লিভার সিরোসিস কীভাবে আপনার যকৃতে বাসা বাঁধে তা জেনে নিন
সিরোসিস হলে লিভারের যে ক্ষতি হয় তাতে লিভার আর পূর্বাবস্থায় ফেরানো যাবে না। কিন্তু রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার পর এই রোগ থেকে ক্ষতির পরিমাণ সীমিত করা যেতে পারে।
লিভারের নানারকম রোগের মধ্যে এই লিভার সিরোসিসকে চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি রোগ বলে গণ্য করা হয়। কোনো ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর যকৃতের ট্রান্সপ্লান্ট বা প্রতিস্থাপন ছাড়া সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ হয় না।
লিভার সিরোসিস কী?
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যখন লিভারের রোগের নানা পর্যায়ের পর কোষগুলো এমনভাবে আক্রান্ত হয় যে, লিভার আর কাজ করতে পারে না, সেই পর্যায়কে লিভার সিরোসিস বলে বর্ণনা করা হয়।
লিভার সিরোসিস হলে রোগীর শরীরে কী কী লক্ষ্য করা যায়?
- এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার বা যকৃৎ তার স্বাভাবিক কাজগুলো, যেমন বিপাক ক্রিয়া, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি, ওষুধ ও রাসায়নিকের শোষণ, খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি করতে পারে না।
- লিভার সিরোসিস হলে লিভার বা যকৃতে সূক্ষ্ম সুতার জালের মতো ফাইব্রোসিসের বিস্তার ঘটে। যকৃতে তখন ছোট ছোট দানা বাঁধে এবং ধীরে ধীরে শরীরের মধ্যে সেটির বিস্তার ঘটতে থাকে।
- ফাইব্রোসিস ছড়িয়ে পড়লে সেখানে আর লিভার নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে না, ফলে লিভার সংকুচিত হয়ে পড়ে।
লিভার সিরোসিস কেন হয়?
দীর্ঘদিন ধরে বি ও সি ভাইরাসের আক্রমণে লিভার বা যকৃতের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে যায় এবং লিভারের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এরফলে লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে। এছাড়া আরও কয়েকটি কারণে লিভার সিরোসিস হতে পারে। যেমন-
ফ্যাটি লিভার বা যকৃতে চর্বি জমে যাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে লিভারে যদি মাত্রাতিরিক্ত চর্বি জমে, তাহলে লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস পায় আর যার ফলেও লিভার সিরোসিস হতে পারে।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, স্থূলতা, খাদ্যাভ্যাস, রক্তে কোলোরেস্টল ইত্যাদি কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে।
অতিরিক্ত মদ্যপান, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইচ্ছেমত ওষুধ খাওয়া, রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া দূষিত পানীয়, ব্যবহার করা বরফ, খোলা শরবত বা ফলের মাধ্যমে যকৃতের রোগ ছড়াতে পারে।
লিভার সিরোসিসের কয়েকটি লক্ষণ
বহু ক্ষেত্রে এই রোগের তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে-
১. ক্লান্তি- সারাদিনই আপনাকে ক্লান্তি গ্রাস করে রাখে? তবে অবশ্যই একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হলেও হতে পারে।
২. পেটে ব্যথা- তলপেটে ব্যথা হতে পারে। চিনচিনে বা খুব ব্যথা হতে পারে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে কোনও সমস্যা রয়েছে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. সারাদিন ঘুমঘুম ভাব- আপনার কাজ করতে একদম ভালো লাগছে না। শুধু শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে হতে পারে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।
কী ভাবে লিভার সিরোসিসের সমস্যা মেটাবেন?
লিভার সিরোসিস হলে তা থেকে কোনওভাবেই সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া যায় না তবে একটু আধটু চেষ্টা করলে এই সমস্যার হাত থেকে খানিক সমাধান পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি-
- তেল-ঝাল-মশলা ছাড়ুন। এই ধরনের খাবার খাওয়া চলবে না।
- ফ্যাট থাকা কোনও খাবার আপাতত নয়।
- মিষ্টি থেকে দূরে থাকুন। তবেই সমস্যা কমবে।
- বেশি করে ফাইবার জাতীয় খাবার খান। খেতে হবে ডালিয়া, ওটস, ঢেঁকি ছাঁটা চাল ইত্যাদি।
- ওজন কমান।
- ভুঁড়ি কমাতে হবে।
- রোজ ব্যায়াম করুন। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতেই হবে।
- দুশ্চিন্তা দূর করুন। প্রয়োজনে করতে হবে প্রাণায়াম।
লিভার সিরোসিস রোগটি এখন আকছার দেখা যায়। বিশেষত, আমাদের খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস, জীবনযাপনের ভুলভ্রান্তিই এই রোগটিকে ডেকে আনে। যদি প্রথমেই এই রোগটির লক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারেন তো সমস্যা সহজে দূর করা সম্ভব।
- Related topics -
- স্বাস্থ্য
- লিভার সিরোসিস
- লিভার