Eye of the Sahara | জনমানবহীন সাহারা মরুভূমিতে রয়েছে বিশালাকার 'চোখ'! আজও সমাধান হয়নি ‘আই অব দ্য সহারা’র রহস্য!
'সাহারার চোখ' অবস্থিত পশ্চিম সাহারা মরুভূমির দেশ মরিতানিয়া দেশে। সহস্র বছর ধরে এই রিচ্যাট গঠনটি মানুষের দৃষ্টির আড়ালে ছিল। জানুন ‘আই অব দ্য সহারা’র রহস্য।
নানান অজানা, চমকদার প্রাকৃতিক স্থান বা কাঠামো পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। নানান রহস্যে ভরপুর আমাদের গোটা বিশ্ব। এরকমই এক রহস্যময় স্থান বা কাঠামো সাহারার চোখ (Eye of the Sahara) বা ‘আই অব দ্য সহারা’ (Eye of the Sahara)! নামে 'চোখ' থাকলেও আসলে কিন্তু তা চোখ নয়। এটি জনমানবহীন মরুভূমি জুড়ে বিস্তৃত এক গহ্বর। পৃথিবীর অন্যতম এই অমীমাংসিত রহস্যের পরিচয় এই ‘আই অব দ্য সহারা’! আরও আশ্চর্যের বিষয়, সহস্র বছর ধরে এ রিচ্যাট গঠন (Richat structure) মানুষের দৃষ্টির আড়ালে ছিল। যেন মানব সমাজের চোখের সামনে থাকতেও ধরা পড়েনি চোখে।
‘আই অব দ্য সহারা’ কীভাবে আবিষ্কার হয়?
‘আই অব দ্য সহারা’ এর আরবিতে নাম ‘কালব আর-রিসাত’। যার বাংলা অর্থ হলো আফ্রিকার নীল চোখ বা সাহারার চোখ।পশ্চিম সাহারা মরুভূমির দেশ (Sahara Desert countries) মরিতানিয়া দেশের অন্তর্গত, সেখানেই রয়েছে এই ‘চোখ’। সহস্র বছর ধরে এ রিচ্যাট মানুষের দৃষ্টির আড়ালে ছিল।কারণ, এই বিশাল এবং রহস্যময় ভূতাত্ত্বিক গঠনটির আসল চেহারা ‘বার্ডস আই ভিউ’ ছাড়া মাটির সমতল থেকে বোঝা যায় না। ফলে কয়েক হাজার বছর ধরে এই ভৌগোলিক সৃষ্টি প্রকাশ্যে থেকেও রয়ে গিয়েছিল সবার অগোচরে। কারণ উপর থেকে না দেখলে অর্থাৎ ‘বার্ডস আই ভিউ’ না থাকলে এই ‘চোখ’ মানুষের নজরের বাইরেই থেকে যেত চিরকাল।
৪০ কিলোমিটার বা ২৫ মাইল ব্যাসের উপবৃত্তাকার এই গহ্বরের অস্তিত্ব প্রথম ধরা পড়ে আমেরিকার মহাকাশ অভিযান ‘জেমিনি ফোর’-এ (Gemini Four)। ১৯৬৫ সালে জেমেনি-৪ মহাকাশ মিশনে পৃথিবীর চারপাশে চার দিনের কক্ষপথ তৈরি করার সময় আমেরিকান মহাকাশচারী ম্যাকডভিট এবং হোয়াইটকে পৃথিবীর ভূখণ্ডের ছবি নিতে বলা হয়। সেই মিশন থেকে প্রকাশিত ফটোগ্রাফ সেট থেকে সাহারার রিচ্যাট কাঠামোটি পরিপূর্ণভাবে দেখা যায়। উল্লেখ্য, স্পেস শাটল থেকে এটি দেখার সময় অনেক নভোচারী এই বিস্ময়কর দৃশ্যটির কথা বলেছেন।নভোচারীরা রিচ্যাট কাঠামোকে একটা ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ব্যবহার করেন।
‘আই অব দ্য সহারা’ কী?
ভূবিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, পশ্চিম সাহারা মরুভূমির দেশ (Sahara Desert countries) মরিতানিয়া দেশের অন্তর্গত এই মরুচোখ আসলে ‘ইমপ্যাক্ট ক্রেটার’। পৃথিবী-সহ সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ ও উপগ্রহের ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন কারণে গহ্বর সৃষ্টি হয়। এর অন্যতম কারণ উল্কাপাত, ধূমকেতুর আঘাত। আবার তীব্র ভূমিকম্প, ভূত্বকের সঙ্কোচন-প্রসারণ বা ভূঅভ্যন্তরস্থ প্লেটের সংঘর্ষের ফলেও গহ্বর তৈরি হয়। মূলত এই দ্বিতীয় কারণে তৈরি গহ্বরকেই বলা হয় ‘ইমপ্যাক্ট ক্রেটার’।
ভূবিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, পশ্চিম সাহারা মরুভূমির দেশ (Sahara Desert countries) মরিতানিয়া দেশের অন্তর্গত এই মরুচোখ আসলে ‘ইমপ্যাক্ট ক্রেটার’। পৃথিবী-সহ সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ ও উপগ্রহের ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন কারণে গহ্বর সৃষ্টি হয়। এর অন্যতম কারণ উল্কাপাত, ধূমকেতুর আঘাত। আবার তীব্র ভূমিকম্প, ভূত্বকের সঙ্কোচন-প্রসারণ বা ভূঅভ্যন্তরস্থ প্লেটের সংঘর্ষের ফলেও গহ্বর তৈরি হয়। মূলত এই দ্বিতীয় কারণে তৈরি গহ্বরকেই বলা হয় ‘ইমপ্যাক্ট ক্রেটার’। তবে সাহারার 'চোখ' ইমপ্যাক্ট ক্রেটার’ কিনা সেই নিয়েও দ্বন্দ্ব রয়েছে। কারণ পৃথিবীর বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভূবিজ্ঞানীদের কাছে ইমপ্যাক্ট ক্রেটার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সহারা মরুর ‘চোখ’-এ কোনও গলিত শিলার চিহ্ন পাননি বিজ্ঞানীরা। ফলে আধুনিক গবেষণা একে নিছক ‘ইমপ্যাক্ট ক্রেটার’ বলতে নারাজ।বরং এর পিছনে আছে আরও জটিল ও বিস্তৃত তত্ত্ব। এই গহ্বরের যে মূল বেষ্টনী, তা হল পৃথিবীর প্রাচীনতম ভূভাগের ক্ষয়ে যাওয়া অংশের চিহ্ন। আধুনিক গবেষকদের ধারণা, সহারার চোখের সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে ১০০০ কোটি বছরেরও আগে। অর্থাৎ যে সময় পৃথিবীর কোনও মহাদেশ আলাদাই হয়নি। অবিভক্ত মহাদেশ হিসেবে ছিল ‘প্যানজিয়া’। প্লেটটেকটনিক্স মতবাদে, ভূগর্ভস্থ পাত আন্দোলিত হওয়ার কারণে কয়েক টুকরো অংশে বিভক্ত হয়ে যায় প্যানজিয়া। দু’টুকরো হয়ে দু’দিকে চলে যায় আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা। এরপর গলিত শিলা প্রবল তাপে ও চাপে বেরিয়ে আসতে চায়। কিন্তু পুরোপুরি বের হতে না পারার ফলে তা উঁচু হয়ে গম্বুজের আকার নেয়। আর এই গম্বুজকেই বলা হয় ‘ডোম অব লেয়ার্স’। যা নাকি পৃথিবীর ভূভাগের আদি রূপ।
প্যানজিয়া বিভক্ত হওয়ার পরপরই আবার তীব্র ভূমিকম্প হানে পৃথিবীতে। এর ফলেই বিশাল অংশ ধসে গিয়ে সৃষ্টি হয় গহ্বরের। এরপর কোটি কোটি বছর ধরে আবহবিকারের ফলে ক্রমাগত ক্ষয় ও সঞ্চয় প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে ক্রেটারের বর্তমান রূপ। এই গহ্বর জুড়ে শিরা উপশিরার মতো বিস্তৃত স্তর আসলে কয়েক কোটি বছরের আবহবিকারের চিহ্ন। এ ধরনের ভূতাত্ত্বিক কাঠামোর কেন্দ্রের উন্মুক্ত পাথরগুলো বাইরের পাথরের চেয়ে পুরানো। এই রিচ্যাট গঠন (Richat structure) এর ভেতরে তাকালে এর উত্তর দিকে যে কিমব্রেলাইট প্লাগ এবং কার্বোনাটাইটস পাথরের সন্ধান পাওয়া যায় সেগুলো প্রায় ৯৪ থেকে ১০৪ মিলিয়ন বছর পুরানো।
আরও পড়ুন : বদলে যাবে মানব সভ্যতা সম্পর্কে সকল ধারণা! অ্যামাজনের গভীরে ৩ হাজার বছর পুরোনো শহরের হদিশ!
অনেকে মনে করেন এই সাহারার চোখ (Eye of the Sahara) এটি ভিনগ্রহীদের রকেট অর্থাৎ ইউএফওর অবতরণ স্থান। আবার অনেকে মনে করেন, কোনো দেশ হয়তো গোপনে সেখানে কোনো আণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছেন তাই এর আকৃতি এমন হয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ থেকে এই চোখের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত এই বৃত্তাকার ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যটি একটি উত্তোলিত গম্বুজের মতন। আবার অনেকে মনে করেন, রিচ্যাট কাঠামোর বর্ণনা দার্শনিক প্লেটোর হারিয়ে যাওয়া শহর আটলান্টিসের সঙ্গে অনেকাংশে মিলে যায়। প্লেটোর বর্ণনানুসারে আটলান্টিস নামের গোলাকৃতি দ্বীপটি পানি এবং ভূমির কারণে সমান ভাগে বিভক্ত ছিল। তবে এত ব্যাখ্যা আর মতবাদের মধ্যে বিজ্ঞানীদের গবেষণা গুরুত্ব দিয়েছে গহ্বরের ভৌগোলিক ব্যাখ্যাকেই। তবে এই ভৌগোলিক ব্যাখ্যাও সর্বজনগ্রাহ্য নয়। অনেক বিজ্ঞানীই এর পেছনে অন্য রহস্য রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন। তাই এই রহস্যময় প্রাকৃতিক চোখ নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। 'সাহারার চোখের' রহস্য নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে।