Devi Chandraghanta | তৃতীয়া-তে পূজিত হন 'দেবী চন্দ্রঘন্টা', মাথায় একফালি চাঁদ নিয়ে সিংহবাহিনী এই দেবী বিনাশ করেন অশুভের

নবরাত্রির তৃতীয় দিনে দেবী মাতার যে রূপে পুজো করা হয়, তাঁকে চন্দ্রঘণ্টা বলা হয়। তাঁকে চন্ডিকা, রণচন্ডী বা বৃকহবাহিনী নামেও ডাকা হয়। তাঁর কপালে একটি অর্ধচন্দ্র থাকে, যা দেখতে মন্দিরের ঘণ্টার মতো। “চন্দ্রঘণ্টা” নামের উৎস এখান থেকেই। দেবী চন্দ্রঘণ্টা অশুভের বিনাশকারিণী। তিনি তেজস্বরূপা। তাঁর মধ্যে পরমাশক্তি রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে করুণা, ন্যায় ও পরমার্থিক শান্তি প্রদানকারিণী শক্তি। দেবী চন্দ্রঘণ্টার আরাধনা করলে সমস্ত অশুভ শক্তির প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলেই বিশ্বাস ভক্তদের।
শাস্ত্রমতে, আশ্বিন মাসে শারদীয় নবরাত্রি (Navratri 2025) পালিত হয়। এই নয় দিন অর্থাৎ প্রথমা থেকে নবমী অবধি মা দুর্গার (Durga Puja 2025) নয়টি রূপ বা অবতারের পুজো করেন হিন্দু ধর্মবলম্বীরা। এই নয়টি রূপকে একত্রে 'নবদুর্গা' বলা হয়। মায়ের নয়টি রূপ হলো: মা শৈলপুত্রী, মা ব্রহ্মচারিণী, মা চন্দ্রঘণ্টা, মা কুষ্মাণ্ডা, মা স্কন্দমাতা, মা কাত্যায়নী, মা কালরাত্রি, মা মহাগৌরী এবং মা সিদ্ধিদাত্রী ৷

আজ তৃতীয়া। আশ্বিন এবং চৈত্র মাসের শুক্লাপক্ষের নবরাত্রির তৃতীয় দিনে দেবী চন্দ্রঘণ্টার আরাধনা করেন ভক্তরা।
রূপবর্ণনা: এই দেবীর দেহের বর্ণ সোনার মত উজ্জ্বল। দেবীর কপালে শোভা পায় একটি অর্ধচন্দ্র যা দেখতে আসলে একটি ঘণ্টার মতো। “চন্দ্রঘণ্টা” নামের উৎস এখান থেকেই। দেবীর তৃতীয় চোখ সর্বদা খোলা থাকে। তিনি দশভুজা, সিংহবাহিনী। তাঁর পরনে লালরঙের শাড়ি আর নানাবিধ অলংকার। বাম দিকের চার হাতে তিনি ত্রিশূল, গদা, তরবারি এবং কমণ্ডল ধারণ করেন এবং ডান হাতগুলিতে থাকে ধনুক , তীর , জপমালা এবং পদ্ম। দেবীর বাকি দুটি হাত ভক্তদের আশীর্বাদ করার জন্য বিভিন্ন মুদ্রায় রয়েছে। মুদ্রাগুলি হল বরদামুদ্রা(বাম হাত) এবং অভয়মুদ্রা (ডান হাত)।
দেবীর ধ্যান মন্ত্র : 'বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্। সিংহারূঢাং দশভুজাঞ্চন্দ্রঘণ্টাং য়শস্বনীম্।। কঞ্জনাভাং মণিপুরস্থিতাং তৃতীয়দুর্গাং ত্রিনেত্রাম্। খড্গগদাত্রিশূলচাপধরাং পদ্মকমণ্ডলুমালাবরাভয়করাম্। পটাম্বরপরিধানাং মৃদুহাস্যাং নানালঙ্কারভূষিতাম্। মঞ্জীর-হার-কেয়ূর-কিঙ্কিণীরত্নকুণ্ডলমণ্ডিতাম্।। প্রফুল্লবন্দনাং বিম্বাধারাং কান্তঙ্কপোলাং তুঙ্গকুচাম্। কমনীয়াং লাবণ্যাং ক্ষীণকটিং নিতম্বনীম্।।'
পৌরাণিক কাহিনী: পুরাণ মতে, মহাদেব শিব এবং শৈলপুত্রী গৌরীর বিবাহের সময় শিবের বীভৎস রূপ দেখে হিমালয় জায়া মেনকা নিজের কন্যার ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তায় অজ্ঞান হয়ে যান। গৌরী দ্রুত চন্দ্রঘন্টা রূপ ধারণ করে মহাদেবকে চন্ড রূপ ত্যাগ করে সুন্দর বেশ ধরতে অনুরোধ করেন। শিব সম্মত হন। তাঁদের বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। অন্য মতে, শিব-পার্বতীর বিবাহের দিনে অনুষ্ঠান পণ্ড করার সংকল্প নিয়ে তারকাসুর বিবাহমঞ্চে দৈত্যবাহিনী প্রেরণ করে। বিবাহকার্য নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে দেবী পার্বতী ত্রিনেত্রা দশভুজা সিংহবাহিনী রূপে আবির্ভূতা হন ও চন্দ্রসম বিশাল ও শুভ্র ঘণ্টা বাজিয়ে সকল দৈত্য বিতাড়ন করেন।

দেবী চন্দ্রঘণ্টা অশুভের বিনাশকারিণী। তিনি তেজস্বরূপা। তিনি পরমাশক্তি। করুণা, ন্যায় ও পরমার্থিক শান্তি প্রদানকারিণী শক্তি। দেবীর আরাধনা করলে সমস্ত অশুভ শক্তির প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলেই বিশ্বাস ভক্তদের। কাশীতে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। দেবী চণ্ডঘণ্টার পূজায় তাঁকে প্রসন্ন করতে পারলে সেই সাধকের মৃত্যুকালে যমঘণ্টার অর্থাৎ যমের বাহন মহিষের গলায় ঘণ্টার আওয়াজ আর ভয় দেখাতে পারে না। অর্থাৎ সে মৃত্যুভয় থেকে মুক্ত হয়।
- Related topics -
- পুজো ও উৎসব
- দুর্গাপুজো
- নবরাত্রি
- আজকের খবর
- এক নজরে