Biodiesel Plant | ভবিষ্যতে জ্বালানির জন্য ভরসা ' বায়োডিজেল উদ্ভিদ'! ফলের বীজ থেকেই তৈরি করা সম্ভব বায়োডিজেল!

Monday, March 18 2024, 9:24 am
highlightKey Highlights

' বায়োডিজেল উদ্ভিদ' বা জাট্রোফা কার্কাস গাছ থেকেই তৈরি হচ্ছে জ্বালানি। এই ফলের বীজ থেকেই তৈরি করা সম্ভব বায়োডিজেল।


মানব সমাজ, পৃথিবীর প্রত্যেকটা প্রাণীরই বেঁচে থাকার জন্য বড় অবদান হলো উদ্ভিদের। অক্সিজেন, খাদ্য সরবরাহ করে পরিবেশকে শুদ্ধ করার ক্ষেত্রে গাছের ভূমিকা সম্পর্কে ছোটরাও জানে। সমাজ বহু আধুনিক হয়ে উঠলেও এখনও উদ্ভিদের ওপর ভরসা করেই জীবন পরিচালনা করি আমরা। এবার জ্বালানির ক্ষেত্রেও ভরসা করা হচ্ছে এই গাছকেই! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। এমনকি এর জন্য বিঘা বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে ' বায়োডিজেল উদ্ভিদ (biodiesel plant) নামে পরিচিত জাট্রোফা কার্কাস (jatropha curcas) বা রতনজট গাছ। এই ফলের বীজ থেকে জ্বালানি তৈরী করা সম্ভব।

বায়োডিজেল পরিবেশ-বান্ধব বিকল্প জ্বালানি যা গার্হস্থ পুনর্ব্য‌বহারযোগ্য‌ উৎস যেমন, বনস্পতি তেল (ভোজ্য বা ভোজ্য নয় এমন) এবং পশু চর্বি থেকে তৈরি হয়। এই স্বাভাবিক তেল এবং চর্বি ট্রাইগ্লিসারাইড থেকে তৈরি। যখন অনুঘটকের উপস্থিতিতে লোয়ার অ্য‌ালকোহলের সঙ্গে এই ট্রাইগ্লিসারাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো হয় তখন ফ্য‌াটি অ্য‌াসিড ইস্টার উৎপন্ন হয়। এই ইস্টারের সঙ্গে পেট্রোলিয়ামজাত ডিজেলের অদ্ভুত সাদৃশ্য‌ রয়েছে। সেই জন্য‌ একে বায়োডিজেল বলা হয়।

বায়োডিজেল ব্য‌বহারের উপকারিতা :

  • এটি গাড়ি থেকে নির্গত হওয়া ধোঁয়া কমায়। তাই এটি পরিবেশ-বান্ধব।
  • এটি পুনর্নবীকরণযোগ্য‌ উৎস থেকে পাওয়া যায়। তাই এটি স্থানীয় ভাবে তৈরি করা যায়।
  • পেট্রোল-ডিজেলের তুলনায় এর সিটেন নম্বর বেশি। তাই এটি ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
  • বায়োডিজেলের মসৃণতা খুব বেশি।
  • এটি মজুত করা ও পরিবহণ করার ক্ষেত্রে অনেক নিরাপদ। কারণ এটি বিষাক্ত নয় এবং পরিবেশে সহজেই মিশে যায়।
  • ভারতে ভারতে বায়োডিজেল নির্মাতা (biodiesel manufacturers in india) বা উৎপাদন বাড়ানো গেলে বিদেশ থেকে আমদানির উপর নির্ভরতা কমবে। ফলে তেলের দামে স্থিতিশীল রাখা সহজ হবে।
  •  গ্রিনহাউস গ্য‌াসের পরিমাণ অনেকটা কমবে। এক কেজি বায়োডিজেল ব্যবহার করলে ৩.৩ কেজি কার্বন ডায়োক্সাইড নির্গমন কমবে।

 বায়োডিজেল উদ্ভিদ - জাট্রোফা কার্কাস । Biodiesel Plant - Jatropha Curcas :

ভারতে ভোজ্য‌ তেলের অভাব রয়েছে। তাই অভোজ্য‌ তেল থেকে বায়োডিজেল উৎপন্ন করা যেতে পারে, যেমন জাট্রোফা কার্কাস। অনুর্বর জমিতেও এর চাষ করা যায় এই বায়ো ডিজেল পাওয়ার প্লান্ট (diesel power plant)জাট্রোফা। এমনকি এই গাছ চাষের জন্য বিশেষ কোনও ঋতুরও দরকার হয় না। যে কোনও ঋতুতেই এই ডিজেল গাছ লাগানো যেতে পারে। এতে শ্রমও কম লাগে এবং প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়। তবে এই গাছ চাষে প্রাথমিক অবস্থায় ৪-৬ মাসের জন্য যত্ন করতে হবে। এই গাছ চাষের একটি বড় সুবিধা হল, এই গাছের জন্য খুব বেশি জলের প্রয়োজন হয় না। একবার প্রস্তুত হয়ে গেলে, এই উদ্ভিদ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বীজ নেওয়া যেতে পারে। মূলত এই বীজ থেকেই জ্বালানি তৈরি করা হয়।

জাট্রোফা আসলে একটি গুল্ম জাতীয় ঝোপ আকারের গাছ। এর বীজ ডিজেল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। যার ফলে একে ডিজেল পাওয়ার প্লান্ট (diesel power plant) বা বায়োডিজেল উদ্ভিদ বলা হয়। এটি থেকে যে বায়োডিজেল পাওয়া যায়, তা দিয়ে যানবাহন চালানো যাবে। এমনকি অবশিষ্ট অংশ দিয়ে বিদ্যুৎও উৎপাদন করা যায়। সরষের থেকে যেভাবে তেল বার করা হয়, সেই একই পদ্ধতিতে এই গাছের বীজ থেকেও বায়োডিজেল উৎপন্ন করা হয়। তবে সরাসরি বীজ থেকে পাওয়া তেল আসলে অশোধিত হয়, তাই ট্রান্সস্টারিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণের পরেই এই বায়োডিজেল গাড়িতে ব্যবহার করা যায়। বীজের তেলের ফ্যাটি অ্যাসিড উপাদানগুলো ও তাদের ভৌত রাসায়নিক ধর্ম বায়োডিজেল তৈরির ক্ষেত্রে প্রায় আদর্শ স্বরূপ। এর পিচ্ছিলতা গুণ লুব্রিকেন্টের কাজ করে ইঞ্জিনের আয়ুও বৃদ্ধি করে। বীজতেলগুলো আসলে নানা অনুপাতে মিশে থাকা নানা ধরনের ট্রাইগ্লিসারাইড অণুদের মিশ্রণ। গ্লিসারিনের ফ্যাটি অ্যাসিড ট্রাইএস্টার এই ট্রাইগ্লিসারাইডগুলো। একটি গ্লিসারিন অণুর সঙ্গে তিনটি ফ্যাটি অ্যাসিড অণুর এস্টার বন্ধনীর ফলে তৈরি হয় এরা। এই ট্রাইগ্লিসারাইডের মিশ্রণ থেকেই ট্রান্সমিথাইলেশন পদ্ধতিতে তৈরি হয় বায়োডিজেল। উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মতো এলাকায় এই গাছের চাষ হয়। এর চারা সরাসরি জমিতে রোপণ করা হয় না। এটি একটি নার্সারিতে জন্মানো হয় এবং তারপর সেখান থেকে মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়।

উল্লেখ্য বিষয় হল এটির চাষ সারা ভারতেই ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বীজের চাহিদা সারা বিশ্বে রয়েছে। ভারত সরকারও এই বীজ কেনে। এদিকে ভারতে বায়োডিজেল নির্মাতা (biodiesel manufacturers in india) বা জৈব জ্বালানি বাড়লে অনেকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা। পাশাপাশি এর ফলে বিকল্প জ্বালানির জোগান বাড়বে। আর তারপরই পেট্রোপণ্যের দাম কমবে। যদি ১৫ বছর দেওয়া হয় তাহলেই দেশে জৈব জ্বালানি তৈরি হবে। তাতে বিমানও উড়বে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকও এই কথাই ভাবছে। তাই দেশে পাঁচটি ইথানল প্ল্যান্ট তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্ত্রক। সেখানে ধান ও গমের তুষ, আখ ও বর্জ্য পদার্থ থেকে তৈরি হবে জ্বালানি।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File