দেশ

Mumbai Trans Harbour Link | নভেম্বর মাসেই চালু হতে পারে ভারতের দীর্ঘতম সেতু! জানুন মুম্বইয়ের ট্রান্স হারবার লিঙ্কে রয়েছে কী কী চমক!

Mumbai Trans Harbour Link | নভেম্বর মাসেই চালু হতে পারে ভারতের দীর্ঘতম সেতু! জানুন মুম্বইয়ের ট্রান্স হারবার লিঙ্কে রয়েছে কী কী চমক!
Key Highlights

১৮ হাজার কোটি টাকার ভারতের সব থেকে লম্বা সেতুর উদ্বোধন হতে পারে নভেম্বর মাসেই। ২১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে রয়েছে বহু চমক।

আসামের ঢোলা সাদিয়া সেতু (Dhola Sadia Setu) বা 'ভূপেন হাজারিকা সেতু'কে (Bhupen Hazarika Setu) দৈর্ঘ্যে পিছনে ফেলে চলতি বছরই সাধারণ জনগণের জন্য খুলতে চলেছে ভারতের সব থেকে লম্বা সেতু মুম্বইয়ের 'ট্রান্স হারবার লিঙ্ক' (Mumbai Trans Harbour Link)। জানা গিয়েছে, সম্ভবত চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে এই সেতু।

মুম্বইয়ের 'ট্রান্স হারবার লিঙ্ক' সেতুর কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে। গত বুধবারই মুম্বই  মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে  (Eknath Shinde) ও সিএম দেবেন্দ্র ফড়নবিশ (Devendra Fadnavis ) সেতুটি পরিদর্শনে যান এবং সেতুটি অতিক্রান্ত করতে সেখানে ডেক স্ল্যাব স্থাপনের সমাপ্তি চিহ্নিত করেন। 

উল্লেখ্য, এতদিন দেশের সব থেকে লম্বা সেতু (Longest Bridge of India) ছিল আসামের ঢোলা সাদিয়া সেতু বা 'ভূপেন হাজারিকা সেতু'। ৯ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা এই সেতু উত্তর-পূর্ব আসামের তিনসুকিয়া (Tinsukia) জেলায় পুব হিমালয়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা লোহিত নদীর (Lohit River) সুবিশাল চরের এপার-ওপার ছড়ানো। কিন্তু এবার দেশের সব থেকে লম্বা সেতুর খেতাব পেতে চলেছে মুম্বইয়ের 'ট্রান্স হারবার লিঙ্ক'। ২০১১ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Prime Minister Narendra Modi) উদ্বোধনের পর শুরু হয় এই সেতুর কাজ। ভূপেন হাজারিকা সেতুর দ্বিগুণ লম্বা মুম্বইয়ের 'ট্রান্স হারবার লিঙ্কে'র দৈর্ঘ্য ২১.৮ কিলোমিটার। ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরী এই সেতুর ২৭ মিটার চওড়া।

বস্তুত, মুম্বই থেকে এলিফ্যান্টা গুহা (Elephanta Caves) যেতে যে লঞ্চে করে সমুদ্র পেরোতে হয়, এই নতুন সেতু পেরোবে সেই সমুদ্রটাই। যার পোশাকি নাম থানে প্রণালী (Thane Pranali)। এলিফ্যান্টা দ্বীপের উত্তর দিক দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সেতুতে থাকবে ছয় লেনের রাস্তা, আপৎকালীন নিষ্ক্রমণ পথ (Emergency Exits),এমনকি ক্র্যাশ ব্যারিয়ারও (Crash Barriers)। জানা গিয়েছে, দেশের সব থেকে লম্বা এই সেতুর মোট ২১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১৬.৫ কিলোমিটার থাকবে সমুদ্রের ওপর এবং বাকি অংশ থাকবে স্থলভাগের ওপর।

লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো (Larsen & Toubro), জাপানের (Japan)  একটি সংস্থা ও কোরিয়ার দায়েউ নির্মাণ সংস্থা (Daewoo Construction Company of Korea) দ্বারা নির্মিত মুম্বইয়ের 'ট্রান্স হারবার লিঙ্ক' সেতুটির জন্য লেগেছে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টন 'রিইনফোর্সমেন্ট' ইস্পাত (Reinforcement' Steel), ৯৬ হাজার টন 'স্ট্রাকচারাল' ইস্পাত (Structural' Steel), ৮ লক্ষ ৩০ হাজার ঘনমিটার আয়তনের কংক্রিট (Concrete)। সমুদ্রের গভীরতম অংশে এক একটি স্তম্ভের গভীরতা হবে জলতলের ৪৭ মিটার নিচ অবধি। বলা বাহুল্য, এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমেই দেশে প্রথমবার 'অর্থোপেডিক ডেক' প্রযুক্তি (Orthopedic Deck Technology) ব্যবহার করা হচ্ছে।

দেশের সবথেকে লম্বা সেতু তৈরির সময় পরিকল্পনা ছিল যে, এই সেতু দিয়ে চলাচল করবে মেট্রোও। কিন্তু পরে মুম্বই মেট্রোপলিটান রিজিওন ডেভলপমেন্ট অথরিটি (Mumbai Metropolitan Region Development Authority) জানায়, এই সেতু নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণে খরচ হয়েছে, এরপর সেতুতে মেট্রো চালানোর ব্যবস্থা করলে দুই ডেক বানিয়ে নিচে মেট্রোর লাইন পাততে হবে, যার জন্য মোট খরচের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে যা দেওয়া সম্ভব নয়। তদুপরি, মুম্বইতে মেট্রোর লিঙ্ক এখনও শেষ হয়নি। ফলে শহরের ভেতরে মেট্রো পরিষেবা পুরোপুরি চালু না করেই এত বড় প্রকল্প হাতে নেওয়াটা ঠিক হবে না। যার ফলে এই সেতুকে কেবল সড়ক পথের জন্যই বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এমএমআরডিএ-র (MMRDA)অফিসিয়াল তথ্য অনুসারে, এই সেতু দিয়ে মুম্বাইয়ের সেউরি (Sewri) থেকে নভি মুম্বাইয়ের চির্লে (Chirle) যাতায়াত করা যাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিটে। এছাড়াও এই সেতুতে প্রতিদিন যাতায়াত করতে পারবে ৭০ হাজার যানবাহন। সেতুর জন্য প্রস্তাবিত গাড়ির গতি হবে ১০০ প্রতি ঘন্টা। পাশাপাশি, এমটিএইচএল (MTHL) ভারতের প্রথম ট্রানজিট সিস্টেমও (Transit System) হবে যা ভারতে ওপেন রোড টোলিং (Open Road Tolling) বা ওআরটি সিস্টেমের (ORT System) বৈশিষ্ট্যযুক্ত হবে। ওআরটি সিস্টেমের দ্বারা যাত্রীদের আর পথে থেমে টোল ট্যাক্স (Toll Tax) দিতে হবে না।

মুম্বইয়ের এই বিখ্যাত সমুদ্র সেতু 'বান্দ্রা ওরলি সি লিঙ্ক', আর এক ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময়, তৈরির পরে নাম রাখা হয়েছিল রাজীব গান্ধী সেতু (Rajiv Gandhi Setu)। তবে বর্তমানে সরকার নরেন্দ্র মোদি দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় এই সেতুর নাম ঠিক হয়েছে 'অটলবিহারী বাজপেয়ী ট্রান্স হারবার লিঙ্ক' (Atal Bihari Vajpayee Trans Harbor Link)। জানা গিয়েছে সব ঠিক থাকলে চলতি বছরই নভেম্বর মাসে এই সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে তৈরী হতে চলেছে ভারতের নয়া ইতিহাস।