লাইফস্টাইল

Monsoon Skin Problem | বৃষ্টিতে ভেজার পর সতর্কতা না মানলেই হতে পারে চুলকানি, ফাঙ্গাল ইনফেকশন! জানুন বৃষ্টির দিনে কীভাবে ত্বকের সমস্যা এড়াবেন!

Monsoon Skin Problem | বৃষ্টিতে ভেজার পর সতর্কতা না মানলেই হতে পারে চুলকানি, ফাঙ্গাল ইনফেকশন! জানুন বৃষ্টির দিনে কীভাবে ত্বকের সমস্যা এড়াবেন!
Key Highlights

বৃষ্টি-বর্ষা এলেই জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে যেমন চিন্তা থাকে তেমনই চিন্তা থাকে ত্বকের সমস্যা, অ্যালার্জি নিয়েও। বর্ষায় অ্যালার্জির সমস্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়। এ সময় অ্যালর্জির প্রভাবে ত্বক ও চোখ সংক্রমিত হতে পারে।

বিগত কয়েক বছর ধরেই মে মাস এলেই হানা দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। চলতি বছরও তার অনথ্যা হয়নি। সাইক্লোন রেমালের তান্ডবে রবিবার থেকেই একটানা বৃষ্টি চলছে দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু ব্যস্ততার যুগে আজকাল কোনোকিছুই থেমে থাকে না। ফলে কাজের জন্য বা প্রয়োজনে জমা জলের মধ্যেও রাস্তায় বেরোতে হচ্ছে অনেককে। এই বৃষ্টি-বর্ষা এলেই জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে যেমন চিন্তা থাকে তেমনই চিন্তা থাকে ত্বকের সমস্যা, অ্যালার্জি নিয়েও। বর্ষায় অ্যালার্জির সমস্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়। গরমের পাশাপাশি কখনো ঠান্ডা আবহাওয়া আবার বৃষ্টি সব মিলিয়ে এ সময় শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন ছোট-বড় সবাই। অনেকের তো বৃষ্টির জল গায়ে পড়লেও চুলকানি, ত্বক লালচে হয়ে ফুলে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এ সময় অ্যালর্জির প্রভাবে ত্বক ও চোখ সংক্রমিত হতে পারে। যেমন- কনজেক্টিভাইটিস, চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ও অত্যাধিক আর্দ্রতার কারণে অ্যালার্জেন সংক্রমণের কারণে হয়। জেনে নিন বর্ষায় কী ধরনের অ্যালার্জি হতে পারে এবং কীভাবে সুস্থ্য থাকবেন।

বর্ষায় ত্বকের যেসব অ্যালার্জি হতে পারে । Skin Allergies in Monsoon :

বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য বর্ষা মৌসুম সবচেয়ে খারাপ। বৃষ্টির জল গায়ে লাগলেই অনেকের চুলকানি, র‍্যাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে ত্বকের যে সব সমস্যা দেখা দিতে পারে-

ত্বকের অ্যালার্জি : বর্ষায় ত্বকের অ্যালার্জি বৃদ্ধি পায়। বর্ষা মৌসুমে জামাকাপড় ও জুতো ভিজে যাওয়া খুব সাধারণ বিষয়। কিন্তু এর থেকে পরে অ্যালার্জি হয়। এছাড়া সস্তা সিনথেটিক পদার্থ দিয়ে তৈরি রেইনকোট, জ্যাকেট ও গ্লাভস ত্বকের সংস্পর্শে আসার কারণেও ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়িয়ে তোলে। ফলে শরীরের বিভিন্ন ভাঁজ যেমন- হাঁটু বা কনুইতে গিয়ে পৌঁছায় বিভিন্ন ছত্রাক। এর ফলে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়।

ছত্রাকের সংক্রমণ : বর্ষা মৌসুমে হাত বা পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দেয়। যাকে বলা হয় অ্যাথলেট ফুট। ঘাম বা পানিতে ভেজার কারণে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঘা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হয়ে থাকে। শুধু পায়েই এ সংক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকে না বরং পুরো শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

হাইপারপিগমেন্টেশন : বর্ষাকালের আরও একটি সাধারণ অ্যালার্জি হলো হাইপারপিগমেন্টেশন। যা ত্বকে বিশেষ করে মুখে গাঢ় প্যাঁচ সৃষ্টি করে। সাধারণত ত্বকের মেলানোসাইট যখন সূর্যের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসে, তখন হাইপারপিগমেন্টেশনের সৃষ্টি হয়। বর্ষায় যেহেতু সব সময় সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না, তাই যখন হঠাৎ সূর্যের সংস্পর্শে যাওয়া হয় তখন এই অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়।

ফেসিয়াল ফলিকুলাইটিস : বর্ষায় ত্বকের বিভিন্ন স্থানের লোমের ফলিকগুলো প্রদাহে পরিণত হয়। যা ফলিকুলাইটিস নামে পরিচিত। ফলিকুলাইটিস সাধারণত বাহু, উরু, পশ্চাতদেশ ও কপালে দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা, ঘাম, ডিহাইড্রেশনের মাধ্যমে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে শরীরে। এর ফলে ত্বকে দেখা দেয় ফেসিয়াল ফলিকুলাইটিস। 

বর্ষায় কীভাবে ত্বকের সমস্যা এড়াবেন? । How to Avoid Skin Problems in Monsoon? 

কর্মব্যস্ততার খাতিরে বৃষ্টির দিনেও অনেককেই বাইরে বেরোতে হচ্ছে। এ সময় কাজে বের হয়ে বৃষ্টিতে ভিজলে হতে পারে রোগব্যাধি, ত্বকের সমস্যা। তাই বৃষ্টিতে ভেজার আগে দুবার ভাবুন। আর যদি একান্তই বৃষ্টিতে ভিজতেই হয় তাহলে শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন-

পা ধুয়ে পরিষ্কার করুন :

বৃষ্টির জলে পা দিলে বাড়ে সংক্রমণের ঝুঁকি। রাস্তার নোংরা জলে পা দিলেই চুলকানি, র‍্যাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই মরশুমে পায়ের দেখভাল জরুরি। কারণ পায়ে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পায়ের নখে জীবাণু আটকে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। বৃষ্টির দিনে পায়ের খেয়াল রাখুন। ঝড়-বৃষ্টির দিনে বাড়ি থেকে যত কম বেরোবেন, তত ভাল। রাস্তায় বেরোলে ভাল মানের জুতো পরুন। রবারের ক্লগ বা কিটো পরতে পারেন। এছাড়া বাড়ি ঢুকেই পা পরিষ্কার করুন। প্রথমে পরিষ্কার জল দিয়ে পা ধুয়ে নিন। এরপর ঈষদুষ্ণ জলে সামান্য নুন মিশিয়ে এতে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে রাখুন। পা'কে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করতে পা চামড়া সবসময় শুষ্ক রাখুন। নখের গোড়ায় যাতে ময়লা না জমে, তার জন্য পা ভাল করে পরিষ্কার করা দরকার। ফুট স্ক্রাব দিয়ে পা ভাল করে পরিষ্কার করতে পারেন। এরপর ফুট কেয়ার ক্রিম (foot care cream)  মেখে নিতে পারেন। ফুট কেয়ার ক্রিম (foot care cream) পায়ের ত্বককে কোমল রাখবে।

দ্রুত চুল শুকিয়ে নিন :

বৃষ্টিতে চুল ভিজলে অনেকেরই মাথাব্যথা হয়। এক্ষেত্রে দ্রুত ব্লো ড্রায়ার ব্যবহার করে চুল শুকিয়ে নিন। এ সময় চুল ভেজা রাখলে ঠান্ডা-কাশি হওয়ার সংক্রমণ বাড়তে পারে।

গরম জলে স্নান করুন :

বৃষ্টিতে ভেজার পর যতটা দ্রুত সম্ভব গরম জল দিয়ে স্নান করুন। তাহলে জীবাণু ও সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে। একই সঙ্গে শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হবে না।

সঙ্গে আলাদা পোশাক রাখুন :

বৃষ্টিতে যদি বাইরে বের হতেই হয়, তাহলে সঙ্গে আলাদা পোশাক রাখুন। এতে করে ভেজা কাপড় দ্রুত বদলে নিতে পারবেন। ভেজা কাপড় দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকলে ফ্লু সংক্রমণ ঘটতে পারে। একই সঙ্গে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন :

বৃষ্টিতে ভিজলে ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যায়। আর শুষ্ক ত্বকে চুলকানি হতে পারে। তাই বডি অয়েল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

বর্ষায় চুলকানির সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় । Home Remedies to Get Rid of Itching Problem in Monsoon :

বর্ষায় ঘাড়, মুখ, হাত, পা, পিঠ, কোমরের মতো অংশে ঘামের কারণে চুলকানি ও ফুসকুড়ির সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে ঘরোয়া টোটকা।

অ্যালোভেরা: অনেক গুণে ভরপুর অ্যালোভেরা জেল (aloe vera gel) ত্বকের নানা সমস্যায় খুবই উপকারী । এটিতে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে ৷ অ্যালোভেরা জেল (aloe vera gel) ত্বকের প্রদাহ এবং লালভাব কমাতে সাহায্য করে। এমন পরিস্থিতিতে যদি বর্ষায় অ্যালার্জি, জ্বালাপোড়া এবং চুলকানির সমস্যা থাকে, তাহলে অ্যালোভেরা জেল এতে খুব কার্যকর হবে। এটি গোলাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন ।

নিম পাতা: নিম পাতা ঔষধি গুণের জন্য পরিচিত, ত্বকের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বককে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা করে। বর্ষায় চুলকানি বা জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকলে তাজা নিম পাতা জলে পিষে ত্বকে লাগান। জলে নিম পাতা সিদ্ধ করেও স্নান করতে পারেন।

নারকেল তেল: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণে সমৃদ্ধ নারকেল তেল ত্বক সংক্রান্ত অনেক সমস্যায়ও কার্যকর । র‌্যাশ প্রতিরোধে সহায়ক নারকেল তেল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে ৷ যা ত্বকের শুষ্কতা দূর করে । এর পাশাপাশি এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রপার্টি এবং প্রোটিনও পাওয়া যায় ৷ যা ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে । হালকা গরম নারকেল তেলে কর্পূর মিশিয়ে ত্বকে লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।

মুলতানি মাটি: ত্বকের সমস্যা দূর করতেও মুলতানি মাটি (multani mitti) খুবই উপকারী। এর শীতল প্রভাবের কারণে, এটি ত্বকে শীতলতা দেয়। আমবাত ও ফুসকুড়ি থেকে মুক্তি পেতে মুলতানি মাটি (multani mitti) ও গোলাপজল দিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগান। এটি করলে ত্বক দ্রুত চুলকানি থেকে মুক্তি পাবেন।

মনোরম আবহাওয়ার পাশাপাশি বর্ষায় নানা সমস্যাও আসে। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে শুধু জ্বর, সর্দি কাশিই নয়, আসে ত্বকের সমস্যাও। এক্ষেত্রে আগেভাগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এবং বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার পর কিছু জিনিস মেনে চললেই ত্বকের সমস্যা এড়ানো যায়।