অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের জীবনী, Biography of professor Arun Kumar Basak in bengali

Wednesday, July 13 2022, 10:38 am
highlightKey Highlights

অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ। পারমাণবিক মিথস্ক্রিয়ার নতুন তত্ত্ব দিয়ে তিনি বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখেছেন।  তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সম্মান্বিত ও ইমেরিটাস উপাধিসহ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের সময় তিনি সমাবর্তন বক্তাও ছিলেন।


জন্ম ও পরিবার, Birth, family and childhood

অরুণ কুমার বসাক ১৭ই অক্টোবর, ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির পাবনা শহরের রাধানগরে তাঁর জন্ম হয় ।

Trending Updates

বিশ্বখ্যাত অধ্যাপক বসাকের পিতার নাম হরিপদ বসাক এবং মাতা উষা রানী বসাক। পিতা হরিপদ বসাক পেশায় একজন বেসরকারী চাকুরীজীবী ছিলেন এবং মাতা ঊষা রানী বসাক ছিলেন একজন গৃহিণী। তাদের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ পুত্র । তাঁর শৈশব কেটেছে পাবনা শহরেই ।

পরবর্তী সময়ে ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি আবদ্ধ হন বিবাহ বন্ধনে । দাম্পত্য সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন দেবিকা বসাক-কে।

শিক্ষাজীবন, Education 

অধ্যাপক বসাক ১৯৫৭ সালে আরএম একাডেমী থেকে  ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন। স্কুল জীবন সম্পন্ন করে  তিনি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ইন্টারমিডিয়েট সায়েন্স পরীক্ষার মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। 

এরপর ১৯৬১ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বিএসসি (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।  অরুণ কুমার বসাক ১৯৬৩ সালে এম.এসসি. পরীক্ষায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং তাঁর অসাধারণ কার্যকলাপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আরইউ স্বর্ণপদক প্রদান করে।

আরও পড়ুন  :

ডা: বসাক তাঁর প্রগতিশীল চিন্তাধারার ক্ষেত্রে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন যখন বিমান বন্দরে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে নেয় যার ফলে তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য লন্ডন যেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে তাঁর পাসপোর্ট নতুন করে ইস্যু করানো হয়।

সেই বছরেই তিনি কমনওয়েলথ পোস্ট গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ লাভ করছিলেন যার সাহায্যে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে চলে যান। ১৯৭৫ সালে সেখানের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে ডা: বসাক পি এইচ ডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন, Career life 

অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক নিজের কর্মজীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় সাফল্যের সাথে প্রশংসনীয়ভাবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরে বসাক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। 

১৯৭৮ সালে, অরুণ বসাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একজন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন, কিন্তু কিছু সময় পরে ১৯৭৮ সালের শেষের দিকে তিনি রাজশাহীতে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন।  বিজ্ঞান অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জনের জন্য তিনি একটি মেধা বৃত্তি লাভ করেন এবং লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে ভর্তি হন। 

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে তিনি সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি।  ১৯৭২ সালে, তিনি কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যান।  তিনি টেনসর পোলারাইজড ডিউটরন এবং পোলারাইজড ³He বিমস নিয়ে কাজ করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রফেসর বসাক বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষণা ফেলো ছিলেন, ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সব পর্যন্ত ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো ছিলেন। 

১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও ইউএস ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) দ্বারা অর্থায়িত একটি সহযোগী গবেষণা প্রকল্পের সাথে একাধিকবার সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি কার্বনডেলে এর (SIUC) ভিজিটিং রিসার্চ প্রফেসর হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ডা: বসাক ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালমনাই এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে বিশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন।

আরও পড়ুন : 


১৯৯০-১৯৯৪ সালে অধ্যাপক বসাক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (SUST) বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।  তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসাবে পদার্থবিদ্যা বিভাগ গঠনে সহায়ক ছিলেন এবং ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদে প্রথম ডিন হিসেবে নিয়োজিত হন। এছাড়াও কম্পিউটার সেন্টারের প্রথম পরিচালক হিসেবেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। 

তাছাড়াও তিনি RU-এ কম্পিউটার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কম্পিউটার সচেতনতা জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে উল্লেখ্য ভূমিকা  পালন করেছিলেন। ডাঃ বসাক ১৯৯৯-২০০৭ সালে US NSF দ্বারা অর্থায়নের একটি সহযোগী প্রকল্পে বাংলাদেশের প্রধান তদন্তকারী ছিলেন। 

১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল অবধি প্রফেসর বসাক ইতালির ট্রিয়েস্টে আবদুস সালাম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সের একজন সহযোগী ছিলেন, পরবর্তী সময়ে সাল ২০০০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত সিনিয়র সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির সদস্য।

পুরস্কার, Awards and recognition 

পেনিনসুলা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট কর্তৃক প্রদত্ত অধ্যাপক বসাক পুরস্কার এবং অধ্যাপক বসাক উপবৃত্তি ২০০৭ সাল থেকে রাবিতে চালু করা হয়েছে। অধ্যাপক বসাকের নামে প্রতিবছরই চারজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি এবং দুইজন কৃতি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি হিসেবে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। ডঃ বসাককে ২০০৯ সালে রাবি কর্তৃক এক মাত্র ইমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে গৌরব অর্জন করেছিলেন।

এছাড়াও তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্জাক-শামসুন লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১৬ পেয়েছিলেন। তাছাড়াও  তিনি জাতি গঠনে আজীবন অবদানের জন্য ২০১৬ সালে ডেইলি স্টার সিলভার জুবিলি পুরস্কারে সম্মানিত হন।

গবেষণাপত্র প্রকাশনা, Publication of research papers 

রেফারেড হোম জার্নালে ১৪ টি প্রকাশনা ছাড়াও;  আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৩০ টি নিবন্ধ সহ প্রায় ৪০ টি প্রবন্ধ রচনা করেন, ড. বসাক বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত ১০০ টি গবেষণাপত্র লিখেছেন যেমন ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার, ইউরোফিজিক্স লেটার, ফিজিক্স লেটারস এ অ্যান্ড বি, ফিজিক্যাল রিভিউ এ অ্যান্ড সি, ইউরোপীয় ফিজিক্যাল জার্নালস এ এবং  D, International Mass Spectroscopy, International J. of Quantum Chemistry, Letter al Nuovo Cimento, Nuovo Cimento, J. Physics Communication (IOP), Vacuum (Elsevier), Molecular Physics (Tylor & Francis) সহ কোয়ান্টাম রসায়নের অগ্রগতিতে ৩ টি বইয়ের অধ্যায়  (এলসেভিয়ার)পরমাণু এবং পারমাণবিক পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে।


দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অংশের জার্নালে তাঁর প্রায় ১৩৯ টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, এগুলোর মধ্যে ৮৬ টি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক জার্নালে এবং ২৫ টি দেশীয় জার্নালে প্রকাশ পায়। বাকি প্রবন্ধ সমূহ বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক কনফারেন্সে প্রকাশ করা হয়। ডা: অরুণ কুমার বসাক বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বহুবার বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী কলাম লিখে তা প্রকাশ করেছেন যা আজও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরনে সহায়ক ।

আরও পড়ুন  :

স্নাতক বিষয় সম্বন্ধীয় তাঁর লেখা  ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞান নামে একটি বই ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছিল।

উপসংহার, Conclusion  

প্রাজ্ঞজন অরুণ কুমার বসাক বাংলাদেশের গর্ব। তাঁর অবদানে বাংলার বিজ্ঞান বিভাগের অনেক উন্নতি ঘটেছে। প্রখ্যাত এই বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত তত্ত্বে  বিশ্বের সম্মুখে বাংলাদেশ এক নতুন মাত্রায় খ্যাতি লাভ করেছিল। পদার্থ বিজ্ঞানের উন্নতিসাধনে তাঁর কার্যকলাপ তুলনার অতীত। আগামী প্রজন্মও বিজ্ঞানী অরুন কুমার বসাকের অবদান থেকে অনেক শিক্ষণীয় জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হবে।

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

অরুণ কুমার বসাক কে ?

অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ।

অধ্যাপক বসাক কবে জন্মগ্রহণ করেন?

১৭ই অক্টোবর, ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

অধ্যাপক বসাক কর্মজীবনে কি কি পুরস্কার পেয়েছেন?

আজীবন প্রফেসর ইমেরিটাস, ২০০৯ সালে। -লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১৬।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File