Hair Mask for Dandruff | খুশকি কি ছোঁয়াচে? কীভাবেই বা তৈরী হয় খুশকি? জানুন খুশকি সম্পর্কে এবং কীভাবে বানাবেন খুশকির জন্য হেয়ার মাস্ক!
শীতকালে খুশকির সমস্যা কমবেশি দেখা যায় সকলের। এই সমস্যা দূর করতে পারে বাড়িরই বানানো হেয়ার মাস্কের মতো কিছু ঘরোয়া টোটকা।
শীতকালে কমবেশি সকলেই খুশকির সমস্যায় ভোগেন। এক্ষেত্রে খুশকি দূর করার শ্যাম্পু (Anti dandruff shampoo), তেল নানান সামগ্রী ব্যবহার করেও উপায় হয়না কিছুতেই। পাশাপাশি খুশকি নিয়ে অনেকেরই অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। ফলে অনেকেরই প্রশ্ন থেকে যায় খুশকির সমস্যা আসলে কী? এই সমস্যা কেন হয়? খুশকি কি ছোঁয়াচে? (Is dandruff contagious?) কোন কোন দিকে খেয়াল রাখলে এই সমস্যা দূর হবে? শীতে খুশকির চিন্তা দূর করতে এই জেনে নিন এই প্রশ্নের উত্তরগুলি!
খুশকি কী? । What is Dandruff?
ত্বক ও চর্মরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, আমাদের ত্বকে কিছু গ্ল্যান্ড আছে, যা সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড নাম পরিচিত, এই গ্ল্যান্ড একটা সিবাম ক্ষরণ করে। এটি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ একটি তেলজাতীয় পদার্থ। যা ত্বক নরম রাখার কাজ করে। বছরের এক একসময়ে এক একরকমের সিবাম ক্ষরণ হয়। তবে এই সিবাম শীতকালে তুলনামূলক বেশি ক্ষরণ হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে এই ক্ষরিত পদার্থ বায়ুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে প্রদাহ তৈরি করে। যখন এই প্রদাহ তৈরি হয়, তখনই মাথা চুলকায়, লাল হয়ে যায়। এর সঙ্গে ডেড স্কিন স্কেল মিশে খুশকি তৈরি হয়। মূলত মুখে এবং মাথার ত্বকে এই ধরনের গ্ল্যান্ড বেশি থাকে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুশকি এক একজনের এক এক রকমের হয়। কারও হালকা পাউডারের মতো হতে পারে। কারও 'অয়েলি গ্রিসি স্ক্যাল্প' হয়, অনেকের এগজিমার মতো হয়। নানা জনের নানা রকমের সমস্যা দেখা যায়। তবে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস সবচেয়ে কমন। অল্প চুলকানি অথবা সামান্য খুশকি হতে পারে। এটা খুবই সাধারণ। অনেকসময় সেবো-সোরিয়াসিস হতে পারে। এক্ষেত্রে খুশকি বেশি মোটা হয়, চুলকানি বেশি হয়। উল্লেখ্য, অনেকেরই প্রশ্ন থাকে খুশকি কি ছোঁয়াচে? (Is dandruff contagious?)। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, খুশকি সেভাবে ছোঁয়াচে নয়।
খুশকির প্রভাব । Effect of Dandruff :
খুশকি নিজেই একটি সমস্যা। তবে খুশকি বাড়াবাড়ি হলে অন্যত্রও সমস্যা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চর্ম বিশেষজ্ঞরা। দেখে নিন খুশকির বাড়াবাড়িতে কী কী সমস্যা হতে পারে-
- অনেকসময় খুশকি লাগামছাড়া হলে মুখে, ঘাড়ে, বুকেও চুলকানি, অস্বস্তি-দানা দানা হতে পারে।' যাঁদের ক্ষেত্রে অ্যাকিউট ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ডিসঅর্ডার আছে- তাঁদের সেবোরিক ডার্মাটাইটিস মারাত্মক হতে পারে বলে। তবে এই ধরনের রোগ খুব কম ক্ষেত্রে হয়।
- অনেকেরই খুশকি বেশি হলে চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যা থাকে। পাতলা হয়ে যেতে থাকে চুল।
- আসলে শরীরে থাকা অ্যান্ড্রোজেন সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ডের কাজ বাড়িয়ে দেয়। তখণ সিবাম ক্ষরণ বেশি হয়। খুশকির সমস্যাও বাড়তে থাকে। অ্যান্ড্রোজেন (Androgen) মাথার সামনের দিকের চুলের হেয়ার ফলিকলের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়, তার ফলে সেই গ্ল্যান্ড ছোট হতে হতে ক্রমশ নষ্ট হয়ে গেলে চুল ঝরে যায়।
- মুখের ত্বকের ক্ষেত্রে সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড বেশি ইনফ্লেমড থাকলে গোটা-এর মতো হয়।
কীভাবে খুশকি দূর করবেন? । How to get rid of Dandruff?
অনেকেই খুশকি থেকে মুক্তি পেতে খুশকি দূর করার শ্যাম্পু (Anti dandruff shampoo) ব্যবহার করে থাকেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বলছেন, সামান্য খুশকির সমস্যা হলে বাজারচলতি অ্যান্টি ড্যানড্রফ শ্যাম্পু কাজ করে দেয়। সিবাম ক্ষরণ হলে, শ্যাম্পুর মাধ্যমে চটজলদি ধুয়ে তুলে দিলে প্রদাহ কম হবে, খুশকির সমস্যাও লাগামে থাকবে। বাজারচলতি শ্যাম্পুগুলি এমনই কাজ করে। উল্লেখ্য, যাঁরা খুশকির সমস্যায় ভুগে থাকেন তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘরোয়া টোটকার উপর ভরসা রাখেন। এক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরী হেয়ার মাস্ক (Hair Mask)। দেখে নিন খুশকির জন্য হেয়ার মাস্ক (Hair Mask for Dandruff) বানানোর ৪টি উপায়।
টক দই-লেবু-মধুর হেয়ার মাস্ক :
খুশকির জন্য হেয়ার মাস্ক (Hair Mask for Dandruff) বানাতে প্রথমে ১/২ কাপ টক দইয়ের সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস ও ১ চামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি ১ ঘণ্টা চুলে ভাল করে লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে একবার করে এই হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। এই হেয়ার মাস্কে পাতিলেবু, টক দই ও মধু রয়েছে। লেবুর রস স্ক্যাল্পের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখে, টক দই চুলের ক্ষয় নিরাময়য় করে এবং মধু প্রদাহ কমায়। তাই খুশকি তাড়াতে এই হেয়ার মাস্ক সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
মেথি বীজ ও লেবুর হেয়ার মাস্ক :
খুশকির সমস্যা দূর করতে মেথি বীজ ও লেবু দিয়ে হেয়ার মাস্ক (Hair Mask) তৈরি করতে পারেন। লেবুর মধ্যে ভিটামিন সি, সাইট্রিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, আয়রন এবং কপার রয়েছে। লেবুর মধ্যে থাকা অ্যাসিডিটিক উপাদান খুশকির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এর জন্য প্রয়োজন ১ চা চামচ মেথি বীজ এবং ১ চা চামচ লেবুর রস। প্রথমে মেথির বীজ সারারাত ধরে জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন এর পেস্ট তৈরি করুন। এতে লেবুর রস যোগ করুন। এটি স্ক্যাল্পে ও চুলে ভাল করে প্রয়োগ করুন। ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর একটি মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এক সপ্তাহ ব্যবহার করার পরই আপনি পার্থক্য লক্ষ্য করতে পারবেন।
ভিনিগার-গ্রিন টির হেয়ার মাস্ক :
ভিনিগার দিয়েও দূর করা যায় খুশকির সমস্যা। এর জন্য ১ কাপ গ্রিন টি বানিয়ে নিন। এরপর মধ্যে ২-৩ ফোঁটা পিপারমিন্ট এসেনশিয়াল অয়েল ও ১ চামচ ভিনিগার মিশিয়ে স্ক্যাল্প ও চুলে লাগান। ভিনিগারের হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের পর অবশ্যই সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। গ্রিন টিয়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে, যা খুশকি দূর করে। পাশাপাশি এসেনশিয়াল অয়েল প্রদাহ কমায় এবং ভিনিগার স্ক্যাল্পের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য ও তেল নিঃসরণ প্রতিরোধ করে।
মেথি বীজ ও ডিমের হেয়ার মাস্ক :
এই হেয়ার মাস্কটি তৈরি করতে প্রয়োজন ২ চামচ মেথি বীজ এবং ১টি ডিমের কুসুম। প্রথমে মেথির বীজ সারারাত ধরে জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন এর পেস্ট তৈরি করুন। এতে ডিমের হলুদ অংশটা যোগ করুন। এটি স্ক্যাল্পে ও চুলে ভাল করে প্রয়োগ করুন। ৪৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর একটি মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার করে ব্যবহার করুন এই হেয়ার মাস্ক। ধীরে ধীরে খুশকির পাশাপাশি চুলের শুষ্কতাও দূর হয়ে যাবে এই হেয়ার মাস্কের ব্যবহারে।
আরও পড়ুন : রুক্ষ্ম চুলের জেল্লা ফিরিয়ে চুল ঘন করতে সঠিক পদ্ধতিতে মাখুন ডিম! বাড়িতে বানান ডিম দিয়ে হেয়ার মাস্ক!
উল্লেখ্য, শীতকালে খুশকি সাধারণ বিষয় হলেও এই নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া দরকার। প্রয়োজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুশকি দূর করতে ঘরোয়া টোটকা কয়েকদিন ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যদি তাতে না কমে বা বারবার খুশকির সমস্যা ফিরে আসে তখন সতর্ক হতে হবে।অনেকের সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়ে খুশকি, তেমন হলে কিংবা চুলকানির সমস্যা লাগামছাড়া হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে জানতেই হবে আদৌ সাধারণ খুশকি না কি অন্য কোনও সংক্রমণের কারণে এমনটা হচ্ছে।