Buddhadeb Bhattacharya | বাড়ি ফিরলেও কড়া নজরদারিতে থাকতে হবে বুদ্ধদেবকে! বাড়িতে থাকবে 'কার্ডিয়াক মনিটর'!
ফুসফুলের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অবশেষে চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থ্য হয়ে ১২ দিনের মাথায় বাড়ির পথে বুদ্ধবাবু। তবে বাড়িতেই বেশ কড়া নজরদাড়িতে থাকতে হবে তাঁকে।
১২ দিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে অবশেষে বাড়ি ফিরতে চলেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya)। আজ, ৯ই অগাস্ট, বুধবার নিজের পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে ফিরবেন বুদ্ধবাবু। সকাল থেকেই এই নিয়ে প্রস্তুতি চলছে দক্ষিণ কলকাতার (Kolkata) বেসরকারি হাসপাতালে। তবে বাড়ি ফিরলেও এখানেই শেষ নয় তাঁর চিকিৎসার। বাড়িতে থাকলেও আপাতত কড়া নজরদারিতেই রাখতে হবে তাঁকে।
গত ২৯ সে জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। সেদিন যে পরিস্থিতিতে বুদ্ধবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তাতে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন রাজনৈতিক মহল, সাধারণ মানুষ এমনকি চিকিৎসকরাও। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর জানা যায়, ফুসফুসে সংক্রমণ রয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। এরপর সেদিন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁকে ইনটিউবেট করে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। পরে বুদ্ধবাবুর চিকিৎসার জন্য তৈরী ৯ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড বৈঠকে বসে। বুদ্ধদেববাবুর দুই ফুসফুসে নিউমোনিয়ার (Pneumonia) কারণ অনুসন্ধানের জন্য একাধিক পরীক্ষানিরীক্ষাও চালানো হয়। রিপোর্ট দেখে জানা যায়, ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ক্লেবসিয়েলার (Drug Resistant Klebsiella) জন্যই এই নিউমোনিয়া হয়েছে। পাশাপাশি, রক্তচাপ ও নাড়ির গতির সমস্যা, ক্রিয়েটিনিন বেশি থাকা ইত্যাদি আনুসঙ্গিক সমস্যাও রয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর।
তবে দ্রুতই চিকিৎসায় সারা দিয়েছেন বুদ্ধদেব। গুরুতর সংক্রমণ কাটিয়ে উঠেছেন ৭৯ বছরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। গত শুক্রবারই চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, বুদ্ধবাবু সংক্রমণমুক্ত। ১১ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন মাঝে বাড়ি ফেরার বায়নাও করেছিলেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শনিবার থেকে হাসপাতালে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনেছেন, চিকিৎসকদের সঙ্গে গল্পগুজব করেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁকে দেখতে আসা ঘনিষ্ঠদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। সূর্যকান্ত মিশ্রের (Suryakant Mishra) সঙ্গে কথা বলেছেন দীর্ঘক্ষণ।
তবে বাড়ি ফিরলেও বেশ কড়া নজরদারিতে থাকতে হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। কারণ সংক্রমণ সারাতে যে চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল, তা যথেষ্টই ধকলের। সেই ধকল বুদ্ধবাবু এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলেই মনে করা হচ্ছ। বুদ্ধবাবুর বাড়ি ফেরার প্রসঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন,এটাই বুদ্ধবাবুর বাড়ি ফেরার আদর্শ সময়। তাঁর শুধু থাকার জায়গারই বদল হচ্ছে। হাসপাতালের বদলে বাড়িতে থাকছেন। মেডিক্যাল টিমের মনিটারিং, সুপারভিশন একই রকম চলতে থাকবে।
স্যর আমাদের সমস্ত কথা মেনে চলছেন। খুব ভাল রয়েছেন। ওঁকে তরল খাবারই দেওয়া হচ্ছে। এটাই তাঁকে বাড়ি ফেরানোর আদর্শ সময়। শুধু থাকার জায়গারই বদল হচ্ছে। হাসপাতালের বদলে বাড়িতে থাকছেন। মেডিক্যাল টিমের মনিটারিং, সুপারভিশন একই রকম চলতে থাকবে।
উল্লেখ্য, বুদ্ধবাবুকে বাড়ি পাঠানোর আগে চিকিৎসকদের একটি দল গিয়ে তাঁর এক কামরার ঘর পরিদর্শন করে এসেছেন। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার বেলার দিকে সেই দলের প্রতিনিধিরা বুদ্ধবাবুর ঘর ঘুরে দেখেন। কোন জায়গায় বিছানা থাকবে, কোন জায়গায় থাকবে চিকিৎসার সরঞ্জাম, সবটাই ঠিক করে দেন চিকিৎসকরা। এমনকি ঘর জীবাণুমুক্তকরণ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, বুদ্ধদেবের জন্য নতুন বাইপ্যাপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাঁর যে বাইপ্যাপটি ছিল, সেটি প্রায় সাড়ে তিন বছরের পুরনো। এ ছাড়া একটি ‘কার্ডিয়াক মনিটর’ থাকবে। যার মাধ্যমে অক্সিজেনের মাত্রা (স্যাচুরেশন), রক্তচাপ, হৃদ্স্পন্দন দেখা যাবে। যাতে ঠিক ভাবে বুদ্ধদেবের শারীরিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা যায় এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা যায়, তাই এই ব্যবস্থা।
এদিন সকাল থেকেই দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে প্রস্তুতি শুরু হয়। হাসপাতালের বাইরে প্রস্তুত করা হচ্ছে সিসিইউ অ্যাম্বুলেন্স (CCU Ambulance)। হাসপাতালে সূত্রে খবর, এই অ্যাম্বুলেন্স করেই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন বুদ্ধবাবু।বুদ্ধবাবুকে বাড়ি নিয়ে ফেরকার জন্য সকাল ১১টা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। তিনি জানান, বুদ্ধদেব বাড়ি ফিরলেও তাঁকে কড়া নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। বুদ্ধদেব যেন সুস্থ থাকেন, সেই জন্য সকলকে আন্তরিক ভাবে প্রার্থনা করার অনুরোধও করেন তিনি। পাশাপাশি যেভাবে সবাই বুদ্ধদেবের খোঁজ নিয়েছেন এবং পাশে থেকেছেন, তার জন্যও সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী।