health benefits

মুলোর খাদ্যগুণ ও উপকারিতা, Food value and benefits of radish in bengali language

মুলোর খাদ্যগুণ ও উপকারিতা, Food value and benefits of radish in bengali language
Key Highlights

শীতকালে অনেকেই খাবারে মুলা খেতে পছন্দ করেন।   নিয়মিত মুলা খাওয়ার ফলে আমাদের দৈনিক ভিটামিনের চাহিদার অনেকটাই পূরণ হয় কারণ মুলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C থাকে ।  সুস্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতির জন্য নিয়মিত মুলা খাওয়া উচিত।

মুলার পুষ্টিগুণ, Nutrient facts of radish

ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও জিঙ্কের মতো মিনারেল উপস্থিত রয়েছে মুলায়। তাছাড়া মুলায় ভিটামিন ও খনিজ উপাদানও বর্তমান। মুলায় বেশ কিছু উপকারী এনজাইম রয়েছে; যেমন- অ্যামাইলেস, এস্টির‌্যাসেস, মাইরোসিনেজ এবং ডায়াস্ট্যাস ইত্যাদি বিভিন্ন এনজাইম যেগুলো ফাইব্রোমিল্যাগিয়ার মতো ছত্রাকজনিত রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।

Also read :

রান্না করলে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে মুলোতে থাকা ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায় তাই এটি কাঁচা খেলে সম্পূর্ণ ভিটামিনের উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। খাওয়ার আগে সবজিটি গরম জলে ভাল করে ধুয়ে নেওয়া উচিত। এরপর খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে আরও একবার ধুয়ে খেতে পারেন। 

মুলা খাওয়ার উপকারিতা, Benefits of eating radish

সারা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জাতের মূলা রয়েছে এবং এগুলির রঙ, আকার এবং ওজনও বিভিন্নরকম হয়। বাজারে প্রচলিতভাবে সাদা, গোলাপি, লাল ও হলুদ রঙের মুলা পাওয়া যায়।অতি সাধারণ এই সবজিটিতে রয়েছে অসাধারণ কিছু গুণ। মুলার রস শক্তিশালী ডিটক্সিফাইং, যা রক্ত বিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। তাছাড়া মুলা বিলিরুবিন অপসারণ করতেও সাহায্য করে এবং একই সঙ্গে দেহে বিলিরুবিনের উৎপাদনও নিয়ন্ত্রণ করে। অনেকেই গন্ধের কারণে এই সবজি অপছন্দ করেন, তবে এর উপকারীতা অনেক। তাছাড়া বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও এই সবজি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

১. ওজন হ্রাস করে:

ওজন অতিরিক্তি হওয়ার কারণে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন, তাই নিয়মিত মুলো খাওয়া শুরু করতে হবে।   এই সবজি খেয়ে পেট ভরে যায় ফলে কিছুক্ষণ পর পর ক্ষিদে পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় তার সাথে সাথে দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ায় সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।

২. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

মুলোর রসে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন এবং ভিটামিন C শরীরের ভিতরে ক্যান্সার কোষের জন্ম এবং বৃদ্ধি রোধ করে। বিশেষত ইন্টেস্টিনাল, কিডনি, স্টমাক এবং কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম করে এই জলীয় সবজি।

৩. কনস্টিপেশন ও পাইলসের প্রকোপ কম করে:

কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে তো মুলোর রস নিত্যদিনের সঙ্গী হওয়া উচিত। এতে উপস্থিত কার্যকরি উপাদানগুলি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় এবং পাশাপাশি বাইলের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার কাজ করে, যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই কনস্টিপেশনের প্রকোপ কম হয়, আর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হলে পাইলসের সমস্যাও দূর হতে সময় লাগে না।

৪. শরীরকে বিষমুক্ত রাখে:

ব্লাডার, কিডনি, প্রস্টেট এবং ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলিকে শরীর থেকে বের করে এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির কর্মক্ষমতা বাড়াতে মুলোর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, শরীরের কোণায় কোণায় জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের ক্ষতি করার আগে তাদের কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার কাজটাও করে থাকে মুলোর রস। প্রসঙ্গত, শরীর যত টক্সিক মুক্ত থাকবে, তত স্কিনের উজ্জ্বলতা বাড়বে। সেই সঙ্গে শরীর এবং মন চাঙ্গা এবং রোগ মুক্ত থাকবে।

৫. শ্বাসকষ্টের সমস্যা কম করে:

মুলোর রস, আমাদের লাং বা ফুসফুসে জমতে থাকা মিউকাসের দেওয়ালটিকে ভেঙে দেয়, যার ফলে অল্প দিনেই শ্বাসকষ্টের প্রকোপ কমতে শুরু করে। এছাড়াও বমি বমি ভাব, গলায় ব্যথা এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যা কম করতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি প্রভূত উপযোগী।

৬. এনজাইমের ঘাটতি পূরণ করে:

মূলোর রসে এস্টারএসেস, মাইরোসিনেসি, ডিয়াস্টেস এবং অ্যামাইলেস নামক এনজাইমগুলি প্রচুর মাত্রায় থাকে, যা ছত্রাক সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।

Also read :

৭. শরীরে ভিতরকার প্রদাহ কমায়:

মূলায় প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে তাই প্রতিদিন মুলোর রস খাওয়া উচিত, তবে দেহের ভিতরগত চোট বা কোন আঘাতের কারণে হওয়া জ্বালা-যন্ত্রণা কম হতে শুরু করে, এইসঙ্গে ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফ্লেমেশন এবং কিডনির প্রদাহও কমায়।

৮. নানাবিধ ত্বকের রোগ দূরে রাখে:

মুলোয় উপস্থিত ফসফরাস, ভিটামিন এ এবং সি, জিঙ্ক, ইত্যাদি উপাদান ব্রণ, ফুসকুড়ি, একজিমা সহ একাধিক ত্বকের রোগ উপশমে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়াও সার্বিকভাবে আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও মুলা উপযোগী।

৯. হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত হয়:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত মুলা খাওয়া শুরু করে দিলে শরীরে অ্যান্থোসায়ানিন নামক একটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত থাকলে কোনও ধরনের কার্ডিওভাসকুলার অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম হয়ে যায়।

১০. ত্বকের ভালো রাখার জন্য উপকারী:

প্রতিদিন মুলার রস খাওয়া উচিত, এতে ত্বক সতেজ থাকে। এক্ষেত্রে মুলায় উপস্থিত ভিটামিন সি, জিংক এবং ফসফরাস ভূমিকা থাকে। মুলার পুষ্টিগুণ ত্বকের শুষ্কতা, ব্রণ অথবা দাগ-ছোপ দূর করতে সাহায্য করে। এসব ছাড়াও মুলার পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখতে পারেন, এতে ত্বক সজীব থাকে।

উপসংহার, Conclusion

মুলা একাধিক ভিটামিন ও খনিজের ভরপুর সম্ভার হওয়ায় একে আদর্শ সবজির আওতায়ও ধরা হয়।  ওজন নিয়ন্ত্রণ করা থেকে শুরু করে আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও মুলার পুষ্টিগুণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও মুলার মধ্যে জলের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে এই সবজিটি আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে থাকে।

Also read :