Jaganath Snan Yatra | ১০৮ টি কলসির জলে স্নান করে এলো জ্বর! রবিবার পালন হলো জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার স্নানযাত্রা!
জৈষ্ঠ্য মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালন হলো জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা। এরপর ১৫ দিনের জন্য জ্বরে পৃথক ঘরে থাকবেন জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা।
জৈষ্ঠ মাসে পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় শ্রীজগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা (Snan Yatra)। সেই মতো এই বছর ৪ঠা জুন বাংলায় ২০ই জ্যৈষ্ঠ অর্থাৎ আজ পালিত হচ্ছে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার স্নানযাত্রা। চলতি বছর রথযাত্রা পালিত হবে আগামী ২০ জুন। রথযাত্রার (Rath Yatra) আগে প্রতি বছরই মহাসমারহে পালিত হয় শ্রী জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা। এছাড়াও এই দিনটির আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই দিনটিকে জগন্নাথ দেবের জন্মতিথি হিসেবেও মনে করা হয়। যার ফলে পুরী (Puri) থেকে শুরু করে দেশের নানান জগন্নাথ মন্দিরে আজ সাজো সাজো রব।
প্রথা অনুযায়ী, এই স্নানযাত্রার আগের দিন জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শন চক্র ও মদনমোহনের বিগ্রহ একটি বিরাট শোভাযাত্রার মাধ্যমে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে স্নানবেদীতে এনে রাখা হয়। এরপর স্নানযাত্রার দিন মন্দিরের উত্তর দিকের কূপ থেকে জল এনে মন্ত্রচ্চারণের মাধ্যমে সেই জলকে শুদ্ধিকরণ করে ১০৮ টি কলসির জলে বিগ্রহগুলিকে স্নান করানো হয়। মনে করা হয়, এই স্নানের পরে জ্বর আসে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার। যেটি পরিচিত ' অনুসর ' নামে। জ্বর আসার ফলে মোট ১৪ দিনের জন্য একটি পৃথক ঘরে থাকেন স্বয়ং দেবতা। এই সময়টিতে ভক্তরা দেবতাদের দর্শন পান না। কারণ এরপরে জৈষ্ঠ পূর্ণিমা থেকে আসারই অমাবস্যা পর্যন্ত মন্দির বন্ধ থাকে। বিগ্রহের নিত্য পূজা চালু থাকলেও জনসাধারণের জন্য মন্দির দর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আবার রথযাত্রা সময় জনসাধারণের জন্য মন্দিরের দরজা খোলা হয়।
এই নির্দিষ্ট দিনগুলিতে মূল মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দর্শনের ক্ষেত্রে বিগ্রহের পরিবর্তে তিনটি পট চিত্র রাখা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময়টিতে জগন্নাথ 'অলরনাথ' রূপে ব্রহ্মগিরিতে অলরনাথ মন্দিরে অবস্থান করেন। কথিত আছে, রাজবৈদ্যের আয়ুর্বেদিক ভেষজ খেয়ে একপক্ষ কালের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন জগন্নাথ, বলরাম সুভদ্রা। এরপরেই জ্বর থেকে সুস্থ হয়ে উঠে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা রাজবেশে সজ্জিত হয়ে রথযাত্রার মাধ্যমে মাসির বাড়িতে উপস্থিত হন।
এই তিথিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথিও বলা হয়ে থাকে। জ্বর থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ভগবান জগন্নাথ তার ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার সঙ্গে তিনটি বিশাল রথে চড়েন। তিনজনের তিনটি বিশালাকার সুসজ্জিত রথ নিয়ে পৌঁছন তাদের মাসির বাড়িতে। সেখানেই সাত দিন থাকেন তারা।
রবিবার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পাশাপাশি বিখ্যাত হুগলির মাহেশের (Mahesh) মন্দিরের স্নানযাত্রাও। ঐতিহাসিক এই মন্দিরে দীর্ঘ ৬২৭ বছর ধরে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা উত্সব পালিত করা হয়। প্রতিবারের মতো এদিনও সকালে প্রভু জগন্নাথ দেবের বিশেষ পূজা অর্চনার পর নিয়ে যাওয়া হয় মূল মন্দিরের পার্শ্ববর্তী স্নান মন্দিরে।
জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে, এদিন সেখানে হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে ঘড়া ঘড়া গঙ্গাজল এবং দেড় মণ দুধ দিয়ে প্রভুকে স্নান করানো হয়। প্রতিবারের মত নিয়ম মেনে স্নানযাত্রা আয়োজিত হলেও, এবার মাহেশের জগন্নাথ স্নানযাত্রায় রয়েছে চমক। এদিন গজ বেশে প্রভুকে স্নান মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। যা একটা বিরলতম দৃশ্য।
মাহেশের স্নানযাত্রা উপলক্ষে একটি গল্পকথা রয়েছে, যে প্রভুর স্নান যাত্রার সময় মন্দির সংলগ্ন থানে একটি নীলকন্ঠ পাখির দেখা মেলে এবং যতক্ষণ জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার স্নান পর্ব চলে ততক্ষণ ওই পাখিটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু স্নানের পর কেউ আর পাখিটিকে দেখতে পান না। পাখিটি চলে যায় নীলাচলের পথে।
এদিন জগন্নাথদেবের স্নান যাত্রা দেখতে পুরীর মন্দিরে দেখা যায় অসংখ্য ভক্তদের ভিড়। ভিড় হয় মাহেশের মন্দিরেও। বলা হয়ে থাকে, জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা যিনি দর্শন করতে পারেন তার মত পরম ভাগ্যবান আর কেউ নন। জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা দর্শন পেয়ে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলেও মনে করেন অনেকেই।
- Related topics -
- দেশ
- রথযাত্রা
- পুরী
- জগন্নাথ মন্দির