Masan Holi | বারাণসীর এখানে হোলি খেলা হয় চিতাভস্ম দিয়ে! কৃষ্ণ নয়, এই হোলির ঐতিহ্য এসেছে দেবাদিদেব মহাদেবের কাহিনি থেকে!

মাসান হোলি শিব ঠাকুরের উৎসব। এখানে একমাত্র বিরাজ করেন মহাদেব। তাঁর ইচ্ছে, আশীর্বাদে বারাণসীর মণিকর্নিকা ঘাটে চিতাভস্ম দিয়ে খেলা হয় হোলি।
আর দুদিন পরেই বসন্ত উৎসব।হোলির রং (holi colours)-এ সেদিন রঙিন হয়ে উঠবে দেশের প্রায় অধিকাংশ। বসন্ত উৎসব-দোল-হোলি মানেই রঙিন আবির। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের দোল খেলা হয়। সে বৃন্দাবনের দোল হোক বা শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব হোক। তবে বারাণসীতে হোলি উদযাপন হলেও এমন এক জায়গা রয়েছে যেখানে হোলির রং (holi colours) রঙিন নয়, বরং ছাই! আবার এই হোলির সঙ্গে যোগ রয়েছে দেবাদিদেব-মহাদেবের! কথা বলছি মাসান হোলি (Masan Holi)এর।

মাসান হোলি কী?
এই দোলে নেই রাধা, কৃষ্ণ। নেই কোনও প্রেম ভাব। যা আছে সেটা হল ভয়াল সৌন্দর্য। এটি শিব ঠাকুরের উৎসব। এখানে একমাত্র বিরাজ করেন মহাদেব। তাঁর ইচ্ছে, আশীর্বাদে বারাণসীর মণিকর্নিকা ঘাট (manikarnika ghat)-এ মেতে ওঠেন ৮ থেকে ৮০ সকলেই। তবে আপনি যদি প্রথমবার এখানে যান, আপনি কিন্তু শিউরে উঠতেই পারেন। কারণ এখানে অঘোরি সাধুরা (aghori sadhu) দোল খেলেন চিতাভস্ম দিয়ে। তাও আবার মানুষের দেহ পোড়া ভস্ম দিয়ে রাঙানো হয় একে অন্যকে।
মাসান হোলি (Masan Holi) এর 'মাসান' শব্দটির সঙ্গে বাংলাভাষায় আরেকটি শব্দ জড়িয়ে রয়েছে। সেই শব্দটি মশানের আগে বসে - শশ্মান। শশ্মান-মশান বা মাসান যুক্তভাবে ব্যবহার করা হয় বাংলায়। এদিকে মশান শব্দের অর্থও আদতে শশ্মানই। বারানসীর মণিকর্নিকা ঘাট (manikarnika ghat) এর হোলি খেলার নাম মাসান হোলি। এমন নাম হওয়ার অবশ্য কারণ রয়েছে। ছাই সেই কারণের এই হোলি খেলার একটি অন্যতম সূচক। রঙ্গভরী একাদশীর দিন এই হোলি খেলা হয়।

মাসান হোলির পৌরাণিক যোগ :
মশান হোলি বা মাসান হোলির এই বিশেষ ঐতিহ্য এসেছে দেবাদিদেব মহাদেবের কাহিনি থেকে। ত্রিলোকেশ্বর শশ্মানচারীর অন্যতম প্রিয় উপাদান হল মশান অর্থাৎ ছাই। তাই রঙের বদলে ছাই দিয়ে এই হোলি উদযাপন করা হয়। কথিত রয়েছে, রঙ্গভরী একাদশীর দুই দিন পরে ভোলানাথ মনিকর্ণিকা ঘাটে নন্দীভৃঙ্গীসমেত তাঁর গণ অর্থাৎ অনুচরদের নিয়ে হাজির হন। সেখানে ভক্তদের ডাকে সারা দেন মহাদেব। তাদের আশীর্বাদ করে তাদের সঙ্গে হোলি খেলায় মেতে ওঠেন ত্রিলোকেশ্বর। আর সেই খেলাতেই ছাইয়ের ব্যবহার হয়েছিল। আর সেই থেকেই ছাই দিয়ে এই খেলার রীতি রয়েছে।
অন্য আরেক সূত্র অনুযায়ী কথিত রয়েছে, বিবাহের আগে শিব-পার্বতী দেবদেবীদের সঙ্গে হোলি খেলেছিলেন। রঙ্গভরী একাদশীর দিনই সেই খেলা হয়। কিন্তু সেই খেলায় উপস্থিত ছিলেন না মহাদেবের অনুচর অর্থাৎ ভূত প্রেতাত্মারা। তাই এর পর দিন তিনি মনিকর্ণিকা ঘাটে চলে আসেন। আর সেখানে হোলি খেলেন। সেই থেকেই হোলিটির নাম মাসান হোলি।

পুরোনো রীতি মেনেই এখনও অঘোরি সাধু (aghori sadhu) সন্ন্যাসীরা এই দোল খেলেন। পাশাপাশি চলে মরার খুলির পুজো। যোগ দেন স্থানীয়রা এবং অন্যান্য সাধুরাও। এই হোলি চাক্ষুস দেখার জন্য এই সময়ে রীতিমতো ভিড় হয় বারানসিতে। বরং বলে রাখা ভালো এই সময় বেনারসে হোটেল পাওয়া দায় হয়ে যায়। এতটাই ভিড় থাকে।