New Parliament Building | নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন কেন করবেন প্রধানমন্ত্রী? রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ না করায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা!
রবিবার নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করবেন নরেন্দ্র মোদি। রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ না করার প্রতিবাদে অনুষ্ঠান বয়কট করার পর এবার সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ বিরোধীরা।
আগামী ২৮সে মে উদ্বোধন হতে চলেছে ভারতের (India) নতুন সংসদ ভবন (New Parliament Building)। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে শুরু হয়েছে নানান তর্ক-বিতর্ক, জল্পনা। এবার সেই তর্কের আগুনেই পড়লো ঘি। কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)। তবে সংসদ ভবনের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী নয়, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (President Draupadi Murmu) হাত ধরেই হওয়া উচিত বলে এবার সুপ্রিম কোর্টে দায়ের (Supreme Court) করা হল মামলা।
কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে আগেই জানানো হয়, চলতি মাসের ২৮ তারিখ অর্থাৎ আগামী রবিবার সংসদের নতুন ভবন উদ্বোধন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পর্যন্ত করা হয়নি দেশের রাষ্ট্রপতিকে। যার ফলে বিরোধীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে পারেন না। নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করার অধিকার রয়েছে রাষ্ট্রপতির। এই কারণ তুলে এদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাকারীর বক্তব্য, রাষ্ট্রপতিকে এই সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানিয়ে দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার সম্মিলিতভাবে ১৯টি বিরোধী দল নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এই বয়কট তালিকায় রয়েছে কংগ্রেস (Congress), তৃণমূল (TMC) ছাড়াও আপ (AAP), শিব সেনা (Shiv Sena), আরজেডি (RJD), জেডিইউ (JDU), ডিএমকে (DMK), এনসিপি (NCP), সিপিআইএম (CPIM) -সহ আরও অনেক দল।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমন্ত্রণ না করার প্রতিবাদে একজোট হয়ে মোদিকে আক্রমণ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা (Arvind Kejriwal)। পাশাপাশি কংগ্রেসের প্রশ্ন, কেন দামোদর সাভারকারের (Damodar Savarkar) জন্মদিনের দিনটিকেই এই সংসদ ভবন উদ্বোধনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে, টুইটারে বিজেপি প্রধানকে খোঁচা মেরে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রর (Trinamool Congress MP Mahua Moitra) প্রশ্ন, সংসদের নতুন ভবনের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান কি না।
বিরোধী দলগুলির নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করা নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেন নরেন্দ্র মোদি নিজেও। তিনদিনের বিদেশ সফর থেকে বুধবার রাতে দেশে ফিরে মোদি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার (Australia) অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ (Anthony Albanese)-র সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সেদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী সাংসদরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা তোপ, অস্ট্রেলয়ায় কেবল দেশের জন্য সকলে একসঙ্গে ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ায় আমার অনুষ্ঠানে শুধু যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ উপস্থিত ছিলেন তা নয়, একই সঙ্গে ছিলেন সেদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী সাংসদরা। শুধু নিজেদের দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ ছিলেন তাঁরা।
এছাড়াও কোভিড (Covid-19) মহামারীর প্রসঙ্গ তুলেও কটাক্ষ করেন মোদি। তিনি বলে, সংকটের মুহূর্তে কোভিডের টিকা রপ্তানি করার সময়ও তাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু তাও তিনি শত্রুদের জন্য চিন্তা করেন।
সংকটের মুহূর্তে কোভিডের টিকা রপ্তানি করার সময়ও আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছিলেন। মনে রাখবেন, এটা বুদ্ধের দেশ এ দেশে গান্ধীর। শত্রুদের জন্যও আমরা চিন্তা করি।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খরচে তৈরি নয়া সংসদভবনে এবার জায়গা পেতে চলেছে ভারতের রক্তাক্ত ইতিহাস এবং সবশেষে শৃঙ্খলমুক্তির স্মারক হিসেবে পাওয়া রাজদণ্ড তথা ‘সেঙ্গল’ (Sengol)।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতার খাতায় কলমে ক্ষমতার হস্তান্তরের পূর্বে ভারতীয় রীতিনীতি জানতে চান লর্ড মাউন্টব্যাটেন (Lord Mountbatten)। সেই সময় সি রাজাগোপালাচারীর (C. Rajagopalachari) পরামর্শ নেওয়া সঙ্গত বলে মনে হয় জওহরলাল নেহরুর (Jawaharlal Nehru)। তখন তিনি জানান, চোল সাম্রাজ্যে (Chola Empire) রাজদণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথা চালু ছিল, যার মাধ্যমে রাজধর্ম পালনের অঙ্গীকার করতেন সেই যুগের রাজারা, ফলে স্বাধীন ভারতে গণতন্ত্রের সূচনাও সেই প্রথা মতোই হওয়া উচিত। এরপরেই রাজদণ্ডের অনুকরণে ‘সেঙ্গল’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
‘সেঙ্গল’ শব্দটি এসেছে তামিল শব্দ ‘সেম্মাই’ থেকে, যার অর্থ ন্যায়পরায়ণত। চোল সাম্রাজ্যে রাজদণ্ড হস্তান্তর প্রথার অর্থ হল, এই রাজদণ্ড গ্রহণ করে রাজা ন্যায়ের পথে চলবেন, নিরপেক্ষ থেকে রাজধর্ম পালন করবেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট অর্থাৎ খাতা কলমে ভারত স্বাধীন (Independence Day Of India) হওয়ার দিনের জন্য তাঞ্জোরের ধার্মিক মঠ, অধিনামের প্রধান পুরোহিতের নির্দেশে তৈরি করা হয় ওই ‘সেঙ্গল’। দৈর্ঘ্যে পাঁচ ফুট, গাত্রবর্ণ সোনালী, মাথার উপর বসানো শিবের বাহন ‘নন্দী’। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট রাত ১০টা বেজে ৪৫ মিনিটে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরুর হাতে স্বাধীন ভারতের শাসনভারের স্মারক হিসেবে ‘সেঙ্গল’ হাতে তুলে দেন মাউন্টব্যাটেন। এরপর পাঁচ ফুট দীর্ঘ শোভাযাত্রা করে সেটিকে নিয়ে যাওয়া হয় নেহরুর বাড়িতে। এতদিন এই ‘সেঙ্গল’ রাখা ছিল এলাহাবাদের মিউজিয়ামে (Allahabad Museum)। এবার সেই ‘সেঙ্গল’ই স্থান পেতে চলেছে নতুন সংসদ ভবনে।
জানা গিয়েছে, আগামী ২৮ মে এক শোভাযাত্রার মাধ্যমে সেটি নিয়ে যাওয়া হবে নয়া সংসদভবনে। নতুন করে করা হবে শুদ্ধিকরণ। সূত্রের খবর, একটি কাচের বাক্সে ‘সেঙ্গল’টি প্রতিস্থাপিত করবেন নরেন্দ্র মোদি, যা থাকবে স্পিকারের চেয়ারের পাশেই। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে, ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নয়া সূর্যোদয়ের প্রতীক হিসেবেই নয়া সংসদভবনে ‘সেঙ্গল’ জায়গা পাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ফলে রবিবার ভারত ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হতে চললেও এই দিনের অনুষ্ঠান নিয়ে কাঠগড়ায় হাজির বিরোধীরা।
- Related topics -
- দেশ
- রাজনৈতিক
- রাজনৈতিক ঝামেলা
- বিজেপি
- তৃণমূল কংগ্রেস
- কংগ্রেস
- মমতা ব্যানার্জী
- অরবিন্দ কেজরিওয়াল
- মোদী সরকার
- নরেন্দ্র মোদি
- দ্রৌপদী মুর্মু
- সংসদ ভবন