Wrestlers Protest | টেনে হিচড়ে আটকের পর কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে পারে দিল্লি পুলিশ!

রবিবার সংসদের নতুন ভবনের (New Parliament Building) উদ্বোধনের দিনই আটক ভারতের অলিম্পিক পদকজয়ী কুস্তিগীররা! আন্দোলনরত কুস্তিগীরদের সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি ভেস্তে দিতে যন্তরমন্তর (Jantar Mantar) থেকে রীতিমত কুস্তিগীরদের টেনে হিচড়ে ভ্যানে তোলে দিল্লি পুলিশ (Delhi Police)। এই ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়ে কটাক্ষের ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও। ঘটনাকে নিন্দা করে টুইট করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

জাতীয় কুস্তি ফেডারেশন (Wrestling Federation of India) প্রধান ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের (Brij Bhushan Sharan Singh) বিরুদ্ধে যৌণ হেনস্থার অভিযোগ তুলে দির্ঘদিন ধরে দিল্লির (Delhi) যন্তরমন্তরে অবস্থান বিক্ষোভরত সাক্ষী মালিক (Sakshi Mallik), বিনেশ ফোগাট (Vinesh Fogat), সঙ্গীতা ফোগাট (Sangeeta Fogat), বজরং পুনিয়া (Bajrang Punia) প্রমুখদের মত অলিম্পিক (Olympic) পদকজয়ী কুস্তিগীররা। এই আন্দোলনকেই আরও জোরদার করতে রবিবার অর্থাৎ নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের দিন ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি 'মহিলা মহাপঞ্চায়েত' র ঘোষণা করেন কুস্তিগীররা। এরপর থেকেই এই বিক্ষোভ কর্মসূচি বানচাল করতে প্রস্তুত হয় দিল্লি পুলিশ। যন্তরমন্তরে একজোট হয় বিশাল পুলিশবাহিনী। জায়গায় জায়গায় লাগানো হয় ব্যারিকেড। গোটা রাজধানী মুড়ে ফেলা হয় নিরাপত্তায়।

বেলা বাড়তে কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ স্থান থেকে সংসদের নতুন ভবনের দিকে এগোতেই পুলিশ ও বিক্ষোভরত কুস্তিগীরদের মধ্যে ধস্তাধস্তি। মাটিতে শুয়ে পড়ে একে অপরকে রক্ষা করলেও টেনে হিচড়ে সাক্ষী, ফোগাটদের প্রিজন ভ্যানে (Prison Van) তোলে পুলিশ।

ঘটনায় আটক করা হয় বিনেশ, বজরং, সাক্ষী মালিককে। পরে যদিও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় পুলিশের তরফ থেকে। তবে সরিয়ে দেওয়া হয় যন্তরমন্তরে কুস্তিগীরদের বিক্ষোভস্থানের তাবু। প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে এদিন কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিলেন কিন্তু পুলিশ তার জামা ছিঁড়ে দিয়েছে, সঙ্গে তার হাতে চোট লেগেছে বলেও জানান।

আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমার পোশাক ছিঁড়ে দিয়েছে। খুব বাজে মারধর করেছে। আমার হাতে চোট লেগেছে।

অন্যদিকে, ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অলিম্পিক পদকজয়ী বজরং পুনীয়া বলেন, পদ্মশ্রী দেওয়া হলেও এই ঘটনায় পদককে অসম্মান করা হল।

ওকে পদ্মশ্রী দিয়েছে। তার সম্মানটুকুও দিচ্ছে না। পদকের সম্মানও দিচ্ছে না। আমরা পুলিশকে চিঠি দিয়ে অনুমতি চেয়েছিলাম। আমরা সাধারণ নাগরিক। অনুমতি না দিলেও আমরা রাস্তায় হাঁটতে পারি। কেন আটকানো হল?

কেবল কুস্তিগীরদের গায়ের জোড়ে টেনে হিচরে আটক করাই নয়, সূত্রের খবর, এদিনের ঘটনায় চারজন কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে এফাআইআর (FIR) দায়ের করতে পারে দিল্লি পুলিশ। জানা গিয়েছে, সাক্ষী ছাড়াও বজরং পুনিয়া, বিনেশ ফোগাট ও সঙ্গীতা ফোগাটের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে পারে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ (দাঙ্গা), ১৪৮ (সশস্ত্র দাঙ্গা), ১৪৯ (অবৈধ জমায়েত), ৩৫২ (অশান্তিতে ইন্ধন ও হেনস্থা), ৩৫৩ (সরকারি আধিকারিককে হেনস্থা) ও ১৮৬ (সরকারি আধিকারিককে কাজে বাধা) ধারা প্রয়োগ করা হতে পারে।

এদিনের ঘটনায় বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল ছাড়াও তীব্র কটাক্ষের সুর তুলেছেন দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ঘটনার নিন্দা করে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি লেখেন, যেভাবে কুস্তিগীরদের ভ্যানে তোলা হয়েছে তা লজ্জার। কুস্তিগীরদের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রী।

২৮সে মে একদিকে যেমন নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন দ্বারা ভারতের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল, তেমনই দেশের জন্য আন্তর্জাতিক পদক এনে দেওয়া কুস্তিগীরদের সঙ্গে এহেন আচরণ সত্যিই লজ্জার বলে মন্তব্য করছেন প্রথম সারির ব্যক্তি থেকে শুরু করে আমজনতাও।