West Bengal Budget | ডিএ বৃদ্ধি, কড়ছাড়, লক্ষ্মী ভান্ডার-কর্মশ্রীর মতো একাধিক প্রকল্প ও পড়ুয়াদের জন্য বড় ঘোষণা! দেখুন রাজ্যের বাজেটে কী কী ঘোষণা হলো?

Thursday, February 15 2024, 10:04 am
highlightKey Highlights

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ এর আগে বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের বাজেট পেশ করলেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বাজেটে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা রাজ্য সরকারের।


১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (2024) এ পেশ হয়েছে কেন্দ্রের বাজেট। সংসদে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Finance Minister Nirmala Sitharaman)। এর ৭দিন পরেই ৮ই ফেব্ররুয়ারি বাজেট পেশ করলো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের বাজেট (West Bengal Budget) পেশ করেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya)। উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ (Lok Sabha Election 2024) এর আগে এটাই এটাই শেষ বাজেট রাজ্যের। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবির মেনে, ভোটের আগে জনমোহিনী বাজেটই পেশ করলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার। বাজেটে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বৃদ্ধি, মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ বৃদ্ধি, নয়া সেতু তৈরি, তাপবিদ্যুৎ তৈরি, সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভাতা বৃদ্ধির মতো একাধিক বড় বড় ঘোষণা করলো রাজ্য। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী কী গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করা হলো রাজ্যের বাজেটে।

 ডিএ বৃদ্ধি:

Trending Updates

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আরও চার শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি করা হল। এই নিয়ে একই বছরে দু’বার ডিএ বৃদ্ধি করল রাজ্য সরকার। সেই ঘোষণার ফলে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের আওতায় ১৪ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। যা আগামী মে থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya)। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ৪৬ শতাংশ হারে ডিএ পান।

লক্ষ্মীর ভান্ডারের ভাতা বৃদ্ধি:

বাজেটে লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে বড় ঘোষণা করল রাজ্য। বাড়ানো হচ্ছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ। লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ (Lok Sabha Election 2024) এর আগে রাজ্যের বাজেট অনুযায়ী, জেনারেল ক্যাটেগরির মহিলারা মাসে ১,০০০ টাকা করে পাবেন। আপাতত তাঁরা ৫০০ টাকা করে পান। আর তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মহিলাদের মাসিক প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল ১,২০০ টাকা। তাঁরা আপাতত ১,০০০ টাকা পান। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে সেই নয়া নিয়ম চালু হবে। আর মে থেকে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সেই বর্ধিত ভাতা ঢুকবে।

৫০ দিনের কর্মশ্রী প্রকল্প:

কেন্দ্রের ১০০ দিনের প্রকল্পের পাল্টা ৫০ দিনের কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনার কথা জানালো রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় জবকার্ড হোল্ডারদের জন্য বছরে কমপক্ষে ৫০ দিন কাজের বন্দোবস্ত করা হবে। যে প্রকল্পের সূচনা হবে মে থেকে।

স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় পরিযায়ী শ্রমিক:

 যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক ‘কর্মসাথী পরিযায়ী শ্রমিক’ পোর্টালে নথিভুক্ত, তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। এই খাতে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ। উপকৃত হবে ২৮ লক্ষের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক।

সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ, গ্রিন পুলিশের ভাতা বৃদ্ধি:

 সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ, গ্রিন পুলিশের মাসিক পারিশ্রমিক ১,০০০ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বাজেট (West Bengal Budget) অনুযায়ী,  রাজ্য পুলিশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁদের কোটা বাড়ানো হয়েছে। আপাতত রাজ্য পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ, গ্রিন পুলিশের সদস্যদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ ছিল। এবার সেই কোটা বেড়ে হচ্ছে ২০ শতাংশ। সেইসঙ্গে অবসরের পরে যে এককালীন সুবিধা পাওয়া যায়, সেটা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে।

মৎস্যজীবীদের জন্য সমুদ্রসাথী প্রকল্প:

 মৎস্যজীবীদের জন্য নতুন প্রকল্প- ‘সমুদ্র সাথি’র পরিকল্পনা রাজ্যের। প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসে তিন জেলার সরকারি খাতায় নথিভুক্ত মৎস্যজীবীরা মাসিক ৫ হাজার টাকা করে পাবে। এই খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল। পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনার মৎস্যজীবীদের বছরের দু'মাস আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে। সেইসময় মাসিক ৫,০০০ টাকা প্রদান করা হবে। যে প্রকল্পের জন্য রাজ্যের দু'লাখ মৎস্যজীবী লাভবান হবেন।

চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ 'সি' এবং গ্রুপ 'ডি' কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি :

চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ 'সি' কর্মচারীদের মাসিক পারিশ্রমিক বাড়ল ৩,৫০০ টাকা। গ্রুপ 'ডি' কর্মচারীদের পারিশ্রমিক ৩,০০০ টাকা বেড়েছে। আর করোনাভাইরাস মহামারীর যে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মচারীদের রাজ্যের আওতায় আনা হয়েছে, তাঁদেরও ক্যাটেগরি অনুযায়ী মাসিক পারিশ্রমিক বাড়ানো হচ্ছে।

করছাড়ের সুবিধা:

রাজ্যের ২০২৪ (2024) সালের বাজাতে মোটর ভেহিকেল অ্যাক্টসের আওতায় নথিভুক্ত গাড়ির ক্ষেত্রে 'লাইফটাইম ট্যাক্স'-র কর কমানো হচ্ছে। ছোট যাত্রীবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে করের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের শুধুমাত্র বকেয়া কর আদায় করা হবে (পুরনো বিতর্কিত লাক্সারি ট্যাক্স)। জরিমানা ও সুদের ক্ষেত্রে ছাড় দেবে রাজ্য।

একাদশ শ্রেণিতেই টাকা দেবে রাজ্য :

বাজেটে রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য নতুন ঘোষণা তৃণমূল সরকারের। মাধ্যমিক পাশের পরে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে ভর্তি হলেই স্মার্টফোন পাবে বলে জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পাশাপাশি দ্বাদশের বদলে একাদশ শ্রেণি থেকে ‘তরুণের স্বপ্নে’র প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হলো পড়ুয়াদের। অর্থাৎ মাধ্যমিকের পরই হাতে ‘ট্যাবলেট’ পাবে সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা। তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ১০,০০০ টাকা করে দেওয়া হত। এবার সেটা একাদশ শ্রেণিতেই পাবেন পড়ুয়ারা। অর্থাৎ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে ভরতি হলে সেই টাকা মিলবে।

ট্রেনি বা অ্যাপ্রেন্টিস প্রকল্প:

রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসায় ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে পাশ পড়ুয়া, আইটিআই ও পলিটেকনিক কলেজ থেকে পাশ করা পড়ুয়া ও যুবশ্রী প্রকল্পে নথিভুক্তরা বিভিন্ন শিল্প সংস্থায় শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজের সুযোগ পাবেন। ১৮ বছর থেকে ৪০ বয়সিদের সেই সুযোগ মিলবে। তাঁরা মাসে ১,৫০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত স্টাইপেন্ড পাবেন।

 লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পরিকল্পনা :

যুবক-যুবতীদের কর্ম সংস্থানের জন্য বিভিন্ন সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা গুলোতে সমস্ত খালিপদ পূরণ করার জন্য ৫ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। পাশাপাশি বাংলায় বেকারত্বের হার দেশের তুলনায় ৩ শতাংশ কম বলে জানালেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

চারটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র:

 চারটি (সাঁওতালডিহি, বক্রেশ্বর ও দুর্গাপুর) অত্যাধুনিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বা সুপার ক্রিটিক্যাল থার্মাল পাওয়ার ইউনিট তৈরি করা হবে। পিপিপি মডেলে তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খরচ হবে ২৩,৩৬০ কোটি টাকা। উৎপাদনক্ষমতা হল ২,৯২০ মেগাওয়াট।

নয়া সেতু ও ফ্লাইওভার তৈরি:

 দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুড়িগঙ্গার নদীর উপর আট নম্বর লট থেকে সাগরদ্বীপের কচুবেড়িয়ার মধ্যে ৩.১ কিলোমিটারের 'গঙ্গাসাগর সেতু' তৈরি করা হবে। বাইপাসের মেট্রোপলিটন থেকে মহিষবাথান পর্যন্ত চার লেনের ফ্লাইওভার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ সাত কিলোমিটার। বর্ধমান-আরামবাগ রাজ্যসড়কে ৬৪০ মিটারের সেতু তৈরি করা হবে। চারটি লেন থাকবে।

কারিগর ও তাঁতিদের জন্য বিশেষ প্রকল্প :

কারিগর, তাঁতিদের জন্য বিশেষ প্রকল্পের ঘোষণা। শিল্পীরা অনুদান পাবেন এককালীন ১৫ হাজার করে। আগামী ৪ বছরে এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন ৮ লক্ষ শিল্পী।

এছাড়াও এদিন রাজ্যের বাজেটে মুসলিম-শিখ-জৈন-পারসি-খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি কেন্দ্র তৈরিতে ২০ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব, সংখ্যালঘু বিষয়ক এবং মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য রাজ্যের  ৫.৫৩৯.৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ, পথশ্রী প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ, ৬টি ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ও ইকোনমিক করিডোর তৈরীর প্রকল্প, "চা সুন্দরী এক্সটেনশন প্রকল্পে" আর্থিক সহায়তার কথাও ঘোষণা করা হয় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File