স্বাস্থ্য

কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর ও যেসব শারীরিক ও মানসিক জটিলতা থেকে যায় তা থেকে মুক্তির উপায় Corona subsequent physical and mental complications and its remedies

কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর ও যেসব শারীরিক ও মানসিক জটিলতা থেকে যায় তা থেকে মুক্তির উপায় Corona subsequent physical and mental complications and its remedies
Key Highlights

কোভিড ১৯ সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী পর্যায়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক জটিলতার শিকার হন। সেই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন?

দেখা গেছে যে কোভিড সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরবর্তী পর্যায়ে কিছু মানুষের শরীরে তেমন কোনো সমস্যা দেখা না গেলেও এমন অনেক মানুষজন ও আছেন যাঁরা নানা মানসিক ও শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকেন।

পোস্ট কোভিড সিনড্রোম কাটিয়ে উঠতে কত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা

করোনা পরবর্তী পর্যায়ে প্রায় এক তৃতীয়াংশ রোগী শারীরিক নাহলে মানসিক জটিলতায় ভুগছেন বলে জানা যাচ্ছে। চিকিৎসা বিদ্যার ভাষায় একে পোস্ট কোভিড সিনড্রোম বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে এইসব জটিলতা কাটিয়ে উঠতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

আসুন জেনে নেওয়া যাক এই সমস্যার কারণ গুলি

করোনা ভাইরাস যতোটা না শরীরের ক্ষতি করছে তার চেয়ে বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারে যখন শরীরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাজ করে। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা এক পর্যায়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে সক্রিয় হয়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে প্রদাহের সৃষ্টি করে। যার ফলে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।

সাধারণত দুর্বলতা ও অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠার মতো সমস্যা গুলো শরীরে থেকে যায়। শরীর সর্বদা ম্যাজ ম্যাজ করা, অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে ব্যথা, এমনকি অবসাদ এবং ক্লান্তি ভাব থেকে যায়।

যে সকল ব্যক্তি আগে থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ঝুঁকির মধ্যে থাকে। যেমন-ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, কিডনি, লিভার, প্যানক্রিয়াস। 

ফুসফুস:

  • যেসব রোগীদের আইসিইউতে থাকতে হয়েছে বা জরুরি অক্সিজেন নিতে হয়েছে তাদের অনেকের ফুসফুসে পালমোনারি ফাইব্রোসিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনিয়ন্ত্রিতভাবে সক্রিয় হয়ে উঠলে এটি ফুসফুসের দেয়ালে প্রদাহের সৃষ্টি করে, ফুসফুসে জল জমে যায়। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হয়।
  • বুকে চাপ দিয়ে ব্যথার সৃষ্টি হয়। 

হৃদপিণ্ড:

  • কোভিড ১৯ ফুসফুসের রোগ বলা হলেও এটি হৃদপিণ্ডের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে।
  • অনেক রোগীর বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় কিংবা হৃদপিণ্ডের প্রদাহজনিত সমস্যা মায়োকার্ডাইটিস দেখা দিয়েছে।
  • করোনাভাইরাসের কারণে রোগীর রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকায় হার্ট এটাকের ঝুঁকিও বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

কিডনি:

যারা দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছেন এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয় তাদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পরও বড় ধরণের ঝুঁকি রয়েছে।

  • করোনাভাইরাসের কারণে কিডনিতে সমস্যা না হলেও ডায়ালাইসিস ও হাই পাওয়ারফুল ওষুধ সেবনের কারণে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • রক্তে সোডিয়াম পটাশিয়ামের ভারসাম্যহীনতা বা ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স, এসিড-বেসড ডিসঅর্ডার ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে যা জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেয়।

লিভার:

  • ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হলে লিভার স্বাভাবিক সময়ের চাইতে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
  • করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর পরিস্থিতি যদি জটিল পর্যায়ে পৌঁছে যায় তাহলে পরবর্তীতে তাদের জন্ডিস, লিভার ফেইলিওর হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।

মানসিক সমস্যা:

করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার পরও অনেক রোগীকে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক উদ্বেগ, বিষণ্ণতায় ভুগতে দেখা গেছে। কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না,ছোটখাটো বিষয় ভুলে যাচ্ছেন, এমনকি অনেকে ধৈর্যও হারিয়ে ফেলছেন। বিশেষ করে যারা দীর্ঘসময় হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পিটিএসডি রোগে আক্রান্ত হন। 

এই সকল সমস্যা দূর করতে কী করনীয় তা জেনে নিন

  1. করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যদি কাউকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় তাহলে সেরে ওঠার পরও তাঁকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
  2. হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর কিংবা করোনাভাইরাসের রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও রোগীকে ফলোআপ করতে হবে।
  3. কোভিড থেকে সেরে ওঠার ৪৮ ঘণ্টা, ১ মাস, ৩ মাস এবং ৬ মাস পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেয়া জরুরি।
  4. খাবারের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাক সবজির পাশাপাশি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
  5. প্রচুর পরিমাণে জল, ফলের রস খেতে হবে। 
  6. পেশির গঠন ভালো করতে নিয়মিত অল্প অল্প করে ব্যায়াম করতে হবে।
  7. যারা আগে থেকেই হাইপার টেনশন, হার্টের জটিলতা, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কিডনির জটিলতায় ভুগছেন তাদেরকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেলেও সাবধানতা অবলম্বন করে চলা আবশ্যক। পোস্ট কোভিড সিনড্রোম দেখা না দিলেও উপরিউক্ত বিষয় গুলি মেনে চলা যেতে পারে। আশা করা যায় এই নিয়ম পালন করলে পুনরায় সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন।