National Moon Day | চাঁদের ছায়া পৃথিবীর থেকে গাঢ়! জানুন ন্যাশনাল মুন ডে-তে চাঁদের অজানা তথ্য!
প্রতি বছর ২০ ই জুলাই পালন করা হয় জাতীয় চাঁদ দিবস। কেবল চাঁদে মানুষের অবতরণকে স্মরণ করার জন্যই নয় চাঁদ সম্পর্কে মানবজাতির অগ্রগতির জন্যও এই দিবস পালন করা হয়।
সম্প্রতি গোটা বিশ্বের নজর কেড়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে ইসরোর (ISRO) চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। ফলে এখন বেশ কয়েক দিন ধরেই প্রায় সকলেরই চর্চার বিষয়ে জায়গা করে নিয়েছে চাঁদ (Moon) বা চাঁদ সম্পর্কিত তথ্য। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, এই উপগ্রহের জন্য পালন করা হয় এক বিশেষ দিন, যা পরিচিত ন্যাশনাল মুন ডে (National Moon Day) নামে। আর এই বিশেষ দিন পালন করা আজকের তারিখে অর্থাৎ ২০সে জুলাই।
ন্যাশনাল মুন ডে, স্পেস এক্সপ্লোরেশন ডে (Space Exploration Day) নামেও পরিচিত। প্রতি বছর ২০সে জুলাই বিশ্বব্যাপী এই দিবস পালন করা হয়। চাঁদে ঐতিহাসিক অবতরণকে স্মরণের পাশাপাশি, চাঁদের অনুসন্ধানে মহাকাশ বিজ্ঞানী এবং মহাকাশচারীদের অবদানের স্মারক হিসেবে এই দিবস পালন করা হয়।
ন্যাশনাল মুন ডে-র ইতিহাস । History of National Moon Day :
আজকের তারিখে অর্থাৎ ২০ ই জুলাই ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রং (Neil Armstrong), পাইলট বাজ অলড্রিন (Buzz Aldrin) এবং মাইকেল কলিন্স (Michael Collins) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (United States) ফ্লাইট অ্যাপোলো ১১ (Apollo 11) প্রথমবার চাঁদে অবতরণ করেছিল। চাঁদে মানুষের প্রথম অবতরণ করার দু বছর পর অর্থাৎ ১৯৭১ সালে, রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন (Richard Nixon) ২০সে জুলাইকে জাতীয় চাঁদ অবতরণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। তবে তা কোনো রেজুলেশনে অনুসরণ করা হয়নি। পরে ২০১৯ সালে, রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ২০সে জুলাইকে অ্যাপোলো ১১ চন্দ্র অবতরণের ৫০ তম বার্ষিকী পালন হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।
চাঁদের কিছু অজানা তথ্য । Some Unknown Facts About The Moon :
জাতীয় চাঁদ দিবস বা ন্যাশনাল মুন ডে, এই দিবসটি শুধু চাঁদে মানুষের প্রথম অবতরণকে স্মরণ করতেই নয়, চাঁদের বিষয়ে অজানা অনুসন্ধানের দিকে মানবজাতির অগ্রগতির জন্যও পালন করা হয়। প্রতিনিয়তই মহাকাশের নানান অজানাকে জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমে পৃথিবীর নিকটতম উপগ্রহ চাঁদ নিয়ে নানান পরীক্ষা চলে। বহু বছর ধরে চাঁদের সম্পর্কে অজানাকে জানার যাত্রা চললেও এখনও কিন্তু সেই যাত্রা শেষ হয়নি। তবে চাঁদ সম্পর্কিত এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে যা জানেন না অনেকেই। দেখে নিন চাঁদ সম্পর্কিত সেইসব অজানা বিষয়।
১. চাঁদে রয়েছে কবরস্থান । There is a Cemetery on The Moon :
১৯৬৯ সল্ থেকে চন্দ্রাভিযান শুরু করে মানবজাতি। দীর্ঘ এতো গুলো বছরে যতবার চাঁদে কোনো চন্দ্রযান গিয়েছে ততবার চাঁদে ফেলে এসেছে বহু জিনিস অর্থাৎ স্পেস জাঙ্ক (Space Junk)। যার মধ্যে রয়েছে রকেট, ক্যামেরা, ব্যাকপ্যাক এবং গল্ফ বলের মতো একাধিক জিনিস। তবে চাঁদে রয়েছে কবরস্থানও। চাঁদে রয়েছে ইউজিন শুমেকারের (Eugene Shoemaker) দেহের ছাই। যা নাসার (NASA) পলিকার্বোনেট ক্যাপসুল (Polycarbonate Capsule) দ্বারা পাঠানো হয়েছিল।
২. হারিয়ে যাচ্ছে চাঁদ । The Moon is Disappearing :
প্রতি বছর, চাঁদের কক্ষপথ পৃথিবী থেকে প্রায় চার সেন্টিমিটার দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ আগামী ৫০০ মিলিয়ন বছরে, চাঁদ বর্তমানের অবস্থানের থেকে ১৪,৬০০ মাইল দূরে চলে যাবে।
৩. চাঁদের পৃষ্ঠে তাজা পায়ের ছাপ । Fresh Footprints on the Surface of the Moon :
চাঁদে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পা রাখেনি কোনও মানুষ। তবে এখনও তাজা রয়েছে মানুষের পায়ের ছাপ। তা কী করে সম্ভব? এই ঘটনা নিয়ে অনেকেই অনেক রকম বক্তব্য রেখেছেন। তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন অন্য কিছু না, সেই পায়ের ছাপ চাঁদে যাওয়া মানুষের। যেহেতু সেখানে তাস বা জল নেই তাই সেই পায়ের ছাপগুলি অক্ষুন্ন রয়েছে।
৪. পূর্ণিমা আপনাকে জাগিয়ে রাখতে পারে । A Full Moon Can Keep You Awake :
সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ বাসেল (University of Basel in Switzerland) একটি গবেষণা করে জানায়, পূর্ণিমার সময় কম ঘুম পায়, শরীরে কম মেলাটোনিন (Melatonin) উৎপন্ন হয়। ফলে অন্যান্য সময়ের থেকে পূর্ণিমার সময়ে বেশ কিছু ব্যক্তি কম ঘুমান।
৫. চাঁদের ছায়া পৃথিবীর চেয়ে গাঢ় । Moon's Shadow is Darker Than Earth's :
চাঁদের নভোচারীরা লক্ষ্য করেছিলেন যে চাঁদের ছায়া পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি গাঢ়। পৃথিবীতে ছায়া তৈরি করতে যে বায়ুমণ্ডল আলো ছড়ায় তা চাঁদে অনুপস্থিত। সূর্য এবং পৃথিবী নিজেই কিছুটা আলো সরবরাহ করে ছায়া তৈরী করলেও তা সহজে দেখা যায়না।
৬. চাঁদে ভূমিকম্প বা চাঁদের কম্পন অনুভব হয় । Earthquakes or Moonquakes Are Felt on The moon :
পৃথিবীর মতোই, চাঁদের একটি ভূত্বক রয়েছে যা স্থানান্তরিত হয় এবং পরিবর্তিত হয়। চাঁদের ভূত্বক যখন উষ্ণ হয় এবং প্রসারিত হয় তখন চাঁদের কম্পন ঘটতে পারে। যদিও চাঁদের কম্পন ভূমিকম্পের মতো খুব তীব্র হয় না। তবে এই ভূমিকম্প অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
চাঁদের অনেক বিষয়ই এখনও অজানা রয়েছে। আর এই তথ্যগুলি সম্পর্কে জানতে চলতি মাসের ১৪ তারিখ চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ইসরোর চন্দ্রযান-৩। এই চন্দ্রযান অবতরণ করবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। এর আগে কোনও মহাকাশযানই এই অঞ্চলে পৌঁছায়নি। ফলে চাঁদ সম্পর্কিত অনেক তথ্যই জানা যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।