New Education Rule | চার বছরে অনার্স কোর্সের পর এবার দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচি থেকে বাদ পিরিওডিক টেবল, গণতন্ত্রের মত বিষয়!
গত বুধবারই মোদি সরকারের নয়া শিক্ষানীতি মেনে চার বছরে অনার্স কোর্স শেষ করার ঘোষণা করেন ব্রাত্য বসু। এবার দশম শ্রেণীর সিলেবাস থেকে পিরিওডিক টেবল, গণতন্ত্রের মত বিষয় বাদ দিলো এনসিইআরটি।
গতকালই মোদি সরকারের নতুন শিক্ষানীতি মেনে অনার্স কোর্স (Honors Course) চার বছরে শেষ করার ঘোষণা করেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। এবার আজ অর্থাৎ ১লা জুন বৃহস্পতিবার দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়া হলো পিরিওডিক টেবল (Periodic Table), গণতন্ত্র (Democracy) এবং শক্তির উৎসের (Source Of Energy) মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি।
দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির বিজ্ঞান থেকে বাদ পড়তে চলেছে, পিরিওডিক ক্লাসিফিকেশন অব এলিমেন্টস (Periodic Classification of Elements), সোর্সেস অব এনার্জি (Sources of Energy) এবং সাস্টেইনেবল ম্যানেজমেন্ট অব ন্যাচারাল রিসোর্সেস (Sustainable Management of Natural Resources) এই তিনটি অধ্যায়। অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক পলিটিক্স-১ (Democratic Politics-I) এর পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে পপুলার স্ট্রাগলস অ্যান্ড মুভমেন্টস (Popular Struggles and Movements), পলিটিক্যাল পার্টিস (Political Parties) এবং চ্যালেঞ্জেস অব ডেমোক্রেসি-র (Challenges of Democracy) মতো অধ্যায়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতেই দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে ‘ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব’ (Darwin's theory of evolution) বাদ দেওয়া নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং (National Council of Educational Research and Training) বা এনসিইআরটি (NCERT)-র এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে খোলা চিঠি লেখেন ১৮০০-র বেশি বিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদ। এরপর পিরিওডিক টেবল, গণতন্ত্র এবং শক্তির উৎসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বাদ যাওয়ার বিষয়ে সেই উদ্বেগ আরও বেড়েছে। তবে এনসিইআরটির তরফ থেকে জানানো হয়, কোভিড-১৯-এর কারণে, শিশুদের উপর পড়াশোনার বোঝা কমাতেই পাঠ্যসূচিতে এই যুক্তিসঙ্গত কাট-ছাঁট করা হচ্ছে।
এনসিইআরটি-র মতে ভারতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে সকলকে বিজ্ঞান পড়তে হয়। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে যারা রসায়ন পড়বে না, তাদের আগের থেকে পিরিওডিক টেবল জানার দরকার নেই।
এই ঘটনার পর অনেকেরই প্রশ্ন, তাহলে কি বাদ দেওয়া বিষয়গুলি সম্পর্কে পড়তে পারবেন না পড়ুয়ারা? এনসিইআরটির বক্তব্য, দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে এই বিষয়গুলি বাদ দেওয়া হলেও, যদি তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার জন্য বাছাই করে তাহলে শিক্ষার্থীরা চাইলে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে পারবে। অর্থাৎ যারা একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে বিষয় হিসেবে রসায়ন বাছাই করবে, তারাই পিরিওডিক টেবল সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে।
অন্যদিকে, এবার বঙ্গেও কার্যকর হতে চলেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই তিন বছরের বদলে চার বছরের অনার্স কোর্স (Honors Course In 4 year) কার্যকর করার কথা বুধবার অর্থাৎ ৩১সে মে ঘোষণা করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
বহু দিন ধরেই কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে মোদি সরকারের নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে সংঘাত চলে এসেছে। তবে বুধবার বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, ৭ লক্ষ ছাত্র ছাত্রীদের সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সুবিধার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বাইরে পড়তে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে কলেজগুলিতে আলাদা আলাদা ভাবে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবেও বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
স্নাতকস্তরে আমরা ৪ বছরের পঠনপাঠন চালু করতে চলেছি। স্নাতকস্তরে ভর্তি হতে চলেছে যে ৭ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী তাদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। রাজ্যের বাইরে পড়তে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। বিভ্রান্তি যাতে না ছড়ায় সেজন্য আমরা এখনই কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে ভর্তির কথা বলছি না। কলেজগুলি আলাদা আলাদা ভাবে ভর্তির ব্যবস্থা করবে।
উল্লেখ্য, ৩৪ বছর পর ২০২০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতিতে বদল আনেন মোদি সরকার। তবে প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এই নয়া শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রি স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা সবের ক্ষেত্রেই নিয়মের বদল আনা হয়। তবে এই বিরাট রদবদল করা হয় এমন একটা সময়, যখন সংসদ বন্ধ ছিল। ফলে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, শিক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয় হয়েও কেন রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই শিক্ষানীতি ঘোষণা করে দেওয়া হল।
বহু তর্ক বিতর্ক শেষে কেন্দ্রের শিক্ষানীতি অনুযায়ী ৪ বছরে অনার্স কোর্স শেষ করার সিদ্ধান্ত নিলেও কেন্দ্র সরকারকে (Central Government) কিছুটা কটাক্ষ করেই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই ব্যবস্থা না চালু করলে এ রাজ্যের প্রায় ৭ লক্ষ ছাত্রছাত্রী সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অংশই নিতে পারতেন না। সেই সঙ্গে এ রাজ্যের পড়ুয়াদের বাইরের রাজ্যে গিয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে যেত।
কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি বাম আমলের সরকারকেও কটাক্ষ করলেন ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স রেখে দিলে বিগত বাম সরকারের ক্লাস ওয়ান থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়া বা ব্রিজ কোর্স চালু করার মতো বা তার থেকেও বেশি ছাত্র-বিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়া হত।
উল্লেখ্য, মোদি সরকারের শিক্ষানীতি অনুযায়ী ৪ বছরের অনার্স কোর্স শেষ করার ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেও, জাতীয় শিক্ষানীতির একাধিক বিষয়ই গ্রহণ করেনি রাজ্য। শিক্ষামন্ত্রী জানান, স্কুলের পঠন-পাঠনে ৫+৩+৩+৪ পদ্ধতি চালু করা বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কেন্দ্রীকরণের মতো নীতির বিরোধিতা করছে রাজ্য সরকার।
- Related topics -
- রাজ্য
- শিক্ষা ব্যবস্থা
- ব্রাত্য বসু
- রাজ্য সরকার
- উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ
- পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ