দেশ

Monks | পাশ করা IIT-র মতো দেশ-বিদেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে! লক্ষ টাকার চাকরি পেয়েও সব মোহো ত্যাগ করে আজ তারা সন্ন্যাসী!

Monks | পাশ করা IIT-র মতো দেশ-বিদেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে! লক্ষ টাকার চাকরি পেয়েও সব মোহো ত্যাগ করে আজ তারা সন্ন্যাসী!
Key Highlights

শান্তি যে অর্থে নয় রয়েছে সন্ন্যাসজীবন যাপনে, এমনটাই বিশ্বাস করে মোটা টাকার চাকরি ছেড়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন আইআইটি থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়াররা।

বিশাল বেতনের চাকরি, বিলাসবহুল জীবনযাপনের স্বপ্ন সকল মধ্যবিত্তেরই। তবে অনেক গুণী মানুষরাই বলে থাকেন, আসল শান্তি-সুখ অর্থে নয়, রয়েছে সন্ন্যাসজীবন যাপন এবং ত্যাগে। মজার ছলে অনেকেই বলে থাকেন, 'মোহো মায়া ত্যাগে'র কথা। তবে তা আসলে কাজে করে দেখিয়েছেন খুব কম মানুষ। আজ কথা বলবো এমন কিছু মানুষের সম্পর্কে যারা লক্ষ টাকার বেতনের চাকরি পেয়েও সেই চাকরি,উচ্চবিত্ত জীবন ছেড়ে হয়েছেন সন্ন্যাসী।

মহান মহারাজ । Mahan Maharaj  :

কলকাতা থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করার পর কানপুর আইআইটিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভর্তি হন মহান মহারাজ। পরে সেখানে গণিত নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। এরপর ১৯৯২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে ক্যালিফর্নিয়ার বার্কলে ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতাও করেন মহান মহারাজ। সেই সময়ই আধ্যাত্মিকতা এবং দর্শনের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়ায় সন্ন্যাস জীবন যাপন করা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে মুম্বইয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত পড়ানোর পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যুক্ত মহারাজ।

গৌরাঙ্গ দাস । Gauranga Das :

মু্ম্বইয়ের আইআইটি থেকে স্নাতক স্তরের ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন গৌরাঙ্গ দাস (Gauranga Das)। ১৯৯৩ সালে ধাতুবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করে আইআইটি থেকে পাশ করেছিলেন গৌরাঙ্গ। আইআইটি থেকে পাশ করে লক্ষ টাকা বেতনের চাকরি করার সুযোগও পেয়েছিলেন গৌরাঙ্গ। কিন্তু তাঁর আগ্রহ জন্মায় আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি। বর্তমানে ইসকনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, ‘দ্য আর্ট অফ ফোকাস’ (The Art of Focus) নামে একটি বই লেখেন গৌরাঙ্গ। যা বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও বহু বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি স্কুল-কলেজে বক্তৃতা করেন তিনি।

অভিরাল জৈন । Aviral Jain :

বারাণসীর আইআইটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন অভিরাল জৈন। পড়াশোনার পর ভাল বেতনের চাকরিও পান তিনি। বছরে ৪০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিকের চাকরি ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথ বেছে নেন তিনি।

স্বামী মুকুদানন্দ । Swami Mukundananda :

দিল্লির আইআইটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে পাশ করার পর কলকাতার আইআইএম থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন স্বামী মুকুদানন্দ। যোগবিদ্যা এবং আধ্যাত্মিকতা নিয়ে বইও লেখেন তিনি। বর্তমানে আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে বেশ জনপ্রিয় তিনি।

রসনাথ দাস । Rasanath Das :

রসনাথ দাস আইআইটি থেকে পাশ করে আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে (Cornell University in America) এমবিএ করার জন্য ভর্তি হন। এমবিএ করার পর সেখানে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। কাজের ফাঁকে অবসর পেলেই তিনি চলে যেতেন ম্যানহাটনের একটি মঠে। সেখানে গিয়ে মাটিতে শুয়ে থাকতেন। খুঁজে পেতেন শান্তি। তার পর প্রতি দিন দু’ঘণ্টা ধরে ধ্যান করা শুরু করেন রসনাথ। এরপর ধীরে ধীরে বিলাসবহুল জীবন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে থাকেন তিনি। আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝোঁক বাড়লে ২০০৮ সালে চাকরি ছেড়ে মঠে চলে যান। আর সেই থেকেই সন্ন্যাস জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

সঙ্কেত পারেখ । Sanket Parekh :

মুম্বইয়ের আইআইটি থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন সঙ্কেত পারেখ (Sanket Parekh)। পড়াশোনা শেষ করার পর আমেরিকায় চাকরিও পেয়েছিলেন তিনি। তবে জৈন ধর্মের প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহ জন্মাতে থাকে সঙ্কেতের। তাদের আচার-আচরণ, রীতিনীতি মেনে জীবনযাপন করতে শুরু করেন তিনি। আড়াই বছর জৈন ধর্ম বিষয়ে পড়াশোনা করার পর চাকরি ছেড়ে দেন এবং ২০১৩ সালে জৈন ধর্মে দীক্ষা নেন তিনি।

রাধেশ্যাম দাস । Radheshyam Das :

১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ের আইআইটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে পাশ করেন রাধেশ্যাম দাস (Radheshyam Das)। তার পর ভালো মাইনের চাকরিও শুরু করেন তিনি। কিন্তু চাকরি ছেড়ে ১৯৯৭ সালে সন্ন্যাস নিয়ে ইসকনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।

আচার্য প্রশান্ত । Acharya Prashant :

আচার্য প্রশান্তের বই (Acharya Prashant Books) বেশ জনপ্রিয়। আচার্য প্রশান্ত দিল্লির আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন আচার্য প্রশান্ত। তার পর ২০০৩ সালে আমদাবাদের আইআইএম থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। উচ্চপদের সরকারি চাকরি ছেড়ে বেদ-উপনিষদ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। গীতা এবং উপনিষদ নিয়ে শিক্ষাদানও করেন তিনি। আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে বইও লিখেছেন তিনি।

খুরশেদ বাটলিওয়ালা । Khurshed Batliwala :

মুম্বইয়ের আইআইটি থেকে গণিত নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন খুরশেদ বাটলিওয়ালা। কিন্তু আইআইটি থেকে পাশ করতেই বিলাসিতা থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সাধারণ ভাবে জীবনযাপনের পদ্ধতি শেখানোর জন্য দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় ওয়ার্কশপ করান তিনি। সন্ন্যাস জীবন যাপন করার পাশাপাশি বইও লিখেছেন তিনি।

কেবল ইঞ্জিনিয়ার বা মোটা মেইন পাওয়া চাকরিজীবীরাই নয়, বিলাসবহুল জীবনযাপন ত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন দেশের নানান গুণীব্যক্তি, ব্যবসায়ীরাও। সম্প্রতি প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বিলি করে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন গুজরাটের প্রভাবশালী জৈন দম্পতি ভবেশ ভান্ডারি এবং তাঁর স্ত্রী।হিম্মতনগরের বিখ্যাত নির্মাণ ব্যবসায়ী ভবেশ গত ফেব্রুয়ারিতেই তাঁদের বিপুল সম্পত্তি বিলিয়ে দিয়েছেন। ২২ এপ্রিল পরিবারের সঙ্গে সব সম্পর্কের বন্ধন ছিন্ন করে বেরিয়ে যান তাঁরা। সঙ্গে রাখেন নি জাগতিক কোনও বিলাসদ্রব্য। সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর খালি পায়ে সারা দেশ ঘুরবেন তাঁরা। জীবন কাটাবেন ভিক্ষা করে। সঙ্গে রাখতে পারবেন কেবল শুধু দু’টো সাদা পোশাক, ভিক্ষাপাত্র এবং রাজোহরণ। এর আগে পাঁচ বছর আগে সন্ন্যাস নিয়ে পরিবার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল তাঁদের ১২ বছরের ছেলে। এছাড়াও ২০১৭ সালে মধ্যপ্রদেশের এক কোটিপতি তাঁদের ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি দান করে এবং তিন বছরের মেয়েকে দাদু-দিদার কাছে রেখে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন।