Uttam Kumar | মহানায়ক উত্তম কুমারের ৪৩তম প্রয়াণ দিবসের দিন থাকলো তাঁর অভিনীত ৫টি সেরা চরিত্রের কথা!
মাত্র ৫ বছর বয়সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'মুকুট' নাটকে অভিনয় করে সোনার পদক জেতেন উত্তম কুমার। একটি চরিত্র মহানায়ককে দেখেই তৈরী করেছিলেন সত্যজিৎ রায়।
তিনি নায়ক নয়, 'মহানায়ক'। বাংলা অভিনয় জগৎ ছাড়াও গোটা বিশ্বের অভিনয় জগতে এক অমূল্য ছাপ ফেলে গিয়েছেন উত্তম কুমার (Uttam Kumar)। ১৯৮০ সালে এতো সুনাম, ভালোবাসা, ভক্তদের ফেলে 'না ফেরার' দেশে চলে যান উত্তম কুমার। কিন্তু তাও বাঙালির মনে তিনি চিরঅমর। আজ, ২৪সে জুলাই সেই 'মহানায়কে'র প্রয়াণ দিবসের দিন তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং 'মহানায়কে'র স্মরণে রইলো তাঁর অভিনয় জীবন ও অভিনীত সেরা চরিত্রগুলির ফিরে দেখা।
'মহানায়কে'র অভিনয় জগৎ । Uttam Kumar’s Acting Life :
১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ভবানীপুরে (Bhawanipur, Calcutta) ৫১ আহিড়ীটোলা স্ট্রীটে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন উত্তম কুমার। তখনও অবশ্য 'উত্তম' হননি তিনি। প্রথমে চক্রবেড়ীয়া হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং পরে সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন অরুণ। শিশুবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি টান ছিল অরুণ কুমারের (Arun Kumar)। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) লেখা 'মুকুট' নাটকে অভিনয় করে সোনার পদক জিতে এই অরুণই পরবর্তীকালে 'উত্তম' নাম নিয়ে জিতে নেয় গোটা বাংলা তথা বিশ্বের মন। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে একাই করতে থাকেন রাজত্ব। তবে অভিনয় জগতে পা রাখার আগে বেশ কঠিন পথে হাটতে হয় তাঁকে।
১৯৪৫ সালে কলকাতার গোয়েঙ্কা কলেজে অব কমার্সে ভর্তি হন অরুণ। তবে পারিবারিক আর্থিক অনটনের জন্য কলকাতার পোর্টে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ফলে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি উত্তম কুমার। কিন্তু এক বিন্দুও কমেনি অভিনয় ও খেলাধুলোর প্রতি ভালোবাসা। কাজের ফাঁকেই সময় করে সিনেমা, নাটক দেখতে যেতেন তিনি। এমনকি কাজ কামাই করে রীতিমতো থিয়েটার করতেন এবং টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় ঘোরাফেরা করতেন সিনেমায় সুযোগের জন্য।
এরপর ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার বছরে উত্তম কুমার তার এক বন্ধুর সহযোগিতায় প্রথম 'মায়ডোর' নামে একটি হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ পান। কিন্তু দুর্ভাগ্য এমনই যে, জীবনের প্রথম ছবিই মুক্তিলাভ করেনি তাঁর। তবে পরের বছরই মুক্তি পায় তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র 'দৃষ্টিদান'। তবে সাফল্য আসে নির্মল দের (Nirmal Dey) পরিচালনায় 'বসু পরিবার' চলচ্চিত্রে। এরপরেই একের পর এক অসাধারণ চিরস্মরণীয় চলচ্চিত্র অনন্য উত্তম কুমার। ধীরে ধীরে বাংলা ছাপিয়ে গোটা বিশ্বের মন জয় করেন তিনি।
'মহানায়কে'র অভিনীত সেরা চরিত্র । Best Character Played by Uttam Kumar :
১৯৮০ সালে পর্যন্ত ৩৩ বছরে বাংলা হিন্দি মিলিয়ে প্রায় দুশোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার। অভিনয় জগতে তিনি এক আলাদা মাইলস্টোন গড়ে গিয়েছেন। যা ভাঙা আজও কোনও তারকার পক্ষে সম্ভব হয়নি, পরবর্তীকালেও হবেনা। একাধিক অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছিলেন মহানায়ক। তবে 'উত্তম -সুচিত্রা'র (Uttam-Suchitra) জুটি ছিল সবথেকে জনপ্রিয়। এছাড়াও সুপ্রিয়া দেবী (Supriya Devi), সাবিত্রী দেবী (Savitri Devi), মাধবী (Madhavi) থেকে শর্মিলা ঠাকুরের (Sharmila Tagore) সঙ্গে উত্তম কুমারের জুটি ছিল সুপারহিট। অসংখ্য ছবি, অসংখ্য চরিত্র। ফলে 'মহানায়কে'র অভিনীত বহু চরিত্রের মধ্যে পাঁচটি বেছে নেওয়া কঠিন। তাও রইল উত্তম কুমারের সেরা পাঁচটি চরিত্রের কথা।
১. নায়ক । Nayak :
১৯৬৬ সালে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) 'নায়ক' ছবিটি। শোনা গিয়েছিল, নিজের জীবননের সঙ্গে ছবির মিল পেয়েছিলেন মহানায়ক। অন্য দিকে, সত্যজিৎ রায়ও নাকি মহায়কের কথা চিন্তা করেই চরিত্রটি তৈরী করেন। সিনেমায় উত্তম কুমারের সিগারেট দিয়ে গোল গোল ধোয়ার রিং বানানো থেকে শুরু করে টাকার স্তুপ ও বৃষ্টিতে ক্রমশ অভিনেতার হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আজও যেন প্রথমবারের মতো মন ছুঁয়ে নেয় দর্শকদের।
২. সপ্তপদী । Saptapadi :
'এই পথ যদি না শেষ হয়..তবে কেমন হতো তুমি বলোতো'! ১৯৬১ সালে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় উত্তম-সুচিত্রার জুটি সৃষ্টি করে ইতিহাস। অজয় করের (Ajay Kar) 'সপ্তপদী'তে মহানায়কের অভিনয় থেকে যেন এক পলকের জন্যও চোখ ফেরানো মুশকিল। আজও এই ছবিতে মহানায়কের চরিত্র সকলে মনে রেখেছেন। এই ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলন মহানায়ক।
৩. ওগো বধূ সুন্দরী । Ogo Bodhu Sundari :
আরও এক ইতিহাস সৃষ্টি করা অভিনয় এবং চলচ্চিত্র। ১৯৮১ সালে মুক্তি পায় সলিল দত্তর (Salil Dutt) 'ওগো বধূ সুন্দরী'। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Moushumi Chatterjee) ও উত্তম কুমারের মজাদার জুটির অভিনয় দেখে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হবেই হবে। মহানায়কের 'এই তো জীবন' গানে মত্ত হওয়ার অভিনয় যেমন মুখে বারবার ফোটায় হাসি, তেমনই জিতে নেয় মনও।
৪. অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী । Antony Firingee :
১৯৬৭ সালে মুক্তি পায় হেন্সমান অ্যান্টনির (Hensman Anthony) জীবনীর ওপর ভিত্তি করে সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sunil Banerjee) ছবি 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী'। এই ছবিতে মহানায়কের অন্যান্য চরিত্রের থেকে বেশ ভিন্ন অভিনয় মহানায়কের।
৫. ঝিন্দের বন্দি । Jhinder Bondi :
ঝিন্দের বন্দি ছবিটি মহানায়কের কেরিয়ারে অন্যতম ছবি। ১৯৬১ সালে মুক্তি পায় তপন সিনহার (Tapan Sinha) এই ছবি। এই ছবিতে যেমন অসাধারণ অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার, তেমনই চোখ না ফেরানোর মতো অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chattopadhyay)।
ওপরের চলচ্চিত্রগুলি বাদেও অগ্নিপরীক্ষা, পথে হল দেরি, সবার ওপরে, সাগরিকা, শাপমোচন, উত্তর মেঘ, শুন বরনারি, কাল তুমি আলেয়া, বন পলাশির পদাবলী, সন্ন্যাসী রাজা, দুই পুরুষ, ভোলা ময়রা, অবাক পৃথিবী, মরুতীর্থ হিংলাজ, গৃহদাহ, রাজা সাজা, শেষ অঙ্ক, বিরাজ বৌ, থানা থেকে আসছি, আগ্নীশ্বর, শঙ্খবেলা, কলঙ্কিনী কঙ্গাবতী, যদু বংশ, শেষ অঙ্ক, আনন্দ আশ্রম, অমানুষ থেকে শুরু করে বহু ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন মহানায়ক উত্তম কুমার। পাঁচবার জাতীয় পুরস্কার, আটবার বিএফজেএ পুরস্কার ও তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, প্রসাদ পত্রিকা পুরস্কার, সাংস্কৃতিক সাংবাদিক সংস্থা পুরস্কার, চলচ্চিত্র প্রসার সমিতি পুরস্কারে সম্মানিত হন উত্তম কুমার। ১৯৭৫ সালে ভারত সরকার দ্বারা 'মহানায়ক' উপাধির সম্মান পান তিনি। এই অসংখ্য ছবি ও চরিত্রের মধ্যে দিয়েই অনন্তকাল ধরে অমর হয়ে থাকবেন উত্তম কুমার।