2023 Durga Puja | 'কলা বউ ' স্নান দিয়ে মহাসপ্তমীর সূচনা! গণেশের 'বউ' নয়, দুর্গার ৯টি রূপের প্রতিনিধি নবপত্রিকা!

Saturday, October 21 2023, 6:52 am
highlightKey Highlights

২০২৩ দূর্গা পূজার গুরুত্বপূর্ণ রীতি হলো নবপত্রিকা স্নান। দুর্গার ৯টি রূপের প্রতীক এই ৯টি উদ্ভিদ। নবরাত্রি ২০২৩ এ এদিন পূজিত হচ্ছেন মা দুর্গার সপ্তম রূপ মা কালরাত্রি।


ধুমধাম করে চলছে দুর্গা পূজা উদযাপন (Durga Puja Celebration)। মহালয়ার পর থেকেই দুর্গা পূজা প্যান্ডেল (Durga Puja Pandal) হপিংয়ে বেরিয়ে পড়েছেন আম জনতা। ২০২৩ দূর্গা পূজা (2023 Durga Puja) এর আজ, ২১ সে অক্টোবর, মহাসপ্তমী। সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা বা কলাবউ স্নান করানোর রীতি প্রচলিত রয়েছে। নবপত্রিকাই কলাবউ নামে পুজোর চারদিন গণেশ ঠাকুরের পাশে থাকে। ষষ্ঠীর বোধনের পর সপ্তমীর সকালে নটি গাছের সমন্বয়ে কলা বউ এসে বসে গণেশের পাশে। তাই অনেকেরই ধারণা কলা বউ গণেশের স্ত্রী। কিন্তু তা কিন্তু নয়।

  ২০২৩ দূর্গা পূজার মহাসপ্তমীতে কলা বউ স্নান করানো হয়
  ২০২৩ দূর্গা পূজার মহাসপ্তমীতে কলা বউ স্নান করানো হয়

নবপত্রিকা এই রাজ্যের দুর্গাপুজোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর অর্থ ন-টি গাছের পাতা। । যাতে মূলত দৃশ্যমান কলাগাছ। তবে বাস্তবে নবপত্রিকায় থাকে আরও ৮টি গাছ।  কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান থাকে নবপত্রিকায়। পাতা-সহ একটি কলাগাছের সঙ্গে বাকি আটটি শিকড় ও পাতা সহ উদ্ভিদ একসঙ্গে করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতার লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর মতো আকার দেওয়া হয়। তারপর গাছ-গোছাকে গঙ্গায় স্নান করাতে যাওয়া হয়। নবপত্রিকার সঙ্গে ফলনের দেবীর বন্দনারও মিল খুঁজে পান অনেকে।

শাস্ত্র অনুসারে নবপত্রিকার ৯টি উদ্ভিদ দেবী দুর্গার ৯টি বিশেষ রূপের প্রতিনিধি রূপে পূজিত হয়। এই ৯ দেবী হলেন রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী। এই নয় দেবীকে একত্রে "নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা" নামে নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ মন্ত্রে পুজো করা হয়। দুর্গা পূজা উদযাপন (Durga Puja Celebration) এর জন্য সপ্তমীর দিন সকালে নবপত্রিকাকে কাছের কোনও নদী বা জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তাঁর পিছনে ঢাকীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান। শাস্ত্রবিধি মেনে স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে একটি নতুন লাল পাড় সাদা শাড়ি পরানো হয়। তারপর মণ্ডপে ফিরে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাঠের আসনে স্থাপন করা হয়। পুজোমণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে পুজোর মূল অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়। এরপর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা অন্য দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হয়।

 দুর্গাপূজার সপ্তমী  সকালবেলায় উঠেই প্রথম এবং প্রধান কাজটি হল নবপত্রিকার প্রতিষ্ঠা
 দুর্গাপূজার সপ্তমী সকালবেলায় উঠেই প্রথম এবং প্রধান কাজটি হল নবপত্রিকার প্রতিষ্ঠা

নবপত্রিকার পুজো প্রকৃতপক্ষে শস্যদেবীর পুজো। দুর্গাপূজার সপ্তমী  সকালবেলায় উঠেই প্রথম এবং প্রধান কাজটি হল নবপত্রিকার প্রতিষ্ঠা, যাকে লৌকিক ভাষায় বলে কলা-বউ স্নান।  'নবপত্রিকা বলতে অর্থাৎ নয়টি পাতা মানে আসলে নয়টি গাছ, নয়টি উদ্ভিদ। এই নদী-পুষ্করিনীর বাংলায় যে উদ্ভিদগুলি ভগবতী দুর্গার প্রথম অবয়ব তৈরী করে, তার মধ্যে অনেকগুলি বাংলার অতিসাধারণ মানুষের খাদ্য।' নবপত্রিকার প্রধান গাছ হল কলাগাছ, যা কি না'ফার্টিলিটি’ আর ‘ভেজিটেশনের’ প্রতীক। আবার কচু আশ্বিনের প্রথমে হয়। যা অনেক সাধারণ বাঙালির পেট ভরায়। আবার একই ধরনের আর এক আনাজ মানকচু। শরতের রোদ্দুর পেলে এটাও খুব সুস্বাদু হয়। ফলের মধ্য আছে আছে বেল ও দাড়িম্ব অর্থাৎ ডালিম। বেলপাতা শিব এবং পার্বতীর প্রিয়তম ফল। ডালিম আশ্বিন মাস থেকে অঘ্রান মাস পর্যন্ত ভাল ফলে। এছাড়া আছে জয়ন্তী এবং অশোক গাছ। এই দুটি বৃক্ষই আয়ুর্বেদের মহৌষধের কাজ করে। এছাড়াও জয়ন্তী দুর্গার আরেকটি নাম।  এর বীজ  স্ত্রীরোগ নিরাময়ের কাজে লাগে। এরও ফলনও হয় আশ্বিনের শেষে। এছাড়া আছে হলুদ। কাঁচা হলুদ থেকে পাকা হলুদ শরীরের পক্ষে যেমন ভাল, তেমন বহু পুজো উপাচারেও ব্যবহৃত। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই সময়ে ফুলে-ফলে ভরে এমন ফলদায়িনী বৃক্ষের পাতার সমন্বয়েই নবপত্রিকা। 

নবপত্রিকা বলতে অর্থাৎ নয়টি পাতা মানে আসলে নয়টি গাছ, নয়টি উদ্ভিদ
নবপত্রিকা বলতে অর্থাৎ নয়টি পাতা মানে আসলে নয়টি গাছ, নয়টি উদ্ভিদ

প্রসঙ্গত, ২০২৩ দূর্গা পূজা (2023 Durga Puja) এর নবরাত্রি ২০২৩ (Navratri 2023) এর আজ সপ্তম দিন। এই দিনে মা দুর্গার সপ্তম রূপ মা কালরাত্রির পূজা করা হয়। সর্বদা শুভ ফল প্রদানের কারণে মায়ের এই রূপকে শুভঙ্করীও বলা হয়। মা কালরাত্রি দুষ্টদের ধ্বংস করার জন্য পরিচিত, তাই তার নাম কালরাত্রি। বামন পুরাণ মতে, দেবতারা চরম দুর্দশা কাটাতে বিষ্ণুর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। এরপর দেবী পার্বতীর অংশ থেকে কাত্যায়নী রূপ তৈরি হয়। যাকে ধারণ করে জ্যোতিপর্বত। দেবী অষ্টাদশভূজা, কৃষ্ণকেশী, ত্রিনয়না ও সহস্র সূর্যের প্রভাযুক্তা। শিব তাঁকে ত্রিশূল দেন। বিষ্ণু দেন সুদর্শন চক্র। বরুণ দেন শঙ্খ, অগ্নি দেন শক্তি, বায়ু দেন ধনুক, সূর্য দেন তিরভরা তূণীর, ইন্দ্র দেন বজ্র, কুবের দেন গদা, ব্রহ্মা দেন অক্ষমালা ও কমণ্ডলু, কাল দেন খড়্গ ও ঢাল, বিশ্বকর্মা দেন কুঠার ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র। কথিত আছে, শুম্ভ, নিশুম্ভ ও রক্তবীজ বধের জন্য দেবী দুর্গাকে কালরাত্রির রূপ ধারণ করতে হয়েছিল। কালরাত্রি দেবীর শরীর অন্ধকারের মতো কালো। তাদের নিঃশ্বাস থেকে বের হয় আগুন । মায়ের চুলগুলো লম্বা ও বিক্ষিপ্ত। গলার মালা বিদ্যুতের মতো জ্বলে ওঠে। মায়ের তিনটি চোখ মহাবিশ্বের মতো বিশাল এবং গোলাকার। মায়ের চারটি হাত, যার এক হাতে খড়গ অর্থাৎ তরবারি, অন্য হাতে লোহার অস্ত্র, তৃতীয় হাতে অভয় মুদ্রা এবং চতুর্থ হাত বরামুদ্রায়। মা কালরাত্রি, মা দুর্গার সপ্তম রূপ, তিন চোখের দেবী। কথিত আছে যে নবরাত্রির সপ্তম দিনে নিয়ম অনুসারে মা কালরাত্রির আরাধনা করেন, তার সমস্ত কষ্ট দূর হয়। ফলে যারা নবরাত্রি ২০২৩ (Navratri 2023) পালন করছেন তারা আজ পুজো করছেন দুর্গার সপ্তম রূপ মা কালরাত্রিকে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File