Behala Accident | জন্মদিনে প্রিন্সেপঘাটে যাওয়া হলো না সৌরনীলের! বেহালায় স্কুলের সামনেই লরির ধাক্কায় মৃত্যু দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রের! 'আর হবে না' বক্তব্য সিপির!

Friday, August 4 2023, 10:15 am
highlightKey Highlights

শুক্রবার বেহালায় সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে সিগন্যাল ভেঙে লরি ধাক্কা মারে ৭ বছরের ছাত্র ও তার বাবাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশুর। ট্রাফিক পুলসীহের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মৃতদেহ ঘিরে পুলিশের ভ্যান, বাইক জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট তলব নবান্নের।


কয়েক দিন বাদেই ছিল জন্মদিন। বাবা মায়ের হাত ধরে প্রিন্সেপ ঘাট (Princep Ghat) যাওয়ার ইচ্ছা ছিল ৭ বছরের ছোট্ট  সৌরনীলের। কিন্তু নীল আকাশ ছোঁয়া সব ইচ্ছা, আশা, স্বপ্ন পূরণ করার আগেই চলে যেতে হলো দ্বিতীয় শ্রেণীর এই খুদেকে। শুক্রবার সাত সকালে বেহালার (Behala) ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বড়িশা হাইস্কুলের (Barisha High School) দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র সৌরনীল সরকারের। স্কুলের সামনেই রাস্তা পেরোনোর সময় মাটি বোঝাই ট্রাক ধাক্কা মারে সৌরনীল ও তার বাবাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশুর। বাবা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি হাসপাতালে। মা এখনও ছেলের রক্ত মাখা স্কুল ব্যাগ জড়িয়ে কেঁদেই চলেছেন, কিছুতেই মানতে পারছেন না আর তার কাছে ফিরবে না সৌরনীল। 

   বেহালার ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র সৌরনীল সরকারের
   বেহালার ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র সৌরনীল সরকারের

এদিন সকাল সাড়ে ৬ টা নাগাদ ছেলেকে স্কুলে পৌঁছনোর জন্য সাইকেলে করে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন সৌরনীল এবং তার বাবা সরোজ কুমার। কিন্তু সেসময় একটি মাটি বোঝাই ট্রাক সিগন্যাল ভেঙে বেপরোয়া গতিতে যাওয়ার সময় ধাক্কা মারে তাদের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই খুদে পড়ুয়ার। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তার বাবাকে। পরে তাঁকে এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ার সেন্টারের নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এই ঘটনায় বড়সড়ো অভিযোগ উঠেছে তাওফিক পুলিশের বিরুদ্ধে। এমনকি দুর্ঘটনার পর ছোট্ট সৌরনীলের দেহ আটকে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান ক্ষুব্ধ জনতা এবং পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। 

দেহ আটকে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান ক্ষুব্ধ জনতা এবং পড়ুয়াদের অভিভাবকরা
দেহ আটকে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান ক্ষুব্ধ জনতা এবং পড়ুয়াদের অভিভাবকরা

বিক্ষুদ্ধ জনতার অভিযোগ, দুর্ঘটনার পর লরিচালককে ধরা গেলেও পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। পাশপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও এনেছেন স্থানীয়রা। এক অভিভাবকের অভিযোগ, স্কুলের সামনে কোনও ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে না। দূরে যারা বসে থাকে, তারা হাতে সারাক্ষণ ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করে। কোথায় কী হচ্ছে তার কোনও খেয়াল থাকে না। এছাড়াও বিক্ষভকারীদের দাবি, বেহালার চৌরাস্তার কাছে বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। ফলে সকাল থেকেই ওই রাস্তায় পড়়ুয়া এবং অভিভাবকদের ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু পুলিশ যান নিয়ন্ত্রণের বদলে বড় বড় ট্রাক-লরির থেকে ঘুষ নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। এমনকি বেশ কিছু স্থানীয়দের দাবি, ওই রাস্তায় নিয়মিত টাকা তোলে পুলিশ। তাই পুলিশের হাত থেকে রেহাই পেতে ওই রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে যায় লরিগুলি। সেই গতির কারণেই এদিনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয়েছে সৌরনীলকে।

আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের ভ্যানে এবং একটি বাইকে
আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের ভ্যানে এবং একটি বাইকে

ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ এনে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হয়ে ওঠে বেহালা চৌরাস্তা।  মৃতদেহ রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের ভ্যানে এবং একটি বাইকে। বেশ কয়েকটি সরকারি বাসও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। স্থানীয়দের বিক্ষোভে এদিন সকালে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ডায়মন্ড হারবার রোড (Diamond Harbor Road)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় বিশাল পুলিশবাহিনী। আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল বাহিনীও। এমনকি বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের তরফে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয় বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে উন্মত্ত জনতা, যাতে আহত হয়েছেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন স্থানীয়ও। অভিযোগ, স্থানীয় এক মহিলার মুখে কাঁদানে গ্যাসের সেল এসে লাগায় গভীর ক্ষত হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের তরফে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয় 
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের তরফে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয় 

তবে দুর্ঘটনার ঘণ্টা দুয়েক পর শিশুটির মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের যে ভ্যান এবং বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, দমকল এসে তা নেভানোর কাজ শুরু করে। অবরোধ তুলে যান চলাচল স্বাভাবিক করার কাজে নামে পুলিশ। পাশাপাশি সকাল ১০টা নাগাদ কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বাবলাতলা (Kona Expressway, Bablatala) থেকে ওই ঘাতক লরির চালককে গ্রেফতার করে হাওড়া ট্র্যাফিক পুলিশ (Howrah traffic police)। পরে তাঁকে তুলে দেওয়া হয় কলকাতা পুলিশের হাতে।

  কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বাবলাতলা  থেকে ওই ঘাতক লরির চালককে গ্রেফতার করে হাওড়া ট্র্যাফিক পুলিশ  
  কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বাবলাতলা  থেকে ওই ঘাতক লরির চালককে গ্রেফতার করে হাওড়া ট্র্যাফিক পুলিশ  

অন্যদিকে দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার পুলিশ কমিশনার  বিনীত গোয়েল (Kolkata Police Commissioner Vineet Goel)। সেখানে এসে তিনি বলেন,যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমনটা নয় যে ওখানে পুলিশ ছিল না। কিন্তু কেন এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, তা-ও নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।এরকম ঘটনা আর হবে না । অন্যদিকে, এই দুর্ঘটনা ও অশান্তির ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। ইতিমধ্যেই তিনি মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানা গিয়েছে। পাশাপাশি বেহালার এই দুর্ঘটনা নিয়ে  লালবাজারের (Lalbazar) কাছে রিপোর্ট তলব করেছে নবান্ন (Nabanna)।

দুর্ঘটনা ও অশান্তির ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
দুর্ঘটনা ও অশান্তির ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তবে 'এরকম ঘটনা আর হবে না' বললেও যে ফিরবে না খুদে সৌরনীল। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রকে হারিয়ে এদিন আকাশ ভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েন বড়িশা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, তার একটি ছেলেকে এই ভাবে হারাতে হবে তা অবিশাস্য। পুলিশ যদি সচেতন হত, তা হলে এই ঘটনা ঘটত না। তিনি জানান, এর আগে বহুবার পুলিশকে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল স্কুলের সামনে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। ফলত এদিনের দুর্ঘটনায় পুরোপুরি পুলিশকে দায় করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। 

এদিনের দুর্ঘটনায় পুরোপুরি পুলিশকে দায় করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক
এদিনের দুর্ঘটনায় পুরোপুরি পুলিশকে দায় করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক

রোজকার মতো এদিনও মাকে হাত নাড়তে নাড়তে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলো সৌরনীল। বাবা-মা মিলে ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে ২৫শে অগাস্ট, তার জন্মদিনে ঘুরতে যাওয়ার জন্য কত ভাবনা চিন্তা করেছিলেন। ওই ছোট্ট হৃদয়ে একগুচ্ছ আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলো সৌরনীলও। তবে জন্মদিনের কেক কাটা, ঘুরতে যাওয়া অপূর্ণই রয়ে গেলো। বাবা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে, মা ছেলের ব্যাগ জড়িয়ে বকে চলেছেন প্রলাপ। আর ছোট্ট সৌরনীলের দেহ পরে বিদ্যাসাগরের হাসপাতালে মর্গে। আর কত সৌরনীলকে হারাবে তার পরিবার? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File