দীপাবলি ২০২৩

Dhanteras 2023 | ধনতেরাসে ৫০ বছর পর বিরল যোগ! দেবী লক্ষ্মীর কৃপা পেতে কখন জ্বালাবেন যমের প্রদীপ? কখনই বা করবেন কেনাকাটা?

Dhanteras 2023 | ধনতেরাসে ৫০ বছর পর বিরল যোগ! দেবী লক্ষ্মীর কৃপা পেতে কখন জ্বালাবেন যমের প্রদীপ? কখনই বা করবেন কেনাকাটা?
Key Highlights

আগামী ১০ই নভেম্বর ধনতেরাস ২০২৩। এই বছর ধনতেরাসের দিন ৫০ বছর পর পড়েছে বিরল যোগ। গৃহে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি আনতে ঠিক সময়ে কিনুন বিশেষ কিছু জিনিস। নিয়ম মেনে জ্বালান যমের প্রদীপ।

সামনেই দীপাবলি ২০২৩ (Diwali 2023)। হিন্দু মতে ধনতেরাস (Dhanteras) থেকে শুরু হয় দীপাবলির উৎসব। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী,  ধনতেরাস নিয়ে একাধিক রীতি রেওয়াজ রয়েছে। মূলত এই দিনকে ধন সম্পত্তির দিন হিসেবে মনে করা হয়। এদিন সন্ধ্যায় দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে ভগবান কুবেরের পুজো করা হয়। এই সময়ে মৃত্যুর দেবতা যমরাজেরও পুজো করা হয় এবং সন্ধ্যায় দক্ষিণ দিকে যম প্রদীপও জ্বালানো হয়। আর যেহেতু ধনতেরাস এবং লক্ষ্মী পূজা একই দিনে পড়ে, তাই কিছু জিনিস কেনা এবং নির্দিষ্ট কাজ করা শুভ বলে মনে করা হয়।

ধনতেরাস ২০২৩ তারিখ । Dhanteras 2023 Date :

চলতি বছরে ১২ই  নভেম্বর ২৫ কার্তিক পড়ছে কালীপুজো। এদিকে, সেই সময়কালের মধ্যে রয়েছে দীপাবলি ২০২৩ (Diwali 2023)। অমাবস্যার তিথিতে পালিত হয় দীপাবলির উৎসব। আর দীপাবলীর আগে ত্রয়োদশীর বিশেষ তিথিতে পালিত হয় ধনতেরাস। ধনতেরাস ২০২৩ (Dhanteras 2023) এবার পড়েছে  ১০ই নভেম্বর। ধনতেরাস ২০২৩ তারিখ (Dhanteras 2023 Date)এ ধন ত্রয়োদশী তিথি পড়ছে।

ধনতেরাস ২০২৩ এর তিথি । Dhanteras 2023 Tithi :

ধনতেরাসের তিথি পড়ছে ১০ই নভেম্বর বিকেল ৫.২৭ মিনিট থেকে। আর এই তিথি চলবে সন্ধ্যে ৭.১৯ মিনিট পর্যন্ত। হিন্দু শাস্ত্র মতে বলা হয়, এই শুভ সময়ের মধ্যে কেনাকাটা করলে ঘরে সমৃদ্ধি আসে। যার ফলে সেই তিথি দেখেই শুরু হয় ধনতেরাসের কেনার পর্ব। এছাড়াও এই উৎসব উপলক্ষ্যে বহু জায়গাতেই দেখা যায় দীপাবলি মেলা। 

 অন্যান্য বারের ধনতেরাস থেকে চলতি বছরের ধনতেরাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ধনতেরাস ২০২৩ (Dhanteras 2023) এ প্রায় ৫০ বছর পর যম পঞ্চক শিববাস এবং প্রদোষ ব্রতের যোগ রয়েছে। অর্থাৎ এই দিন দেবী লক্ষ্মীর পাশাপাশি শিবেরও পূজা হবে। সেই সঙ্গে এ দিন প্রদোষ উপবাসও পালন করা হবে। তাই এই দিনে ভক্তরা দেবী লক্ষ্মীর পাশাপাশি শিবেরও আশীর্বাদ পেতে চলেছেন। নিয়ম অনুসারে এই দিনে, প্রদোষ কালের সময় দেবী লক্ষ্মী এবং ভগবান শিবের পূজা করা হয়, তাই ধনতেরাসের দিন, লক্ষ্মীদেবীকে পূজা করার শুভ সময় হবে ৫টা বেজে ২৯ মিনিট থেকে ৮টা বেজে ৭ মিনিট পর্যন্ত। 

ধনতেরাস (Dhanteras) শব্দের 'ধন' মানে সমৃদ্ধি আর 'তেরাস' মানে তেরো দিন। ধনতেরাস উৎসব সম্পদ এবং স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত। শাস্ত্র মতে সমুদ্র মন্থনের সময়, যেদিন ভগবান ধন্বন্তরী অমৃত পাত্র নিয়ে আবির্ভূত হন, সেই দিনটিকে ধনতেরাস হিসাবে পালন করা হয়। ফলে মনে করা হয়, এই দিনে দেবী লক্ষ্মী ও কুবের দেবের আরাধনা করলে ধন-সম্পদ ও দ্রব্যাদি ১৩ গুণ বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে ভগবান ধন্বন্তরীর পুজো করলে তেরো গুণ উপকার পাওয়া যায়। তাই এই দিনে ১৩ নম্বরটিকে শুভ বলে মনে করা হয়। ধনতেরাসে, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে, লোকেরা ভগবান কুবের, দেবী লক্ষ্মী এবং আয়ুর্বেদের জনক ভগবান ধন্বন্তরীর পুজো করে সম্পদ ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে। এছাড়াও ধনতেরাস সম্পর্কে আরেক ঘটনাও কথিত আছে। বলা হয়, রাজা হিমার ১৬ বছরের ছেলের এক অভিশাপ ছিল। তার কুষ্টিতে লেখা ছিল, বিয়ের চার দিনের মাথায় সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হবে। বয়স বাড়লে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ে হয় রাজপুত্রের। সেই মতো তার অভিশাপের কথা জানতে পারে তার স্ত্রী। ফলে স্বামীকে রক্ষা করার জন্য সেই অভিশপ্ত দিনে সে তার স্বামীকে ঘুমোতে দেয়নি। সারা ঘরে বাতি জ্বালিয়ে গল্প-গান করতে থাকে রাজপুত্রের স্ত্রী। এমনকি শোয়ার ঘরের বাইরে সে সমস্ত গয়না ও সোনা-রূপার মুদ্রা জড়ো করে রাখে। যখন মৃত্যুর দেবতা যম তাদের ঘরের দরজায় আসে, আলো আর গয়নার জৌলুসে তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে যায়। রাজপুত্রের শোয়ার ঘর পর্যন্ত তিনি পৌঁছন ঠিকই। কিন্তু সোনার উপর বসে গল্প আর গান শুনেই তাঁর সময় কেটে যায়। এভাবে সকাল হয়ে যায় এবং কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যান তিনি। ফলে রাজপুত্রের প্রাণ বেঁচে যায়। পুত্রের অভিশাপে মৃত্যু না হওয়ার আনন্দে এই ঘটনার পর দিন থেকেই ধনতেরাস পালন শুরু হয়।

ধনতেরাসের দিন সোনা ও রুপোর গয়না এবং ঝাড়ু কেনা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। এছাড়াও এই দিনে বিশেষ ধাতু কিনলে দেবী লক্ষ্মী প্রসন্ন হন বলেও মনে করা হয়। কথিত আছে যে, এই দিনে যা কেনা হয় তা সারা বছরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পায়। বলা হয়, ধনতেরাসের দিন দেবী লক্ষ্মী তাঁর ভক্তদের গৃহে যান ও তাঁদের ইচ্ছাপূরণ করেন। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধনতেরাসের দিন সোনা কেনা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। বিশেষত নির্দিষ্ট সময়ে সোনা বা কোনও ধাতু কিনলে মা লক্ষ্মী ও ধনকুবের দু হাত তুলে আশীর্বাদ করেন বলে মনে করা হয়। 

উল্লেখ্য, ধনতেরাসের দিন যমের প্রদীপ জ্বালালেও শুভ হয় বলে মনে করা হয়। ধনতেরাসের সন্ধ্যায়, দেবী লক্ষ্মী এবং ভগবান কুবেরের পুজোর পাশাপাশি, যমরাজকে খুশি করার জন্যও পুজো করা হয়। ফলে এদিন বাড়ির দক্ষিণ দিকে চারমুখী প্রদীপ জ্বালানোর রীতি রয়েছে। এই চারমুখী প্রদীপকে যম প্রদীপ বলা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে বাড়ির দক্ষিণ দিকের অধিপতি হলেন যমরাজ। পৌরাণিক বিশ্বাস আছে যে ধনতেরাসে দক্ষিণ দিকে যমের প্রদীপ জ্বাললে যমরাজ প্রসন্ন হন। ঘরে সুখ, শান্তি ও স্বাস্থ্য থাকে। তবে এই প্রদীপ জ্বালানোরও নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। ধনতেরাসে কেনাকাটা, প্রদীপ দান এবং পুজোর শুভ সময় শুরু হবে ১০ই নভেম্বর বিকেল ০৫ টা ৪৬ মিনিট থেকে ০৭ টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত। শুভ সময়ের মোট সময়কাল ১ ঘন্টা ৫৬ মিনিট। বৃষ লগ্নের সময়কাল বিকেল ০৫ টা ৪৬ মিনিট থেকে ০৭ টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত। এই সময়েই যমের প্রদীপ জ্বালানো শুভ। এই সময়ে বাড়ির দক্ষিণ দিকে মুখ করে প্রদীপ জ্বালালে দেবী লক্ষ্মী খুশি হন এবং প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেন।