R Praggnanandhaa | 'হার কর জিতনে ওয়ালে কো..'! দাবা বিশ্বকাপে না জিতেও জয়ী প্রজ্ঞানন্দ!

Friday, August 25 2023, 7:53 am
highlightKey Highlights

আজারবাইজানের দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে পরাজিত ১৮ বছরের তরুণ দাবাড়ু রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। চ্যাম্পিয়নশিপ না জিতলেও গোটা দেশের মন জয় করেছেন প্রজ্ঞা। গড়েছেন ইতিহাসও।


হয়তো দাবা বিশ্বকাপ জিততে পারেননি, হয়েছেন রানার আপ। কিন্তু জয় করেছেন ১৪০ কোটি দেশবাসীর হৃদয়, সম্মান। ২৪সে অগাস্ট আজারবাইজানের বাকুতে (Baku, Azerbaijan) দাবা বিশ্বকাপে (FIDE World Chess Championship)  চৌষট্টি খোপের জগতের কিংবদন্তি ম্যাগনাস কার্লসেন (Magnus Carlsen)জয় লাভ করেন। দাবা বিশ্বকাপে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ (Rameshbabu Praggnanandhaa)।

   দাবা বিশ্বকাপে চৌষট্টি খোপের জগতের কিংবদন্তি ম্যাগনাস কার্লসেন জয় লাভ করেন
   দাবা বিশ্বকাপে চৌষট্টি খোপের জগতের কিংবদন্তি ম্যাগনাস কার্লসেন জয় লাভ করেন

গত তিনদিন ধরে দাবা ফাইনালের ফয়সালা হল রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে। দুটি ক্লাসিকাল রাউন্ড ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারেও চলে টানটান লড়াই।  শেষমেশ জয়ী হন ম্যাগনাস কার্লসেন। বৃহস্পতিবার ফাইনালের প্রথম টাইব্রেক জিতে যান ম্যাগনাস কার্লসেন। ৪৭ মুভের পর দারুণ ফিনিশিংয়ে প্রথম টাইব্রেকে জিতে ১-০তে লিড নেন নরওয়ের কিংবদন্তি। ফলে প্রজ্ঞানন্দের কাছে ডু অর ডাই পরিস্থিতি দাঁড়ায়।

 দাবা বিশ্বকাপে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ
 দাবা বিশ্বকাপে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ

 এছাড়াও মাঝে একটি চাল দিতে গিয়ে সাড়ে ৬ মিনিট সময় নিয়ে নেন প্রজ্ঞানন্দ। সেখানে কিছুটা পিছিয়ে পড়েন প্রজ্ঞানন্দ। প্রজ্ঞার সময় কমতে থাকায় খেলায় ভুল করতে শুরু করেন তিনি। এতে তাঁর রাজা অরক্ষিত হয়ে যায়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই বাজিমাত করেন কার্লসেন। কারণ একটা পরিস্থিতিতে প্রজ্ঞার সময় ১০ সেকেন্ডের নীচে নেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে হার মানা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না ১৮ বছরের দাবাড়ুর। প্রজ্ঞাকে হারিয়ে দিয়ে ফের দাবা বিশ্বকাপ জয় করেন পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস। আর রানার আপ হন ১৮ বছরের উঠতি প্রতিভাবান দাবাড়ু প্রজ্ঞানন্দ।

একটি চাল দিতে গিয়ে সাড়ে ৬ মিনিট সময় নিয়ে নেন প্রজ্ঞানন্দ
একটি চাল দিতে গিয়ে সাড়ে ৬ মিনিট সময় নিয়ে নেন প্রজ্ঞানন্দ

তবে রানার আপ হয়েও ইতিহাস গড়েছেন প্রজ্ঞানন্দ। এর আগে ২০০০ ও ২০০২ সালে দাবা বিশ্বকাপ জিতেছিলেন বিশ্বনাথন আনন্দ (Viswanathan Anand)। তাঁর পথ অনুসরণ করেই ভারতীয় দ্বিতীয় দাবাড়ু হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে যেদিন পা রাখেন রমেশবাবু, সেদিনই গড়েন ইতিহাস। ২১ বছর পর কোনও ভারতীয় দাবা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। 

ভারতীয় দ্বিতীয় দাবাড়ু হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে যেদিন পা রাখেন, সেদিনই ইতিহাস গড়েন  রমেশবাবু
ভারতীয় দ্বিতীয় দাবাড়ু হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে যেদিন পা রাখেন, সেদিনই ইতিহাস গড়েন রমেশবাবু

দাবা বিশ্বকাপে 'এক নম্বর দাবাড়ু' কার্লসেনের কাছে হারলেও জিতেছেন প্রজ্ঞানন্দ। হয়তো দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ নয়, জিতেছেন গোটা দেশবাসীর সম্মান, হৃদয়, বিশ্বাস। বুদ্ধির এই লড়াই দেখার পরে অনেকেই প্রজ্ঞাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ফাইনালে হার মানলেও তিনিই ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়ন। উল্লেখ্য, দাবার জগতে বরাবরই নজর কেড়ে এসেছেন প্রজ্ঞানন্দ। তবে সম্প্রতি দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার পরই গোটা দেশ তার সাফল্যের পাশাপাশি মুগ্ধ প্রজ্ঞা এবং তার 'ছায়াসঙ্গী' মা নাগলক্ষ্মীর জন্য।

গোটা দেশ তার সাফল্যের পাশাপাশি মুগ্ধ প্রজ্ঞা এবং তার 'ছায়াসঙ্গী' মা নাগলক্ষ্মীর জন্য
গোটা দেশ তার সাফল্যের পাশাপাশি মুগ্ধ প্রজ্ঞা এবং তার 'ছায়াসঙ্গী' মা নাগলক্ষ্মীর জন্য

 এই ক'দিন প্রজ্ঞানন্দের সঙ্গে নজর কেড়েছেন তাঁর মা নাগালক্ষ্মীও। আটপৌড়ে এই তামিল গৃহবধু ছেলেবেলা থেকেই প্রজ্ঞার ছায়াসঙ্গী। ছোটবেলার থেকেই প্রজ্ঞার সকল দাবা টুর্নামেন্টে তাঁর সঙ্গে দেশবিদেশ সফরে যান মা নাগলক্ষ্মী। খুব সাধারণ, সাদামাটা, ভদ্র রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ ও তাঁর পরিবারের মতো, দাবা টুর্নামেন্টে দাবাড়ু ছেলের সঙ্গে মায়ের সফরের নেপথ্যেও রয়েছে সাদামাটা কারণ।  আসলে খাবার নিয়ে বরাবর একটু খুঁতখুঁতে প্রজ্ঞা। বাইরের খাবার বিশেষ খেতে চান না তরুণ দাবাড়ু। বাড়ির খাবারই তাঁর পছন্দ। ছেলেবেলায় টুর্নামেন্টে গিয়ে হোটেলে নিজের ঘরে প্রজ্ঞার পছন্দের ইডলি বানাতেন নাগালক্ষ্মী। একবার স্লোভেনিয়ায় জুনিয়র পর্যায়ে ভারতীয় টিমের হয়ে খেলতে গিয়ে এই নিয়ে সমস্যাতেও পড়তে হয়েছিল তাদের। হোটেলের ঘরে খাবার তৈরির অনুমতি ছিল না। তা সত্ত্বেও খাবার বানিয়েছিলেন মা নাগালক্ষ্মী। ভুলবশত কার্পেটে জল পড়ে যায়। ফলে হোটেল কর্তৃপক্ষ জরিমানা করে।

দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন প্রজ্ঞা
দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন প্রজ্ঞা

বয়স এবং অভিজ্ঞতার দিক থেকে প্রজ্ঞানন্দের থেকে কার্লসেন অনেকটাই এগিয়ে থাকলেও অতীতে কার্লসেনকে হারানোর ফলে দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন প্রজ্ঞা।  নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি। সেই কারণে ক্লাসিক্যাল দুটো গেমে ড্রয়ের পরে ফাইনাল যখন গড়ায় টাইব্রেকারে, তখনও নিজের উপর থেকে বিশ্বাস হারাননি প্রজ্ঞানন্দ। এমনকী প্রথম টাইব্রেকারে হারের পরেও প্রজ্ঞানন্দর হয়ে আশা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু প্রথম টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় চাপ বাড়ছিল প্রজ্ঞানন্দর উপরে। তবে কথায় আছে, 'হার কর জিতনে ওয়ালে কো বাজিগর কহতে হে'..ফিড ২০২৩ দাবা বিশ্বকাপে সেটাই প্রমাণ করলেন ১৮ বছরের তরুণ ভারতীয় দাবাড়ু রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ! 




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File