Mission Shakti | মহাকাশে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক'! ৩০০ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে ছোড়া ভারতের ‘বুলেট’ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল একটি উপগ্রহকে!
মিশন শক্তি’ প্রমাণ করেছিল ৩০০ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকা যে কোনও উপগ্রহকে ধ্বংস করতে সক্ষম ভারত।
পাকিস্তানে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (surgical strike) সম্পর্কে জানেন সকলেই। তবে আপনি কি জানেন মহাকাশেও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (surgical strike) করেছে ভারত? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ভারতের মিশন শক্তি (Mission Shakti) প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে ছোড়া ‘বুলেট’ মহাকাশের বুকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল একটি উপগ্রহকে। সেই উপগ্রহ আবার ছিল ভারতেরই!
মিশন শক্তির সার্জিক্যাল স্ট্রাইক :
২০১৯ সালের ২৭সে মার্চ অর্থাৎ, পাঁচ বছর আগে ভারতের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরোর পাঠানো ওই উপগ্রহ ধ্বংস করেছিলেন। ভারতের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা যে উপগ্রহ ধ্বংস করেছিল, সেটির নাম ছিল মাইক্রোস্যাট-আর (Microsat-R)। মাইক্রোস্যাট-আর ‘ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা’ অর্থাৎ ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন (Defense Research and Development Organization) বা ডিআরডিও-র (DRDO) তৈরি একটি পরীক্ষামূলক সামরিক উপগ্রহ। ২০১৯ সালের ২৪ সে জানুয়ারি ভারতের মহাকাশ বন্দর সতীশ ধওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে সেই উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছিল ইসরো (ISRO)। উৎক্ষেপণের ১৩ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের মধ্যে সেটি গন্তব্যে পৌঁছে যায়। এর পর মাস তিনেক ধরে পৃথিবীর চারদিকে চক্কর খেতে থাকে সেই উপগ্রহ। সেই সময় ডিআরডিও বিজ্ঞানীরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছিলেন এক মাহেন্দ্রক্ষণের।
সেই মাহেন্দ্রক্ষণ পৌঁছায় ২৭ মার্চ। মাইক্রোস্যাট-আর-কে লক্ষ্য করে এপিজে আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেন প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। নিক্ষেপের তিন মিনিটেরও মধ্যে সেই ক্ষেপণাস্ত্রের ধাক্কায় টুকরো টুকরো হয়ে যায় উপগ্রহটি। আর সেই অভিযানের নাম ছিল ‘মিশন শক্তি (Mission Shakti)’। এটি ভারতের অন্যতম বড় সাফল্য হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিল। মহাকাশে সেই উপগ্রহ প্রায় ২৮ হাজার কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বা প্রায় ৮ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড বেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছিল। পরে জানা যায়, মাইক্রোস্যাট-আর উপগ্রহটিকে ধ্বংস করতে ভারত পৃথ্বী ডিফেন্স ভেহিকল মার্ক-২ নামে একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল। যেটি দ্রুত গতিশীল উপগ্রহকে লক্ষ্য করে ধ্বংস করতে সক্ষম। ক্ষেপণাস্ত্রটি ছিল ১৩ মিটার দীর্ঘ। ওজন প্রায় ২০ হাজার কিলোগ্রাম।
‘মিশন শক্তি’ প্রমাণ করেছিল ৩০০ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকা যে কোনও উপগ্রহকে ধ্বংস করতে সক্ষম ভারত। উল্লেখ্য, তখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের কাছেই উপগ্রহরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। পরীক্ষাটিকে মহাকাশে চালানো ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হিসাবেও বর্ণনা করা হয়েছিল। আসলে মহাকাশে ভারতের ৫০টিরও বেশি উপগ্রহ রয়েছে। যেগুলি সেখানে পাঠাতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার কোটিরও বেশি টাকা। তার থেকেও বড় কথা, সেই উপগ্রহগুলির গুরুত্বও অপরিসীম। ভবিষ্যতে দেশের কৃত্রিম উপগ্রহগুলি হুমকির মুখে পড়লে ভারত যাতে তার আগেই হামলাকারী উপগ্রহকে ধ্বংস করতে পারে, তাই ওই পরীক্ষা অর্থাৎ মিশন শক্তির ব্যবহার করা হয়েছিল।
তবে এই পরীক্ষা করার জন্য সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল ভারতকে। আমেরিকা-সহ অনেক দেশ জানিয়েছিল যে, এই ধরনের পরীক্ষা মহাকাশে আবর্জনার পরিমাণ বৃদ্ধি করবে যা অন্যান্য উপগ্রহের জন্য সমস্যা তৈরি করবে। মহাকাশের আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করে আমেরিকা। যদিও ভারত যুক্তি দিয়েছিল, সেই পরীক্ষার কারণে তৈরি হওয়া ২০০-৩০০ টুকরো ধ্বংসাবশেষ মহাকাশে ভাসমান লক্ষ লক্ষ ধ্বংসাবশেষের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। এর আগে উপগ্রহরোধী অস্ত্র পরীক্ষার জন্য চিনকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে ২০১৯ সালের পর ভারত মহাকাশে আর কোনও উপগ্রহরোধী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করেনি।