দেশ

Lakshadweep | সমুদ্রের মাঝে যেন স্বর্গ রাজ্য! দেখে নিন লাক্ষাদ্বীপে কী কী আকর্ষণ রয়েছে! রইলো লাক্ষাদ্বীপ প্যাকেজ সম্পর্কে বিস্তারিত!

Lakshadweep | সমুদ্রের মাঝে যেন স্বর্গ রাজ্য! দেখে নিন লাক্ষাদ্বীপে কী কী আকর্ষণ রয়েছে! রইলো লাক্ষাদ্বীপ প্যাকেজ সম্পর্কে বিস্তারিত!
Key Highlights

লাক্ষাদ্বীপে দেখার জায়গার মধ্যে রয়েছে একাধিক বড় আকর্ষণ। জানুন ভারতের নতুন 'ফেভারিট' লাক্ষাদ্বীপ লাক্ষাদ্বীপ ট্যুর প্যাকেজ সম্পর্কে। জানুন এই ট্যুরে কত মাথা পিছু কত খরচ।

মালদ্বীপ বিতর্কের পর 'ট্রেন্ডিং' হয়ে উঠেছে 'লাক্ষাদ্বীপ'। তারকা থেকে শুরু করে ইনফ্লুয়েঞ্জার, ভ্রমণ পিপাসু সকলেই ছুটছেন এই দ্বীপে। মালদ্বীপকে টেক্কা দিয়ে ভারতের এখন নতুন পছন্দ এই দ্বীপ। সোশ্যাল মাধ্যমে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে এই দ্বীপের সৌন্দর্য। যারা বছরের শুরুতে বাইরে ঘুরতে যেতে চান তারা অনেকেই বেছে নিচ্ছেন লাক্ষাদ্বীপকে। আবার যারা সম্প্রতি বিয়ে করেছেন তাদের হানিমুন ডেস্টিনেশন এই লাক্ষাদ্বীপ করবেন বলেই ঠিক করেছেন। তবে অনেকেই বুঝতে পারছেন না কীভাবে সেখানে যাবেন, লাক্ষাদ্বীপে দেখার জায়গা (Places to visit in Lakshadweep) কী কী রয়েছে। চিন্তা নেই, আপনার জন্য রইলো লাক্ষাদ্বীপ প্যাকেজ (Lakshadweep Packages) এর খুঁটিনাটি।

লাক্ষাদ্বীপ - সংস্কৃত ও মালায়ালাম ভাষায় অর্থ ‘হাজার দ্বীপ’। আদতে ১,০০০ না হলেও মুম্বই থেকে প্রায় ২০০০ কিমি দূরে আরব সাগরে কেরলের উপকূলে অবস্থিত ৩৬টি দ্বীপের একটি দ্বীপপুঞ্জ হল লাক্ষাদ্বীপ। প্রথম যে কয়েকটি দ্বীপে মানুষ থাকতে শুরু করেন, সেগুলির মধ্যে ছিল আন্দ্রোথ, কাভারাত্তি, কালপেনি, আমেনি, আগাথি। ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য সমুদ্রের মাঝে স্বর্গ রাজ্য লাক্ষাদ্বীপ।  লাক্ষাদ্বীপ ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। কাপল ফ্রেন্ডলি হলেও ফ্যামিলি ট্রিপের জন্য এই টুরিস্ট স্পট বেশ জনপ্রিয়। আবার বন্ধুদের সঙ্গেও নিশ্চিন্তে যেতে পারেন এখানে। 

কীভাবে যাবেন লাক্ষাদ্বীপ? । How to go to Lakshadweep?

লাক্ষাদ্বীপ গেলে অন্তত তিন থেকে পাঁচ দিনের জন্য ট্যুর প্ল্যান করলে ভালো। এর কমে ঠিকমতো ঘোরা যাবে না। জাহাজ ও বিমানে দুইয়েই যাওয়া যায়। 

 বিমান: কোচি থেকে লাক্ষাদ্বীপ (Kochi to Lakshadweep) বিমানে যাওয়া যায়। কোচি হল লাক্ষাদ্বীপের প্রবেশদ্বার। কোচি থেকে লাক্ষাদ্বীপ (Kochi to Lakshadweep) বিমানে আগাত্তি এবং বাঙ্গারাম দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছাতে ৯০ মিনিট লাগে। শুধুমাত্র আগাত্তি দ্বীপের একটি এয়ারস্ট্রিপ রয়েছে। আগাত্তি থেকে মেলার মরশুমে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মে মাসে কাভারাত্তি এবং কাদমাতে নৌকা পাওয়া যায়। বর্ষায় আগাত্তি থেকে বাঙ্গারাম আইল্যান্ড রিসর্টে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার পাওয়া যায়। কাভারাত্তিতে যাওয়ার জন্য সারা বছর হেলিকপ্টার পরিষেবা মেলে।

 জাহাজ:  ছয়টি যাত্রীবাহী জাহাজ - এমভি কাভারাত্তি, এমভি আরব সাগর, এমভি লাক্ষাদ্বীপ সাগর, এমভি আমিন্দিভি এবং এমভি মিনিকয় - কোচি এবং লাক্ষাদ্বীপের মধ্যে চলাচল করে। কোন দ্বীপে যাবেন, সেটার নির্ভর করে যে কতক্ষণ সময় লাগবে। সাধারণত ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা লাগে। সব জাহাজে বিভিন্ন ক্লাস আছে। জাহজে একজন করে চিকিৎসক থাকেন। তাছাড়া এমভি আমিন্দিভি এবং এমভি মিনিকয়ে এসি আছে।

লাক্ষাদ্বীপে দেখার জায়গা । Places to visit in Lakshadweep :

 বাঙ্গারাম: লাক্ষাদ্বীপ পর্যটন স্থান (Lakshadweep Tourist Places) এর মধ্যে বাঙ্গারাম সব থেকে আকর্ষণীয় স্থানের মধ্যে একটি। এটি ছোট অশ্রুবিন্দুপর আকৃতির দ্বীপ, যা আগাত্তি এবং কাভারাত্তির একেবারে কাছেই অবস্থিত। এটি লাক্ষাদ্বীপের একমাত্র জনবসতিহীন দ্বীপ এবং এটি ফসফোরেসেন্ট প্লাঙ্কটনের জন্য পরিচিত। যা রাতে প্রবাল বালির তীরে ধুয়ে সৈকতকে নীলাভ করে তোলে।

মিনিকয়: এটি মূল দ্বীপপুঞ্জ থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থিত। উত্তর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে অন্যতম একটি বড় লেগুন আছে। রয়েছে ১১ টি গ্রামের একটি ক্লাস্টার। যা ‘আভাহ’ নামে পরিচিত।

আগাত্তি: বিশ্বের অন্যতম নৈসর্গিক লেগুনগুলির মধ্যে একটি রয়েছে আগাত্তিতে। লাক্ষাদ্বীপের মধ্যে শুধুমাত্র আগাত্তিতেই এয়ারস্ট্রিপ রয়েছে।

কাদমত: কাদমত আট কিমি দীর্ঘ। আর মাত্র ৫৫০ মিটার চওড়া, তাও সবথেকে চওড়া জায়গায়। এটির পশ্চিমে একটি সুন্দর অগভীর লেগুন রয়েছে, যা ওয়াটার স্পোর্টসের জন্য একেবারে আদর্শ।

কাভারাত্তি: এটি প্রশাসনিক সদর দফতর এবং সর্বাধিক উন্নত দ্বীপ। দ্বীপটি জুড়ে ৫২টি মসজিদ বিস্তৃত, যার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর হল উজরা মসজিদ।

 কালপেনি: তিলাক্কাম এবং পিটির দুটি ছোট দ্বীপ এবং উত্তরে চেরিয়াম দ্বীপের সঙ্গে কালপেনি একটি একক দ্বীপ গঠন করে। কালপেনির একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হল এর পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল বরাবর প্রবাল ধ্বংসাবশেষের একটি বিশাল ঝড়ের তীর।

 জাহাজের ধ্বংসাবশেষ: মিনিকয় লাক্ষাদ্বীপের একমাত্র দ্বীপ যেখানে দ্বীপপ্রাচীরের আট মিটার গভীরতার মধ্যে এসএস হোচস্ট এবং অন্যান্য জাহাজের তিনটি বড় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এই ধ্বংসাবশেষগুলি ভার্চুয়াল আন্ডারওয়াটার মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে। এখানে পাওয়া মাছের প্রজাতিগুলি অন্য কোথাও পাওয়া গড় স্বাভাবিক আকারের চেয়ে বড় হয়। লাক্ষাদ্বীপ পর্যটন স্থান (Lakshadweep Tourist Places) এর মধ্যেই এই  জাহাজের ধ্বংসাবশেষও বিশেষ জনপ্রিয়।

 ডাইভিং: কাদমাত ভারতের সবচেয়ে সুন্দর ডাইভিং লোকেশনগুলির মধ্যে একটি এবং এটি প্রথম ল্যাকাডিভস ডাইভ সেন্টার এবং স্কুল। ল্যাকডেইভস কাদমাত ডাইভ স্কুল পুরো মরসুম জুড়ে নতুন কোর্স প্রদান করে। মিনিকয় ডাইভ সেন্টার এবং ডলফিন ডাইভ সেন্টার (কাভারাত্তি) এছাড়াও একটি খুব ভাল ডাইভ বিকল্প।

 ওয়াটার স্পোর্টস: বেশিরভাগ পর্যটন প্যাকেজগুলিতে কায়াক, ক্যানো, প্যাডেল বোট, সেল বোট, উইন্ড সার্ফার, স্নোর্কেল সেট গ্লাস-তলযুক্ত নৌকা এবং অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উত্সাহীরা বড় গেম ফিশিংয়ে লিপ্ত হতে পারেন। 

লাক্ষাদ্বীপ ট্যুর প্যাকেজ । Lakshadweep Tour Packages :

লাক্ষাদ্বীপে ঘুরতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ লাক্ষাদ্বীপ প্যাকেজ (Lakshadweep Packages রয়েছে। চাইলে সেই প্যাকেজের সুবিধা নিতে পারেন। মূলত তাতেই বেশিরভাগ পর্যটকরা ঘুরতে যান। লাক্ষাদ্বীপ ট্যুর প্যাকেজ (Lakshadweep Tour Packages) এর অধীনে বেশ কয়েকটি প্যাকেজ রয়েছে। যেমন লাক্ষাদ্বীপ সমুদ্রম, সেয়িং পাম প্যাকেজ, মেরিন ওয়েলথ অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম, তারাতাসি প্যাকেজ, টেন্টস ইন থিন্নাকাড়া, কটেজেস ইন বাঙ্গারাম, স্কুবা ডাইভ প্যাকেজ। প্রতিটি প্যাকেজেরই কিছু কিছু আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে‌। সরকারের স্পোর্টস (সোসাইটি ফর প্রোমোশনস অব নেচার টুরিজম অ্যান্ড স্পোর্টস) ওয়েবসাইটে গিয়ে ট্যুর বুকিং করার অপশন রয়েছে‌। 

সরকারের প্যাকেজ না নিয়ে লাক্ষাদ্বীপ চাইলে একাও যেতে পারেন। যদিও তার জন্য সেখানে থাকে এমন কারও আমন্ত্রণপত্র দরকার। তার ভিত্তিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে। এর পর লাক্ষাদ্বীপের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে আপনার তথ্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে সম্মতি দিলে তবেই আপনি লাক্ষাদ্বীপ যেতে পারবেন। লাক্ষাদ্বীপ ট্যুর প্যাকেজের একেকরকম খরচ।  কমবেশি যাওয়া আসা মিলিয়ে খরচ মাথাপিছু অন্তত  ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।