আজ আমরা জেনে নেব, কিভাবে ব্যাঙ্ক থেকে লোন পাওয়া যাবে।( How to get bank loan}
ব্যাঙ্ক লোন অনেকেরই নানা কারণে দরকার হয়। কিন্তু ব্যাঙ্ক লোন পেতে কী কী করতে হবে, তা আমাদের সকলের জেনে রাখা উচিত।
অনেকেই প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে থাকেন। ব্যাংকের প্রধান কার্যক্রম সমূহের মধ্যে গ্রাহকদের লোন প্রদান করা হল অন্যতম. ব্যাঙ্ক লোন পাওয়ার উপায় অনেকের কাছেই কাঙ্ক্ষিত একটি ব্যাপার। ব্যাংক লোন এর মাধ্যমে লোন গ্রাহক ও ব্যাঙ্ক উভয়ই লাভবান হয়। তবে, ব্যাঙ্ক লোন নেওয়ার আগে লোন সম্পর্কে জরুরী ব্যাপারগুলো জেনে রাখা উচিত।
অনেকেই ব্যাঙ্ক থেকে লোন পাওয়ার সঠিক উপায় বা নিয়ম জানেন না বলে লোন নিতে পারেন না। এবার জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ব্যাঙ্ক লোন পাওয়া সম্ভব এবং ব্যাঙ্ক লোন কত প্রকার।
ব্যাঙ্ক লোন কী? | What is a bank loan?
ব্যাঙ্ক তার তহবিল থেকে জনগণ বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যে ঋণ দেয়, তাকে ব্যাঙ্ক লোন বলা হয়।
- Prof. Hanson -এর মতে জমাতিরিক্ত ঋণ হিসেবে ব্যাঙ্ক তার মক্কেলকে যে অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকে তাকে ব্যাঙ্ক ঋণ বলে।
- Oxford Dictionary অনুসারে ব্যাঙ্ক কর্তৃক একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এবং নির্দিষ্ট সুদের হারে মক্কেলকে দেওয়া হলে তাকে ব্যাঙ্ক লোন বলা হয়।
ব্যাঙ্ক ঋণের প্রকারভেদ | Types of Bank Loan:
বর্তমান সময়কালে ঋণ গ্রহীতাদের নানা ধরনের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে ব্যাঙ্ক ঋণকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১. ঋণের প্রকৃতি অনুযায়ী, ২. ঋণের ব্যবহার অনুযায়ী এবং ৩. ঋণের মেয়াদ অনুযায়ী।
নিম্নে ব্যাঙ্ক ঋণের প্রকারভেদ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হল। ঋণের প্রকৃতি অনুযায়ী, তহবিল থেকে দেওয়া ব্যাঙ্ক লোন এবং দলিল থেকে দেওয়া ব্যাঙ্ক লোন -এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।
ব্যাঙ্ক লোনের মেয়াদ অনুযায়ী লোন তিন প্রকার।
স্বল্পমেয়াদী লোন | Short-term loan:
স্বল্পমেয়াদী লোন সাধারণত ১ থেকে ২ বছরের জন্য হয়ে থাকে। ব্যবসার প্রয়োজনে মূলত স্বল্পমেয়াদী লোন নেওয়া হয়। এসব লোনের ক্ষেত্রে অধিক সুদ প্রযোজ্য হয়। লোন এর সময় অতি সংক্ষিপ্ত হলে স্বাপ্তাহিক পরিশোধের সুবিধাও থাকতে পারে।
মধ্য-মেয়াদী লোন | Mid-term loan:
মধ্যমেয়াদী লোন মূলত ২ থেকে ৫ বছরের জন্য হয়ে থাকে। এটিকে স্বলমেয়াদী ও মধ্যমেয়াদী লোনের মাঝামাঝি লোন বলা চলে।
দীর্ঘমেয়াদী লোন | Long-term loan:
দীর্ঘমেয়াদী লোন ৫ বছরের বেশি মেয়াদের হয়। বেশিরভাগ দীর্ঘমেয়াদি লোন সিকিউরড হয়ে থাকে।
এসব ছাড়াও ব্যাঙ্ক লোনকে আরো বিভিন্ন ধরনে ভাগ করা যায়। কারণ সাপেক্ষে ব্যাংক লোন ও বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে, যেমনঃ
পার্সোনাল লোনঃ ব্যক্তিগত কাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য লোন
বিজনেস লোনঃ ব্যবসা করার বা ব্যবসায় কাজে লাগানোর জন্য লোন
হোম লোনঃ বাড়ি কেনার বা তৈরীর জন্য লোন
অটো লোনঃ গাড়ি কেনার জন্য লোন
এসএমই লোনঃ ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসার জন্য লোন
এডুকেশন/স্টুডেন্ট লোনঃ লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে লোন
প্রবাসী লোনঃ দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য লোন
কৃষি লোনঃ কৃষি সম্পর্কিত কাজের জন্য লোন
কুইক লোনঃ জরুরি প্রয়োজনে প্রদত্ত লোন
ব্যাঙ্ক লোন পাওয়ার শর্ত সমূহ | Terms & conditions of Bank Loan:
লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক তার মক্কেলকে কিছু শর্ত প্রদান করবে, এটাই স্বাভাবিক। আপনি যদি ব্যাঙ্ক প্রদত্ত শর্তসমূহ পূরণ করতে পারেন, তবেই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
লোন নেওয়ার জন্য মক্কেলের কাছ থেকে তার ব্যক্তিগত তথ্য, চাকরি বা ব্যবসার অভিজ্ঞতা, ক্রেডিট হিস্ট্রি, লোন নেওয়ার কারণ এবং ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি ঐ মক্কেল যদি পূর্বে কোনো ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে থাকে তাহলে তাকে সেই সংক্রান্ত সকল তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে জমা দিতে হবে।
ব্যাঙ্ক লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র | Documents required to get a bank loan:
ব্যাঙ্ক লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলি হল :-
- লোন আবেদনের ফর্মে যথাযথভাবে স্বাক্ষর করতে হবে
- সম্প্রতি তোলা রঙিন ছবি
- জাতীয় পরিচয়পত্র/ড্রাইভিং লাইসেন্স/পাসপোর্ট এর ফটোকপি
- অফিস আইডি ফটোকপি
- মাসিক বেতনের সার্টিফিকেট
- যেকোনো ইউটিলিটি বিল এর কপি
- ট্রেড লাইসেন্স
- শেষ ৩ বছরের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন অনুলিপি
- চেকবুক পেজ
- ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট
এইসব নথির পাশাপাশি ব্যাঙ্ক লোনের জন্য যিনি গ্যারেন্টার হবেন তাঁর ছবি, সরকারি ফটো আইডি, অফিস আইডি, ইত্যাদি কাগজপত্র চাওয়া হয়ে থাকে। লোন গ্রহীতা যদি লোন পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তবে ব্যাঙ্কের কাছে গ্যারান্টারকে জবাবদিহি করতে হয়। এছাড়া উইটনেস বা স্বাক্ষী দরকার হবে।
ব্যাঙ্ক লোনের সুবিধা | Advantages and disadvantages of a bank loan:
- লোন এর মেয়াদের উপর ভিত্তি করে সময়সাপেক্ষে লোনের অর্থ পরিশোধ করা যায়।
- সময়ের আগে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে আর্থিক সাহায্য করতে পারে ব্যাঙ্ক লোন।
- ইন্টারেস্ট যেহেতু আগে থেকেই নির্দিষ্ট থাকে, তাই পরিশোধের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করে রাখা সম্ভব।
- ক্রেডিট কার্ড বা মহাজন থেকে ধার করা টাকার ইন্টারেস্ট রেট এর চেয়ে ব্যাঙ্ক লোন এর ইন্টারেস্ট রেট অনেক কম হয়ে থাকে।
ব্যাঙ্ক লোনের অসুবিধা | Disadvantages of a bank loan:
- শিক্ষা, চিকিৎসা বা বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে লোন নেওয়ার টাকা থেকে যেহেতু লাভ আসেনা, তাই বেশিরভাগ সময় ইন্টারেস্ট এর টাকা অনেক বেশি মনে হতে পারে।
- বাড়ী বা গাড়ি বন্ধক রেখে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে লোন পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঘর বা গাড়ি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে
- ব্যাঙ্ক লোন এর সাথে প্রযোজ্য বিভিন্ন অতিরিক্ত ফি লোনের বোঝা বড় করে তুলতে পারে।
- Related topics -
- দেশ
- ব্যাঙ্ক
- রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া