আন্তর্জাতিক

Mount Everest and Sherpas | ৭০ বছর আগে এভারেস্ট জয় করেন তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারি, জানুন মাউন্ট এভারেস্টের নানান কাহিনী!

Mount Everest and Sherpas | ৭০ বছর আগে এভারেস্ট জয় করেন তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারি, জানুন মাউন্ট এভারেস্টের নানান কাহিনী!
Key Highlights

১৯৫৩ সালে ২৯সে মে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন শেরপা তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারি। ২৮ বার এভারেস্ট জয় আরেক শেরপার।

পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য ও বিশ্ব গোলার্ধের সবচেয়ে উচ্চতম স্থান মাউন্ট এভারেস্ট (Mount Everest)। হিমালয় (Himalaya) পর্বতমালার মুকুট, নেপাল ও তিব্বত (এখন চিন)-এর ঠিক সীমান্তে রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি। এক সময়ে এই শৃঙ্গে পৌঁছানো ছিল অসম্ভব ঘটনা। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গকে পায়ের তলায় রাখার স্বপ্ন সত্যি করার জন্য বহু অভিযাত্রী মাউন্ট এভারেস্ট পারি দেওয়ার  যাত্রা শুরু করেন। তবে শারীরিক অসুস্থতা বা প্রবল তুষারপাত বা সম্পর্কিত নানান কারণে কখনও ব্যর্থ আবার কখনও এভারেস্টের বরফের মধ্যেই চিরতরে হারিয়ে গিয়েছেন একাধিক পর্বতারোহীরা। এই সকল মুশকিল বিপদজনক রাস্তা অতিক্রম করে ঠিক ৭০ বছর আগে  ২৯সে মে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ, মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় সামিট (Summit) করে  অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলেন তেনজিং নোরগে (Tenzing Norgay) এবং এডমন্ড হিলারি (Edmund Hillary)। প্রথম মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গ জয়ী হিসেবে বিশ্বের স্বর্ণ ইতিহাসে নাম লেখান নোরগে ও হিলারি। ঐতিহাসিক এই দিনকে স্মৃতিচারণ করতে এবং তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারি জেদ, সাহস আর পর্বতারোহণের কৌশলকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি, বাকি অভিযাত্রীদের লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে প্রতি বছর ২৯সে মে পালন করা হয় মাউন্ড এভারেস্ট দিবস (Mount Everest Day)।

মাউন্ট এভারেস্টে প্রথম সামিট: তেনজিং নোরগে-এডমন্ড হিলারি | First Summit on Mount Everest: Tenzing Norgay-Edmund Hillary :

নিউজিল্যান্ডে (New Zealand) মৌমাছি প্রতিপালনের কাজ করতেন এডমন্ড হিলারি। শখের বসে বিভিন্ন পর্বতে আরোহণ করেছিলেন তিনি। অন্যান্য পর্বতারোহীদের মতো তারও পউদ্দাম জেদ, এভারেস্টে সামিট করা। সেই লক্ষ্যে ১৯৫১ সালে একবার এভারেস্ট সামিটের চেষ্টা করেছিলেন। অপরদিকে, নেপালের (Nepal) অত্যন্ত অভিজ্ঞ পর্বাতরোহী এবং শেরপা (Sherpa) তেনজিং নোরগে । ছোট থেকেই পাহাড়ের প্রতি তাঁর টান ও ভালোবাসা। চিনতেন পাহাড়ের নাড়িনক্ষত্র।

 তেনজিং ও হিলারি দুজনেই তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য ১৯৫৩ সালে এভারেস্টের জন্য পারি দেন। সেই বছরই ২৭সে মে এভারেস্টে সামিট করার পরিকল্পনা থাকলেও  ব্যর্থ হয়ে পড়েন একাধিক পর্বতারোহী। কিন্তু তখনও হার মানতে নারাজ তেনজিং ও হিলারি। ২৯ সে মে-র সকালেই মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠে দাঁড়ান দুজনে।  এরপর থেকেই শুরু পর্বতারোহীদের এক নতুন অধ্যায়। বিশ্ব দরবারে চিরকালের জন্য ইতিহাস গড়ে অমর হয়ে রইলেন তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারি।

বর্তমানে মাউন্ট এভারেস্টে সামিটের পরিস্থিতি | Currently The Summit Situation in Mount Everest :

উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার। ভয়ঙ্কর ঢাল, হাড় কাঁপানো ঠান্ডা, যে কোনও সময় বদলে যাওয়া আবহাওয়া, অক্সিজেনের ঘাটতি- এরকম আরও নানা প্রতিকূলতা জয় করেই প্রতিবছর এভারেস্ট সামিট করেন বহু পর্বতারোহীরা। এভারেস্টের চূড়ায় উঠে তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারি সূচনা করেন নতুন অধ্যায়ের। এরপর তাতেই নাম লেখান গোটা বিশ্বের অসংখ্য পর্বতারোহীরা। 

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত মোট ৬,৩৩৮ জন মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করেছেন। তার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্বতারোহী নেপালের (১,৭৫৬ জন) পর্বতারোহী। এরপর সেই তালিকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) (৭৪৮ জন) এবং ভারত (India) (৫২৬ জন)।

১৯৫৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোন দেশের করা কবে মাউন্ট এভারেস্ট সামিট করেছেন সেই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে - https://haexpeditions.com/advice/list-of-mount-everest-climbers/

৭০ বছর ধরে অসংখ্য পর্বতারোহী এভারেস্ট সামিট করলেও বহু পর্বতারোহী চিরতরে মিলিয়ে গেছেনা এভারেস্টের বরফের মধ্যেই। এক তথ্য অনুযায়ী, কেবল গত ৪০ বছরেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০০ এরও বেশি। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পরে ফায়ার এসেছেন পর্বত থেকে। সাম্প্রতিক ঘটনারই উদাহরণ, পাকিস্তানি (Pakistani) পর্বতারোহী আসাদ আলীর (Asad Ali) তার ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে এভারেস্টে আটক হয়ে পড়েছিলেন। চোট পাওয়ার পর এবং তার সামিট শেষ করতে না পারার জন্য নেপাল সরকারের কাছে এয়ারলিফটে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেন আসাদ। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করা হয়।

যদিও, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে নেপাল সরকার মাউন্ট এভারেস্ট পর্বতারোহীদের একক ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিপুল সংখ্যক অনভিজ্ঞ পর্বতারোহী এভারেস্টে যাওয়া এবং মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস করার জন্য ই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এভারেস্ট সামিট করার নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পর্বতারোহীদের সঙ্গে একজন মাউন্টেন গাইড অর্থাৎ শেরপা থাকতে হবে।

কামি রিতা শেরপা ও তাঁর ২৮ বার এভারেস্ট জয় | Kami Rita Sherpa and 28 Times Conquering Mount Everest : 

বিশ্ব গোলার্ধের সব থেকে উঁচু শৃঙ্গ একবার জয় করতে পারলেই জীবন ধন্য হয়ে যায় বলে ধারণা বহু পর্বতারোহীদের। নানান রকমের বিপদ, মুশকিল পেরিয়ে একবার এভারেস্ট জয় করা অসাধ্য সাধন করার বেশি তো কম নয়। সঙ্গে এভারেস্টে ওঠার পথে নানান চ্যালেঞ্জ খুব সহজ নয়, ফলে অনেকেই এই যাত্রায় একবার অংশ নেন। সম্প্রতি গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ৫-১০ বার নয় ২৮ বার মাউন্ট এভারেস্ট সামিট করে রেকর্ড গড়েছেন নেপালের ৫৩ বয়সী কামি রিতা শেরপা (Kami Rita Sherpa)।

চলতি বছর ২৩ মে সকাল ৯:২০ মিনিটে ২৮ বার এভারেস্ট সামিট করে এই বিরল কীর্তির মালিক হন শেরপা। এভারেস্টের পাশাপাশি আটবার ষষ্ঠ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ চো ইয়ো (Cho Oyu), একবার লোতসে (Lhotse), একবার কারাকোরাম শৃঙ্গ (Karakorum) জয় করেছেন তিনি। ১৯৯২ সাল থেকেই নিয়মিত পাহাড়ে ওঠা শুরু করে। ১৯৯৪ সালের ১৩ মে প্রথমবার এভারেস্ট জয় করেন কামি রিতা। সেভেন সামিট ট্রেক (Seven Summit Trek) নামে একটি সংস্থার সঙ্গে ২৮তম এভারেস্ট জয়ের অভিযান শুরু করেছিলেন কামি রিতা। সে সংস্থা থেকে জানানো হয়, খারাপ আবহাওয়ার কারণে চলতি বছরে এভারেস্ট অভিযান অনেক দেরিতে শুরু হয়। প্রবল তুষারপাতের জেরে বেশ কয়েকদিন স্থগিতও ছিল অভিযান।তারপরেও পাহাড়ে উঠতে গিয়ে গত কয়েকদিনে মৃত্যু হয়েছে একাধিক অভিযাত্রীর। সেই তালিকায় রয়েছেন এক ভারতীয় মহিলাও। তবে এত বিপদ সত্ত্বেও দমিয়ে রাখা যায়নি কামি রিতাকে। চলতি মরসুমে একবার নয়, টানা দু’বার এভারেস্টের শীর্ষে পা রাখেন তিনি।

মাউন্ট এভারেস্ট ও শেরপা | Mount Everest and Sherpas :

প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ এভারেস্ট জয় করছেন। এক এক করে এভারেস্ট জয়ীদের নামের তালিকায় যোগ হচ্ছে নাম। সঙ্গে সমাজে, সংবাদে শিরোনামেও উঠে আসে এভারেস্ট জয়ীরা। তবে প্রায় প্রত্যেকবারই এভারেস্ট জয়ীদের সাফল্যের আঁধারে ঢাকা পরে যায় তাদের সঙ্গেই বহুগুণ বেশি পরিশ্রম করে এভারেস্ট জয় করা শেরপারা।  এভারেস্ট জয়ী হিসেবে খেতাব লাভের জন্য অন্যদের থেকে বেশি অধিকার রয়েছে শেরপা সম্প্রদায়ের। শুধু মাত্র তাদের ক্লায়েন্ট অর্থাৎ পর্বতারোহীদের পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাওয়াই নয়, পর্বতারোহীদের শারীরিক সুস্থতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রয়োজনীয় মালপত্র বহন করা এমনকি প্রাণের তোয়াক্কা না করে বাকিদের রক্ষা করার মতো দায়িত্ব পালন করে থাকেন শেরপারা।

পঞ্চদশ শতকে তিব্বত থেকে পূর্ব দেশের অধিবাসী উপজাতি  শেরপারা নেপালের শোলোখুম্বুতে (Solukhumbu) বসবাস শুরু করেন। আর সেই সময় তারা নেপাল থেকে দার্জিলিং পাহাড়ে প্রথম আসা শুরু করেন ব্যবসার জন্য। দার্জিলিং-এর বসবাসকারীদের জন্য তাঁরা গরম পোশাকের উল ছাড়া বিভিন্ন খাদ্যের কাঁচা পন্য নিয়ে এসে বিক্রি শুরু করেন। প্রথম থেকেই শেরপারা খুব পরিশ্রমী, সাহসী। তবে ১৮৮০ সাল থেকে পাহাড়ে রাস্তঘাট নির্মাণের মতো কঠিন ও কঠোর পরিশ্রমের কাজের জন্য কুলি হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে ব্রিটিশরা। কুলির মতো পরিশ্রম করিয়েও তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি।  একদিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো অন্যদিকে কুলি পরিচয় থেকে সামাজিক মর্যাদা আনতে পরিশ্রম করলেও তাঁরা ক্রমশ ব্রিটিশদের কাছে প্রভু ভৃত্যের জায়গায় পৌঁছোতে লাগলেন। এরপর চা বাগানেও শেরপাদেরই প্রথম কাজে লাগানো হয়। এমনকি তাদের অদম্য জেদ এবং পরিশ্রম করার ক্ষমতার জন্য সেনা বাহিনীতেও শেরপাদের নিয়োগ করা শুরু করে ব্রিটিশরা।

১৯৫৩ সালে  প্রথম এভারেস্ট জয় করে বিশ্বের দরবারে শেরপাদের স্বীকৃতি নিয়ে আসেন তেনজিং নোরগে। ১৯৫৪ সালে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট ( Himalayan Mountaineering Institute) তৈরি হলে সেখানে প্রথম ইন্সট্রাক্টর হিসাবে ছয় জন শেরপারকে নেওয়া হয়। তবে এভারেস্ট সামিট করার সময় বহুবারই ঢাকা পরে যায় এই শেরপাদের নাম। বর্তমানে এভারেস্ট সামিটে নানান রেকর্ড গড়ে সেই আধার থেকে শেরপা সম্প্রদায়কে উজ্জ্বল করেছেন কামি রিতা শেরপা, আপা শেরপারা।


Ice Cream | গরমে আইসক্রিম খেয়ে মুখে ঠান্ডা অনুভূত হলেও শরীর হচ্ছে উল্টে গরম! আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে কী বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা?
Surya Tilak | রামনবমীতে প্রথম সূর্যাভিষেক রামলালার! সূর্যকিরণে জ্বলজ্বল করে উঠল রামলালার কপালের তিলক! নেপথ্যে বিজ্ঞানের কোন কৌশল? দেখুন ভিডিও!
Charlie Chaplin | শৈশব থেকেই ছিল বুক চাপা কষ্ট! মাত্র আট বছর বয়সে যাত্রা দলে লিখিয়েছিলেন নাম! আজ তিনি 'অমর কমেডি কিং' চার্লি চ্যাপলিন!
বীর বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের জীবনী, Masterda Surya Sen Biography in Bengali
১০০ টি প্রয়োজনীয় ফ্যাক্ট| 100 interesting life hack in Bengali
১০০ টি দারুন সব আজব ফ্যাক্ট | Unique & Interesting Facts in Bangla
WB Khadyasathi | পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক সফল উদ্যোগ “খাদ্যসাথী প্রকল্প”