Diwali 2024 । কোথাও পোড়ানো হয় পাটকাঠি, কোথাও বা হয় কুশপুতল দহন! জানুন দেশের ভিন্ন প্রান্তের ভিন্ন দীপাবলির গল্প
দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে আলোর উৎসব দীপাবলি। শুধু হিন্দুরাই নয় শিখ ও জৈন ধর্মাবলম্বীরাও পালন করেন এই উৎসব। সারা দেশজুড়ে শক্তির আরাধনা করা হয় এদিন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে পালিত হয় দীপাবলি। এই 'আলোর উৎসবে' গোয়ার বাসিন্দারা মাতেন কৃষ্ণের আরাধানায়। বারাণসীতে ধুমধাম করে দেব দীপাবলি পালিত হয় এদিন। দীপাবলি উপলক্ষ্যে প্রতিবছর সরযূ তীরের অযোধ্যায় জ্বালানো হয় লক্ষ্য লক্ষ্য মাটির প্রদীপ। রামলালার আগমনের আনন্দে মেতে ওঠেন অযোধ্যাবাসী। জেনে নিন দেশের কোন রাজ্যে কীভাবে পালিত হয় এই ‘আলোর উৎসব’ এবং দীপাবলির নানান পৌরাণিক কাহিনী।
দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে আলোর উৎসব দীপাবলি। শুধু হিন্দুরাই নয় শিখ ও জৈন ধর্মাবলম্বীরাও পালন করেন এই উৎসব। সারা দেশজুড়ে শক্তির আরাধনা করা হয় এদিন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে পালিত হয় দীপাবলি। এই 'আলোর উৎসবে' গোয়ার বাসিন্দারা মাতেন কৃষ্ণের আরাধানায়। বারাণসীতে ধুমধাম করে দেব দীপাবলি পালিত হয় এদিন। দীপাবলি উপলক্ষ্যে প্রতিবছর সরযূ তীরের অযোধ্যায় জ্বালানো হয় লক্ষ্য লক্ষ্য মাটির প্রদীপ। রামলালার আগমনের আনন্দে মেতে ওঠেন অযোধ্যাবাসী।
দীপাবলির পৌরাণিক কাহিনী :
দীপাবলির ইতিহাসের সঙ্গে পুরাণের যে সব গল্প জড়িয়ে আছে ,তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের অযোধ্যায় ফেরার কাহিনি। তবে আরও অনেক পৌরাণিক গল্প জড়িত রয়েছে দীপাবলির সঙ্গে। জেনে নিন দীপাবলির নানান পৌরাণিক কাহিনী।
রামায়ণে দীপাবলি : ত্রেতা যুগে, আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে রাবণকে হত্যা করেছিলেন রামচন্দ্র। সেদিন বাঙালিরা বিজয়া দশমী পালন করেন। দেশের অনেক জায়গায় দশেরায় রাবণ বধ অনুষ্ঠিত হয়। এর পর অযোধ্যায় ফিরতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগে রাম, লক্ষণ ও সীতার। তাঁদের স্বাগত জানাতেই আলোয় সাজানো হয় গোটা অযোধ্যা নগরী। তাই এই উৎসবের নাম দীপাবলি।
মহাভারতে দীপাবলি : মহাভারতে উল্লিখিত আছে , ভূদেবী ও বরাহর পুত্র নরকাসুর একবার ব্রহ্মার বরে খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তিনি স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে প্রবল অত্যাচার শুরু করেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করে তাঁর প্রাসাদে বন্দিনী ১৬,০০০ নারীকে উদ্ধার করে বিবাহ করেন। মৃত্যুর আগে নরকাসুর কৃষ্ণের কাছে বর চান যে তাঁর মৃত্যুর দিনটি যেন ধূমধাম করে পালিত হয়। এই দীপাবলিতেই নরকাসুরকে বধ করেছিলেন কৃষ্ণ। তাঁকে স্বাগত জানাতে আলোয় সেজে ওঠে দ্বারকা নগরী। অনেকে আবার বলেন যে, বারো বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসের পর দীপাবলিতে হস্তিনাপুরে ফিরে এসেছিলেন পাণ্ডবরা। তাদের স্বাগত জানাতেই আলো দিয়ে সাজানো হয়েছিলো হস্তিনাপুরকে।
জৈনধর্মে দীপাবলি: জৈনদের মতে ,দীপাবলিতেই নির্বাণ লাভ করেছিলেন জৈনধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীর। এই পুণ্য তিথিকে স্মরণ করতে এদিন সারাবাড়ি প্রদীপের আলোয় সাজান মহাবীরের অনুগামীরা।
ভারতের ভিন্ন রাজ্যের ভিন্ন দীপাবলি উদযাপন :
শুধু ‘আলোর উৎসবই’ নয়, সারা দেশজুড়ে শক্তির আরাধনাও করা হয় এদিন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে পালিত হয় দীপাবলি। জেনে নিন সারা দেশের কোথায় কীভাবে পালিত হয় দীপাবলি :
পশ্চিমবঙ্গ, কালীপুজো : সারা দেশে দীপাবলি বা দিওয়ালি উৎসব পালিত হলেও পশ্চিমবঙ্গে এসময় হয় মা কালীর আরাধনা। বাঙালির শাক্ত রীতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে কালী বা শ্যামা পুজো। গভীর রাতে হয় মায়ের অঞ্জলি। এসময় দেবীকে আমিষ ভোগ দেওয়ার নিয়ম আছে। দেবীকে নিবেদন করা হয় মাছ, মাংস, মিষ্টি, মুসুর ডাল, চাল ও জবা ফুল। কালীপুজোর আগের দিন বাঙালি বাড়িতে চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালানো হয়। অশুভ শক্তিকে দূরে রাখতে খাওয়া হয় চৌদ্দ শাক।
ওড়িশা, কাউনরিয়া কাঠি : ভারতের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ওড়িশা।দীপাবলির সময় ওড়িশায় পালিত হয় ‘কাউনরিয়া কাঠি’ উৎসব। এই উৎসবে রাজ্যের বাসিন্দারা তাদের পূর্বপুরুষদের আমন্ত্রণ জানাতে পাট কাঠি পোড়ান। তারা বিশ্বাস করেন, দীপাবলির দিন তাদের পূর্বপুরুষরা স্বর্গ থেকে নেমে আসেন পৃথিবীতে। বিশ্বাস করা হয়, পাটকাঠির আলোকে আলোকিত পথ ধরে পূর্বপুরুষরা সুষ্ঠুভাবে ফিরে যেতে পারবেন তাদের গন্তব্যে।
পঞ্জাব,বান্দি ছোড় দিবস : শিখ ধর্মাবলম্বীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো ‘বান্দি ছোড় দিবস’। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, একবার দীপাবলির আগে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ৫২জন শিখ রাজাকে আটক করেন। দীপাবলির দিন গোয়ালিয়র দুর্গ থেকে ৫২জন রাজাকে উদ্ধার করেছিলেন গুরু হরগোবিন্দ। এই জয়কে স্মরণীয় করে রাখতেই এদিন পঞ্জাবের প্রতিটি বাড়িকে সাজানো হয় আলো দিয়ে। গুরুদ্বারে লঙ্গরের আয়োজনও করা হয়।
বারাণসী, দেব দীপাবলি :বারাণসীর দীপাবলি বিশ্বখ্যাত। দিওয়ালির দিন বারাণসীতে ধুমধাম করে ‘দেব দীপাবলি’ পালিত হয়। সবার বিশ্বাস, এই সময় স্বর্গের দেব-দেবীরা গঙ্গায় স্নান করতে নেমে আসেন মর্ত্যে। তাঁদের আমন্ত্রণ জানাতে বারাণসীর প্রতিটি মন্দির সাজানো হয় মাটির প্রদীপ, ফুল ও রঙ্গোলি দিয়ে। কার্তিক মাসের পূর্ণিমায়, দীপাবলির পনেরো দিন পরে উদযাপিত হয় দিনটি।
গোয়া, কৃষ্ণপুজো : দীপাবলিতে গোয়ার বাসিন্দারা মাতেন কৃষ্ণের আরাধানায়। কথিত আছে, এদিনই নাকি নরকাসুরকে পরাজিত করেছিলেন কৃষ্ণ। নরকাসুরের কুশপুতুল পুড়িয়ে অশুভ শক্তির বিনাস ঘটিয়ে এই উৎসবের শুভ সূচনা করা হয়। সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয় মিষ্টি ও খাবার। বাসিন্দারা আলো দিয়ে সারাবাড়ি সাজান। রঙ্গোলিও আঁকেন মেঝেতে।
এছাড়াও সারা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে দীপাবলি পালিত হয় ধুমধাম করে। প্রতিবছর সরযূ তীরের অযোধ্যায় জ্বালানো হয় লক্ষ্য লক্ষ্য মাটির প্রদীপ। আয়োজন করা হয় লেজার শোয়ের। রামলালার আগমনের আনন্দে মেতে ওঠেন অযোধ্যাবাসী।