বিশেষ এক রাসায়নিক পদার্থ মানুষকে ভাল অনুভূতি দেয়।
ইমিউনিটি বাড়ে :
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে হাসলে দুশ্চিন্তা ও ভয় কমে। আর এই দুই মানসিক অবস্থা থেকে রেহাই পেলে ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়। তাই সুস্থ থাকতে হাসা মাস্ট।
হ্যাপি হরমোন :
আনন্দময় জীবনের চাবিকাঠি হল হ্যাপি হরমোন। এই হরমোন মনকে আনন্দে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁর শরীরে হ্যাপি হরমোনের মাত্রা যত বেশি সে ততধিক আনন্দে থাকে। এমনকী তাঁর রোগ ভোগের আশঙ্কাও কম।
মুড ঠিক করে :
জীবনের নানাবিধ জটিলতার মাঝে মেজাজ ঠিক রাখা খুবই কঠিন কাজ। অনেক চেষ্টা করেও বহুজন এই কাজে অপারগ হন। এমনকী দিনের পর দিন তাঁদের নেগেটিভিটি বা নেতিবাচক চিন্তা গ্রাস করে। এহেন জটিলতার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে দিনে কিছুটা সময় দাঁত খুলে হেসে নিন।
শ্বেত রক্ত কণিকার বৃদ্ধি :
টি কোষ হল ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ, যা অস্থি মজ্জার স্টেম কোষ থেকে বিকাশ করে। এই কোষগুলি শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। আমরা যখন হাসি তখন এই কোষ আমাদের শরীরে আরও বেশিভাবে সক্রিয় হয়। হাসি সঙ্গে সঙ্গে এই কোষগুলিকে জীবিত করে, যা সাহায্য করে শরীর ও মন ভালো রাখতে।
কার্ডিয়াক স্বাস্থ্যের উন্নতি :
বহু চিকিৎসক হাসিকে একটি ব্যতিক্রমী কার্ডিও ওয়ার্কআউট (cardio workout) হিসেবে বিবেচিত করে থাকেন। বিশেষত যে সকল ব্যক্তি অসুস্থ এবং কোনও রকম আঘাত বা অসুস্থতার কারণে অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ করতে সক্ষম নন, তাদের ক্ষেত্রে হাসি কাজ করে ম্যাজিকের মতো। ধীর থেকে মাঝারি গতিতে হাঁটার সময় যে পরিমান ক্যালোরি ক্ষয় (calories burn) হয় সেই পরিমান ক্যালোরি ক্ষয় করতে সক্ষম হাসি।
প্রসঙ্গত, হাসি একধরনের ব্যায়ামও। এতে শ্বাস–প্রশাস দ্রুত হয়, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস ভাল থাকে। যদি কোন-ও কিছু নিয়ে উদ্ধিগ্ন থাকেন বা ভয়ের মধ্যে থাকেন, তাহলে হাসি তা দূর করে দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানুষের ইমিউন ব্যবস্থা ভালে রাখতে সহায়তা করে হাসি। হাসির কিছু বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করলে নাকি দীর্ঘদিন সুস্থভাবে জীবন যাপন করা যায় বলেও দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। হাসির জন্য বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে বিশেষ ক্লাব। পার্ক ও অন্যান্য ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন মানুষ জড়ো হন হাসির মাধ্যমে শরীর ভালো রাখতে।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- বিশ্ব হাসি দিবস
- স্বাস্থ্য