Ram Setu | রামমন্দিরের পর কেন্দ্রের নজরে 'রামসেতু'! ভারত-শ্রীলঙ্কাকে সংযুক্ত করতে শীঘ্রই তৈরী হবে সেতু!

Monday, January 29 2024, 2:34 pm
highlightKey Highlights

রাম মন্দির উদ্বোধনের পর শীঘ্রই 'রামসেতু' তৈরী হবে বলে সূত্রের খবর। রামায়ণ অনুযায়ী যেখান থেকে রামসেতু ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে যুক্ত করেছিল সেই একই জায়গাতেই তৈরী হবে নয়া সেতু।


২০২৪ (2024) এর শুরুতেই উদ্বোধন হয়েছে অযোধ্যা রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir)। ২২সে জানুয়ারি রাম মন্দির উদ্বোধন (Ram Mandir inauguration) এর দিন গোটা দেশেই যেন লেগেছিলো উৎসবের রঙ। মাস খানেক আগের থেকেই এই দিনের জন্য সেজে উঠেছিল অযোধ্যা। রামমন্দির উদ্বোধনের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করেছিলেন রামভক্তরা। প্রায় ৫০০ বছরের তর্ক-বিতর্ক, আইনি লড়াই শেষে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) 'রাজত্বকালে' অযোধ্যায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় রামলালার। এবার রামমন্দিরের পর রামসেতু (Ram Setu) নিয়েও বড় পরিকল্পনা করছে 'মোদি সরকার'! সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার রামের সেতুবন্ধনের পর, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে তৈরী হবে একটি সমুদ্র সেতু।

ভারত-শ্রীলঙ্কাকে সংযুক্ত করতে শীঘ্রই তৈরী হবে সেতু
ভারত-শ্রীলঙ্কাকে সংযুক্ত করতে শীঘ্রই তৈরী হবে সেতু

রামায়ণের কাহিনি অনুসারে, তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের ধনুশকোডি (Dhanushkodi) থেকে বানর সেনার সাহায্যে লঙ্কারাজ্য পর্যন্ত একটি সেতু তৈরি করিয়েছিলেন রাম। সেই সেতু ধরেই তাঁর সেনাবাহিনী পৌঁছে গিয়েছিল লঙ্কায়। বিশ্বাস করা হয়, নল নামক বানরের তত্ত্বাবধানে মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে এই সেতু প্রস্তুত হয়। বাল্মীকি রচিত রামায়ণে বলা আছে যে এই সেতু দৈর্ঘ্যে ১০০ যোজন এবং প্রস্থে ১০ যোজন। গোরক্ষপুরের গীতা প্রেস থেকে প্রকাশিত শ্রীমদ বাল্মীকির রামায়ণ-কথা-সুখ-সাগর অনুসারে শ্রীরামচন্দ্র এই সেতু নামকরণ করেছিলেন নলসেতু। মহাভারতে এই সেতুর উল্লেখ রামসেতু নামে পাওয়া যায়। বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে সমুদ্রের উপর সেতু তৈরি করার জন্য তিন দিন ধরে সঠিক স্থানের অনুসন্ধান করেন রাম। অবশেষে রামেশ্বরমের সামনে থেকে তিনি এমন একটি জায়গা পান যেখান থেকে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া তুলনামূলক ভাবে সহজ। আসল ধনুশকোডি (Dhanushkodi) হল ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একমাত্র স্থান যেখানে সমুদ্রের গভীরতা নদীর গভীরতার সমান। বর্তমানে তামিলনাড়ুর পূর্ব উপকূলে রামেশ্বরমের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ধনুশকোডি (Dhanushkodi)  গ্রাম।

এই সেতু নিয়ে নানান তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। তবে ১৯৯৩ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA) স্যাটেলাইট থেকে তোলা একটি ছবি প্রকাশ করে। যাতে ভারতের ধনুশকোডি ও শ্রীলঙ্কার পামবানের মধ্যে সমুদ্রের কয়েক ফুট গভীরে ৪৮ কিলোমিটার চওড়া স্থলভাগ স্পষ্ট। এই স্থলভাগই আসলে রামসেতু বলে দাবি করেন অনেকে। আর্কিওলজিস্টদের গবেষণার পর এই কথা জানানো হয়েছে যে রামসেতুর পাথরের বয়স ৭০০০ বছর এবং যে বালিতে এই পাথরগুলি রয়েছে সেগুলির বয়স ৪০০০ বছর। পাথর ও বালির বয়সের এই অসামঞ্জস্য থেকেই প্রমাণিত হয় যে সমুদ্রের নীচে পাথরের তৈরি এই স্থলভাগ প্রাকৃতিক ভাবে নির্মিত নয়, বরং মানুষের দ্বারা তৈরি। ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে স্থল সংযোগ ছিল। গবেষকদের মতে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত রামেশ্বরমের মান্নার দ্বীপ পর্যন্ত এই সেতু ধরে হেঁটে যাওয়া যেত। তবে ১৪৮০ সালের একটি বিধ্বংসী সাইক্লোনে এই ব্রিজ কিছুটা ভেঙে যায়। সমুদ্রের জলতল বেড়ে যাওয়ার কারণেও সমুদ্রের কয়েক ফুট গভীরে চলে যায় রাম সেতু। যদিও রামায়ণের কাহিনী অনুযায়ী, বিভীষণ রামের কাছে সেতু ভেঙে দেওয়ার আর্জি জানান। না হলে ভারত থেকে বারবার লঙ্কায় আক্রমণ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সেই মতো বিভীষণের অনুরোধ মেনে তীর ছুঁড়ে রামসেতুকে সমুদ্রের কয়েক ফুট গভীরে ঢুকিয়ে দেন শ্রীরামচন্দ্র।

রামায়ণ অনুযায়ী যেখান থেকে রামসেতু ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে যুক্ত করেছিল সেই একই জায়গাতেই তৈরী হবে নয়া সেতু
রামায়ণ অনুযায়ী যেখান থেকে রামসেতু ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে যুক্ত করেছিল সেই একই জায়গাতেই তৈরী হবে নয়া সেতু

সেতুসমুদ্রম প্রকল্প :

সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাম মন্দির উদ্বোধন (Ram Mandir inauguration) এর পর ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে যুক্ত করতে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সমুদ্রের উপর প্রায় ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, যে ধনুশকোডি থেকে সেতু বন্ধন করেছিলেন রাম, সেই একই জায়গা থেকে শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নারকে জুড়বে এই সেতু। প্রকল্পটি হবে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (National Highway Authority of India ) আওতায়। ২৩ কিমি এই দীর্ঘ সেতুতে সড়ক ও রেল সেতু – দুইয়েরই পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে খবর। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের নাম হবে সেতুসমুদ্রম (Setusamudram)।

এই সেতু নির্মাণ হলে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ভ্রমণের খরচ ৫০ শতাংশ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে, দুই দেশেরই পর্যটন এবং অর্থনীতিতে বড় উন্নতি হতে পারে। উল্লেখ্য, অযোধ্যা রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir) উদ্বোধনের আগে তামিলনাড়ুর ধনুশকোডির কাছে আরিচল মুনাই পরিদর্শন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়াও ছয় মাস আগেই ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। যার ফলে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ৪০,০০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের পথ খুলে গিয়েছে। এর মধ্যে নতুন রেল লাইন এবং এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে। আর এই চুক্তির কেন্দ্রে রয়েছে নয়া রাম সেতু। যদিও রাম সেতুর বাজেট (Ram Setu Budget) সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।

সেতু নির্মাণ হলে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ভ্রমণের খরচ ৫০ শতাংশ কমবে বলে আশা
সেতু নির্মাণ হলে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ভ্রমণের খরচ ৫০ শতাংশ কমবে বলে আশা

প্রসঙ্গত, রামায়ণ মতে, আরিচল মুনাই থেকেই রামের সেতুবন্ধনের সূচনা হয়েছিল। অসংখ্য তামিল গ্রন্থ এবং তামিল রাজাদের শিলালিপিতে রাম সেতুর উল্লেখ রয়েছে। আর পক প্রণালী জুড়ে যে চুনাপাথরের শৃঙ্খল রয়েছে, রামেশ্বরম এবং মান্নার দ্বীপের মধ্যে, তার বেশ কিছু অঞ্চল একেবারে শুষ্ক। পাশাপাশি সেখানে সমুদ্রের গভীরতা খুব কমই। কোথাও কোথাও তো মাত্র ১ মিটার। ফলে এই এলাকা দিয়ে নৌকো যাওয়া প্রায় অসম্ভব। যার ফলে যানবাহন চলাচলের জন্য একটি সেতু নির্মাণ  হলে, যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হবে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File