কালীপূজা

Bhoot Chaturdashi 2024 । 'ভূতচতুর্দশী' কি আসলে ভূতেদের 'রি ইউনিয়ন'? আদৌ এদিন আসে ভূত? এদিন কেনই বা খাবেন চোদ্দ শাক?

Bhoot Chaturdashi 2024 । 'ভূতচতুর্দশী' কি আসলে ভূতেদের 'রি ইউনিয়ন'? আদৌ এদিন আসে ভূত? এদিন কেনই বা খাবেন চোদ্দ শাক?
Key Highlights

প্রতি বছর আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষে পালিত হয় চতুর্দশী তিথি। এদিন ১৪ শাক খেয়ে ১৪জন পূর্বপুরুষকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয় বাড়ির চারপাশে। পশ্চিমের ‘হ্যালোইন’ বা 'হ্যালোউইন' প্রথার সঙ্গে বাঙালির 'ভূত চতুর্দশী' অনেকাংশে মিল আছে। যদিও দুটি প্রথা পালনের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ আলাদা, আলাদা তাদের নিয়মনীতিও। পূর্বপুরুষদের মনে রাখার উদ্দেশ্যে পালিত এই উৎসব আদ্যোপান্ত ভারতের নিজস্ব ইনভেনশন।

সামনেই কালীপুজো। আর তার ঠিক আগেই পালন করা হয় ভূত চতুর্দশী। কেউ কেউ বলেন, এই তিথিতে দেবী কালী ভূত এবং প্রেতাত্মা নিয়ে মর্ত্যে আসেন অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে। আবার কারও মতে, এই তিথিতে দৈত্যরাজ বলি পৃথিবীতে আসেন পূজা নিতে,সঙ্গে আসে নানা অশুভ শক্তি। অনেকে আবার মনে করেন, এই তিথিতে পূর্বপুরুষের অতৃপ্ত আত্মারা মর্ত্যলোকে আসেন মুক্তির আশায়। তাদের মুক্তি কামনায় এই দিন সন্ধ্যায় ১৪ টি প্রদীপ জ্বালানো হয় বাড়ির চারপাশে, খাওয়া হয় ১৪ শাকও। 

ভূতচতুর্দশীর ইতিহাস : এই দিনটির পিছনে আছে এক পৌরাণিক কাহিনী। দানবরাজ বলির দানবীর হিসেবে বেশ নামডাক ছিল। তিনি একবার স্বর্গ-মর্ত্য এবং পাতালের অধীশ্বর হন। তাতে তার অহংকার বেড়ে যায়। কথায় কথায় তিনি দেবতাদের হেয় করতে শুরু করেন। এ ঘটনায় দেবতারা ভীষণ রেগে যান। তখন দেবগুরু বৃহস্পতির পরামর্শে, ভগবান বিষ্ণু বামনরূপে রাজা বলির কাছে এলেন ভিক্ষা চাইতে। তিনি, তিন পা পরিমাণ জমি ভিক্ষা চাইলেন রাজা বলির কাছে। দানবীর বলি বিষ্ণুর ছলনা বুঝতে পেরেছিলেন, তবুও তিনি দান দিতে রাজি হলেন। বামনরূপী ভগবান বিষ্ণু তাঁর একটা পা রাখলেন স্বর্গে, আর একটা রাখলেন মর্ত্যে। এবার তাঁর নাভি থেকে বের হল আর একটা পা। এই পা রাখলেন রাজা বলির মাথায়। ধীরে ধীরে দৈত্যরাজ বলি ঢুকে গেলেন পাতালে। বলি জেনে বুঝেও দান দিয়েছিলেন বলে ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির ‘নরকাসুর’ রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন মর্ত্যলোকে। সারাবছরে মাত্র একবার দৈত্যরাজ মর্ত্যে উঠে আসেন পুজো নিতে, সঙ্গে থাকে রাজার অসংখ্য ভুতপ্রেত রুপী অনুচরেরা, তাই এই তিথির আরেক নাম 'ভূত চতুর্দশী'। আবার কারো কারো মতে, এমনই এক চতুর্দশী তিথিতে মা কালী নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। সেই থেকে এই তিথি ‘নরক চতুর্দশী’ নামে পরিচিত।

ভূত চতুর্দশীর রীতিনীতি : ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতি বছর আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষে পালিত হয় চতুর্দশী তিথি। এদিন ১৪ শাক খেয়ে ১৪জন পূর্বপুরুষকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই চোদ্দটি শাক হলো ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ. শুশনী, ভাঁটপাতা, পলতা পাতা। এইসময় শাক খাওয়ার পেছনে একটি বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। আশ্বিন ও কার্তিক মাসকে ‘যমদষ্টা কাল’ বলা হয়। এই সময় শীতের মরসুম শুরু হয়, ফলে মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই রোগভোগ থেকে আগাম সুরক্ষা পেতে এই ১৪ শাক ভক্ষণের নিয়ম আছে। এছাড়াও, এদিন সন্ধ্যাবেলা বাড়ির চারপাশে জ্বালানো হয় চোদ্দটি তিলের তেলের প্রদীপ। এক একটি প্রদীপ উৎসর্গ করা হয় এক-একজন পরলোকগত সদস্যের উদ্দেশ্যে। বিশ্বাস করা হয়, তাঁরা যেখানেই থাকুক, এই প্রদীপের আলো তাঁদের আশ্বস্ত করবে যে পরিবার, সন্তান-সন্ততি তাঁদের ভোলেনি। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে, এবছর চতুর্দশী শুরু হচ্ছে ৩০শে অক্টোবর বুধবার, দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে। চতুর্দশী ছাড়ছে ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, দুপুর ৩টে ৫৩ মিনিট নাগাদ।।এদিন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যমরাজের পুজোরও প্রচলন আছে।

এদিন কী কী করবেন? জ্যোতিষশাস্ত্র মতে এই দিনে বিশেষ কয়েকটা নিয়ম পালন করলে জীবন থেকে বিপদের আশঙ্কা কমে যায়।  কী কী করবেন এদিন, দেখে নিন এক নজরে-

  • এই দিন বাড়িতে চোদ্দ শাক অবশ্যই খাবেন। 
  • এই দিন সন্ধ্যাবেলা চোদ্দ প্রদীপ দেওয়ার নিয়মও রয়েছে। জেনে নিন বাড়ির ঠিক কোন কোন স্থানে প্রদীপ দিতে হবে? বাড়ির সদর দরজার দু’পাশে দেবেন দুটো প্রদীপ।এছাড়া ঘরের প্রবেশ পথের মাঝখানে একটা মাটির প্রদীপে সামান্য গুড় দিয়ে জ্বালাবেন। সৌভাগ্য বৃদ্ধি করতে এই দিন বাড়ির দক্ষিণ দিকে প্রদীপ জ্বালাবেন। 
  • ভূত চতুর্দশীর দিন সকালবেলা একটা লাল কাপড়ে কিছুটা নুন এবং অল্প পরিমান কালো সর্ষে নিয়ে ঠাকুরের স্থানে রেখে দিন। সন্ধ্যায় সেই নুন এবং সর্ষে বাড়ির চারকোণে ছড়িয়ে দিন। অশুভ শক্তি আপনার বাড়ির ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারবে না। 
  • অশুভ শক্তি দূর করতে এই দিন সৈন্ধব লবন, নিমপাতা, কালো সর্ষে, লবঙ্গ এবং কর্পূর, ধুনোর সঙ্গে মিশিয়ে বাড়িতে জ্বালাতে পারেন ।
  • জ্যোতিষমতে, এদিন শিবপুজো করলে নরক গমনের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। তাই, ভূত চতুর্দশীর দিন বাড়িতে মহাদেবের পুজোও করতে পারেন।

এদিন কী কী করবেন না ? এদিন অশুভ শক্তিদের মর্ত্যে আসার দিন, তাই নেগেটিভ শক্তির প্রভাব এ সময় বেশ জোরালো থাকে। এই বিশেষ তিথিতে নিয়ম মেনে কাজ করাই ভালো। জেনে নিন এই দিন কী কী করবেন না-

  • কালীপুজো এবং ভূত চতুর্দশীর দিন শ্মশান অথবা কবরস্থানের ধারে কাছেও যাবেন না। নইলে অশুভ শক্তি আপনার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। 
  • বাড়িতে ভাঙা বাসন থাকলে এদিন তা সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন অনেক জ্যোতিষবিদ। তাহলে জীবনে সাফল্য আসে দ্রুতবেগে।
  •  সন্ধের পরে বাড়িঘর ঝাঁড় দেবেন না। তাতে দেবী লক্ষ্মী আপনার ওপর রুষ্ট  হতে পারেন।
  • রাতে রান্নাঘর নোংরা রেখে শোবেন না। পরিষ্কার রান্না ঘর শুভ শক্তিকে আকর্ষণ করে। 

ভূত চতুর্দশীর সময় বিশ্বের নানান প্রান্তে পালন করা হয় 'হ্যালোউইন'। পশ্চিমের এই‘হ্যালোইন’ বা 'হ্যালোউইন' প্রথার সঙ্গে বাঙালির 'ভূত চতুর্দশী' অনেকাংশে মিলে যায়। যদিও দুটি প্রথা পালনের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ আলাদা, আলাদা তাদের নিয়মনীতিও। পূর্বপুরুষদের মনে রাখার উদ্দেশ্যে পালিত এই উৎসব আদ্যোপান্ত ভারতের নিজস্ব ইনভেনশন। তাই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আজও দীপাবলির আগের দিন রাতে জ্বালানো হয় তিলের তেলের প্রদীপ, বংশের মঙ্গলাকাঙ্খায়। 


Doomsday Fish | আরও কোনও বিপর্যয় আসন্ন ভারতে? তামিলনাড়ুতে ধরা পড়লো 'ডুমসডে ফিশ'!
SSC | শিক্ষামন্ত্রীর আবেদন কাজে লাগলো, প্রথম দিনেই এসএসসি পোর্টালে আবেদন করলেন ১০,০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা!
Amarnath Yatra | অমরনাথের যাত্রাপথে আর উড়বেনা বেলুন-ড্রোন-কপ্টার! ‘নো-ফ্লাইং জ়োন’ ঘোষণা জম্মু কাশ্মীর সরকারের
Mohun Bagan transfer Ban | মোহনবাগানের ওপর থেকে উঠলো ফিফার নিষেধাজ্ঞা, নতুন ফুটবলার সই করাতে রইলো না বাধা
Kedarnath Landslide | ধসে পাথর চাপা পড়ে মৃত্যু এক পুণ্যার্থীর! অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সোনপ্রয়াগ থেকে কেদারনাথ যাত্রা!
Abhijit Ganguly | ICUতে ভর্তি প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়! তৈরী হলো সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড!
Ahmedabad Plane Crash | বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবার ও একমাত্র জীবিত যাত্রীকে ২৫ লক্ষ টাকা দেবে এয়ার ইন্ডিয়া!