Covaxin Side Effect | কোভিশিল্ডের পর এবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কোভ্যাক্সিনেও! স্নায়ু রোগ থেকে ঋতুস্রাব, স্ট্রোকের সমস্যা-সহ দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ রোগ!
ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের দীর্ঘ মেয়াদি প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিএইচ ইউ-এর একচি গবেষণায় বলা হচ্ছে, যাঁরা কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মানুষ অভিযোগ করেছেন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে।
সম্প্রতি কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (covishield side effects) নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ তথা বিশ্ব। সদ্য কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার স্বীকার করে এর পার্শপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই একদল যেমন চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন, অন্যদিকে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছিলেন আরেক দল মানুষ। এক্ষেত্রে প্রথমটা হলো যারা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং পরেরটা যারা কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন। তবে এখন প্রশ্নের মুখে কোভ্যাক্সিনও! নতুন এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, যারা কোভ্যাক্সিন পেয়েছেন, তাদেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এমনকি কোভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Covaxin side effects) দেখা গিয়েছে এক তৃতীয়াংশেরই !অর্থাৎ এখন চিন্তার ভাঁজ ফেলছে কোভ্যাক্সিন-কোভিশিল্ড (Covaxin Covishield) দুই ভ্যাকসিনই।
কোভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের দীর্ঘ মেয়াদি প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিএইচ ইউ(BHU)এর একচি গবেষণা সামনে এসেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, যাঁরা কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মানুষ অভিযোগ করেছেন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণায় বলা হচ্ছে, কোভ্যাক্সিন নেওয়ার ১ বছরের মধ্যে ৩০ শতাংশ মানুষের গুরুতর শরীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সূত্রের খবর, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পেশ করা গবেষণা রিপোর্ট বলছে, তারা এই গবেষণা করেছেন বেছে নেওয়া ৯২৬ জনের ওপর। তাঁদের মধ্যে ৩০ শতাংশ অ্যাডভার্স ইভেন্টস অফ স্পেশ্যাল ইন্টারেস্ট-এর (AESI) তালিকায় রয়েছেন। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই বলছেন, তাদের শ্বাসযন্ত্রের উপরের অংশে ভাইরাল সংক্রমণের সমস্যা ছিল। এছাড়াও রক্ত জমাট বাঁধা, অ্যালার্জির সমস্যাও ছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে?
বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্য়ালয়ের তরফে এক বছর ধরে কোভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Covaxin side effects) নিয়ে সমীক্ষা গবেষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, ৩০৪ জন কিশোর-কিশোরী (৪৭.৯ শতাংশ) এবং ১২৪ জন প্রাপ্তবয়স্কের (৪২.৬ শতাংশ) শ্বাসযন্ত্রে ভাইরাল সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এমনকি গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৬৩৫ জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে ১০.৫ শতাংশেরই ত্বকের রোগ দেখা দেয়। ৪.৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্নায়ুর রোগ দেখা দিয়েছে এবং ১০.২ শতাংশ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সাধারণ রোগ দেখা গিয়েছে।
কিশোর-কিশোরীদের পাশাপাশি ২৯১ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও একই সমস্যা দেখা গিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণ ব্যাধিগুলির শতাংশ ছিল ৮.৯%। পেশি এবং হাড় সম্পর্কিত রোগ ৫.৮ শতাংশের মধ্যে এবং স্নায়ু সম্পর্কিত রোগ ৫.৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা গিয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে কোভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আরও মারাত্মক। এছাড়াও গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৪.৬ শতাংশ মহিলাদেরই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড সম্পর্কিত সমস্যা বা অস্বাভাবিকতা দেখা গিয়েছে। ২.৭ শতাংশের চোখের সমস্যা এবং ০.৬ শতাংশ মহিলাদের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা দেখা গিয়েছে। ০.৩ শতাংশের স্ট্রোক এবং ০.১ শতাংশের মধ্যে গুইলেন-বেরি সিন্ড্রোম দেখা গিয়েছে। জিবিএস হল এমন একটি বিরল রোগ যেখানে দেহ ধীরে ধীরে প্যারালাইজড হয়ে যায়।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দুটি ডোজ গ্রহণকারী প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কোভ্যাক্সিনের তিনটি ডোজ গ্রহণকারী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ' অ্যাডভার্স ইভেন্টস অফ স্পেশ্যাল ইন্টারেস্ট'-এর ঝুঁকি চার গুণ বেশি। নানান রোগ হওয়ার পাশাপাশি সমীক্ষায় দাবি করা হচ্ছে, এই কোভিড ভ্যাকসিনের জন্য মৃত্যুও হয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে, চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন মহিলা ও একজন পুরুষ ছিলেন। জানা গিয়েছে, চারজনেরই ডায়াবেটিস ছিল। তিনজন প্রাপ্তবয়স্কেরও উচ্চ রক্তচাপেরও সমস্যা ছিল। চারজনের মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকের কারণে। একজনের মৃত্যু কোভিড-পরবর্তী রাইনোসেরিব্রাল মিউকোরমাইকোসিসের জেরে হয়েছিল। এটি একটি বিরল রোগ যা প্রধানত নাক, প্যারানাসাল সাইনাস এবং মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে এবং চতুর্থ মৃত্যু একজন মহিলার, যিনি টিকা দেওয়ার পরে বেশ কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। যদিও তাঁর অজ্ঞান হওয়ার কারণ জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (side effects of covishield vaccine) নিয়ে ভয়াবহ তথ্য সামনে এসেছে।সম্প্রতিই এক গবেষণায় জানা গিয়েছিল, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড ভ্যাকসিনে বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে। ভারতে সেরাম ইন্সটিটিউট অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গেই তৈরি করেছিল কোভিশিল্ড। আর সেই সংস্থার তরফে কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (covishield side effects) এর কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়। স্প্রিঙ্গলার লিঙ্ক নামক একটি প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত গবেষণাতেই বলা হয়েছে, ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে কিশোরীদের মধ্যে, যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (side effects of covishield vaccine) দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমনকি এই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (side effects of covishield vaccine) এর কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে 'থ্রম্বোসিস থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম' বা টিটিএস (TTS) নামে এক বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। এই রোগে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। এই খবর নাড়িয়ে দেয় গোটা বিশ্বকে। কারণ এই টিকা নিয়েছিলেন কোটি কোটি মানুষ। তবে এবার সামনে এলো কোভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য।
- Related topics -
- দেশ
- ভারত
- করোনা টিকা
- করোনা ভাইরাস
- করোনা সংক্রমণ
- করোনা ভ্যাকসিন
- কোভ্যাকসিন
- কো-ভ্যাকসিন
- কোভিশিল্ড
- কোভিড ১৯
- কোভিড পজিটিভ