Anant Ambani’s Vantara | আহত, নির্যাতিত ও বিপন্ন প্রাণীদের উদ্ধার করে যত্ন নেবে রিলায়েন্স! ৩,০০০ একর জায়গা জুড়ে তৈরী অনন্ত আম্বানির 'ভান্তারা'!

Tuesday, March 5 2024, 10:40 am
highlightKey Highlights

শুধু দেশ নয়, বিশ্বব্যপী আহত, নির্যাতিত ও বিপন্ন প্রাণীদের উদ্ধার করে যত্ন সহকারে চিকিৎসা, পুনর্বাসন দেবে জামনগরে তৈরী ভান্তারা।


 প্রযুক্তি ও ব্যবসার দিক থেকে বরাবরই ভারত  এমনকি গোটা বিশ্বের খবরের শিরোনামে থাকে রিলায়েন্স খবর (Reliance News)। ব্যবসা করার পাশাপাশি সমাজের উন্নতি ও পরিবেশের যত্ন কীভাবে নিতে হয় তা একাধিকবার প্রমাণ করেছে রিলায়েন্স। এবার এক্ষেত্রেই আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল এই সংস্থা। সম্প্রতি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (Reliance Industries)  ও রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের (Reliance Foundation) 'ভান্তারা'(Vantara) প্রোগ্রাম চালু করেছে। প্রাণী কল্যাণ ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় এটি একটি বড় কর্মসূচি। যার লক্ষ্য শুধু দেশ নয়, বিশ্বব্যপী আহত, নির্যাতিত ও বিপন্ন প্রাণীদের উদ্ধার করে যত্ন সহকারে চিকিৎসা, পুনর্বাসন দেওয়া।

২৬সে ফেব্রুয়ারি, সোমবার রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন সোমবার 'ভান্তারা' ('Vantara' - Star of the Forest) প্রোগ্রাম চালু করেছে।রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের বোর্ড ডিরেক্টর অনন্ত আম্বানির (Anant Ambani) নেতৃত্বে ভান্তারার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। RIL ও রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর অনন্ত অম্বানির নেতৃত্বে ভান্তারা ভারতে এই ধরনের প্রথম বড় উদ্যোগ। জামনগরে (Jamnagar) রিলায়েন্সের রিনিউয়েবল এনার্জি ব্যবসার নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি। ২০৩৫ সালের মধ্যে নেট কার্বন জিরো স্ট্যাটাস অর্জনের কোম্পানির লক্ষ্যের দিকে কাজ করছেন অনন্ত অম্বানি৷ উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাধিকা মার্চেন্ট এবং অনন্ত আম্বানি (Radhika Merchant and Anant Ambani) এর বিয়ে সম্পন্ন হবে। তবে তার আগেই ভান্তারার প্রোগ্রাম চালু করেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি।

ভান্তারার মূল লক্ষ্য :

গুজরাতে রিলায়েন্সের জামনগর (Jamnagar) রিফাইনারি কমপ্লেক্সের গ্রিন বেল্টের মধ্যে একটি চিত্তাকর্ষক ৩,০০০ একর বিস্তৃত জায়গাজুড়ে ভান্তারা খোলা হয়েছে। এই উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী প্রাণী সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হিসাবে উঠে এসেছে। পশুর যত্ন ও কল্যাণে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ভান্তারার বিস্তৃত অঞ্চলকে একটি জঙ্গলের মতো বাসস্থানে রূপান্তরিত করা হয়েছে। যা উদ্ধার করা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর পুনর্বাসনে আদর্শ পরিবেশ হিসাবে কাজ করবে। ভান্তারার লক্ষ্য অত্যাধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতাল, গবেষণা এবং একাডেমিক কেন্দ্র সহ সর্বোত্তম প্রাণী সংরক্ষণ এবং যত্নের অনুশীলন তৈরি করা। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (IUCN) এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড ফর নেচার (WWF)-এর মতো খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার সহযোগিতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভান্তারা মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা প্রভৃতি দেশে উদ্ধার অভিযানেও সহায়তা করেছে। ভান্তারা প্রোগ্রামটি ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন অফ চিড়িয়াখানার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে একত্রে এবং স্মিথসোনিয়ান এবং ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অফ জুস অ্যান্ড অ্যাকোয়ারিয়ামের মতো বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করেছে। ভারতে, এটি জাতীয় জুওলজিক্যাল পার্ক, আসাম রাজ্য চিড়িয়াখানা, নাগাল্যান্ড জুলজিক্যাল পার্ক, সরদার প্যাটেল জুলজিক্যাল পার্ক ইত্যাদির সাথে সহযোগিতা করে।

ভান্তারার পরিষেবা:

গত কয়েক বছরে, এই কর্মসূচি ২০০ টিরও বেশি হাতি এবং হাজার হাজার অন্যান্য প্রাণী, সরীসৃপ এবং পাখিকে বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেছে। এটি গণ্ডার, চিতাবাঘ এবং কুমির সহ মূল প্রাণী প্রজাতির পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। বলা বাহুল্য, ৩০০০ একর জুড়ে বিস্তৃত ভান্তারায় একটি অত্যাধুনিক এলিফ্যান্ট সেন্টারও থাকবে। এতে একটি হাইড্রোথেরাপি পুল, ওয়াটার বডি এবং হাতির বাতের চিকিৎসার জন্য একটি জাকুজিও থাকবে। পাশাপাশি ৫০০ জনের একজন প্রশিক্ষিত কর্মী হাতিদের দেখভাল করবেন। এতে ২৫ হাজার বর্গফুটের একটি হাসপাতালও থাকবে। এতে সব ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে। এখানে হাতির অস্ত্রোপচারও করা যাবে। এলিফ্যান্ট সেন্টারে ১৪ হাজার বর্গফুটের একটি রান্নাঘরও থাকবে। এই কেন্দ্রে আয়ুর্বেদের মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হবে।

ভান্তারা প্রোগ্রামের আওতায় ৬৫০ একর জায়গায় একটি উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রও রয়েছে। প্রায় ২০০ আহত চিতাবাঘকে উদ্ধার করা হয়েছে এই কেন্দ্রে। গুজরাতের জামনগরের মতি খাবধি গ্রামে ‘গ্রিনস জুলজিক্যাল রেসকিউ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কিংডম’ তৈরি হচ্ছে ২৮০ একর জমির ওপরে। ইতিমধ্যেই এক হাজারের বেশি কুমিরকেও রক্ষা করা হয়েছে। আফ্রিকা, স্লোভাকিয়া ও মেক্সিকো থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। সার্কাস ও চিড়িয়াখানা থেকে আনা প্রাণী রাখা হবে এতে। ফ্রগ হাউস, ড্রাগন আইল্যান্ড, ল্যান্ড অব রোডেন্ট, অ্যাকোয়াটিক কিংডোম-সহ একাধিক বিভাগ। আফ্রিকার সিংহ, চিতা, জাগুয়ার, নেকড়ে, হিপ্পো, ওরাংওটাং, বেঙ্গল টাইগার-সহ দেশ বিদেশের একাধিক প্রাণী থাকবে।এই কেন্দ্রে ২১০০ জনেরও বেশি কর্মী রয়েছে। এই কেন্দ্রে রয়েছে ১ লাখ বর্গফুটের একটি হাসপাতাল এবং একটি চিকিৎসা গবেষণা হাসপাতাল। এর মধ্যে এমন ৭টি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যা বিপদচিহ্নে পৌঁছে গেছে। উল্লেখ্য, ভান্তারায় কাজের জন্য নিযুক্ত রয়েছেন পশুচিকিৎসক, জীববিজ্ঞানী, প্যাথলজিস্ট, পুষ্টিবিদ এবং প্রকৃতিবিদ-সহ প্রায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ। ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক কঠোর আইন ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অধীনেই এই ধরনের সমস্ত উদ্ধার এবং পুনর্বাসন অভিযান গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত,অনন্ত আম্বানির বিয়ে (Anant Ambani wedding)নিয়ে তুঙ্গে তোড়জোড়। রাধিকা মার্চেন্ট এবং অনন্ত আম্বানি (Radhika Merchant and Anant Ambani) এর চার হাত এক হবে শীঘ্রই। তবে এরই মাঝে ভান্তারা নিয়ে আবেগপ্রবণ অনন্ত আম্বানি। তিনি বলেন, খুব অল্প বয়সে আবেগ হিসাবে যা শুরু হয়েছিল তা এখন ভান্তারা, যা উজ্জ্বল এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দলের সঙ্গে একটি মিশনে পরিণত হয়েছে। ভারতের স্থানীয় বিপন্ন প্রজাতি রক্ষার দিকে মনোনিবেশ করবে এই সংস্থা। অনন্ত বলেন, বাবা মুকেশ আম্বানি বেড়াতে নিয়ে যেতেন জঙ্গলে। স্কুলের ছুটিতেও তাঁরা জঙ্গলেই বেড়াতে যেতেন। তাই তাঁরা সকলেই বন্যপ্রাণী খুব ভালবাসেন। ছাড়াও বন্যপ্রাণ বাঁচানোর জন্য মা নীতা অম্বানিও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। ছোট থেকেই তিনি শিখিয়েছেন কী করে জন্তু জানোয়ারদের সেবা যত্ন করতে হয়। পাশাপাশি তিনি শিখিয়েছেন অবোলাদের সেবাই সবথেকে বড় সেবা এবং পরম ধর্ম। অনন্ত আম্বানির বিয়ের (Anant Ambani wedding) আগে মুকেশ আম্বানি জানান, ভারত ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন প্রাণিবিদ্যা ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ভান্তারা মিশনে যোগ দিয়েছেন। তিনি প্রকাশ করেছিলেন যে প্রোগ্রামটি সরকারী সংস্থা, গবেষণা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সক্রিয় সহযোগিতা এবং দিকনির্দেশনা পাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন যে ভান্তারার লক্ষ্য ভারতের চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব করা। এটি ভারতের ১৫০টিরও বেশি চিড়িয়াখানাকে প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাণী পরিচর্যার পরিকাঠামোর উন্নতিতে সহায়তা করবে।

বলা বাহুল্য, মুকেশ-নীতা আম্বানি ও আম্বানি পরিবার সমাজের উন্নয়ন এবং পরিবেশ স্বাস্থ্যকর করে তুলতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান নীতা আম্বানির দ্বারা পরিচালিত রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারী উন্নয়ন, শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করে। এই সংস্থাটি এখনও পর্যন্ত ৫৫৪০০ গ্রামের ৭২ লক্ষ মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছে। এরকমই এবার অবলা জীব, পশুদের জন্যও বড় পদক্ষেপ নিলো আম্বানি পরিবার এবং সেই সঙ্গে ফের আরেকবার রিলায়েন্স বুঝিয়ে দিলো, ব্যবসা ও সাফল্যের শীর্ষে থেকেও সমাজ ও পরিবেশ রক্ষা ও উন্নত করাও গুরু দায়িত্ব।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File