Solar Storm News | পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর সৌর ঝড়! ইন্টারনেট-জিপিএস পরিষেবায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা!
শুক্রবারই আছড়ে পড়তে পারে সৌর ঝড় বা সোলার স্টর্ম। সৌর ঝড়ের খবর অনুযায়ী, এর প্রভাবে বিশ্বের যাবতীয় ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে সৌরঝড় বা সোলার স্টর্ম (Solar Storm) শুক্রবার, ১লা ডিসেম্বর এই সৌর ঝড় আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আমেরিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (National Oceanic and Atmospheric Administration') বা নোয়া (NOAA)। সৌর ঝড়ের খবর (Solar Storm News) অনুযায়ী, সৌর ঝড়ের অভিঘাতে গোটা বিশ্বের যাবতীয় ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সৌরঝড় কী?
সৌর ঝড় হল সূর্য থেকে নির্গত তীব্র ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ। এই বিকিরণ মূলত নির্গত হয় সূর্যের বায়ুমণ্ডল থেকে। এই ধরনের সৌরঝড়কে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়,সিএমই। সিএমইর পূর্ণ রূপ (CME Full Form) হলো করোনাল ভর ইজেকশন ()। সিএমই বা সিএমইর পূর্ণ রূপ (CME Full Form) হলো করোনাল ভর ইজেকশন, সূর্যের করোনা থেকে নিঃসৃত বিপুল পরিমাণ প্লাজ়মা (আয়নিত কণা ও ইলেকট্রন) ও চৌম্বকক্ষেত্র। এই সিএমই-র গতি কমবেশি হতে পারে। কখনও ১৫-১৮ ঘণ্টা লাগে পৃথিবীতে পৌঁছতে। কখনও কয়েক দিন।
সৌর ঝড়ের প্রভাব :
নাসার স্পেস ওয়েদার বিশেষজ্ঞ ড. তামিথা স্কভের কথায়, প্রায় সাড়ে ৯কোটি মাইল দূরে সূর্য থেকে ছুটে এসে সৌররশ্মিরা আছড়ে পড়তে পারে পৃথিবীতে। সৌর ঝড়ের খবর (Solar Storm News) অনুযায়ী, শুক্রবার পৃথিবীতে এই বিরাট সৌরঝড় আছড়ে পড়তে পারে। সৌরঝড়ের ফলে কেঁপে উঠবে পৃথিবীর চারপাশে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্র। দুই মেরুতে মেরুজ্যোতি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। পাশাপাশি সৌর ঝড়ের অভিঘাতে গোটা বিশ্বের যাবতীয় ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। ওই সৌরঝড় শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় ঝাপটায় পরিণত হলে তার প্রভাব বেশ কিছু দিন স্থায়ী হতে পারে। ‘নোয়া’র গবেষক তমিথা সোশ্যাল মাধ্যমে জানিয়েছেন, অনেক সময় একাধিক মাঝারি মাত্রার সিএমই মিলে গিয়ে গোটা সৌরমণ্ডলের পক্ষেই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। শুক্রবার তেমনটা হওয়ারই আশঙ্কা রয়েছে। একাধিক জি-২ মাত্রার (মাঝারি শক্তির) সিএমই মিলে গিয়ে শক্তিশালী জি-৩ মাত্রায় সৌরঝড়ে পরিণত হয়ে আঘাত হানতে পারে পৃথিবীতে।
উল্লেখ্য, ১৮৫৯ আর ১৯২১ সালে এমন ভয়ঙ্কর সৌরঝড়ের ঝাপটা পৃথিবীকে সইতে হয়েছিল। ১৯২১ সালে সৌরঝড়ের ঝাপটায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্রে বড় বড় ফাটল ধরেছিল। তার ফাঁক গলে ঢুকেছিল অত্যন্ত বিষাক্ত সৌরকণা আর মহাজাগতিক রশ্মি। কিন্তু ১৮৫৯ সালে সৌরঝড়ের প্রবল ঝাপটায় সে বার তা বিষুবরেখার ঠিক নীচে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ কলাম্বিয়াতেও খুব উজ্জ্বল ভাবে দেখা গিয়েছিল। এছাড়াও উনবিংশ শতকে সৌরঝড়ে আমেরিকায় টেলিগ্রাফ স্টেশনে আগুন লেগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৮৯ সালের মার্চে যে সৌরঝড়ের ঝাপটায় কানাডার কুইবেক প্রদেশে টানা ন’ঘণ্টা ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়ে গিয়েছিল।
তবে এই সৌর ঝড়ের প্রভাব কত তা পড়তে চলেছে পৃথিবীতে তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। কয়েকদিন 'নোয়া' জানিয়েছিল, সূর্যের পরিমণ্ডলে একটি ফাটল দেখতে পাওয়া গিয়েছে। সেই ফাটল পথেই পৃথিবীর পথে ধেয়ে আসতে পারে প্রবল বেগে সৌরবায়ু। সৌরবায়ুর প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সৌর ঝড়ে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না। তবে সৌরঝড়ের কারণে রেডিও ও জিপিএস সিগন্যাল বিঘ্নিত হতে পারে। পাশাপাশি প্রভাব পড়তে পারে ইন্টারনেট ব্যবস্থাতেও। তবে ইন্টারনেট পরিষেবার উপর সিএমই-র আঘাত কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। তবে সমুদ্রের নীচে বিছিয়ে রাখা ইন্টারনেট কেবল (Internet Cable) সৌরঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান।
সৌরঝড়ের প্রভাবে মেরুপ্রদেশের আকাশে মেরুজ্যোতি বা অরোরা (aurora) তৈরি হতে পারে, বিদ্যুৎ পরিষেবায় সমস্যা দেখা দিতে পারে, জিপিএস নেভিগেশন এবং বেতার ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছিল এসডব্লিউপিসি। নষ্ট হয়ে যেতে পারে সমুদ্রের নীচে বিছিয়ে রাখা ইন্টারনেট কেবল (Internet Cable)। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় নয়াদিল্লির হাওয়া অফিসের ‘স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টার’ (Space Weather Prediction Center) বা এসডব্লিউপিসি (SWPC) একটি সতর্কবার্তা জারি করেছিল। বলা হয়েছিল জি১ স্তরের (১ থেকে ৫ মাত্রার মধ্যে মৃদুতম) ভূচৌম্বকীয় ঝড়ের মুখোমুখি হতে পারে পৃথিবী। এই সৌর ঝড় 'আধুনিক' পৃথিবীতে ভালো প্রভাব ফেলতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
- Related topics -
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- মহাকাশ
- সৌর ঝড়
- ইন্টারনেট
- ইন্টারনেট পরিষেবা