Ganga Aarti | দেব দীপাবলিতে বারাণসীর গঙ্গা আরতি এবার কলকাতায়! দেখুন দেশের আর কোথায় বিখ্যাত গঙ্গা আরতি!
বেনারস গঙ্গা আরতির স্বাদ পাওয়া যাবে কলকাতার গঙ্গা ঘাটে। দেব দীপাবলিতে কলকাতায় আয়োজিত হবে গঙ্গা আরতি। আমন্ত্রীত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখে নিন ভারতের বিখ্যাত গঙ্গা আরতি আর কোথায় হয়।
দীপাবলি ২০২৩ (Diwali 2023) উৎসবে মেতে উঠেছে গোটা ভারত। আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে দেশ। দুর্গাপুজোর সাজ ছেড়ে প্রতিবারের মতো এবারও দীপাবলির সাজে সেজে উঠেছে তিলোত্তমাও। তবে এবারের দীপাবলিতে কলকাতাবাসীদের জন্য রয়েছে বিশেষ চমক। বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটের মতো বেনারস গঙ্গা আরতি (Banaras Ganga Aarti)র স্বাদ পাবেন কলকাতাবাসী। কারণ এ বার কলকাতাতেও আয়োজিত হতে চলেছে দেব দীপাবলি উৎসব। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, আগামী ২৫ এবং ২৬ সে নভেম্বর বাজে কদমতলা ঘাটে সরকারি উদ্যোগে পালিত হবে দেব দীপাবলি। ওই উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)ও। কলকাতা পুরসভার তরফে নবান্নে সেই আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আয়োজন। জানা গিয়েছে, দীপাবলি ২০২৩ (Diwali 2023) উপলক্ষ্যে প্রায় ১০ হাজার প্রদীপ দিয়ে সাজানো হবে গঙ্গার ঘাট। জানা গিয়েছে, কদমতলা ঘাটে আয়োজিত হবে গঙ্গা আরতি। জানা গিয়েছে, প্রায় ১০ হাজার প্রদীপ দিয়ে সাজানো হবে গঙ্গার ঘাট। কলকাতা পুরসভা তরফে এই গঙ্গা আরতি আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে ‘দেবোত্তর জয়চণ্ডী ঠাকুরানি ট্রাস্ট’কে। দেব দীপাবলি উৎসবেরও আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছেন তারাই।
দেব দীপাবলিতে গঙ্গা আরতি । Ganga Aarti on Dev Diwali :
ভারতের অসংখ্য সংস্কৃতি,আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম একটি হলো গঙ্গা আরতি (Ganga Aarti)। বারাণসী, ঋষিকেশ, হরিদ্বারের গঙ্গা আরতি বিশ্ব বিখ্যাত। বিশেষত দীপাবলির উৎসবে বেনারস গঙ্গা আরতি (Banaras Ganga Aarti) দেখতে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। কথিত রয়েছে, দেব দীপাবলির দিনে দেবতারা পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের স্বাগত জানাতে পৃথিবীতে প্রদীপ জ্বালানো হয়। শাস্ত্র অনুসারে এই দিন সন্ধ্যায় শিব মন্দিরেও প্রদীপ জ্বালানো হয়। শিব মন্দির ছাড়াও, অন্যান্য মন্দিরে, রাস্তার মোড়ে এবং অশ্বত্থ গাছ এবং তুলসী গাছের নীচে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি এই দিনে ভগবান শিবকে দর্শন করার এবং তাঁর পূজা করার প্রথাও রয়েছে। এই প্রথায় মানুষ জ্ঞান ও সম্পদ লাভ করে। তার সঙ্গে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং আয়ু বৃদ্ধি পায়। তবে এদিন ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী রাজ্যে এই উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
মনে করা হয় মহাদেবের শহর হলো বারাণসী। যার জন্য এই শহর পবিত্র ঘাটের শহর হিসেবেও পরিচিত। দেব দীপাবলির দিন ভোলেনাথের সমস্ত ভক্তরা একসঙ্গে মা গঙ্গার ঘাটে লক্ষাধিক প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে দেব দীপাবলি উৎসব উদযাপন করেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে সমস্ত দেবতারা কাশীর ঘাটে আসেন এবং মহাদেবের আগমনের আনন্দে দীপাবলি উদযাপন করেন। এই দিনে গঙ্গা দেবীর পূজা করা হয়। কাশীর রবিদাস ঘাট থেকে লেরাপ রাজ ঘাট পর্যন্ত লক্ষাধিক প্রদীপ জ্বালানো হয়।
কিংবদন্তি অনুসারে, একসময় ত্রিপুরাসুর নামে এক অসুর অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এমনকী দেবতাদের হাত থেকে স্বর্গও দখল করেছিল এই অসুর। মনে করা হয় প্রয়াগেই ত্রিপুরাসুর দীর্ঘকাল ধ্যান করেছিলেন। ত্রিপুরাসুরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মাদেব তাঁর কাছে হাজির হলে ত্রিপুরসুর এমন বর যাতে কোনও দেবতা, পুরুষ, নারী, জীব, পশু, পাখি, নিশাচর তাকে হত্যা করতে না পারে। ব্রহ্মাদেব সেই বরদান করেন। এরপর এই বর পেয়ে ত্রিপুরাসুর কার্যত অমর গিয়ে শুরু করেন পৃথিবীর উপর অত্যাচার। স্বর্গের দিকেও নজর পড়ল তার। দেবতারা তার সঙ্গে লড়াইয়ে হারতে শুরু করলেন। কিন্তু কোনও দেবতাই তাকে হত্যা করতে পারল না। এমনকী বিষ্ণুদেবও তাকে ধ্বংস করতে অস্বীকৃত হন। এরপর বিষ্ণু সকল দেবতাকে মহাদেবের কাছে গিয়ে প্রার্থনা করতে বলেন। ব্রহ্মাদেব এবং সমস্ত দেবতারা শিবের কাছে পৌঁছে ত্রিপুরাসুরকে বধের জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করলেন। এরপর মহাদেব তিন জগতে ত্রিপুরাসুরকে খুঁজতে যাত্রা শুরু করনে। এরপর কার্তিক পূর্ণিমার দিনে প্রদোষকালে অর্ধনারীশ্বর রূপে ত্রিপুরাসুরকে বধ করেন মহাদেব। সেই থেকে কাশীতে সমস্ত দেবতারা শিবের জয়ের আনন্দে প্রদীপ জ্বালান যা দেব দীপাবলি নামে পরিচিত। উল্লেখ্য, ১৯১৫ সালে হাজার হাজার প্রদীপ জ্বালিয়ে বারাণসীতে প্রথমবারের মতো দেব দীপাবলি উদযাপন করা হয়েছিল।
বারাণসীর গঙ্গা আরতি । Ganga Aarti in Varanasi :
বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত বারাণসী হলো এমন একটি স্থান, যেখানে মনে করা হয়, জন্ম এবং মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত পাওয়া যায়। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে, এখানে মৃত্যু মুক্তি পাওয়া যায় এবং মোক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। বারাণসীতে গঙ্গা আরতি বিশ্ববিখ্যাত। দশস্বমেধ ঘাট, বারাণসী- কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে, প্রতি সন্ধ্যায়, সূর্য দিগন্তে নেমে গেলে শুরু হয় গঙ্গা আরতি। শয়ে শয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে গঙ্গার উদ্দেশ্যে আরতি শুরু করেন পুরোহিতরা। বিত্র নদীতে নৈবেদ্য দেওয়ার সময় উচ্চস্বরে স্তব এবং ভজনও গান তারা। বেনারস গঙ্গা আরতি (Banaras Ganga Aarti)র এই অপরূপ ও সৈর্গিক অভিজ্ঞতা লাভ করতে দেশ-বিদেশ থেকে একত্রিত হন অসংখ্য মানুয়ষ।
ঋষিকেশের গঙ্গা আরতি । Rishikesh Ganga Aarti :
পাহাড় থেকে ফিরতি পথে ঋষিকেশ হলো ভ্রমণ পিপাসুদেদর আরেকটি অন্যতম পছন্দের জায়গা। বারাণসীর মতো গঙ্গা আরতি ঋষিকেশ (Ganga Aarti Rishikesh)এও আয়োজিত হয়। এখানে আয়োজিত আরতিটি হয় সবচেয়ে শান্ত এবং আরামদায়ক গঙ্গা আরতি। বহু আধ্যাত্মিক পর্যটকরা দেশের বাকি জায়গার গঙ্গা আরতির থেকে ঋষিকেশের গঙ্গা আরতি উপভোগ করতে বেশি পছন্দ করেন। হিমালয়ের পাদদেশে একটি সুন্দর স্থান, ঋষিকেশ। গঙ্গা নদীর তীরে প্রতি সন্ধ্যায় আরতির জন্য জ্বলে ওঠে অসংখ্য প্রদীপ। গঙ্গা আরতি ঋষিকেশ (Ganga Aarti Rishikesh)এ উপভোগ করা যায় শান্তিতে, নিঃশব্দে। নীরবে পবিত্র নদীতে নৈবেদ্য দেওয়ার আগে ভজন, ধর্মীয় গান এবং একটি হবন দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
হরিদ্বারের গঙ্গা আরতি । Haridwar Ganga Aarti :
হরি কি পৌরী, হরিদ্বার হিন্দুদের জন্য অন্যতম তীর্থস্থান। আর এখানেই সবথেকে বড় আকর্ষণ হলো গঙ্গা আরতি (Ganga Aarti)। কোলাহলপূর্ণ হলেও হরিদ্বারের গঙ্গা আরতির অভিজ্ঞতা জীবনে একবার না করলে থেকে যাবে আপসোস। মানসিক ক্লান্তি দূর করে নৈস্বর্গিক অনুভূতি দেবে হরিদ্বারের গঙ্গা আরতি। গঙ্গার পারে শয়ে শয়ে জ্বলন্ত প্রদীপ, মন্ত্রচারণ, ধুপকাঠির সুগন্ধি, সব মিলিয়ে হরিদ্বারের গঙ্গা আরতি দেবে মানসিক শান্তি।
প্রয়াগরাজের গঙ্গা আরতি । Prayagraj Ganga Aarti :
পূর্বে এলাহাবাদ নামে পরিচিত, শহরটি উত্তর প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ প্রয়াগরাজ। এখানে তিনটি নদী মিলিত হয়। এখানে বহু মানুষ আসেন নিজেকে শুদ্ধ করতে। তবে প্রয়াগরাজের আরেকটি বড় আকর্ষণ হলো গঙ্গা আরতি। গঙ্গায় ডুব দিয়ে নিজেকে শুদ্ধ করে সন্ধ্যায় গঙ্গা আরতির অভিজ্ঞতা যেন নতুন জীবনের সূচনার মতো লাগে।
এলাহাবাদের গঙ্গা আরতি । Allahabad Ganga Aarti :
ভারতের আরেকটি পুরাতন শহর হলো এলাহাবাদ। এখানে নেহেরু ঘাট এবং সরস্বতী ঘাটেও গঙ্গা আরতির আয়োজন করা হয়। অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন এই গঙ্গা আরতি উপভোগ করার জন্যই। এখানে বিশেষ নৌকার ব্যবস্থাও রয়েছে। যাতে চরে গঙ্গার পারে আরতি উপভোগ করা যায়।
কলকাতায় গঙ্গা আরতি । Ganga Aarti in Kolkata :
কলকাতায় গঙ্গা আরতির প্রচলন না থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কলকাতা, হাওড়া সংলগ্ন বিভিন্ন ঘাটে শুরু হয়েছে গঙ্গা আরতি। ২০২৩ সালের মার্চ মাসের গোড়ার দিকে বাজেকদমতলা ঘাটে গঙ্গা আরতি শুরু হয়েছে। বারাণসীর মতো না হলেও অনেকটা বারাণসীর কায়েদায় এখন নিয়মিত সন্ধেবেলা গঙ্গা আরতি হচ্ছে শহরের বিভিন্ন ঘাটে। এছাড়াও কলকাতায় গঙ্গা আরতি (Ganga Aarti in Kolkata)র শোভা আরও বৃদ্ধি করার জন্য ১লা এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে গঙ্গাবক্ষে ক্রুজ পরিষেবা। এই ক্রুজে বসে যেমন গঙ্গা ভ্রমণের আনন্দ নিতে পারবেন, তেমনই দেখতে পারবেন গঙ্গা আরতি। নিউ বাবুঘাট জেটি থেকে এই ক্রুজ যাত্রা শুরু হয় এবং শেষ হয় বাবুঘাটেই। সন্ধে ৭টা পর্যন্ত এই ক্রুজে চেপে ঘুরতে পারবেন পর্যটকরা। অনলাইনে মাথাপিছু ১০০ টাকা টিকিট কেটে ১ ঘণ্টায় ঘোরা যাবে এই ক্রুজে। যদিও ক্রুজ পরিষেবায় আসন সংখ্যা সীমিত। একসঙ্গে ২৫ জন ক্রুজে চেপে দেখতে পারবেন গঙ্গা আরতি। যাত্রীদের জন্য ক্রুজ ভ্রমণে চা-স্ন্যাক্সসেরও সুবিধা রয়েছে।
হিন্দু মতে পবিত্র নদী গঙ্গা সারা বিশ্বে হিন্দুদের জীবনে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। গঙ্গা নদীর উৎপত্তি ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্য থেকে, হিমালয়ের উঁচুতে। উত্তর ভারত হোক কিংবা পশ্চিমবঙ্গ, গঙ্গা ভারতের যেখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে সেখানেই গঙ্গা ঘাটে নানারকমের পূজা করা হয়। তবে সব গঙ্গাঘাটে আরতি হয়না। মূলত উত্তর ভারতে এই উৎসবের রমরমা। তবে সম্প্রতি কলকাতাতেও গঙ্গা আরতির প্রচলন শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সনাতন হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, গঙ্গা আরতি উৎসবের উল্লেখ করা আছে, ফলে গঙ্গা আরতি যে কোনও গঙ্গা ঘাটেই পালন করা যায়। এছাড়াও এই আরতির ধারণাটি হল পবিত্র নদী তথা গঙ্গা মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাঁর থেকে আশীর্বাদ চাওয়া।