Jaggery for Diabetes | ডায়াবেটিস রোগী হয়েও খাচ্ছেন গুড়? স্বাদের জন্য করছেন না তো শরীরের ক্ষতি? জানুন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুড় খাওয়া ভালো কিনা!

Wednesday, January 10 2024, 2:33 pm
highlightKey Highlights

শীতে খেজুরের গুড় খাওয়ার আগে জানুন ডায়াবেটিসের জন্য গুড় ভালো কিনা। সঙ্গে জানুন কীভাবে চিনবেন আসল খেজুরের গুড়।


শীতকালে বাঙালির বাড়িতে বাড়িতে খেজুরের গুড় (Palm Jaggery) থাকবেই। ঝোলা গুড় হোক কিংবা পাটালি অথবা গুড় (Jaggery) দিয়ে তৈরী পায়েস, মিষ্টি, পিঠে, শীতকালে দিনে বা রাতের পাতে গুড় বা গুড়ের কিছু থাকবেই। তবে মন চাইলেও অনেকেই তৃপ্তি ভোরে গুড়ের মজা নিতে পারেন না। কারণ, ডায়াবেটিস! বর্তমানে ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস রোগী। আর এই রোগ হলেই খাওয়া দাওয়াতে থাকে বিশাল রেস্ট্রিকশন। বিশেষ করে মিষ্টির ওপর। তবে গুড় তো ফলের রস দিয়েই তৈরী হয়। তাহলে কি ডায়াবেটিসের জন্য গুড় (Jaggery for Diabetes) ভালো? ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারবেন গুড়? জানুন কী বলছেন চিকিৎসকরা।

গুড় কীভাবে তৈরী করা হয় ?

Trending Updates

খেজুর গাছ কেটে গায়ে নল লাগিয়ে খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। তার জন‌্য অনেকে একে নলেন গুড়ও  বলে থাকেন। গাছের গায়ে নলি কাটার জন‌্য এক বিশেষ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে সেই রস ঘণ্টাখানেক ধরে জ্বাল দিয়ে বা ফুটিয়ে খেজুরের গুড় (Date Jaggery) তৈরি করা হয়।

খেজুর গাছে আগেরদিন বিকেল বেলায় মাটির কলসি বা হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরের দিন সকালে সেই মাটির পাত্রে জমা রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। প্রথমে রস ছেঁকে নেওয়া হয়। এরপর বড় আকারের টিনের পাত্রে বা মাটির পাত্রে রস ফোটানো বা জ্বাল দেওয়া হয়। প্রায় ১০-১৫ মিনিট ফোটানোর পর উপরে ভেসে ওঠা ফেনা ছেঁকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে রসে থাকা ময়লা বা অবাঞ্ছিত দ্রব‌্য ফেলে দেওয়া যায়। রসে প্রচুর জল থাকে এবং রস জ্বাল দিয়ে ঘন করে গুড় তৈরির সময় এই জল বাষ্প হয়ে বেরিয়ে যায়। তাই চারদিক সাদা হয়ে যায়। রস ফোটানোর সময় একটানা অনবরত নেড়ে যেতে হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর রস ঘন হয়ে ঝোলা গুড় তৈরি হয়। কখনও কখনও এই পদ্ধতিতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। গুড় তৈরি হয়েছে কি না বোঝার জন‌্য এক স্থানীয় বা গ্রামীণ পদ্ধতি আছে তা হল, একটা পাত্রে ঠান্ডা জল নিয়ে তার মধ্যে কয়েক ফোঁটা গুড় ঢাললে তা দিয়ে যদি একটা বল বা ডেলা তৈরি করা যায় তবে বুঝতে হবে গুড় তৈরি হয়ে গিয়েছে।

ডায়াবেটিস রোগীরা কি গুড় খেতে পারেন?

ডায়াবিটিস (Diabetes) হল ইনসুলিনের সমস্যার কারণে তৈরি হওয়া রোগ। ইনসুলিন হল শরীরে থাকা একটি হরমোন। এই হরমোন শরীরে কম বেরলে বা না বেরলে হয় ডায়াবিটিস। এই রোগ হলে খাবার নিয়ন্ত্রিত রাখতে হয়। বিশেষত চিনি বা মিষ্টি। কারণ চিনি শরীরে হু হু করে বাড়িয়ে দেয় সুগার। তখন ইনসুলিনকে অনেক বেশি খাটতে হয়।

ডায়াবেটিসের জন্য গুড় (Jaggery for Diabetes) ভালো কি না এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা বলছেন, খেজুরের গুড় (Palm Jaggery) শরীরের জন্য ভালো। এরমধ্যে বেশকিছু ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। তাই সাধারণ মানুষ অনায়াসে খেতে পারেন। এছাড়া এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে হাই ক্যালোরি খাবার হওয়ায় গুড় বেশি খাওয়া ভালো নয়। এদিকে ডায়াবেটিস একটা লাইফস্টাইল ডিজিজ। তাই এই রোগে জীবনযাত্রা নিয়ে মানুষকে ভালোমতো ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সারাদিনে খাবার খান মেপে। বিশেষত, খাবার খেতে হবে ক্যালোরির হিসাব অনুযায়ী। সেরকমই ডায়াবেটিস রোগীরা গুড় (Jaggery) খেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে রাখতে হবেই নিয়ন্ত্রণ। অতিরিক্ত গুড় শরীরের হিতে বিপরীত করতে পারে।

আসল গুড় কীভাবে চিনবেন?

বর্তমানে বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দামের খেজুরের গুড় (Date Jaggery) পাওয়া যায়। তবে সবক্ষেত্রে তা খাটি হয়না। ফলে বাজারে ছেয়ে গিয়েছে সেই ভেজাল গুড়। তবে, কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলেই গুড় আসল কি না, তা বুঝতে পারবেন।

  • স্বাদ :আসল গুড়ের নিজস্ব মিষ্টত্ব রয়েছে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খেজুরের রসের মধ্যে আখের রসও মেশান। যা গুড়ের স্বাদ বদলে দিতে পারে। ফলে গুড় কেনার আগে কিছুটা চেখে দেখতে পারেন।
  • মিনারেল অয়েল : গুড়ের মসৃণতা বজায় রাখতে ব্যবসায়ীরা গুড়ের সঙ্গে নানা রকম তেল মেশান। গুড়ে তেমন কিছু মেশানো আছে কি না, তা দেখার জন্য দু’-তিনটি আঙুলে সামান্য গুড় নিলেই বুঝতে পারা যায়।
  • স্টার্চ: গুড়ের সঙ্গে স্টার্চ মেশানো আরও একটি খারাপ অভ্যাস। পরিষ্কার জলের মধ্যে সামান্য একটু গুড় দিয়ে দেখুন তা জলে দ্রবণীয় কি না। যদি পাত্রের তলায় গুড়ের মধ্যে থাকা কোনও অশুদ্ধি থিতিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে বুঝতে হবে স্টার্চ মেশানো রয়েছে।
  • গন্ধ : আসল খেজুরের গুড়ের সুবাস আনতে নানা রকম রাসায়নিক মেশানো হয় নকল গুড়ে। যে গন্ধ শুঁকে একেবারে বোঝার উপায় থাকে না, তা আসল না নকল।
  • কৃত্রিম রং : গুড়ের যে লালচে সোনালি রং, তার জন্যও ইদানীং রাসায়নিক মেশানোর চল শুরু হয়েছে। আবার, গুড়ের দানা যদি স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ হয়, তা হলে বুঝবেন তার মধ্যেও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক মেশানো রয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রতি শীতে অর্থাৎ ৩-৪ মাস ধরে একটা গাছ থেকে প্রায় ৭-৮০ লিটার রস পাওয়া যায়। কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ এবং মাঘ, এই ৩-৪ মাস ধরে রস পাওয়া যায়। তবে আবহাওয়া, বিশেষ করে ঠান্ডার উপর তা নির্ভর করে। প্রথমদিকে  রসের গুণগত মান ভাল থাকে। গুড় বেশি পাওয়া যায়। অর্থাৎ কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ১০ লিটার রস থেকে যে পরিমাণ গুড় পাওয়া যায়, পরবর্তীকালে তা থেকে অনেক কম গুড় পাওয়া যায়।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File