Samudrayaan Mission | চাঁদের পর সমুদ্র জয়ের পালা! সমুদ্রের তলদেশ, যেখানে আলোও পৌঁছায় না সেখানে যাবে ভারতের সাবমার্সিবল মৎস্য-৬০০০০!

Monday, March 11 2024, 6:52 am
highlightKey Highlights

ভারতের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানিয়েছেন, এই প্রথম মানুষ সমেত গভীর সমুদ্রে সাবমার্সিবল পাঠাবে ভারত। ২০২৫ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের ছয় কিলোমিটার নীচে ভারতীয় সাবমেরিন সমুদ্রযান মৎস্য-৬০০০০ পাঠানো হবে। এতো গভীরে পৌঁছায় না আলোও।


মহাকাশ থেকে সমুদ্রের গভীর পর্যন্ত হাতছানি দেবে ভারত। ইতিমধ্যেই চন্দ্রযান-৩ দ্বারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরো (ISRO)। এবার সমুদ্রের তলদেশ, যেখানে আলোও পৌঁছোতে পারে না সেখানে যাবে ভারত! এ প্রসঙ্গে নানা তথ্য জানিয়েছেন ভারতের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রী কিরেন রিজিজু (Kiren Rijiju)। তিনি জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষের দিকে ভারত পা বাড়াবে সমুদ্রযান মিশন (Samudrayaan Mission) এর দিকে। সমুদ্রযানের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের ছয় কিলোমিটার গভীরে সমুদ্রে অধ্যয়নের জন্য পাঠানো হবে বিজ্ঞানীদের। এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিরেণ রিজিজু জানিয়েছেন, ভারতীয় সাবমেরিন (Indian Submarine) 'সমুদ্রযান মৎস্য ৬০০০০ (Samudrayaan Matsya 6000)-এর সাহায্যে মানুষ সমুদ্রের তলদেশে ৬০০০ মিটার (৬ কিলোমিটার) গভীরে যেতে পারবে। এমনকি চলতি বছরের শেষ দিকে এই মিশনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা রয়েছে। এই মিশনের মাধ্যমে সমুদ্রের অতলে ৬ কিলোমিটার গভীরে, যেখানে আলো পর্যন্ত পৌছায়না সেখানে পাঠানো হবে বিজ্ঞানীদের। তাঁরাই নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।

এই প্রথম মানুষ সমেত গভীর সমুদ্রে সাবমার্সিবল পাঠাবে ভারত
এই প্রথম মানুষ সমেত গভীর সমুদ্রে সাবমার্সিবল পাঠাবে ভারত

সমুদ্রযান মিশন কী?

Trending Updates

সমুদ্রযান মিশন (Samudrayaan Mission), ভারতের গভীর মহাসাগরের মিশন পরিকল্পনা, যা ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল। তিন সদস্যের একটি ক্রুকে বহন করার মতো করেই ডিজাইন করা সমুদ্রযান মৎস্য ৬০০০০ (Samudrayaan Matsya 6000) এই মিশনে সাহায্য করবে ভারতকে। জানা গিয়েছে, মধ্য ভারত মহাসাগরে ৬,০০০ মিটার গভীরে সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছানোর জন্য একটি ক্রু অভিযান পরিচালনা করবে এটি। সাবমার্সিবলটি বৈজ্ঞানিক সেন্সর এবং সরঞ্জামগুলির একটি স্যুট দিয়ে সজ্জিত করা হবে, যা পুরো ১২ ঘণ্টা দক্ষভাবে কাজ করতে পারবে। তবে, সমুদ্র তলে কোনও জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্তও মৎস্য ৬০০০০-র কর্মক্ষমতা বাড়ানো যাবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন,এই মিশনের তোড়জোড় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এই বছরের শেষের দিকে প্রথমে অগভীর জলাশয়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে।

এই মিশনের মূল লক্ষ্য,জলের অনেকটা গভীরে খনিজ পদার্থ খুঁজে বের করা। পলিমেটালিক নোডুলস, কোবাল্ট সমৃদ্ধ ম্যাঙ্গানিজ ক্রাস্ট এবং হাইড্রোথার্মাল খুঁজে এনে, তা নিয়ে পরীক্ষা করা। এই পলিমেটালিক নোডুলগুলির মধ্যে তামা, কোবাল্ট, নিকেল এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো অত্যন্ত মূল্যবান ধাতু রয়েছে। এখনও পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন, ফ্রান্স এবং জাপানের মতো দেশগুলি গভীর সমুদ্রে সফল ক্রু মিশন পরিচালনা করেছে। মৎস্য ৬০০০ মিশনে সফল হলে ভারতও সেই তালিকায় যোগ দেবে। মন্ত্রী বলেছিলেন যে তিনি এই প্রকল্পটি পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে বিজ্ঞানীরা এই বছরের শেষ নাগাদ প্রথম পৃষ্ঠের জল পরীক্ষা করে নেবেন।

 উল্লেখ্য,মহাসাগরের গর্ভে এই অভিযান চালানো হলেও, তাতে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে জানান রিজিজু। তাঁর বক্তব্য, মহাসাগরের গভীরের এই অভিযান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'নীল অর্থনীতি' ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সহায়ক হয়ে উঠবে সামুদ্রিক সম্পদ, কর্মসংস্থান হবে, জীবন ধারণের মানোন্নয়ন হবে এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষাও সম্ভব হবে। এই ভারতীয় সাবমেরিন (Indian Submarine) বা 'সমুদ্রযান' অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী, গবেষক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের ছবিও পোস্ট করেন রিজিজু। সকলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন বলে জানান। এমনকি নিজেও সাবমার্সিবল জলযানের ভিতর প্রবেশ করেন। গভীর সমুদ্রে কী অবস্থায় থাকবে 'মৎস্য ৬০০০', অভিযাত্রীরা কোন উপায়ে নিরাপদে থাকবেন, বিজ্ঞানীদের কাছে বুঝে নেন।

সমুদ্র তলে কোনও জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্তও মৎস্য ৬০০০০-র কর্মক্ষমতা বাড়ানো যাবে
সমুদ্র তলে কোনও জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্তও মৎস্য ৬০০০০-র কর্মক্ষমতা বাড়ানো যাবে

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে চাঁদ জয় করেছে ভারত। বর্তমানে ভারত প্রস্তুতি নিচ্ছে বহু প্রতিক্ষীত গগনযান মিশনের জন্য। এমনকি চাঁদে ফের পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে চন্দ্রযান-৪ এরও। এরই মধ্যে সমুদ্র অভিযানের জন্যও তৈরী হচ্ছে ভারত। এর আগে ভারত সাগরে অনেক সাবমেরিন চালু করলেও, এই মিশনের বিষয়টি আলাদা। মানুষ সমেত গভীর সমুদ্রে সাবমার্সিবল পাঠাবে ভারত, এই প্রথম। এছাড়াও এখনও পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন, ফ্রান্স এবং জাপানের মতো দেশগুলি সফলভাবে গভীর সমুদ্রে অভিযান চালিয়েছে। এবার এই ধরনের সমুদ্র মিশনের দক্ষতা এবং ক্ষমতা প্রদর্শন করে ভারত এই দেশের তালিকায় যোগ দেবে বলে আশা।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File