Chandrayaan 3 | চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান ৩! সর্বপ্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যাবে ইসরোর মহাকাশযান!
১৪ই জুলাই শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ হবে চন্দ্রযান ৩। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান পাঠাতে চলেছে ভারত।
আর কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা, তার পরেই চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেবে ইসরোর (ISRO) চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3)। আগামীকাল অর্থাৎ ১৪ই জুলাই, শুক্রবার দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান কেন্দ্র (Satish Dhawan Center, Sriharikota) থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে এই মহাকাশযানটি। চন্দ্রযান উৎক্ষেপণের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই গোটা দেশ, এমনকি গোটা বিশ্বর নজর চন্দ্রযান ৩ এর দিকে।
আগামীকাল বড় পরীক্ষা ইসরোর। আগেরবার চন্দ্রাভিযানে ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের। ২০১৯ সালে চাঁদের মাটিতে আছড়ে পড়েছিল চন্দ্রযান-২ (Chandrayaan-2)। সফট ল্যান্ডিংয়ের বদলে হার্ড ল্যান্ডিংয়ের জেরে অত্যাধিক গতিতে চাঁদের মাটিতেই নামতে পারেনি সেই চন্দ্রযান। তবে আগেরবারের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই ফের চন্দ্রাভিযানের জন্য প্রস্তুত ইসরো। এই চন্দ্রাভিযান যাতে সফল হয় তার জন্য আজ অর্থাৎ ১৩ই জুলাই, বৃহস্পতিবার সাফল্য কামনা করে অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি মন্দিরে (Tirupati Temple, Andhra Pradesh) পুজো দিলেন ইসরোর কর্তারা। সেখানে চন্দ্রযানের একটি ছোট সংস্করণ নিয়ে পুজো দেন তাঁরা। সব বিপদ কাটিয়ে যাতে চাঁদের মাটি ছুঁতে পারে চন্দ্রযান সেই লক্ষ্যেই এই প্রার্থনা বলে জানান ইসরোর এক কর্তা।
চন্দ্রযান ৩-এ নতুন কী থাকছে ? । What's new in Chandrayaan 3?
চন্দ্রযান ২ এর সফল না হতে পারার সব থেকে বড় কারণ হলো ল্যান্ডিংয়ের সমস্যা। তবে সেই ভুল যাতে এবারও না হয় তাই চন্দ্রযান ৩ তে সব রকম সাবধানতা নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, এবার ধাক্কা খেলেও চালু থাকবে চন্দ্রযান। সব অ্যালগোরিদম ফেল করলেও ল্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না চন্দ্রযান ৩ এর। চন্দ্রযান-৩ তে থাকছে একটি ল্যান্ডার (Labder) ও একটি রোভার (Rover)। এই মহাকাশযানটি চন্দ্রের কক্ষপথে প্রবেশের পর প্রোপালশন মডিউল (Propulsion Module) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মহাকাশে চাঁদের পৌঁছানোর কক্ষপথ যথেষ্ট দীর্ঘ ও জটিল। চন্দ্রযান-২-এ এমন টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছিল যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষীয় টান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য ধীরে ধীরে গতি বাড়াতে পারে। সেই সময় অরবিটাল কৌশলকে কাজে লাগিয়ে এবার ট্রান্স লুনার ইঞ্জেকসনসকে (Translunar Injections) কাজে লাগানো হবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি শেষ হয়েছে চন্দ্রযানকে বহনকারী লঞ্চ ভেহিকেল মার্ক-থ্রি (LVM-III) রকেটের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কাজটি।
ইসরো সূত্রে খবর, চন্দ্রযান-৩ চাঁদে পৌঁছাবে আনুমানিক ২৩ শে থেকে ২৪ শে অগাস্টের মধ্যে। মহাকাশযানটি যখন চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে প্রবেশ করবে তার গতি অনেক কমে যাবে। মহাকাশযানটি তার উচ্চতা কমিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করবে চাঁদের বৃত্তাকার কক্ষপথে। মহাকাশযানটি ইঞ্জিনগুলি লুনার অরবিট ইনসারশন (LOI)-এর মাধ্যমে গতি অনেকটাই কমিয়ে দেবে। এভাবেই চাঁদের মাধ্যকর্ষণের সঙ্গে খাপ খাওয়াবে চন্দ্রযান-৩।
চন্দ্রযান ৩ এর অভিযান কেন গুরুত্বপূর্ণ? । Why is the Mission of Chandrayaan 3 Important?
১৯৬৯ সালে প্রথম চাঁদে পা রাখে মানুষ। সেই বছর ২৪ সে জুলাই চন্দ্রযান থেকে বেরিয়ে প্রথম চাঁদে পা রেখে ইতিহাস তৈরী করেন নীল আর্মস্ট্রং (Neil Armstrong) ও এডুইন অলড্রিন (Edwin Aldrin)। এরপর থেকে শুরু হয় পর পর একাধিক দেশের চন্দ্রাভিযান। মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে চলে পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা উপগ্রহ চাঁদ নিয়ে গবেষণাও। চাঁদে থাকা উঁচু নিচু পাহাড়, গহ্বর, প্রকৃতি সব কিছু নিয়েই গবেষণা করতে থাকেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
তবে এরই মধ্যে ৯০ এর দশকের আগে নজরে আসে পৃথিবী থেকে ৩৩৮,৯০০,০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মঙ্গল (Mars) গ্রহের দিকে। শুরু হয় মঙ্গল গ্রহে যান পাঠানোর প্রচেষ্টা। তবে কয়েক বছর এই গ্রহকে নিয়ে মাতামাতি চললেও আবারও বর্তমানে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য চাঁদ। কারণ মঙ্গল গ্রহে কীভাবে কম খরচে ও নিরাপদে পৌঁছনো যায় তার পথ দেখাচ্ছে চাঁদই। মনিপাল সেন্টার ফর ন্যাচারাল সায়েন্সের (Manipal Center for Natural Science) অধ্যাপক ও পরিচালক ড. পি. শ্রীকুমার এই বিষয়ে জানান, পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ অনেক দুর্বল। পাশাপাশি চাঁদের গতিশীলতাও পৃথিবীর থেকে অনেক কম। যেহেতু চাঁদে কোনও বায়ুমণ্ডল নেই, তাই চাঁদের উদ্দেশ্যে রকেট উৎক্ষেপণের জন্য কম শক্তি ব্যয় হয়। ফলে উৎক্ষেপণও তুলনামূলক সহজ। তাই মঙ্গল গ্রহ বা অন্যান্য গ্রহের থেকেও চন্দ্র অভিযানের খরচও কম। চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করাও কোনও মহাকাশযানের পক্ষে সহজ।
এছাড়াও চাঁদের যেহেতু বায়ুমণ্ডল নেই ফলে এই ক্ষেত্রে রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি (Radio Astronomy), মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (Gravitational Waves) এবং জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা (Astrophysics) নিয়ে গবেষণা চালানোর সহজ হবে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই চন্দ্রপৃষ্ঠে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর প্রস্তাব দেওয়া রয়েছে। এই নিয়ে গবেষণার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States), রাশিয়া (Russia), চিন (China) এবং ভারত (India)। যদিও গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ লুনার অবজারভেটরি ফর কসমোলজি (GLOC) নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ এখনও শুরু হতে দেরি আছে।
আগামীকাল চাঁদের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ হতে চলা চন্দ্রযান ৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর আঁধার অঞ্চলে অবতরণ করবে। কারণ এখনও পর্যন্ত চাঁদের এই অংশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। অর্থাৎ বিশ্বে এই প্রথমবার কোনও দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণের চেষ্টা করছে। এছাড়াও এদিকের অঞ্চল বেছে নেওয়ার আরেক কারণ হলো, মূলত অন্ধকারাচ্ছন্ন চাঁদের এই অঞ্চলে বরফ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পাশাপাশি এই অঞ্চলে রয়েছে বিশাকার বহু গর্তও। ফলে চন্দ্রযান ৩ এর অভিযান সফল হলে চাঁদ ও মহাকাশ সম্পর্কে অসংখ্য তথ্য সামনে আসবে গোটা বিশ্বের কাছে। যার ফলে ইসরোর চন্দ্রাভিযানের দিকে নজর ভারতীয়দের থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বের।
- Related topics -
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- ভারত
- ইসরো
- মহাকাশ
- মহাকাশযান
- মঙ্গল গ্রহ
- চন্দ্র
- চন্দ্রাভিযান
- বিজ্ঞানী
- বিজ্ঞান
- প্রযুক্তি