দেশ

Manipur Violence | অগ্নিগর্ভ মণিপুর! রাত হলেই বোমা-গুলির শব্দ! সাহায্যের হাত বাড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

Manipur Violence | অগ্নিগর্ভ মণিপুর! রাত হলেই বোমা-গুলির শব্দ! সাহায্যের হাত বাড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
Key Highlights

জনজাতির সংঘর্ষে জ্বলছে মণিপুর। আটকে থাকা বহু পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আতঙ্কের ঘটনা জানালেন রাজ্য ফেরত পড়ুয়ারা।

জনজাতিদের লড়াইয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অগ্নিগর্ভ মণিপুর (Manipur)। রাত হলেই শোনা যাচ্ছে বোমা গুলির শব্দ। বহু এলাকায় ঘর ছাড়া মানুষজন, জারি হয়েছে কারফিউ (Curfew), বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। ইতিমধ্যেই মণিপুর ছেড়েছেন অসংখ্য মানুষ। ফিরিয়ে আনা হয়েছে এ রাজ্যের ১৮ জন পড়ুয়াকে। পাশাপাশি উদ্ধারকাজের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে জারি করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বরও। তবে রাজ্য প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বললেও, মণিপুরে অন্য চিত্রের কথা বললেন ফেরত আসা পড়ুয়া।

বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে জাতিগত হিংসার কারণে জ্বলছে মণিপুর। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, হয়নি পুরোপুরি স্বাভাবিক। বর্তমানে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে ভারতীয় সেনা (Indian Army) ও অসম রাইফেলসের (Asaam Rifles) প্রায় ১০ হাজার সেনা জওয়ান। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং, কাংপকপি থেকে ইতিমধ্যেই প্রায় ১৩ হাজার জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ জায়গায়। তবুও এই হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫৪ জনের। যদিও এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেছেন প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও বেশি।

বেশ কয়েক ঘন্টা আগেই ইম্ফল পূর্ব ও পশ্চিম জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে অগ্নিসংঘর্ষ ও অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছেন সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা। তবে মণিপুরের ক্রমশ উত্তপ্ত ঘটনা নিয়ে সরব গোটা দেশ, রাজনীতি মহল। ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। উত্তর - পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। টুইট (Tweet) করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই ঘটনা অত্যন্ত ব্যথিত ও মণিপুরের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

আমরা মণিপুর থেকে যে ধরনের খবর এবং এসওএস বার্তা পাচ্ছি তাতে গভীরভাবে ব্যথিত। আমি মণিপুরের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত নাগরিকেরা এখনও সেখানে আটকে রয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সঙ্গে আরও বলেন, মুখ্য সচিবকে পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও হতাশাগ্রস্ত মানুষদের সাহায্যের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সকলকে শান্তি বজায় রেখে জনগণের পাশে থাকার আশ্বাসও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিকে মণিপুরের ঘটনা নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করে টুইট করেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর (Shashi Tharoor)। থারুরের ক্ষোভ, নির্বাচনের মাত্র একবছর পরেই মণিপুরের ভোটাররা মনে করেছেন বিজেপি তাদের সঙ্গে বিশ্বাঘাতকতা করেছে।

মণিপুরের হিংসা অব্যাহত। মণিপুরের ভোটাররা তাদের রাজ্যে বিজেপিকে ক্ষমতায় বসানোর মাত্র এক বছর পরেই প্রতারিত বোধ করছেন।

কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর

উল্লেখ্য, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো মৈতেই (Meitei) জনজাতি। সম্প্রতি তারা দাবি তোলেন, তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় তারা পিছিয়ে পড়ছেন এবং উপজাতি সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে, এই যুক্তিতেই তফসিলি উপজাতির তকমার দাবি করেন মেইতেই সম্প্রদায়। কিন্তু এই দাবির বিরোধিতা জানিয়ে মিছিলের আয়োজন করে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (Manipur All Tribal Student Union)। সেই মিছিল থেকেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। অন্যদিকে তফসিলি উপজাতির ইস্যু ছাড়াও সংরক্ষিত জমি ও সার্ভে নিয়েও ছড়ায় উত্তাপ। পাশাপাশি গত মাসেই চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং (Nongthombam Biren Singh) - র সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দেয় ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের (Indigenous Tribal Leaders Manipur) সদস্যরা। পদত্যাগ করেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (Bharatiya Janata Party) একাধিক জনজাতি গোষ্ঠীর এমএলএ (MLA)। চূড়াচাঁদপুর জেলায় শুরু সংঘর্ষ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় গোটা মণিপুরে। ঘর ছাড়া হন প্রায় ২৩ হাজার মানুষ। আটকে পড়েছেন বহু পড়ুয়া ও ভিন রাজ্যের জনগন।

ইতিমধ্যেই, বিজেপি (BJP) শাসিত মণিপুর সরকারের (Manipur Government)  সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই রাজ্যে আটকে পড়া বিভিন্ন রাজ্যের নাগরিকদের উদ্ধারের জন্য সরব হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যার জন্য চালু করা হয়েছে দুটো হেল্পলাইন নম্বর।

হেল্পলাইন নম্বর গুলি হলো : ০৩৩-২২১৪৩৫২৬ এবং ০৩৩-২২৫৩৫১৮৫

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আটকে থাকা পড়ুয়াদের পরিজনরা নবান্নে (Nabanna) চালু হওয়া হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন। যার পরেই এই পড়ুয়াদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফেরত আসা এই পড়ুয়াদের মধ্যেই একজন জানান, কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে বসতিগুলোতে রাতে বোমা বিস্ফোরণ থেকে গুলি চালানোর ঘটনা হতো। অন্য আরেক পড়ুয়া জানান, কলেজের কাছেই উপজাতি গোষ্ঠীরা একে অপরের সঙ্গে লড়াই করতেন। রাত হলেই শোনা যেত আগুন লাগানো, বোমা বিস্ফোরণ ও গুলিগালার শব্দ। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তবে মণিপুরে থাকা নিরাপদ নয়।