Dubai Flood | হেলিকপ্টরে চেপে মেঘমুলুকে গিয়ে 'বৃষ্টির বীজ' ছড়িয়ে বর্ষণ করাচ্ছে দুবাই? আচমকা মরুশহরে প্রবল বৃষ্টি-বন্যা পরিস্থিতির কারণ কী?

Monday, April 22 2024, 12:20 pm
highlightKey Highlights

আচমকা বৃষ্টিতে দুবাইয়ে বন্যা পরিস্থিতি। জলের তলায় চলে গেছে শহরের ঝাঁ চকচকে শপিং মল থেকে শুরু করে হাইওয়ে। জলের তলায় চলে গেছে দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে কৃত্রিম বৃষ্টি?


সম্প্রতি দুবাইয়ের আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা দেখে অবাক গোটা বিশ্ব। আচমকাই ভারী বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দুবাইয়ে। পরিস্থিতি এমন যে, পৃথিবীর অত্যাধুনিক এই রাজধানীতে জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।  দুবাইয়ে প্রবল বৃষ্টি (heavy rain dubai) এর জেরে শহরের অধিকাংশ বড় রাস্তা, এমনকি বিমানবন্দর এখনও গোড়ালি সমান জলের তলায়। দীর্ঘ ৭৫ বছরে এতো বৃষ্টি হয়নি মরু শহরে। ফলে কার্যতই দুবাইয়ের বৃষ্টির খবর (dubai rain news) গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ দুবাইতে বৃষ্টি (rain in dubai) কীভাবে? এছাড়াও একদিনের বৃষ্টিতে দুবাইয়ে বন্যা (Dubai flood) পরিস্থিতিই বা তৈরী হলো কী করে? জানা যাচ্ছে, এই আচমকা বৃষ্টির জন্য দায়ী ‘ক্লাউড সিডিং’(cloud seeding)। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তির কারণেই বানভাসি হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর দুবাই।

দুবাইতে আচমকা বৃষ্টি-বন্যা পরিস্থিতি!

Trending Updates

সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুবাইতে বৃষ্টি (rain in dubai) হয়েছে মোট ১৪২ মিলিমিটার। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আবহাওয়া দফতরের তরফে জানা গিয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি সে দেশে দেড় বছরের গড় বৃষ্টিপাতের সমান। মরুশহর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরের শহর আল আইনে রবি এবং সোমবার ২৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আমিরশাহির পূর্ব উপকূলের শহর ফুজাইরাতে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতো বৃষ্টির কারণে জলের তলায় চলে যায় শহরের ঝাঁ চকচকে শপিং মল থেকে শুরু করে হাইওয়ে। জলের তলায় চলে যায় দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দুবাইয়ে প্রবল বৃষ্টি (heavy rain dubai) একে কারণে পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত এই বিমানবন্দরে বহু বিমানের যাত্রাপথ বদলানো হয়। আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ রাখা হবে বলে বিমানবন্দর প্রসাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়। জানা যাচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর প্রতিবেশী ওমানে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে বৃষ্টিতে। সেখানে বিপর্যয়ে ১০ জন স্কুলের ছাত্র সহ এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেক মানুষ। মরুভূমির দেশে বৃষ্টি হয়না বললেই চলে। আর সেখানেই এমন বৃষ্টি এবং দুবাইয়ের বন্যা (Dubai flood) স্বাভাবিকভাবেই ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। 

দুবাইতে হঠাৎ কেন বৃষ্টি?

আচমকা এই ভারী বর্ষণের কারণ নিয়ে নানারকম মত শোনা যাচ্ছে। ভৌগলিক অবস্থানের নিরিখে আমিরশাহি আরব উপদ্বীপের একটি দেশ। শুষ্ক আবহাওয়ার এই দেশে ভারী বর্ষণ দূরস্থান, বৃষ্টিই প্রায় ডুমুরের ফুল। তবে শীতকালে এই দেশে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়। তবে সেই বৃষ্টিপাত প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই নগন্য। এদিকে আমির-ওমরাহদের শহর দুবাইয়ে চাষবাস হয়না ঠিকই, তবে দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে জল লাগে। আর তার নিরবচ্ছিন্ন জোগান অব্যাহত রাখতেই কৃত্রিম ভাবে বর্ষা নামায় মরু শহর। দুবাইয়ে সম্প্রতি হওয়া বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতির জন্য সেই কৃত্রিম বর্ষা বা ‘ক্লাউড সিডিং’-কেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

‘ক্লাউড সিডিং’ কী?

‘ক্লাউড সিডিং’ প্রযুক্তির সাহায্যে কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরি করা যায়। এই প্রযুক্তির আসল উদ্দেশ্য হল, মরু এলাকায় জলের ঘাটতি মেটানো। এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় হেলিকপ্টারবা বিমানে করে সিলভার আয়োডাইড অথবা পটাশিয়াম আয়োডাইড বায়ুমণ্ডলে পাঠানো হয়। তারপরে কণাগুলির জলীয় বাষ্পের ঘনীভবন এবং বৃষ্টির ফোঁটা বা বরফের স্ফটিক তৈরি করতে সাহায্য করে। যা পরে মেঘ তৈরি করে বৃষ্টিপাত ঘটায়। সহজ ভাষায় বলতে হলে, দুবাইয়ের আকাশে মেঘ দেখা গেলেও, সেই মেঘ জলীয় বাষ্পের অভাবের বৃষ্টি নামাতে পারে না। এটি সেই মুশকিল আসান করতে রীতিমতো হেলিকপ্টার কিংবা অন্য আকাশযান ব্যবহার করে মেঘমুলুকে পাঠানো হয় সরকারি আধিকারিকদের। তারা মেঘের উপর ছড়িয়ে দেন সিলভার আয়োডাইডের মতো ছোট ছোট কণা, অনুকণা। এর ফলে সংলগ্ন এলাকার জলবায়ু এক জায়গায় ঘনীভূত হয় এবং মরুশহরে নেমে আসে বৃষ্টি। দুবাইয়ের ভারী বর্ষণের পরেই নেটাগরিকেরা সমাজমাধ্যমে দাবি করতে শুরু করেন যে, কৃত্রিম বৃষ্টি নামাতে গিয়েই বন্যা ঘটিয়েছে দুবাই প্রশাসন। ব্লুমবার্গ-এর একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে এই নেটাগরিকদের দাবি, রবিবার এবং সোমবার কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোয় নিযুক্ত কিছু বিমান এবং হেলিকপ্টারকেও দেখা গিয়েছে।

তবে আবহবিদদের বড় অংশই সমাজমাধ্যমের ‘গালগল্পে’ কান না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহবিদেরা দাবি করছেন, এত বিস্তৃত জায়গা জুড়ে ঝড়বৃষ্টি কখনও কৃত্রিম ভাবে করানো যায় না। এমনকি বর্ষার মেঘ তৈরিতে উপাদানের হেরফের হলেও এমনটা সম্ভব নয়। কারণ তাঁদের ব্যাখ্যা, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে বাতাসের সমস্ত জলীয় বাষ্পকে কাজে লাগানো হয়। তার পরেও এই প্রযুক্তি দিয়ে সারা বছরে সাকুল্যে ১০ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টি মেলে। তা ছাড়া আবহাওয়া দফতরের তরফে গত সপ্তাহেই উপদ্বীপ এলাকায় ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। আবু ধাবিরর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যার অধ্যাপক দিয়ানা ফ্রান্সিস এই প্রসঙ্গে জানান, ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলে কখনওই কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর চেষ্টা করা হয় না। কারণ গোটা প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ। আবহবিদদের সিংহভাগের মত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই দুবাই এবং সংলগ্ন এলাকায় খানিক অস্বাভাবিক ভাবেই এই ভারী বৃষ্টিপাত।

১৮৫০ সাল থেকে সামগ্রিক ভাবে গোটা পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে ১.১ ডিগ্রি শতাংশ। সেখানে গত ৬০ বছরে আমিরশাহির তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তা ছাড়া দুবাই একেবারে পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত। জলরাশি থেকে বিপুল পরিমাণ জলীয় বাষ্প ঢুকে পড়াতেই মরুশহরে এই বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে। অল্প সময়ের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগই বানভাসি করেছে দুবাইকে। প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার আগে দুবাই এবং সংলগ্ন অঞ্চলের আবহাওয়া সংক্রান্ত যে পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছে, তাতে একলপ্তে এত বিপুল পরিমাণ বৃষ্টির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুবাইয়ের দুর্যোগের একের পর এক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে খেলনার মত জলে ভাসছে মার্সিডিজ, ল্যাম্বরগিনির মতো দামি গাড়ি। এদিকে আবার শহরটার কোথাও সবুজের ছোঁয়া না থাকায় মাটি জল শুষে নেবে, তেমন পরিস্থিতিও নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে দুবাই প্রশাসন। তারা এ বার নতুন পরিকাঠামো নির্মাণের যে নীল নকশা তৈরি করছে, তাতে ভূগর্ভস্থ জলাধার রাখা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File