লাইফস্টাইল

National Dengue Day | আজ জাতীয় ডেঙ্গু দিবস! জানুন ডেঙ্গুর লক্ষণ ও চিকিৎসা

National Dengue Day | আজ জাতীয় ডেঙ্গু দিবস! জানুন ডেঙ্গুর লক্ষণ ও চিকিৎসা
Key Highlights

ডেঙ্গু সম্পর্কে দেশে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ও সতর্ক করতে প্রতি বছর ১৬ই মে পালন করা হয় জাতীয় ডেঙ্গু দিবস।

ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং এই রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে প্রতি বছর ১৬ই মে পালন করা হয় জাতীয় ডেঙ্গু দিবস (National Dengue Day)। এদিন গোটা দেশ জুড়ে সরকার, বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা ডেঙ্গু সম্পর্কে শিক্ষামূলক ও সচেতনতামূলক তথ্য প্রচারণা করা হয়ে থাকে। ডেঙ্গু কীভাবে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সেই সম্পর্কেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয় জাতীয় ডেঙ্গু দিবসের দিন।

ভারতে সব থেকে সংক্রামক রোগের মধ্যে অন্যতম একটি ভেক্টর বাহিত  রোগ (Vector Borne Disease) ডেঙ্গু। ভেক্টর বাহিত রোগ অর্থাৎ, অন্য প্রাণীর জীবাণু যখন রক্তের মাধ্যমে আমাদের মানব শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ছড়ায়। এই প্রকারের রোগের মধ্যে অন্যতম ডেঙ্গু (Dengue), ম্যালেরিয়া (Malaria), লাইম রোগ (Lyme Disease) ইত্যাদি।

ভারতে প্রতিবছরই ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। বর্ষাকাল আসতে না আসতেই অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়েন এই মারণ রোগে। যার ফলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের (Union Ministry of Health and Family Welfare) তরফ থেকে মে মাসের ১৬ তারিখ ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং এই রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষদের শিক্ষিত করতে পালন করা হয় জাতীয় ডেঙ্গু দিবস।

ডেঙ্গু কি? | What is Dengue?

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ (Viral disease) যা সংক্রামিত হয় মশার কামড়ে। এই রোগ ডেঙ্গু ভাইরাস প্রকার ডেনভি (DENV), ১-৪ সেরোটাইপ ডেন-১ (1-4 serotypes DEN-1), ডেন-২ (DEN-2), ডেন-৩ (DEN-3) এবং ডেন-৪ (DEN-4) দ্বারা সৃষ্ট হয়। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (Centers for Disease Control and Prevention) অনুসারে গোটা বিশ্বে প্রায় ৪ বিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ প্রায় বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ এমন অঞ্চলে বাস করেন যেখান থেকে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়ানোর তীব্র সম্ভাবনা রয়েছে।

এই রোগ প্রধানত ছড়ায় স্ত্রী এডিস ইজিপ্টি মশা (Female Aedes Aegypti Mosquito) দ্বারা। এই প্রকার মশা থেকে ডেঙ্গু ছাড়াও জিকা ভাইরাস (Zika Virus) এবং চিকুনগুনিয়াও (Chikungunya) ছড়ায়। এই প্রকার সংক্রমণজনক মশা সাধারণত দিনের বেলাতেই কামড়ায়।

ডেঙ্গুর লক্ষণ | Symptoms of Dengue :

সাধারণত ডেঙ্গু সংক্রামক মশা কামড়ানোর ৩ থেকে ১৪ দিন পর সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো দেখা যায়। জয়েন্ট বা পেশী ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, ফুসকুড়ির মতো লক্ষণ দেখা যায় ডেঙ্গু রোগে। তবে ব্যক্তি বিশেষে এই লক্ষণগুলি নির্ভর করে। বহু ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর লক্ষণ আরও খারাপ পর্যায়ে যেতে পারে, এমনকি ডেঙ্গু হয়ে উঠতে পারে প্রাণনাশকও। অনেক সময় দেখা যায় এই রোগের কারণে সংক্রমিত ব্যক্তির ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS)-র কারণে ব্যাপক রক্তপাত, শক থেকে মৃত্যু হয়েছে। সাধারণত ডেঙ্গুর লক্ষণ ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।

ডেঙ্গু হলে সাধারণত যে সকল লক্ষণ দেখা যায় তা হল-

  •     হঠাৎ উচ্চ জ্বর, যার তাপমাত্রা চাপিয়ে যেতে পারে ১০৫ ডিগ্রি।
  • তীব্র মাথাব্যথা।
  • চোখের পিছনে ব্যথা।
  • গুরুতর জয়েন্ট এবং পেশী ব্যথা।
  • শরীরের ক্লান্তি।
  • বমি বমি ভাব।
  • ডায়রিয়া।
  • ত্বকের ফুসকুড়ি, যা জ্বর শুরু হওয়ার দুই থেকে পাঁচ দিন পর থেকে দেখা দেয়।
  • হালকা রক্তপাত, যেমন নাক থেকে রক্তপাত, মাড়ি থেকে রক্তপাত।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা | Treatment of Dengue :

ডেঙ্গু জ্বরের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই তবে এর উপসর্গ প্যারাসিটামল (Paracetamol) বা অ্যাসিটামিনোফেন (Acetaminophen) দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। হালকা ডেঙ্গু জ্বর নিরাময়ের জন্য হাসপাতাল থেকে সাধারণত ইলেক্ট্রোলাইট (Electrolytes) দেওয়া হয়। যদি সংক্রমিত ব্যক্তির খুব গুরুতর অবস্থা হয় সেক্ষেত্রে রক্তের ক্ষতি পূরণের জন্য ট্রান্সফিউশন (Transfusion) করা হয়। এছাড়াও ৯ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের জন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধক ভ্যাকসিনও (Dengue Vaccine) উপলব্ধ রয়েছে।

 ১৭৮০ সালে ভারতের মাদ্রাজ (Madras), বর্তমানে চেন্নাইতে (Chennai) প্রথম ডেঙ্গু মহামারীতে পরিণত হয়। এরপর ১৯৬৩-১৯৬৪ সালে কলকাতা (Calcutta) ও ভারতের পূর্ব উপকূলে (East-Coast of India) ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল ডেঙ্গু সংক্রমণ। দেশে ডেঙ্গু মহামারীর প্রকোপ পড়ার পর এই রোগ নিরাময়ের জন্য বহু বছর ধরে বর্তমানকাল পর্যন্ত প্রতিনিয়ত গবেষণা করা হচ্ছে। তবুও বর্ষাকালের মরশুম শুরু হতেই দেশ জুড়ে মাথাচাড়া দেয় ডেঙ্গু সংক্রমণ। ল্যানসেটের (Lancet) একটি সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে প্রায় ১,১০,৪৭৩ টি ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে।

প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নয়ন হলেও এখনও ডেঙ্গু ভারতে অতি আতঙ্কজনক ও অতি সংক্রামক রোগ। যার ফলে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই মেনে চলতে হবে কিছু বিষয়। খেয়াল রাখবেন আপনার বাড়িতে বা বাড়ির আশেপাশে কোথাও জল জমা না হয়ে থাকে, মশার উপদ্রব থাকলে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন, মশার সংখ্যা কমানোর জন্য ব্যবহার করুন কীটনাশক, আর অবশ্যই খেয়াল রাখবেন বাড়িতে ও বাড়ির আশেপাশে যাতে কোথাও মশা লার্ভা না পারতে পারে। ডেঙ্গু ভারতে সাধারণ রোগ হলেও এটি হতে পারে প্রাণনাশক। ফলে ডেঙ্গু থেকে সচেতন ও সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।