SRK Birthday | পরীক্ষায় ভালো নম্বর করায় সিনেমা দেখাতে নিয়ে যান মা! সিনেমার প্রতি প্রেমে পড়া সেই শিশুই বর্তমানে বলিউড 'কিং'!
২রা নভেম্বর এসআরকের জন্মদিন। প্রত্যেক বছরের মতোই শাহরুখ খানের বাড়ির বাইরে দেখা গেলো ভক্তদের ভিড়। নিজেকে 'কেবল অভিনেতা' বলা বলিউড কিং-র সিনেমা জগতে পা রাখার নেপথ্যে রয়েছে তাঁর মা-ই।
প্রত্যেক বছরের মতো ১লা নভেম্বর রাত থেকেই শাহরুখ খানের মান্নাত (Shah Rukh Khan Mannat)এর সামনে দেখা গেল অসংখ্য ভক্তের ভিড়, উন্মাদনা। এই উন্মাদনা হবে নাই বা কেন? বলিউড বাদশাহ, এসআরকের জন্মদিন (SRK Birthday) বলে কথা! শাহরুখকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এবং তাকে নিজের চোখে একবার দেখতে রাত থেকেই কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেন মন্নতের বাইরে। প্রত্যেক বারের মতো কিং খানের জন্মদিনের আগের রাতে এই ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে মুম্বই পুলিশকে। তবে সব কিছুই স্বার্থক! কারণ ভক্তদের কথা ভেবে প্রত্যেক বছরের মত শাহরুখ খান মান্নাত (Shah Rukh Khan Mannat) এর ছাদে এসে হাজির হন। শাহরুখের এক ঝলক দেখা দিতেই এবং ভক্তদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তেই চিৎকার করে সেই এলাকা কাঁপান ভক্তরা। এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়ে সোশ্যাল মাধ্যমে শাহরুখ লেখেন 'আমি একজন অভিনেতা মাত্র'। কিন্তু 'কেবল অভিনেতা' থেকে তিনি যে ভারত-ভারতীয়দের আবেগ, আইকন, ইমোশান হয়ে উঠেছেন বহু যুগ আগেই।
শাহরুখ খানের জন্ম তারিখ (Shah Rukh Khan Date of Birth) ১৯৬৫ সালের ২রা নভেম্বর। নয়াদিল্লীর তালভার নার্সিং হোমে জন্ম হয় পাঠান বংশীয় মীর তাজ মোহাম্মদ এবং এক সরকারি প্রকৌশলীর কন্যা লতিফ ফাতিমার সন্তান শাহরুখ খান। শাহরুখ খানের বাড়ি (Shah Rukh Khan House) পাশে ‘টিনি টটস’ নামে একটি প্লে স্কুলে প্রাথমিক পড়ালেখা শুরু করেন। এর পর ‘সেইন্ট কলাম্বিয়া স্কুলে’ তিনি মাধ্যমিক পড়ালেখার জীবন শুরু করেন। ছোটবেলার থেকেই শাহরুখ ছিলেন খুবই কেতাদুরস্ত। বিশেষ করে চুলের যত্ন করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাবধান। কিন্তু কলাম্বিয়া স্কুলে গিয়েই যেন সব অন্যরকম হয়ে গেল। সেই স্কুলের ছাত্রদের মেনে চলতে হতো কঠোর নিয়মকানুন। ইউনিফর্মের সঙ্গে চুলের প্রতিও বিশেষ নজর দিত স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায়শই এসেম্বলি থেকে সোজা নাপিতের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হতো শাহরুখকে। ছাত্র হিসেবে তিনি মেধাবী থাকলেও পড়ালেখায় তার মন একদমই বসতো না। বিশেষত হিন্দি ভাষায় ছিলেন তিনি কাঁচা। তবে হিন্দি ভাষার দুর্বলতার কারণেই চলচ্চিত্র জগতে পা দেন কিং খান।
স্কুলে পড়া কালীনই শাহরুখের মা তাঁকে বলেন, হিন্দিতে ভাল নম্বর আনলে তাঁকে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাবেন। এর আগে কখনো সিনেমা হলে যাওয়ার সুযোগ পাননি শাহরুখ। ফলে দিনরাত খেটে হিন্দিতে ভালো নম্বর নিয়ে আসেন এবং কথা মতো সিনেমা হলেও নিয়ে যান তাঁর মা। আর প্রথমবারের মতো হিন্দি চলচ্চিত্র দেখেই প্রেমে পড়ে যান শিশু কিং খান। এই প্রসঙ্গে একবার এক ইন্টারভিউয়ে শাহরুখ বলেন সেদিনের সেই সিনেমাটিই তার মনে সিনেমা প্রীতি সৃষ্টি করেছিল।
সিনেমার প্রতি ভালোবাসা মনে নিয়েই উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন শাহরুখ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হ্যানসরাজ কলেজ’ এ অর্থনীতিতে ভর্তি হন তিনি। এই সময় খেলাধুলোর প্রতিও বেশ ন্যাক ছিল তাঁর। একসময় তিনি খেলাধুলার জগতে নিজের ক্যারিয়ার বানাবেন বলেই ভাবতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু পিঠের ব্যাথা এবং আর্থ্রাইটিস এর মতো সমস্যা তার খেলাধুলায় বাধ সাধে। অনার্স শেষে তিনি ‘জামিয়া মিল্লা ইসলামিয়া’ নামক একটি গণযোগাযোগ গবেষণা কেন্দ্রে মাস্টার্স পড়ার জন্য ভর্তি হন। চলচ্চিত্র এবং সাংবাদিকতা, এই দুটি বিষয়ে তিনি পড়াশুনা শুরু করেন। কিন্তু প্রথম বর্ষ শেষেই ভাইস-প্রিন্সিপ্যালের সাথে মনোমালিন্যের কারণে মাঝপথেই মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করে দেন। আর এখানেই শেষ হয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা।
আরও পড়ুন : দীপাবলির আবহে 'টাইগারে'র কাম ব্যাক! দেশে মুক্তি পাওয়ার আগের দিন বিদেশে মুক্তি পাবে 'টাইগার ৩'!
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পর্বে ইতি টেনে কিং খান ফিরে যান সেই হিন্দি পরীক্ষায় ভালো ফল করে সিনেমা দেখে তৈরী হওয়া ভালোবাসার পথে। ১৯৮৮ সালে শাহরুখ খান জীবনে প্রথম ‘দিল দরিয়া’ নামক একটি টিভি ধারাবাহিকে কাজ করার চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু নানা সমস্যায় এর কাজে বিলম্ব ঘটায় শেষ পর্যন্ত ১৯৮৯ সালে ‘ফৌজি’ নামক ধারাবাহিক দ্বারাই তাঁর অভিনয় জীবনের শুরু হয়। এই নাটকে তিনি ‘অভিমান্যু রায়’ নামের এক আর্মি ক্যাডেট চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র কেরিয়ারের গোড়াতেই অনবদ্য অভিনয় দ্বারা মন জয় করেন শাহরুখ। যার ফলে সার্কাস’ নামের আরেকটি ধারাবাহিকে কাজের সুযোগ আসে তাঁর কাছে। তবে ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ১৯৯১ সালে মায়ের পরলোক গমনের পর। দিল্লী থেকে মুম্বাই পাড়ি দিয়েই দ্রুত চারটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে যান তিনি। প্রথমটি ছিল সাবেক বলিউড অভিনেত্রী হেমা মালিনীর প্রথম পরিচালনা, ‘দিল আসানা হ্যায়’, যদিও তার বলিউড অভিষেক হয় ‘দিওয়ানা’ (১৯৯২) ছবিটির মাধ্যমে। রিষি কাপুরের সাথে দ্বিতীয় প্রধান নায়কের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন এবং সে বছর সেরা উদীয়মান অভিনেতা হিসেবে ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কার লাভ করেন।
বলিউডে কিং খানের ঠোট কাঁপানো, আবেগপূর্ণ দৃশ্যে চোখের কম্পন, কথা বলার সময় বিশেষ ভঙ্গীতে গলার স্বর পরিবর্তনের মতো নতুনত্ব অভিনয়ে যখন গোটা দেশ প্রেমে আবদ্ধ, তখন খোদ কিং খানের জীবনে শুরু হয় ভালোবাসার নয়া পর্ব। ১৯৯১ সালের ২৫সে অক্টোবর তিনি বিয়ে করেন গৌরি খানকে। বলিউডের গসিপ থেকে বহু দূরে, এখনও পর্যন্ত বলিউডের অন্যতম সুখী দম্পতি হিসেবে এক সঙ্গে সংসার করে চলেছেন শাহরুখ-গৌরী। ছেলে আরিয়ান, আব্রাম ও মেয়ে সুহানাকে নিয়ে সুখের পরিবার - খান পরিবার।
১৯৯৩ সাল থেকে বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেন কিং খান। ‘ডর’, 'মায়া মেমসাব’, ‘আনজাম’ ‘কাভি হা কাভি না’, ‘করন অর্জুন’ এর মতো চলচ্চিত্রে তুখড় অভিনয় করে কেবল দেশেই নয়, বিদেশেও সুখ্যাতি অর্জন করতে থাকেন কিং খান। লিজেন্ডারি সিনেমা 'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ বিশ্বজুড়ে ১৯ মিলিয়ন ডলার তথা ১২২ কোটি টাকা আয় করে। দিলওয়ালে দুলহানিয়া দিয়ে শাহরুখ খান প্রমাণ করেছিলেন যে তিনিই বলিউডে এসেছেন রাজার মতো রাজত্ব করতে এবং এখনও পর্যন্ত তিনি তা করেছেনও। ক্যারিয়ারে খুব একটা উত্থান পতনের দেখা পাননি তিনি। এক সময়ে ‘অশোকা’, ‘বাদশাহ’, ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি’র মতো ছবিগুলো যখন বক্স অফিসে ফ্লপ হচ্ছিল, তখন এদের মাঝেই শাহরুখ দর্শকদের মন জয় করছিলেন ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’, ‘মোহাব্বাতে’, ‘কাল হো না হো’ এর মতো বক্স অফিস কাঁপানো ছবি দিয়ে। ২০০১ সালে তার অভিনীত এবং সঞ্জয় লীলা বানসালী পরিচালিত ছবি ‘দেবদাস’ ছিলে সময়ের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি। ছবিটি দশটি ফিল্মফেয়ার জেতে এবং শাহরুখকে তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার সহ একাধিক পুরস্কার এনে দেয়।
২০০৪ সালে মুক্তি পায় তিনটি ছবি, ‘ম্যায় হু না’, ‘ভীর জারা’ এবং ‘স্বদেশ’। প্রতিটি ছবির জন্যই তিনি ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পান এবং ‘স্বদেশ’এর জন্য পুরস্কার জেতেন। স্বদেশ ব্যতীত দুটি ছবিই বক্স অফিসে খানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। কিন্তু বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও স্বদেশকে অনেকে শাহরুখের জীবনের সেরা পারফরম্যান্স বলে থাকেন। ২০০৫ সালে তাঁর অভিনীত ছবি ‘পাহেলি’ ভারতীয় ছবিগুলোর মধ্যে অস্কার পুরস্কার নমিনেশন পায়। ২০০৭ সালে শাহরুখ খান অভিনয় করেন ‘চাক দে ইন্ডিয়া’। এই ছবিটি বক্স অফিসের পাশাপাশি খানকে এনে দেয় ফিল্মফেয়ারসহ অসংখ্য পুরস্কার। এরপর ‘রাব নে বানা দি জোড়ি’ এবং ‘ওম শান্তি ওম’ ছবি দুটিও ছিল বক্স অফিস হিট। ২০১০ সালে তার অভিনীত ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। এরপর নিজের গোছের বাইরে ‘রাওয়ান’ আর ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। বক্স অফিসে সফল হলেও অনেকের ,মতে এই ছবিগুলি কিং খানের ছবি মনে হচ্ছিল না। অবশ্য তাঁর নিজস্ব কোনও ধরণ নেই বলা চলে। কারণ সবরকমের চলচ্চিত্রেই মন জয় করেন তিনি। যদিও ১২ বছর পর বক্স অফিসে ফ্লপ হয় 'ফ্যান’ ছবিটি। তবে ফের 'রাইজ', 'ডিয়ার জিন্দেগী', 'পাঠান' এবং 'জওয়ান' র মতো সিনেমা দ্বারা ফের গোটা বিশ্বের মন জয় করেছেন 'বলিউড কিং'।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে এসআরকের জন্মদিন (SRK Birthday)এ তাঁর নয়া ছবি ‘ডাঙ্কি’র পয়লা ঝলক প্রকাশ্যে এসেছে। শাহরুখ খানের জন্ম তারিখ (Shah Rukh Khan Date of Birth) ২রা নভেম্বরই দর্শকদের চমক দিলেন কিং খান। টিজারেই দেখা গেল বাদশার অন্যরকম লুক। যে অবতারে ৫৮ বছর বয়সকেও যেন তুড়ি মেরে ওড়ালেন কিং খান। শাহরুখ, রাজকুমার হিরানি অবং জিও স্টুডিওজের প্রযোজনায় তৈরি হয়েছে নতুন এই ছবি। কিং খান ছাড়াও রয়েছেন এই সিনেমায় রয়েছেন ধর্মেন্দ্র, তাপসী পান্নু, ভিকি কৌশল, বোমান ইরানি, সতীশ শাহ, পরীক্ষিত সাহনি। জনপ্রিয় ফিল্ম সমালোচক তরণ আদর্শ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ২২সে ডিসেম্বর মুক্তি পাবে রাজকুমার হিরানির ‘ডাঙ্কি’। যে সময়ে মুক্তি পাচ্ছে প্রভাসের সালার ছবিটিও। অতঃপর আবার বক্স অফিসে দক্ষিণী সিনে ইন্ডাস্ট্রি বনাম বলিউডের লড়াই। তবে শাহরুখের ছবিই যে বেশি জনপ্রিয় হবে তার আগাম আভাস দিচ্ছে শাহরুখ খানের বাড়ি (Shah Rukh Khan House)র বাইরে তাঁর জন্মদিনের রাতে ভক্তদের ভিড়। কারণ শাহরুখ খান যে 'কেবল অভিনেতা' নন। তিনি এক প্রজন্মের 'কিং'। কেবল একটি প্রজন্মই নয়, তিনি বলিউডের 'কিং' ছিলেন, এখনও রয়েছেন এবং যতদিন তিনি থাকবেন ততদিন তিনিই 'কিং' থাকবেন।
- Related topics -
- বিনোদন
- বলিউড
- শাহরুখ খান
- সিনেমাহল
- জীবন ও জীবনী
- সেলিব্রিটি