Basanti Puja | বসন্ত মহামারীর কবল থেকে বাঁচতে বাসন্তী পুজোর আরাধনা শুরু করেন নদীয়াড়ার গ্রামবাসীরা! আজও পুজোর চারদিন গোটা গ্রামে নিষিদ্ধ আমিষ খাবার!
চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে হয় বাসন্তী পুজো। মনে করা হয়, চৈত্র মাসের বাসন্তী পুজোই আসল দুর্গাপুজো। বিশ্বাস করা হয়, বাসন্তীপুজোর সময়কালের মধ্যে অন্নপূর্ণা পুজো করলে অন্নের অভাব হয়না।
আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠে গোটা বঙ্গ-দেশ। সাধারণত এই দুর্গাপুজোকেই মূল ভাবা হয়। তবে আদি দুর্গাপুজো কিন্তু হয় চৈত্র মাসে। যা পরিচিত বাসন্তী পূজা (Basanti Puja) নামে। চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে হয় বাসন্তী পুজো (Basanti Pujo)। মনে করা হয়, চৈত্র মাসের বাসন্তী পুজোই আসল দুর্গাপুজো। বিশ্বাস করা হয়, বাসন্তীপুজোর সময়কালের মধ্যে অন্নপূর্ণা পুজো করলে অন্নের অভাব হয়না। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে এই পুজো করা হলেও পুরুলিয়া (Puruliya) এর নদীয়াড়া গ্রামের বাসন্তী পুজো বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এখানের বাসন্তী পুজো দেখতে ভিন জেলা এবং ভিন রাজ্য থেকে আসা পুণ্যার্থীদের ঠাসা ভিড় হয় এই নদীয়াড়া গ্রামে। এমনকি পুজোর চারদিন গোটা গ্রামেই আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ থাকে।
বাসন্তী পূজা ২০২৪ । Basanti Puja 2024 :
সংসারে আর্থিক অনটন থেকে মুক্তি পেতে হলে এই অন্নপূর্ণা পুজো করে থাকেন অনেকে। দেবী অন্নপূর্ণা হলেন দ্বিভূজা। তাঁর মস্তকে রয়েছে নবচন্দ্র। একপাশে শ্রী অন্যপাশে ভূমি। বাসন্তীপুজোর অষ্টমী তিথিতে হয় মা অন্নপূর্ণার পুজো। এদিকে, বাসন্তী পূজা ২০২৪ (Basanti Puja 2024) এর দিনক্ষণ তিথি নিয়ে রয়েছে বহু কৌতূহল। চলতি বছরে দেবীর আগমন ঘোটকে। বাসন্তীপুজোর ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি- বাসন্তীপুজোর মহাষষ্ঠী পড়েছে ১৪ই এপ্রিল দুপুর ৩.৪৬ মিনিট থেকে। সপ্তমী তিথি পড়ছে ১৫ এপ্রিল। তিথি শেষ হবে সেদিন দুপুর ৩.৫২ মিনিটে। বাসন্তীপুজোর অষ্টমী তিথি পড়ছে মঙ্গলবার ১৬ই এপ্রিল। এদিন বিকেল ৪.২৮ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। ১৭ই এপ্রিল মহানবমী। সেদিন পড়ছে রামনবমী। তিথি শেষ হবে বিকেল ৫.৩৮ মিনিটে। দশমী তিথি ১৮ এপ্রিল বিকেল ৫.৩৮ মিনিটে শেষ হবে। উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল পড়ছে রামনবমী। এই নবমীর তিথি শুরু হবে ১৬ এপ্রিল দুপুর ১ টা ২৩ মিনিট থেকে। তিথি শেষ হবে ১৭ এপ্রিল দুপুর ৩ টে ১৪ মিনিট থেকে।
কীভাবে শুরু হলো বাসন্তী পূজা? । How did Basanti Puja Start?
দেবী দুর্গার প্রথম পূজারী হিসাবে চন্ডিতে রাজা সুরথের নাম উল্লেখ রয়েছে। যোদ্ধা হিসাবে রাজা সুরথ ছিলেন খুব দক্ষ। কোন যুদ্ধে নাকি তিনি কখনও হেরে যাননি। তবে একদিন প্রতিবেশী রাজ্য তাকে আক্রমণ করলে তিনি পরাজিত হন, এই সুযোগে রাজার সভাসদরা লুঠপাঠ চালায়। নিজের কাছের লোকেদের এমন আচারনে তিনি অবাক হয়ে যান। এরপর রাজা সুরথ ঘুরতে ঘুরতে ঋষি মেধসের আশ্রমে পৌঁছান। ঋষি তাকে সেখানেই থাকতে বলেন। কিন্তু রাজা মনের শান্তি পান না। এর মধ্যে একদিন তার সঙ্গে সমাধি বলে একজনের দেখা হয়। তিনি জানতে পারেন সমাধিকে তার স্ত্রী ও ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, তবুও তিনি বউ ছেলের ভালো-মন্দ এখনও ভেবে চলেছেন। এই ঘটনায় দুজনেই বিস্মিত হন। কারণ যাদের জন্যে তারা আজ সব হারিয়েছে, এখনও সমাধি তাদের ভালো চেয়ে যাচ্ছেন। ঋষিকে এ কথা জানান রাজা সুরথ। তার উত্তরে ঋষি বলেন যে এসবই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনী বর্ণনা করেন। ঋষির পরামর্শ মতই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করে। পরে মহামায়ার আশীর্বাদ পেতেই রাজা বসন্তকালের শুক্লপক্ষে দেবী দুর্গার পুজো শুরু করেন। মানা হয়, সেই সময় থেকে শুরু হয়েছিল বাসন্তী পুজো (Basanti Pujo)।
নদীয়াড়ার বাসন্তী পুজো । Basanti Puja of Nadiara :
দেড় শতাধিক বছর আগে বসন্ত মহামারীর কবল থেকে বাঁচতে বাসন্তী পুজোর আরাধনা শুরু করেন পুরুলিয়া (Puruliya) এর গ্রাম নদীয়াড়ার গ্রামবাসীরা। সেই থেকে আজও পুরনো আচার বিধি মেনে ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে বাসন্তী মায়ের পুজো করে আসছেন নদীয়াড়া গ্রামের মানুষজন। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত উৎসবের চারদিন নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাসন্তী পুজো দেখতে ভিন জেলা এবং ভিন রাজ্য থেকে আসা পুণ্যার্থীদের ঠাসা ভিড় রয়েছে এই নদীয়াড়া গ্রামে। পুজোর চারদিন গ্রামে আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ থাকে।
কথিত আছে, দেড় শতাধিক বছর আগে বসন্ত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের নদীয়াড়া গ্রাম-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে। আতঙ্কে গ্রামছাড়া হতে শুরু করেছিলেন গ্রামবাসীরা। গ্রামে ঘটতে থাকে নানান অঘটন। সেই সময় বাসন্তী মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এবং এক সন্ন্যাসীর পরামর্শে নদীয়াড়া গ্রামের মাঝ বরাবর বাসন্তী পুজোর আরাধনা শুরু করেন গ্রামবাসীরা। এরপরই মায়ের আরাধনার পর রোগমুক্ত হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। গ্রামছাড়া মানুষেরাও ধীরে ধীরে গ্রামে ফিরে আসেন। আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা। সেই সময় থেকে এখনও পুরনো আচার বিধি মেনে বাসন্তী পুজোর আরাধনা করে আসছেন গ্রামবাসীরা।
পুজোর চারদিনে জনপ্লাবন দেখা যায় গ্রামে। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, শুদ্ধ মনে বাসন্তী মায়ের আরাধনা করলে ইচ্ছা পূরণ হয় মানুষের। এছাড়াও বাসন্তী পুজোর চারদিন অর্থাৎ সপ্তমী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত গ্রামীন যাত্রাপালা, সাংস্কৃতিক এবং ভক্তিমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে গ্রামে। পুজোর চারদিন গ্রামে কোনওরকম আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়াও নিষিদ্ধ থাকে। প্রতি বছরের মতো এবছরও ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মায়ের আরাধনায় মেতে উঠেছেন নদীয়াড়া গ্রাম-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
- Related topics -
- অন্যান্য
- লাইফস্টাইল
- পুজো ও উৎসব
- দুর্গাপুজো