Good Friday | ক্রিস্টানদের শোকের দিন, শুদ্ধির দিন 'গুড ফ্রাইডে'! জানুন খ্রিস্টধর্মের জন্মলগ্নের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই দিনের ইতিহাস!
![highlight](/img/target.png)
গুড ফ্রাইডে ২০২৪ পালন করা হচ্ছে ২৯সে মার্চ। ক্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন, রোমানরা যিশুখ্রিস্টকে গ্রেফতার করে কাঠের ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল। 'গুড ফ্রাইডে' সেই শোকের স্মৃতিচারণ।
খ্রিস্টধর্মের জন্মলগ্নের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গুড গুড ফ্রাইডের দিনটি ক্রিস্টানদের কাছে শোকের দিন, শুদ্ধির দিন। ক্রিস্টানদের বিশ্বাস, এই দিনই ক্রুশবিদ্ধ করা হয় যিশুকে। সমাজকল্যাণের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে হলেও যাতে কেউ পিছনে সরে না-আসে, সেই বার্তাই দেন যিশু। সত্য ও ধর্মের জন্য় মৃত্যুবরণ করতে দ্বিধা করেননি ঈশ্বরপুত্র। যিশু খ্রিস্টের মৃত্যু দিবসই গুড ফ্রাইডে হিসেবে চিহ্নিত। গুড ফ্রাইডে ২০২৪ (Good Friday 2024) পালিত হচ্ছে ২৯সে মার্চ, শুক্রবার। এই ঘটনার তিন দিন পর, রবিবার যিশু পুনরায় জীবিত হন। এই দিনটি আবার খ্রিস্টান উৎসব (Christian Festival ) 'ইস্টার সানডে' নামে পরিচিত।
![যিশু খ্রিস্টের মৃত্যু দিবসই গুড ফ্রাইডে হিসেবে চিহ্নিত](https://media.bengalbyte.in/photo/1711695009986-good friday history.webp)
গুড ফ্রাইডের ইতিহাস :
গুড ফ্রাইডের ইতিহাস প্রায় ২০০৫ সাল পুরনো। জেরুজালেমে যিশু সকলকে মানব কল্যাণের উদ্দেশে সৌভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও শান্তির উপদেশ দিচ্ছিলেন। কথিত আছে, সেই সময়ে পাপে ও অরাজকতায় ভরে উঠেছিল পৃথিবী। সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চলছে। তখনই আসেন ভগবান যিশু। মানবতা ও শান্তির বার্তা দিতে শুরু করেন তিনি। সকলে তাঁকে পরমাত্মার দূত, ঈশ্বরের সন্তান মনে করতেন। যিশুর কথায় প্রভাবিত ছিলেন প্রত্যেকে। কিন্তু ইহুদি ধর্মের মাতব্বররা তাঁর বিরোধিতা করতেন। তাদেরই ষড়যন্ত্রের স্বীকার হতে হয় যিশুকে। ইহুদি সমাজপতিরা রোমান গভর্নর পাইলাতকে বলেন, যিশুকে সাজা দিতে হবে। আর এর জন্য ছলের আশ্রয় নেওয়া হয়। যিশুর এক শিষ্যকে এই বিষয়টির দায়িত্ব দেওয়া হয়। যিশুর শিষ্য ছিলেন জুডাস। তাঁকেই নির্দেশ দেওয়া হয়, যিশুকে ফাঁসানোর জন্য। জু়ডাস আগে থেকে জানিয়ে রাখেন, তিনি যাঁকে জড়িয়ে চুমু খাবেন, সেই ব্যক্তিই যিশু। এর পরে গেৎশিমানি উদ্যানে যিশুকে দেখে এগিয়ে আসেন জুডাস। তাঁকে জড়িয়ে চুমু খেতেই যিশুকে গ্রেফতার করে রক্ষী দল। এই বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কার হিসাবে ৩০টি রূপোর মুদ্রাও পেয়েছিলেন জুডাস। এদিকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয় যিশুকে। ক্রুশবিদ্ধ করার আগে যিশুর ওপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। কাঁটার মুকুট পরানো হয়। তাঁর কাঁধে ক্রুশ চাপিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। শেষে সেই ক্রুশেই তাঁর দুই হাত ও পায় পেরেক দিয়ে গেঁথে টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
ক্রুশবিদ্ধ করার পর ছয় ঘন্টা চরম যন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন যিশুখ্রিষ্ট। বলা হয়, তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের ঠিক আগের মুহূর্তে কেঁপে ওঠে সমস্ত এলাকা। প্রবল ভূমিকম্প শুরু হয়। ভেঙে যায় সমাধি প্রস্তর, এমনকী উপাসনাগৃহের পর্দাও ছিঁড়ে যায়। তার পরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ। যিনি ক্রুশবিদ্ধ করার দায়িত্বে ছিলেন তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন।
![ইহুদি ধর্মের মাতব্বররা তাঁর বিরোধিতা করতেন। তাদেরই ষড়যন্ত্রের স্বীকার হতে হয় যিশুকে](https://media.bengalbyte.in/photo/1711695004735-good friday history 1.webp)
খ্রিস্ট ধর্মের কাছে গুড ফ্রাইডে শোক দিবস বা বলিদান দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ দিন চার্চে ঘণ্টা বাজানো হয় না বা মোমবাতি জ্বালানো হয় না। কোনও প্রকাশ শব্দ ছাড়াই শান্তি প্রার্থনা করা হয়। এ দিন কালো পোশাক পরে চার্চে যাওয়ার প্রথা রয়েছে। অনেকে এদিন উপবাস থেকে পবিত্র বাইবেল পাঠ করেন। জ্ঞানত-অজ্ঞানত করে থাকা পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন সকলে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস যে, এই দিনে ক্ষমা প্রার্থনা করলে যিশু তাঁদের সমস্ত ভুল ক্ষমা করে দেবেন। বাইবেল অনুযায়ী, যিশুকে এক শুক্রবার ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়। সেখান থেকেই 'গুড ফ্রাইডে' উদযাপনের রীতি চলে আসছে। অনেকে একে 'হোলি ফ্রাইডে', 'ব্ল্যাক ফ্রাইডে' বা 'গ্রেট ফ্রাইডে' বলেও জানেন।
![গুড ফ্রাইডে' মানে তাঁদের কাছে 'ইস্টার উইকএন্ড'-র শুরু](https://media.bengalbyte.in/photo/1711695041048-good friday india.webp)
ক্রিস্টানদের কাছে এই উদযাপনের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। 'গুড ফ্রাইডে' মানে তাঁদের কাছে 'ইস্টার উইকএন্ড'-র শুরু। গুড ফ্রাইডের তিন দিন পর, রবিবার যিশু পুনরায় জীবিত হন বলে বিশ্বাস করা হয়। এই দিনটি আবার খ্রিস্টান উৎসব (Christian Festival ) 'ইস্টার সানডে' নামে পরিচিত। 'ইস্টার উইকএন্ড'-এ একটি গোটা সপ্তাহ পবিত্র জ্ঞানে উদযাপন করেন বহু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী মানুষ। ভারতেও সেই ধারা অক্ষুণ্ণ। বিশ্বের নানা দেশেই এই দিনে সরকারি ছুটি থাকে। উপবাস, চার্চের বিশেষ উপাসনা-সহ, মিছিল এই দিনে একাধিক রীতিনীতিতে অংশগ্রহণের রেওয়াজ রয়েছে। এই দেশেও নানা শহরে সেই রীতির প্রচলন স্পষ্ট। কেউ কেউ আবার এই দিনটিতে আমিষ জাতীয় খাবার বা দুধের সামগ্রী থেকে দূরে থাকেন। কোনও কোনও দেশে আবার গরম 'ক্রস বান' খাওয়া বাধ্যতামূলক। যে ক্রুশে যিশুক্রিস্টকে বিদ্ধ করা হয়েছিল, সেটি স্মরণ করতেই এই রীতি। ভারতে উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম--নানা দিকেই এই ধর্মাবলম্বীরা দিনটি গুরুত্ব দিয়ে পালন করেন। গুড ফ্রাইডে ২০২৪ (Good Friday 2024) উপলক্ষ্যে এদিনও সকাল থেকে মিছিল বেরিয়েছে একাধিক শহরে।
- Related topics -
- অন্যান্য
- ইতিহাস
- পুজো ও উৎসব