World Heritage Center Visva Bharati | বাংলার মুকুটে নয়া পালক! ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পেল বিশ্বভারতী!
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি পেল বিশ্বভারতী। জানুন এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আর কোন কোন জায়গা।
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় (UNESCO World Heritage List) ফের বাংলা। রবীন্দ্র জয়ন্তীতে বিশ্বভারতীর মুকুটে নয়া পালক। মঙ্গলবার অর্থাৎ রবীন্দ্র জয়ন্তীতে টুইট করে সুখবর ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি (G Kishan Reddy)। সম্ভবত এই বছরের শেষের দিকেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে চলেছে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী (Visva Bharati)।
মঙ্গলবার ৯ই মে টুইট করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি জানান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিরিখে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে চলেছে বিশ্বভারতী। তিনি আরও লেখেন, পশ্চিমবঙ্গে শান্তিনিকেতনের নাম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় লিপিবদ্ধ করতে সুপারিশ করেছে ইউনেস্কো (UNESCO) ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের উপদেষ্টা বিভাগ ইকোমস (ICOMOS or International Council on Monuments and Sites)। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি আরও জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই সৌদি আরবের রিয়াধে (Riyadh,Saudi Arabia) ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির বৈঠক সম্মেলন (World Heritage Committee) রয়েছে। সেই সম্মেলন থেকেই বিশ্বভারতীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্তির কথা ঘোষণা করা হবে।
গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে ভারতের জন্য সুখবর। পশ্চিমবঙ্গে শান্তিনিকেতনের নাম ওয়র্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় লিপিবদ্ধ করতে সুপারিশ করেছে ইউনেস্কো ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের উপদেষ্টা বিভাগ।
উল্লেখ্য, বিশ্বভারতীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্তির কথা এ বছরের গোড়াতেই জানান সেখানকার উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (Vidyut Chakraborty)। এমনকি উপাচার্য বলেন, এপ্রিল-মে মাস নাগাদই বিশ্বভারতীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি পাকা হয়ে যাবে। সেইমতই রবীন্দ্র জয়ন্তীতে ইকোমোস-এর তরফে ওয়র্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় বিশ্বভারতীর নাম নথিভুক্তিকরণের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানালেন রেড্ডি।
প্রসঙ্গত, এই প্রথম সক্রিয় অবস্থায় কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ওয়র্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় স্থান পেয়েছে। বীরভূমের শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী বাঙালির হৃদয়ের খুব কাছের জায়গা। ১৯২১ সালে, ১ হাজার ১৩০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বভারতী। ১৯২২ সালের মে মাসে প্রতিষ্ঠা হয় বিশ্বভারতী সোসাইটির। স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত কলেজ থাকলেও ১৯৫১ সালে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় বিশ্বভারতী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর দ্বিতীয় উপাচার্য হন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ঠাকুরদা ক্ষীতিমোহন সেন (Khitimohan Sen)।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রেড্ডি জানান, ভারতের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যার ফলে বিশ্বভারতীর আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতি ভারতকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলো। তবে বিশ্বভারতী ছাড়াও ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের তালিকায় (UNESCO's List of International Heritage Sites) রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আরও বিভিন্ন জায়গা। এই তালিকায় রয়েছে খোদ শান্তিনিকেতন (Santiniketan)। ২০১০ সাল থেকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে শান্তিনিকেতন।
সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান | Sundarbans National Park :
১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয় সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানকে। এছাড়াও সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের মূল এলাকাকে ১৯৭৭ সালে একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (Wildlife Sanctuary) হিসাবে এবং ১৯৮৪ সালে জাতীয় উদ্যান (National Park) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১০ হাজার বর্গ কিমি ভূমি এবং জল জুড়ে সুন্দরবন তিনটি মহান নদী দ্বারা জমা হওয়া পলি থেকে গঠিত ৮০,০০০ কিলোমিটারের বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger) ছাড়াও, নোনা জলের কুমির সহ বিভিন্ন ধরণের পাখি, সরীসৃপ এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণীর আবাসস্থল সুন্দরবন।
দার্জিলিং হিমালয়ান রেল | Darjeeling Himalayan Railway :
৭ হাজারে ফুটেরও বেশি উচ্চতায় ছুটে চলা দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সর্বোচ্চ রেললাইনগুলির মধ্যে একটি। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে তকমা পায় এই রেলওয়ে। দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত টয় ট্রেনটি (Toy Train) শিলিগুড়ি থেকে যাত্রা শুরু করে ৭৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পৌঁছায় ভারতের সর্বোচ্চ স্টেশন ঘূম-এ (Ghum Station)। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে ও ২০০৮ সালে কালকা-শিমলা রেলওয়েকেও দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা দেওয়া হয়। আর এই তিন রেলওয়েকেই সম্মিলিতভাবে বলা হয় ভারতের মাউন্টেন রেলওয়ে (Mountain Railways of India)।
নেওরা ভ্যালি জাতীয় উদ্যান | Neora Valley National Park :
নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলায় অবস্থিত একটি সুরক্ষিত বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। ৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক ২০০৯ সাল থেকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলির তালিকার অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮৬ সালে ভারতের প্রাচীনতম রিজার্ভ ফরেস্টগুলির একটির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত পার্ক। রডোডেনড্রন, স্থানীয় অর্কিড এবং বিভিন্ন ধরণের গাছের সঙ্গে রেড পান্ডা (Red panda) এবং প্যাঙ্গোলিন (Pangolin) সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসস্থল নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক।
বিষ্ণুপুর মন্দির | Bishnupur Temple :
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় অবস্থিত বিষ্ণুপুর মন্দির স্থানীয় ল্যাটেরাইট এবং ইট দিয়ে তৈরি ১৭ শতকের মন্দির। এই মন্দিরের পোড়ামাটির টাইলসে মহাভারত এবং রামায়ণের দৃশ্যগুলি চিত্রিত করা রয়েছে। ১৯৯৮ সালের ৩রা জুলাই থেকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলির তালিকায় রয়েছে বিষ্ণুপুর মন্দির।
পশ্চিমবঙ্গ বিশ্বখ্যাত তার সাহিত্য, ঐতিহ্য, স্থাপত্যের জন্য। সুন্দরবন, দার্জিলিংয়ের রেলওয়ে প্রভৃতি আগেই ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের তালিকায় নথিভুক্ত হয়ে বিশ্ব দরবারে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এবার শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী কেবল ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা পেয়েই নয়, এই তালিকায় সক্রিয় অবস্থায় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নথিভুক্ত হয়েও গোটা বিশ্বের নজর কাড়লো।
- Related topics -
- রাজ্য
- লাইফস্টাইল
- বিশ্বভারতী
- ইউনেস্কো
- বিষ্ণুপুর মন্দির
- নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক
- দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে
- সুন্দরবন