দেশ

New Covid Variant in India | করোনার নয়া উপরূপ JN-১ এর বাড়বাড়ন্ত! গত ২৪ ঘন্টায় কোভিডে আক্রান্ত প্রায় ৬০০! কতটা রক্ষা করবে করোনা টিকা?

New Covid Variant in India | করোনার নয়া উপরূপ JN-১ এর বাড়বাড়ন্ত! গত ২৪ ঘন্টায় কোভিডে আক্রান্ত প্রায় ৬০০!  কতটা রক্ষা করবে করোনা টিকা?
Key Highlights

দেশে ২৪ ঘন্টায় নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত ৬০০ এর বেশি। মৃত্য হয়েছে ১৬ জনের। ভয় ধরাচ্ছে করোনার নয়া উপরূপ জেএন-১ এর উপসর্গ জানালো সিডিসি। জানুন এক্ষেত্রে করোনা ভ্যাকসিন কতটা রক্ষা করবে।

দেশজুড়ে চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনার নয়া সাবভ্যারিয়েন্ট জেএন-১ (JN-1)। স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর, গত ২৪ ঘণ্টায়  ভারতে নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট (New Covid Variant in India) এ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬০০-র বেশি। পাশাপাশি গত ২ সপ্তাহে দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই উপরূপের সংক্রমণই দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় করোনার এই ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে? কতটাই বা কাজ করবে করোনা ভ্যাকসিন?

করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট জেএন-১ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?

ভারতে নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট (New Covid Variant in India) জেএন.১ করোনা ভাইরাসের বিএ.২.৮৬ ওমিক্রন প্রজাতির একটি উপপ্রজাতি। আমেরিকার ‘ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (Disease Control and Prevention)’ বা সিডিসি (CDC) জানিয়েছে, ভারতে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট (Omicron Variant in India) এবং ওমিক্রনের বংশধর জেএন.১ রূপ দু’টি প্রায় অভিন্ন। ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে সামান্য পার্থক্য ছাড়া আর বিশেষ কোনও তফাৎ নেই কোভিডের দুই উপরূপে। তাই এটিও এক শরীর থেকে অন্য শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, আমেরিকায় কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্যও জেএন.১-কে দায়ী করেছে সিডিসি। সিডিসি-র পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অতিক্রম করে শরীরে আরও ভাল ভাবে বাসা বাঁধতে সক্ষম করোনার এই নয়া উপরূপ। যদিও এখনও এই তথ্য প্রমাণিত হয়নি।

করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট জেএন-১ এর উপসর্গ :

 গত অগস্ট মাসে প্রথম এই উপজাতির খোঁজ মেলে। সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের যে লক্ষণগুলি দেখা যায়, অর্থাৎ, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, কাশি, জ্বর, জেএন.১-এর সংক্রমণেও মোটামুটি একই লক্ষণ দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই উপসর্গ করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্টের। অর্থাৎ ভারতে ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza in India) তে আক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায়, যেমন- জ্বর, সর্দি-কাশি, গা-হাত পা ব্যাথা, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গই করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে দেখা যায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে এখনও হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগী ভর্তি হওয়ার সংখ্যা কম। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আপাতত বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও যদি কয়েকদিন ধরে জ্বর, কাশি, নাকে গন্ধ ও মুখে স্বাদ না থাকে, তবে অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়া তীব্র জ্বর, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, খেতে না পারা বা বমি হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলেও সতর্ক হওয়া উচিত।

জেএন-১ থেকে রক্ষা করতে কতটা কাজ করবে করোনা ভ্যাকসিন?

শীতের মরশুমে ভারতে ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza in India) এর মতো অসুস্থ্যতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে প্রায় একই উপসর্গ নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্ট জেএন-১। এক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন, কতটা কাজে দেবে করোনা ভ্যাকসিন? করোনার টিকা এই উপরূপের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে বিজ্ঞানীদের মত, জেএন.১-কে দুর্বল করতে সক্ষম করোনার টিকা। করোনার নয়া রূপ ঠেকাতে টিকা কার্যকর হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয় প্রসঙ্গে সিডিসি জানিয়েছে, কোভিডের বুস্টার টিকা ওমিক্রন উপরূপকে পরাস্ত করতে তৈরি করা হয়েছিল। যখন ভারতে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট (Omicron Variant in India) বাড়বাড়ন্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো তখন এই ভ্যাকসিন বেশ কার্যকরিতা প্রমাণ করেছিল। প্রাথমিক গবেষণা অনুযায়ী, সেই টিকা মানুষের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, তা জেএন.১-কে ঠেকাতেও সক্ষম। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার বুস্টার টিকা সংক্রমণ পুরোপুরি ঠেকাতে না পারলেও প্রাণহানির সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে দেবে। ১৩ই  ডিসেম্বর একটি বিবৃতিতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) বা হু-(WHO) র টিকা উপদেষ্টা কমিটি জানিয়েছে, জেএন.১-এর বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে আপাতত বুস্টার টিকাই ব্যবহার করা উচিত।

প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোভিড ১৯ করোনভাইরাস কেস কেরালা (Covid 19 coronavirus cases in Kerala) বেশ চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। কেরলে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৯২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড ১৯ করোনভাইরাস কেস কেরালা (Covid 19 coronavirus cases in Kerala) তে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। এছাড়া  তামিলনাড়ুতে ১৩, মহারাষ্ট্রে ১১; তেলঙ্গানা, পঞ্জাব, দিল্লি, গোয়া এবং গুজরাত মিলিয়ে ৩৪১ জন করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে বলে খবর। সবমিলিয়ে দেশে এই মুহূর্তে অ্যাকটিভ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২,৬৬৯। তবে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এখনও সন্তোষজনক। এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় পর্যন্ত রাজ্যে কোনও করোনা আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি। তবে পরিস্থিতিতে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে রাজ্য প্রশাসন জেলায় জেলায় হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কিছু বেড করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্যও নির্দিষ্ট করে রাখার পরিকল্পনা করেছে। কলকাতায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল এবং এম আর বাঙুর হাসপাতালে আইসিইউ-সহ কিছু বেড কোভিড রোগীদের জন্য রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ইতিমধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বৈঠকের পর বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন স্বাস্থ্যসচিব। সূত্রের খবর, বৈঠকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে RT-PCR টেস্টের ওপরে। করোনা পজিটিভ হলেই রোগীর নমুনা যাতে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে পাঠানো হয় সেই ব্যাপারে হাসপাতালগুলিকে নির্দেশিকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে,চিনেও ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন করোনার জেএন.১ উপরূপে আক্রান্ত। করোনার এই উপরূপটি প্রথম পাওয়া গিয়েছিল লুক্সেমবার্গে। পাশাপাশি, ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকায় যে ক’জন কোভিড রোগী এই মুহূর্তে আছেন, তাঁদের ১৫-২৯ শতাংশের দেহে রয়েছে জেএন.১ উপরূপ।