স্বাস্থ্য

অ্যালজাইমার রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিরোধ করার উপায়, A study of Alzheimer's disease in details in bengali

অ্যালজাইমার রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিরোধ করার উপায়, A study of Alzheimer's disease in details in bengali
Key Highlights

অ্যালজাইমার হল মস্তিষ্কের এমন একটি রোগ যা আমাদের বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দেয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথম দিকে সামান্য বিভ্রান্ত হয় এবং অনেক ব্যাপার ভুলে যেতে শুরু করে দেয়, এমনকি ধীরে ধীরে সেই রোগীর চরিত্রের আমূল পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে এবং অনেক সময় আপনজনদেরও চিনতে পারে না।

অ্যালজাইমার রোগ কি ? Alzheimer's disease at a glimpse

ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার ক্ষেত্রে সব থেকে প্রচলিত কারণ হল এই অ্যালজাইমার রোগটি। মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়, এর ফলেই স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে শুরু করে এবং একইসাথে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও প্রভাবিত হয়।

অ্যালজাইমার রোগের লক্ষণগুলো কী? Symptoms of Alzheimer's disease

কোনো ব্যক্তির অ্যালজাইমার রোগ হয়েছে কি না তা বোঝতে হলে এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন।  অ্যালজাইমার রোগের বিভিন্ন লক্ষণ হল :

● মানসিক অবসাদ অনুভব করা ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ভুলে যাওয়া।
● ছোটো ছোটো কারণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করা, বিভিন্ন কারণে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
● বেশিরভাগ সময় খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখা দেওয়া।
● আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে উদাসীন বোধ করা।
● কোন ব্যক্তির পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আচরণ পরিবর্তন হয়ে পড়াও এই রোগের একটি লক্ষণ হতে পারে
● এসব ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক দুর্বলতা তথা পুষ্টিহীনতার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য লক্ষণসমূহ থাকে।

Also read :

অ্যালজাইমার রোগের কারণ কি কি ? Causes of Alzheimer's disease

আলজাইমার রোগের সঠিক কারণ সংক্রান্ত কোনো তথ্য এখনও জানা যায় নি। তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান অনুসারে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তরে মস্তিষ্কের প্রোটিনগুলি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয় যা তাদের মস্তিষ্কের কোষগুলির কাজকে ব্যাহত করে। এইভাবে ধীরে ধীরে কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়, যার ফলে একে অপরের সাথে সংযোগ হারায়। অবশেষে এই কোষগুলি মারা যায়।

অ্যালজাইমার রোগ কেন হয়! এ সম্পর্কে জেনে নিন –

● অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এই আলজাইমার রোগটি জেনেটিক বা পারিবারিক কারণে হয়ে থাকে।
● লাইফস্টাইল অথবা পরিবেশগত কোন কারণেও অ্যালজাইমার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
● উচ্চ রক্তচাপ সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে ও বয়স বৃদ্ধি হলে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
● কোনো ভাবে মাথায় গুরুতর আঘাত লাগার কারণেও এই রোগ হতে পারে।
● গুরুতর রকমের মানসিক বিস্ময়ের কোনো কারণ ঘটলে ও রক্তে উচ্চ কলেস্টেরল থাকার কারণেও এই রোগ হতে পারে।
● কোনো ব্যক্তির মাত্রাতিরিক্ত ওজন থাকার কারণেও অ্যালজাইমার রোগ দেখা দিতে পারে।
● অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করার কারণেও হতে পারে।
● নিত্যদিন ধূমপান করার কারণে এবং ঘুম কম হওয়ায় ফলেও অ্যালজাইমার রোগ হতে পারে।

অ্যালজাইমার রোগ প্রতিরোধে কি কি করা উচিত, How to combat Alzheimer's disease


● ফ্যাট জাতীয় খাবারগুলো থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকতে হবে অর্থাৎ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
● নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্যায়াম ছাড়াও প্রতিদিন ভোরে আধ ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।

● মানসিকভাবে নিজেকে সংযত না রেখে বরং বিভিন্নভাবে নিজের মনোভাব ব্যক্ত করা উচিত, বন্ধু বান্ধবদের সাথে আলাপ আলোচনায় অংশ নেওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিজেকে সক্রিয় রাখতে হবে। এক কথায় বলতে গেলে কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রা এই রোগের সম্ভাবনা হ্রাস করে দিতে পারে।

Also read :

● কাছের মানুষজনের অর্থাৎ পছন্দসই ব্যক্তিদের সাহচর্য জরুরি, তাদের উষ্ণ সহৃদয় ব্যবহার ও ভালোবাসা পাওয়ার ফলে বৃদ্ধ বয়সে অ্যালজাইমার রোগ, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি সমস্যা হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে তাদের কাছের মানুষজন যদি একটু বেশি সময় কাটায়, ধৈর্য সরকারে তাদের যেকোন সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে শুনে বোঝার চেষ্টা করলে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন, এর প্রভাবে নিজের জীবনকে নতুন করে উপভােগ করার মানে খুঁজে পাবেন।

● আমাদের ব্রেনের বা মস্তিষ্কের এনার্জি ফুড হচ্ছে ফ্যাটি অ্যাসিড। যত ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, তাদের মধ্যে ওমেগা থ্রি নামক ফ্যাটি অ্যাসিডই হচ্ছে মানব মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় উপাদান। বিশেষ করে স্মৃতি শক্তির কার্যকারিতা সঠিক ও সক্রিয় রাখার জন্য এই উপাদান খুবই গুরত্বপূর্ণ। রুই, কাতলা প্রভৃতি পোনা মাছ এবং সার্ডিন বা পমফ্রেট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক নোনা মাছগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বর্তমান, যা অ্যালজাইমার ডিমেনশিয়া রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।

● স্মৃতিভ্রংশতা প্রতিরোধ করার জন্য অ্যান্টি – অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারগুলো খুবই উপকারী বলে বিশেষজ্ঞদের মত। কারণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে এবং স্মৃতি শক্তির কার্যক্রম চাঙ্গা রাখে। এছাড়াও আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলোকে ধবংস করে দেয় এবং দেহের নিউরোট্রান্সমিটার সিস্টেমটিকে শক্তিশালী থাকতে সহায়তা করে। পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি, ফুলকপি, টমেটো, স্ট্রবেরি, আমলকি, রসুন, বীন, খেজুর, কিসমিস প্রভৃতিতে খুবই উন্নত মানের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বর্তমান, যা খাওয়া ডিমেনশিয়া রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

● মাছ, মাছের তেল, কমলালেবু, ব্লু-বেরি , মিষ্টি আলু, গাজর, আপেল , মধু, সানফ্লাওয়ার সীড ইত্যাদি খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত, এতে অ্যালজাইমারস রোগীদের স্মৃতি সংক্রান্ত সমস্যা কম হয়ে যাবে।

● আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার, যেমন মুরগীর মাংস, ডিমের কুসুম, বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক সবজি- ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন রয়েছে৷ অ্যালজাইমার রোগ প্রতিরোধের জন্য এই ধরনের খাবার খুব জরুরী৷

Also read :

অ্যালজাইমার রোগ হলে কী কী না খাওয়া উচিত! Foods to avoid during Alzheimer's disease

যে কোন রকমের জাঙ্ক ফুড, প্রসেসিং করা খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন৷ এই ধরনের খাবারের মধ্যে যে টক্সিনগুলো থাকে, তা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর৷ এসব ছাড়াও ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাসও ত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরী৷ তবে কিছুটা পরিমিত পরিমাণে চা এবং কফি খাওয়া যেতে পারে৷

উপসংহার, Conclusion

নিত্যদিনের ব্যস্ত জীবনে নানাবিধ চাপ সামলাতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ধকল পড়ে আমাদের মস্তিষ্কের উপরেই, যার ফলে আসে স্ট্রেস৷ শুধু তাই নয়, এই স্ট্রেসের কারণে আমাদের মস্তিষ্ক বা ব্রেনও যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পরবর্তীতে অ্যালজাইমারের মতো এক স্মৃতি বিলোপকারী রোগের লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যার প্রতিরোধে আমাদের শুধু দরকার একটু সচেতনতা ও কিছু নিয়মানুবর্তীতা৷ আমাদের ভারতবর্ষে প্রতিবছর ডিমেনশিয়ার শিকার হন গড়ে ৪ লক্ষের চেয়ে বেশী মানুষ। তাই একে একটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হয়।