লাইফস্টাইল

Makar Sankranti and Tusu Festival | দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে মকর সংক্রান্তি উৎসব! টুসু বিদায় রাঢ় বাংলার! জানুন মকর ও টুসু উৎসব কীভাবে শুরু হলো?

Makar Sankranti and Tusu Festival | দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে মকর সংক্রান্তি উৎসব! টুসু বিদায় রাঢ় বাংলার! জানুন মকর ও টুসু উৎসব কীভাবে শুরু হলো?
Key Highlights

মকর সংক্রান্তি উৎসব পালন হচ্ছে দেশজুড়ে। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের জেলায় এই সময় পালন করা হয় টুসু উৎসব। জানুন মকর সংক্রান্তি উৎসব ও টুসু উৎসব কীভাবে পালন হয় এবং এই উৎসবের তাৎপর্য।

আজ, ১৫ই জানুয়ারি, সোমবার পৌষ সংক্রান্তি। দেশের ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন নামে পালিত হয় এই উৎসব। মূলত শীতের বিদায়ক্ষণের সূচনা হয় এই দিনটি থেকে।  পৌষ সংক্রান্তি উৎসব এক এক নাম পরিচিত। যেমন দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে উৎসবটির নাম পোঙ্গল। আবার পাঞ্জাবে উৎসবটির নাম লোহরি। চলতি বছর লোহরির একদিন পরে পালন করা হবে মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti)। আবার পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ,বাঁকুড়া , পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো বেশ কিছু পশ্চিমবঙ্গের জেলায় এই সময় পালন করা হয় টুসু উৎসব (Tusu Festival) বা টুসু পুজো। জেনে নিন মকর সংক্রান্তি ও টুসু পুজোর তাৎপর্য ও কীভাবে শুরু হলো এই উৎসব উদযাপন। 

মকর সংক্রান্তি উৎসব । Makar Sankranti Festival :

তিথি অনুযায়ী মকর সংক্রান্তি ২০২৪ (Makar Sankranti 2024) পড়েছে ১৫ই জানুয়ারি। মকর সংক্রান্তির দিন সূর্যদেবতার উপাসনা করা হয়। এই দিন পুণ্যার্থীরা বিভিন্ন জলাশয়ে যেমন নদী, সমুদ্রে স্নান করে শুদ্ধ হন। এরপর করজোড়ে সূর্য দেবতার কাছে বিশেষ মন্ত্রপাঠ করে প্রার্থনা নিবেদন করেন। সংক্রান্তির বিশেষ ক্ষণে দানধ্যানের মতো পুণ্যকর্ম করার প্রচলনও রয়েছে। এছাড়াও, আকাশে ঘুড়ি ওড়ানো, তিল, গুড়, দিয়ে পিঠে পুলি, সন্দেশ তৈরির রীতিও রয়েছে। এই দিন তিলের সন্দেশ তৈরি করার পিছনে বিশেষ কারণ রয়েছে। কথিত আছে, তিলকে অমরত্বের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন যমরাজ। সেই বিশ্বাসকে পাথেয় করেই এই দিন তিলের নানা পদ তৈরি করা হয়। গ্রামের দিকে এই দিন কিছুটা আলাদা ছবি দেখা যায়। চাষিরা এই দিন চালের বিভিন্ন পদ তৈরি করেন। তাছাড়া, অনেক স্থানে গবাদি পশুদেরও পুজো নিবেদন করা হয়। মকর সংক্রান্তি দিনটি নিয়ে নানারকম ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

 পুরাণ মতে,  শনি মহারাজ সূর্যদেবতার সন্তান। কিন্তু কৃষ্ণবর্ণ হওয়ায় শনি মহারাজ ও স্ত্রী ছায়াকে ত্যাগ করেন সূর্যদেব। এর পর এক সময় তিনি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন। সেই সময় তার আরেক স্ত্রী, সঞ্জনার সন্তান যমরাজ উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। যমরাজের একান্ত চেষ্টায় সূর্যদেবের কুষ্ঠ সেরে যায়। এদিকে শরীর সুস্থ হতেই তার সমস্ত জ্যোতি গিয়ে পড়ে মকরের উপর। সেখানেই বাস ছিল তাঁর ত্যজ্য স্ত্রী ও সন্তান শনিদেবের। তাদের বাড়িঘর পুড়ে যায় সূর্যদেবের তেজে। এদিকে সৎমা ও সৎভাইয়ের এই অবস্থা দেখে ফের কাতর হয়ে পড়েন যমরাজ। ফলে তিনি সূর্যদেবের কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন তাদের ক্ষমা করতে। এই সময় সূর্যদেব এগিয়ে যান সেই উদ্দেশ্যেই। সেই সময় সব পুড়ে গেলেও শনিদেবের ঘরে কিছু তিল অবশিষ্ট ছিল। সেই তিল দিয়েই তিনি সূর্যদেবকে বরণ করে নেন। শনিদেবের এই শ্রদ্ধা নিবেদন দেখে তুষ্ট হন পিতা সূর্যদেব। সেই সময় তিনি একটি নতুন ঘর দেন শনিদেবকে। যার নাম 'মকর'। এর পর সন্তানের সেই ঘরে প্রবেশ করেন তিনি। সেই ক্ষণকেই মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti)র সূচক বলে ধরা হয়।   

ভৌগোলিক নিরিখে মকর সংক্রান্তি উৎসব (Makar Sankranti Festival) এর তাৎপর্য আবার আলাদা। মকর সংক্রান্তির দিন উত্তর গোলার্ধে শীতকাল শেষ হলে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই দিনের পর থেকে সূর্য উত্তরায়নের শুরু হয়। মকর সংক্রান্তির পর থেকে দিন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। আবার অন্যদিকে, জ্যোতিষশাস্ত্রে অন্য একটি তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। বলা হয়, এই দিন সূর্যের দশার পরিবর্তন হয়। এই দিন সূর্য একাদশতম রাশি মকরের ঘরে প্রবেশ করেন। সেই নামের প্রসঙ্গ ধরেই দিনটির নামকরণ হয়েছে মকর সংক্রান্তি। 

টুসু উৎসব । Tusu Festival :

টুসু হলেন এক লৌকিক দেবী। সাধারণত কুমারী মেয়েরাই এই লৌকিক দেবীর পুজো করেন। লোকদেবীর নাম টুসু কেন হল তা নিয়ে আজও দ্বন্দ্ব রয়েছে। সাধারণত গ্রামবাংলাতেই এই পুজোর প্রচলন রয়েছে। পুরুলিয়া ,ঝাড়গ্রাম ,বাঁকুড়া , পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পূর্ব সিংভূম জেলা,পশ্চিম সিংভূম , সাঁওতাল পরগনা, ধানবাদ ,সরাইকেল্লা খরসোয়া , রাঁচি ও হাজারিবাগ এবং ওড়িশা রাজ্যের ময়ূরভঞ্জ, সুন্দরগড়, কেন্দুঝর জেলায় টুসুর পুজোর প্রচল রয়েছে। এই উৎসব সম্পর্কে ডঃ বঙ্কিমচন্দ্র মাহাতোর মতে, তুষ থেকে টুসু শব্দটি এসেছে। দীনেন্দ্রনাথ সরকারের মতে তিষ্যা বা পুষ্যা নক্ষত্র থেকে অথবা উষা থেকে টুসু শব্দের আগমন। আবার তিনি বলেছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রজনের দেবতা টেষুব থেকে টুসু শব্দটি তৈরী হয়েছে।

অগ্রহায়ণের সংক্রান্তি থেকে টানা এক মাস পর্যন্ত পালিত হয় টুসু উৎসব। পৌষ সংক্রান্তিতে গিয়ে এই উৎসব শেষ হয়। এই পুজোতে দেবীর কোনও মূর্তি থাকে না। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে ধান ক্ষেত থেকে এক গোছা নতুন আমন ধান মাথায় করে এনে খামারে পিঁড়িতে রেখে দেওয়া হয়। সংক্রান্তির সন্ধ্যাবেলায় গ্রামের কুমারী মেয়েরা একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো লাগিয়ে তাতে তুষ রাখেন। তারপর তুষের ওপর ধান, গোবরের মন্ড, দূর্বা ঘাস, আল চাল, আকন্দ, বাসক ফুল, কাচ ফুল, গাঁদা ফুলের মালা রেখে পাত্রটির গায়ে হলুদ রঙের টিপ লাগিয়ে পাত্রটিকে পিড়ি বা কুলুঙ্গীর ওপর রেখে স্থাপন করা হয়। সেই পাত্রটিই প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে টুসু হিসাবে পুজো করে কুমারী মেয়েরা। পৌষ মাসের প্রত্যেক সন্ধেয় কুমারী মেয়েরা দলবদ্ধ হয়ে টুসুর গান করে ও দেবীর উদ্দেশ্যে চিঁড়ে, গুড়, বাতাসা, মুড়ি, ছোলা ইত্যাদি ভোগ নিবেদন করে।

পৌষ মাসের শেষ চারদিন চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিনে গৃহস্থ বাড়ির মেয়েরা উঠোন গোবরমাটি দিয়ে নিকিয়ে চালের গুঁড়ো তৈরী করেন। বাঁউড়ির দিন অর্ধচন্দ্রাকৃতি, ত্রিকোণাকৃতি ও চতুষ্কোণাকৃতির পিঠে তৈরী করে তাতে চাঁছি, তিল, নারকেল বা মিষ্টি পুর দিয়ে ভর্তি করা হয়।  বাঁউড়ির রাত দশটা থেকে টুসুর জাগরণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। জাগরনের দিন সারা রাত জেগে গান গেয়ে টুসুর আরাধনা করেন গ্রামের মেয়েরা। এদিন ঘর পরিষ্কার করে ফুল আর আলো দিয়ে সাজানো হয়। পৌষ সংক্রান্তি বা মকরের ভোরবেলায় মেয়েরা দলবদ্ধভাবে গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীকে বাঁশ বা কাঠের তৈরী রঙিন কাগজে সজ্জিত চৌডল বা চতুর্দোলায় বসিয়ে নদী বা পুকুরে গিয়ে বিসর্জন দেয়। টুসু বিসর্জনের পরে মেয়েরা নদী বা পুকুরে স্নান করে নতুন জামা-কাপড় পরেন। ছেলেরা খড়, কাঠ, পাটকাঠি দিয়ে ম্যাড়াঘর বানিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে থাকেন।